-
Copy a selected item: Ctrl+C
-
Cut a selected item: Ctrl+X
-
Paste a selected item: Ctrl+V
-
Undo an action: Ctrl+Z
-
Redo that thing I just undid: Ctrl+Y
-
Select everything: Ctrl+A
-
Print: Ctrl+P
- Switch between open windows
Alt+Tab- Clear away everything and show the desktop
Windows logo key +D- Minimize the window
Windows logo key +Down Arrow- Maximize the window
Windows logo key +Up Arrow- Compare and contrast in a snap
Windows logo key +Left Arrow or Right Arrow- Multitask with multiple monitors
Windows logo key +Shift+Right Arrow or Left Arrow- Open Task Manager
Ctrl+Shift+Esc- Choose a presentation display mode
Windows logo key +P
- Zoom in, zoom out
- Search for files and folders
Windows logo key +F- Open a new instance of a program
Windows logo key +Shift+Click a taskbar icon
- And when you need it...get help
Windows logo key +F1
- Open a new instance of a program
রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১২
20 essential PC shortcuts
শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১২
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বৈধতা!
রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় দণ্ড মওকুফ পাওয়া ব্যক্তিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট একটি নতুন আইনি ধারা উন্মোচন
করলেন। ৪০ বছর ধরে আমাদের ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের
আওতায় নেওয়া সিদ্ধান্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমার এখতিয়ারের
অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সম্ভবত এটাই প্রথম
রায়, যেখানে পরোক্ষভাবে হলেও প্রমাণিত হলো যে ৪৯ অনুচ্ছেদ দেখিয়ে
রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তে আদালতের নজরদারি রহিত করা যাবে না। তাই এই রায় একটা
বিরাট বিচারিক অগ্রগতি।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ২৫ এপ্রিল প্রায় ১৯ বছর আগে তথ্য গোপন করে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পাওয়া ক্ষমা উল্টে দিয়েছেন। দণ্ডিতকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের আওতায় রাষ্ট্রপতির বিশেষ অধিকারও বিচার বিভাগীয় এখতিয়ারভুক্ত।
মনে করা হয়, একজন বিচারক যতই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ হোন না কেন, এমন বিরল মুহূর্ত আসতে পারে, যখন তিনি হয়তো কাউকে ভুলভাবে দণ্ড দিলেন। নাগরিকের জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সে কারণে ক্ষমা বা দণ্ড হ্রাসের সুযোগ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে এর অপব্যবহার চলছে। একজন পলাতক আইনের আশ্রয়লাভের অধিকারী নন। কক্সবাজারের ওই মামলায়ও দণ্ডিত ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির দণ্ড মওকুফের সময় আইনের দৃষ্টিতে পলাতক ছিলেন।
বিচার বিভাগ নিয়ে যাঁরা সক্রিয় ভূমিকা রাখেন, আমরা তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এই মামলায় হাইকোর্টের বেঞ্চ হয়তো তাঁদের এখতিয়ার নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন। কারণ, তাঁদেরটি রিট বেঞ্চ ছিল না, ছিল ফৌজদারি কার্যবিধিনির্ভর। সে কারণে ৪৯ অনুচ্ছেদ নিয়ে যে ধরনের পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত রায় ও নির্দেশনা আমরা আশা করেছি, সেটা হয়তো পুরোমাত্রায় অর্জিত না-ও হতে পারে। কিন্তু কোনো রিট বেঞ্চে জনস্বার্থে মামলা হলে আমরা তা পাওয়ার আশা করতে পারি।
ওই মামলার নথি নিখোঁজ। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস কীভাবে, কী সুপারিশ করেছিলেন, তা অজানা। আমরা আশঙ্কা করি, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা নথি খোয়ানোর জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন। কিন্তু জনগণের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমেনি। গত ৪০ বছরে কতজন ক্ষমা পেয়েছেন এবং তার নথি ব্যবস্থাপনার কী হাল, তা আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই।
ফাঁসির আসামি ঝিন্টু এবং লক্ষ্মীপুরের আওয়ামী লীগের নেতা আবু তাহেরের ছেলের দণ্ড মওকুফের বৈধতা সন্দেহাতীতভাবে আদালতে চ্যালেঞ্জযোগ্য। আমরা আশা করব, এই রায়ের আলোকে সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল এর প্রতিকার চাইতে আদালতের শরণাপন্ন হবে। এই মাইলফলক রায় প্রমাণ করেছে, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদকে যান্ত্রিকভাবে ব্যবহার করা যাবে না। উত্তম নজির হিসেবে এ রায়টি অনুসরণীয় হোক।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ২৫ এপ্রিল প্রায় ১৯ বছর আগে তথ্য গোপন করে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পাওয়া ক্ষমা উল্টে দিয়েছেন। দণ্ডিতকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের আওতায় রাষ্ট্রপতির বিশেষ অধিকারও বিচার বিভাগীয় এখতিয়ারভুক্ত।
মনে করা হয়, একজন বিচারক যতই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ হোন না কেন, এমন বিরল মুহূর্ত আসতে পারে, যখন তিনি হয়তো কাউকে ভুলভাবে দণ্ড দিলেন। নাগরিকের জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সে কারণে ক্ষমা বা দণ্ড হ্রাসের সুযোগ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে এর অপব্যবহার চলছে। একজন পলাতক আইনের আশ্রয়লাভের অধিকারী নন। কক্সবাজারের ওই মামলায়ও দণ্ডিত ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির দণ্ড মওকুফের সময় আইনের দৃষ্টিতে পলাতক ছিলেন।
বিচার বিভাগ নিয়ে যাঁরা সক্রিয় ভূমিকা রাখেন, আমরা তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এই মামলায় হাইকোর্টের বেঞ্চ হয়তো তাঁদের এখতিয়ার নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন। কারণ, তাঁদেরটি রিট বেঞ্চ ছিল না, ছিল ফৌজদারি কার্যবিধিনির্ভর। সে কারণে ৪৯ অনুচ্ছেদ নিয়ে যে ধরনের পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত রায় ও নির্দেশনা আমরা আশা করেছি, সেটা হয়তো পুরোমাত্রায় অর্জিত না-ও হতে পারে। কিন্তু কোনো রিট বেঞ্চে জনস্বার্থে মামলা হলে আমরা তা পাওয়ার আশা করতে পারি।
ওই মামলার নথি নিখোঁজ। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস কীভাবে, কী সুপারিশ করেছিলেন, তা অজানা। আমরা আশঙ্কা করি, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা নথি খোয়ানোর জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন। কিন্তু জনগণের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমেনি। গত ৪০ বছরে কতজন ক্ষমা পেয়েছেন এবং তার নথি ব্যবস্থাপনার কী হাল, তা আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই।
ফাঁসির আসামি ঝিন্টু এবং লক্ষ্মীপুরের আওয়ামী লীগের নেতা আবু তাহেরের ছেলের দণ্ড মওকুফের বৈধতা সন্দেহাতীতভাবে আদালতে চ্যালেঞ্জযোগ্য। আমরা আশা করব, এই রায়ের আলোকে সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল এর প্রতিকার চাইতে আদালতের শরণাপন্ন হবে। এই মাইলফলক রায় প্রমাণ করেছে, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদকে যান্ত্রিকভাবে ব্যবহার করা যাবে না। উত্তম নজির হিসেবে এ রায়টি অনুসরণীয় হোক।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-04-27/news/253341
বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১২
চীনা সেনার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে?
পিপলস লিবারেশন আর্মির কয়েকজন সদস্য
ছবি: রয়টার্স
চীনের
বিপুল অস্ত্র ও বিশাল সেনাবাহিনী আসলে কার নিয়ন্ত্রণে? আন্তর্জাতিক মহলে এ
আগ্রহ অনেকের। কে বা কারা চীনের বন্দুক ও যুদ্ধজাহাজ নিয়ন্ত্রণ করছে, সেটা
পরিষ্কার করলে ক্রমবর্ধমান এই সেনাবাহিনী নিয়ে বাইরের মানুষের ভয় থাকত না।
পরাশক্তিগুলোর মধ্যে একমাত্র চীনেই পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) নামে
একটা সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে, যেটা আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রের কোনো অংশের মধ্যে
পড়ে না। এটা কেবল সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাছে দায়ী। প্রতিরক্ষা
মন্ত্রণালয় নয়, বরং পার্টির কেন্দ্রীয় সেনা কমিশন নিয়ন্ত্রণ করে
সেনাবাহিনীকে। যদিও চীনে কাজে-কর্মে ক্ষমতাসীন পার্টি ও সরকার প্রায়
কাছাকাছি, তার পরও পার্টির কাজকর্ম বেশ দুর্বোধ্য। এই পার্টিই পিএলএর
বিষয়টি ঘোলাটে করে রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যকার সুসম্পর্ক এই দুর্বোধ্যতা দূরীকরণে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু তাইওয়ানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা বিরাজ করলে পিএলএ শাস্তিস্বরূপ দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া দুই দেশের সেনাদের সম্পর্ক গভীর হলে মার্কিনিরা আবার লাভবান হয় কি না, সে বিষয়েও পিএলএ উদ্বিগ্ন থাকে। তাই এসব নানা অনিশ্চিত সম্ভাবনা মাথায় নিয়ে কেউ মনে করতে পারেন, চীনের অবস্থান শান্তির পক্ষে। আবার কেউ কেউ এর উল্টোও ভাবতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী থিংক-ট্যাংক, দ্য সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড বাজেটারি অ্যাসেসমেন্টস (সিএসবিএ) বলছে, চীনের মতো একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার মুহূর্তেই মত পাল্টাতে পারে।
অনেক দিন আগে থেকেই চীন তার সামরিক শক্তি বাড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৫০-এর দশকে দেশটি প্রথম এ কাজে হাত লাগায়। সে সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল তার অন্যতম প্রধান মিত্র ও অস্ত্র সরবরাহকারী। কিন্তু ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে মাও সেতুংয়ের দশকব্যাপী সাংস্কৃতিক অভ্যুত্থানের সময় সামরিক শক্তি বাড়ানোর কাজটি অপ্রত্যাশিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিতর্কিত সীমানা নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে প্রায় যুদ্ধ বেধে যাচ্ছিল এবং ঠিক তখনই চীন প্রথম সফলভাবে তার পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। আশির দশকে দেং শিয়াও পেংয়ের নেতৃত্বে সামরিক শক্তি আধুনিকায়নের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়। দেং চেয়েছিলেন পুরো দেশকেই ঢেলে সাজাতে। সেখানে বাদ যায়নি সেনাবাহিনীও। কিন্তু তিনি পিএলএকে বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতিই তাঁর সরকারের প্রথম পছন্দ এবং জেনারেলদের অবশ্যই জিডিপির ১.৫ শতাংশ বাজেট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে আধুনিকায়নের তৃতীয় পর্যায় শুরু হয়। ১৯৯১ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাকের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের উচ্চপ্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক মারণাস্ত্রের মারাত্মক প্রভাব দেখে চীন উপলব্ধি করে, সম্মুখযুদ্ধ তথা স্থলযুদ্ধের দিন শেষ।
পিএলএর বিশেষজ্ঞরা বেইজিংয়ের অ্যাকাডেমি অব মিলিটারি সায়েন্সে বসে মার্কিন থিংক-ট্যাংকদের প্রবর্তিত তথাকথিত ‘রেভল্যুশন ইন মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স’ (আরএমএ) বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করতে থাকেন। আরএমএ হলো কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত কৌশল এবং অস্ত্রশস্ত্রের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন। বেইজিংয়ের ওই অ্যাকাডেমিতে অতি সম্প্রতি প্রতিরক্ষা-বিষয়ক প্রধান চারটি শ্বেতপত্রের প্রণেতা জেনারেল চেন ঝোউ লন্ডনের দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকাকে বলেছেন, ‘আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আরএমএ পড়েছি। আমাদের কাছে মহানায়ক হলেন অ্যান্ডি মার্শাল, যিনি পেন্টাগনের প্রধান ভবিষ্যবাদী হিসেবে পরিচিত। আমরা তাঁর লেখা প্রতিটি শব্দ অনুবাদ করে পড়েছি।’
১৯৯৩ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক জিয়াং জেমিন আরএমএকে দেশটির সামরিক কৌশলের কেন্দ্রে স্থাপন করেন। যার ফলে এখন পিএলএ অনুভব করছে, উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আঞ্চলিক যেকোনো যুদ্ধে সফল হতে পারে। দেশটির ব্যয়বহুল সামরিক খাতের বাজেটের বেশির ভাগ গেছে এখন পর্যন্ত বিমান, নৌ ও গোলন্দাজ বাহিনীর পেছনে, যারা কিনা চীনের পারমাণবিক ও প্রথাগত ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালনা করে।
২০০২ ও ২০০৪ সালের দিকে আরও উন্নয়ন ঘটে সামরিক শক্তির আধুনিকায়নে। জেনারেল চেন বলেন, ২০১০ সাল পর্যন্ত আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর ভিত গঠন করা হয়েছে। পরবর্তী দশকে তাদের সমন্বিত কার্যকলাপ দেখা যাবে। যেখানে থাকবে কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশনস ও কম্পিউটারের সমন্বয়ে সম্মিলিত নেটওয়ার্ক। ২০২০ সালের মধ্যেই চীনের সেনাবাহিনী এ লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে। তবে চেন স্বীকার করেন, পশ্চিমাদের মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ শক্তি অর্জন করতে তাদের আরও কিছু সময় লাগতে পারে। তার পরও ২০১০ সালে সিএসবিএ জানায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যেই চীন প্রয়োজনীয় বেশকিছু সামরিক সরঞ্জামের অধিকারী হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, শত্রুপক্ষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য স্যাটেলাইট ও গোপন প্রযুক্তি, ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ও জাহাজবিধ্বংসী হাজারো ক্ষেপণাস্ত্র, ৬০টিরও বেশি গোপন ডুবোজাহাজ, কমপক্ষে ছয়টি পারমাণবিক শক্তিসমৃদ্ধ ডুবোজাহাজ, চালকসহ ও চালকবিহীন গোপন যুদ্ধবিমান। এ ছাড়া আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আকারে ছোট হলেও বিমানবাহী কয়েকটি রণতরীও সমুদ্রে ভাসাতে যাচ্ছে। যদিও সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য দেশটিকে আরও বেশ কয়েক বছর চেষ্টা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যকার সুসম্পর্ক এই দুর্বোধ্যতা দূরীকরণে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু তাইওয়ানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা বিরাজ করলে পিএলএ শাস্তিস্বরূপ দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া দুই দেশের সেনাদের সম্পর্ক গভীর হলে মার্কিনিরা আবার লাভবান হয় কি না, সে বিষয়েও পিএলএ উদ্বিগ্ন থাকে। তাই এসব নানা অনিশ্চিত সম্ভাবনা মাথায় নিয়ে কেউ মনে করতে পারেন, চীনের অবস্থান শান্তির পক্ষে। আবার কেউ কেউ এর উল্টোও ভাবতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী থিংক-ট্যাংক, দ্য সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড বাজেটারি অ্যাসেসমেন্টস (সিএসবিএ) বলছে, চীনের মতো একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার মুহূর্তেই মত পাল্টাতে পারে।
অনেক দিন আগে থেকেই চীন তার সামরিক শক্তি বাড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৫০-এর দশকে দেশটি প্রথম এ কাজে হাত লাগায়। সে সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল তার অন্যতম প্রধান মিত্র ও অস্ত্র সরবরাহকারী। কিন্তু ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে মাও সেতুংয়ের দশকব্যাপী সাংস্কৃতিক অভ্যুত্থানের সময় সামরিক শক্তি বাড়ানোর কাজটি অপ্রত্যাশিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিতর্কিত সীমানা নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে প্রায় যুদ্ধ বেধে যাচ্ছিল এবং ঠিক তখনই চীন প্রথম সফলভাবে তার পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। আশির দশকে দেং শিয়াও পেংয়ের নেতৃত্বে সামরিক শক্তি আধুনিকায়নের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়। দেং চেয়েছিলেন পুরো দেশকেই ঢেলে সাজাতে। সেখানে বাদ যায়নি সেনাবাহিনীও। কিন্তু তিনি পিএলএকে বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতিই তাঁর সরকারের প্রথম পছন্দ এবং জেনারেলদের অবশ্যই জিডিপির ১.৫ শতাংশ বাজেট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে আধুনিকায়নের তৃতীয় পর্যায় শুরু হয়। ১৯৯১ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাকের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের উচ্চপ্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক মারণাস্ত্রের মারাত্মক প্রভাব দেখে চীন উপলব্ধি করে, সম্মুখযুদ্ধ তথা স্থলযুদ্ধের দিন শেষ।
পিএলএর বিশেষজ্ঞরা বেইজিংয়ের অ্যাকাডেমি অব মিলিটারি সায়েন্সে বসে মার্কিন থিংক-ট্যাংকদের প্রবর্তিত তথাকথিত ‘রেভল্যুশন ইন মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স’ (আরএমএ) বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করতে থাকেন। আরএমএ হলো কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত কৌশল এবং অস্ত্রশস্ত্রের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন। বেইজিংয়ের ওই অ্যাকাডেমিতে অতি সম্প্রতি প্রতিরক্ষা-বিষয়ক প্রধান চারটি শ্বেতপত্রের প্রণেতা জেনারেল চেন ঝোউ লন্ডনের দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকাকে বলেছেন, ‘আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আরএমএ পড়েছি। আমাদের কাছে মহানায়ক হলেন অ্যান্ডি মার্শাল, যিনি পেন্টাগনের প্রধান ভবিষ্যবাদী হিসেবে পরিচিত। আমরা তাঁর লেখা প্রতিটি শব্দ অনুবাদ করে পড়েছি।’
১৯৯৩ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক জিয়াং জেমিন আরএমএকে দেশটির সামরিক কৌশলের কেন্দ্রে স্থাপন করেন। যার ফলে এখন পিএলএ অনুভব করছে, উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আঞ্চলিক যেকোনো যুদ্ধে সফল হতে পারে। দেশটির ব্যয়বহুল সামরিক খাতের বাজেটের বেশির ভাগ গেছে এখন পর্যন্ত বিমান, নৌ ও গোলন্দাজ বাহিনীর পেছনে, যারা কিনা চীনের পারমাণবিক ও প্রথাগত ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালনা করে।
২০০২ ও ২০০৪ সালের দিকে আরও উন্নয়ন ঘটে সামরিক শক্তির আধুনিকায়নে। জেনারেল চেন বলেন, ২০১০ সাল পর্যন্ত আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর ভিত গঠন করা হয়েছে। পরবর্তী দশকে তাদের সমন্বিত কার্যকলাপ দেখা যাবে। যেখানে থাকবে কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশনস ও কম্পিউটারের সমন্বয়ে সম্মিলিত নেটওয়ার্ক। ২০২০ সালের মধ্যেই চীনের সেনাবাহিনী এ লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে। তবে চেন স্বীকার করেন, পশ্চিমাদের মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ শক্তি অর্জন করতে তাদের আরও কিছু সময় লাগতে পারে। তার পরও ২০১০ সালে সিএসবিএ জানায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যেই চীন প্রয়োজনীয় বেশকিছু সামরিক সরঞ্জামের অধিকারী হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, শত্রুপক্ষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য স্যাটেলাইট ও গোপন প্রযুক্তি, ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ও জাহাজবিধ্বংসী হাজারো ক্ষেপণাস্ত্র, ৬০টিরও বেশি গোপন ডুবোজাহাজ, কমপক্ষে ছয়টি পারমাণবিক শক্তিসমৃদ্ধ ডুবোজাহাজ, চালকসহ ও চালকবিহীন গোপন যুদ্ধবিমান। এ ছাড়া আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আকারে ছোট হলেও বিমানবাহী কয়েকটি রণতরীও সমুদ্রে ভাসাতে যাচ্ছে। যদিও সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য দেশটিকে আরও বেশ কয়েক বছর চেষ্টা করতে হবে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-04-24/news/252707
শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১২
ঈশ্বরের সন্ধানে!!!
আলম সাহেব। কাজী
আলম তালুকার। একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তার দলের লোকদের কাছে তিনি জনপ্রিয়।
তবে এলাকার লোকজনদের কাছে তিনি ‘ধনপ্রিয়’, মানে ধনসম্পদের দিকে তার প্রচুর
আগ্রহ এবং এ কারণে তিনি এখন প্রাইভেট ব্যাংক, পত্রিকা, চ্যানেলের মালিক আর
গার্মেন্ট ইত্যাদির তো কোনো হিসাব নেই। সবই ঠিক ছিল, কিন্তু হঠাত্ করে
তিনি আবিষ্কার করলেন তার গলার কাছে সব সময় কেমন যেন আইঢাই করে! একদিন তিনি
গেলেন এক নাক-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে। এই বিশেষজ্ঞের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে
তিনদিন লাগে। তবে আলম সাহেবের ব্যাপার আলাদা। তিনি ঠিকই তার প্রভাব খাটিয়ে
অ্যাপয়েন্টমেন্ট জোগাড় করলেন। গেলেন একদিন ডাক্তারের কাছে।
-কি সমস্যা? বুড়ো ডাক্তার ভ্রূ কুঁচকে তাকালেন তার দিকে
-সমস্যাটা গলায়।
-কি রকম সমস্যা?
-মানে গলার কাছে সবসময় কেমন আইঢাই করে।
-আইঢাই কি?
-মানে কিছু একটা আটকে আছে এমন একটা ভাব...
-হুম... বুড়ো বিশেষজ্ঞ নাক-কান-গলার ডাক্তার ছোট্ট একটা টর্চ দিয়ে গলার ভেতরটা দেখার চেষ্টা করলেন। গলা টিপে-টুপে দেখলেন। তার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কিছু প্রশ্ন করলেন, তারপর বললেন—
-আপনার রোগটা ধরতে পেরেছি।
-কি রোগ ডাক্তার সাহেব?
-এটাকে বলে খাই খাই রোগ।
-মানে? এবার আলম সাহেবের ভ্রূ জোড়া কুঁচকে যায়।
-বুঝলেন না? আপনি তো রাজনীতি করা লোক, তাই না? দেশের জনপ্রিয নেতা। অনেক খেয়েছেন... এতই বেশি খেযেছেন যে, গলার কাছে এখন সব আটকে গিয়ে আপনার ভাষায় গলা আইঢাই করছে।
-কি বলছেন এসব?
-ঠিকই বলছি... আপনার আসলে গলায় কোনো রোগ নেই... মানসিক রোগ... সারাজীবন খাই খাই রাজনীতি করেছেন, এখন তার ফল এই আইঢাই...
বাড়ি ফিরে এসে আলম সাহেবের মনে হলো গলার আইঢাই ভাবটা আরও বেড়েছে। এর মানে কি? তবে ডাক্তার ঠিকই বলেছেন। সে রাতে তিনি ভালো করে ঘুমুতে পারলেন না। এপাশ-ওপাশ করলেন শুধু। একপর্যায়ে স্ত্রী বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললেন, ‘কি হলো বিছানায় শুয়ে লাট্টু’র মতো ঘুরছো কেন?
-লাট্টুর মতো ঘুরছো মানে?
-তাই তো ঘুরছো... দেশের মানুষকেও ঘোরাও, ইদানীং দেখছি নিজেও ঘুরছো... আরও কি সব বলে গজগজ করতে করতে ঘুমিয়ে গেলেন স্ত্রী। তিনি জনগণকে লাট্টুর মতো ঘুরান? স্ত্রীর বাক্যটা যেন ঘৃতে অগ্নিসংযোগ ঘটাল, তার মাথার ভেতরটা গরম হয়ে গেল, তার ইচ্ছে হলো স্ত্রীকে কয়েকটা কড়া কথা বলবেন—তা না বলে তিনি উঠে বসলেন। বিছানা থেকে নেমে ড্রইংরুমে গিয়ে বসলেন। তারপর কি মনে করে দরজা খুলে নিঃশব্দে গেটের কাছে এসে দেখেন, কম বয়সী দারোয়ান ছেলেটা টুলে বসে আছে। তিনি আশা করেছিলেন, এসে দেখবেন দারোয়ান ছেলেটা ঘুমুচ্ছে এবং একটা ধমক দেবেন। স্ত্রীর ওপর রাগটা ওর ওপর ঝাড়বেন। কিন্তু ছেলে জেগে আছে। তাকে দেখে টুল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিল। রাত তখন আড়াইটা।
-তুমি রাতে ঘুমাও না?
-জি না স্যার।
-সত্যি ঘুমাও না?
-না স্যার। রাতে ঘুমালে ডিউটি হবে কেমনে?
আলম সাহেবের হঠাত্ মনে হলো এই বাচ্চা ছেলেটা যার বেতন মাত্র এক হাজার টাকা, সে তার বাড়ি পাহারা দেয় রাত জেগে আর তিনি ভেতরে এসির মধ্যে ঘুমান!
-যাও তুমি আজ ঘুমাতে যাও, আমি এখানে বসি।
-কি বলছেন স্যার? আপনি এই টুলে বসবেন?
-হ্যাঁ যাও... তুমি আজ ঘুমাও। আমার বাড়ি আজ আমিই পাহারা দেই। ছেলেটি অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, আর শক্ত টুলটায় তিনি সত্যি সত্যি বসেন।
-কি হলো, যাও বলছি।
দারোয়ান ছেলেটি কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর চলে গেল। টুলে বসে থাকলেন দেশের জনপ্রিয় নেতা কাজী আলম তালুকদার। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। আকাশে গোল একটা চাঁদ। গলার কাছটা আইঢাই করছে। তিনি কি সত্যিই বেশি খেয়ে ফেলেছেন?... আর তখনই তিনি একটা ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি যা খেয়েছেন, সব উগরে দিবেন। হ্যাঁ, কালই তিনি সব উগরে দিবেন। সত্যিই দিবেন।
সারা দেশে হইচই। দেশের জনপ্রিয় নেতা কাজী আলম তালুকদার তার সব সম্পদ রাষ্ট্রকে বুঝিয়ে দিয়ে দেশ ছেড়ে হিমালয়ের দিকে রওনা দিয়েছেন। খবর পেয়ে দেশের ঊনত্রিশটা চ্যানেল ছুটে এলো।
-স্যার, আপনি সত্যিই হিমালয়ের গুহায় চলে যাচ্ছেন সব ত্যাগ করে?
-হ্যাঁ, সত্যি।
-কিন্তু কেন স্যার?
-আমি হিমালয়ের গুহায় বসে ঈশ্বরের সন্ধান করব।
-এতদিন তাহলে কিসের সন্ধান করেছেন?
-এতদিন সম্পদের পেছনে ছুটেছি... জনগণকে ধোঁকা দিয়েছি, লাট্টুর মতো ওদের ঘুরিয়েছি... তাই হঠাত্ ঠিক করলাম...
-আপনার এই বোধোদয় হওয়ার কারণ?
-কোনো কারণ নেই, আমার গলার কাছটা আইঢাই করত... তারপর...
ঊনত্রিশ চ্যানেলকে বিদায় করে... বর্ডার ক্রস করে, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে তিনি উপস্থিত হলেন হিমালয়ের এক গুহায়। সেখানে আগে থেকেই এক সাধু বসে আছে। সাধুর সামনে একটা ল্যাপটপ!
-কি চাস এখানে? সাধু হুঙ্কার দিল।
-জি আমি ইশ্বরের সন্ধানে এসেছি।
-ওরে বোকা ঈশ্বরের সন্ধান পাওয়া এত সোজা? আমি কত বছর ধরে চেষ্টা করছি... এক্সেস ডিনাইড বলছে।
-কি বলেন? গুহায় বসে আপনি ল্যাপটপে ঈশ্বরকে খুঁজছেন?
-আরে ভাই টানা ১০ বছর ধ্যান করে দেখেছি লাভ হয়নি। তাই আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে চেষ্টা করছি... গড ডট কমে ঢুকে চেষ্টা করলাম অনেকক্ষণ, এক্সেস ডিনাইড বলছে। গুগলেও চেষ্টা করেছিলাম।
-জনাব আমার একটা প্রশ্ন ছিল।
-বলে ফেলুন।
-আপনি কেন গুহায় বসে ঈশ্বরের সন্ধান করছেন?
-আরে ভাই, আগে আমি ভালোই ছিলাম। বেশ ভালো ছিলাম... নিজের দেশে গাড়ি-বাড়ি, নারী, ফ্ল্যাট, গার্মেন্ট সবই ছিল... কিন্তু হঠাত্ আবিষ্কার করলাম গলার কাছটা কেমন আইঢাই করছে... তারপর...
-বুঝতে পেরেছি, আর বলতে হবে না।
কাজী আলম তালুকার ফিরে চলেছেন তার দেশে নিজ বাসভূমে। তিনি ঈশ্বরকে পেয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন ঈশ্বর আসলে মানুষের ভেতরেই বাস করেন। তাকে খুঁজে পেতে হিমালয়ের গুহা জরুরি নয়। তিনি তার মানুষের কাছে ফিরে চললেন... তিনি টের পেলেন তার গলার ভেতর সেই আইঢাই ভাবটা আর নেই...! হ
-কি সমস্যা? বুড়ো ডাক্তার ভ্রূ কুঁচকে তাকালেন তার দিকে
-সমস্যাটা গলায়।
-কি রকম সমস্যা?
-মানে গলার কাছে সবসময় কেমন আইঢাই করে।
-আইঢাই কি?
-মানে কিছু একটা আটকে আছে এমন একটা ভাব...
-হুম... বুড়ো বিশেষজ্ঞ নাক-কান-গলার ডাক্তার ছোট্ট একটা টর্চ দিয়ে গলার ভেতরটা দেখার চেষ্টা করলেন। গলা টিপে-টুপে দেখলেন। তার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কিছু প্রশ্ন করলেন, তারপর বললেন—
-আপনার রোগটা ধরতে পেরেছি।
-কি রোগ ডাক্তার সাহেব?
-এটাকে বলে খাই খাই রোগ।
-মানে? এবার আলম সাহেবের ভ্রূ জোড়া কুঁচকে যায়।
-বুঝলেন না? আপনি তো রাজনীতি করা লোক, তাই না? দেশের জনপ্রিয নেতা। অনেক খেয়েছেন... এতই বেশি খেযেছেন যে, গলার কাছে এখন সব আটকে গিয়ে আপনার ভাষায় গলা আইঢাই করছে।
-কি বলছেন এসব?
-ঠিকই বলছি... আপনার আসলে গলায় কোনো রোগ নেই... মানসিক রোগ... সারাজীবন খাই খাই রাজনীতি করেছেন, এখন তার ফল এই আইঢাই...
বাড়ি ফিরে এসে আলম সাহেবের মনে হলো গলার আইঢাই ভাবটা আরও বেড়েছে। এর মানে কি? তবে ডাক্তার ঠিকই বলেছেন। সে রাতে তিনি ভালো করে ঘুমুতে পারলেন না। এপাশ-ওপাশ করলেন শুধু। একপর্যায়ে স্ত্রী বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললেন, ‘কি হলো বিছানায় শুয়ে লাট্টু’র মতো ঘুরছো কেন?
-লাট্টুর মতো ঘুরছো মানে?
-তাই তো ঘুরছো... দেশের মানুষকেও ঘোরাও, ইদানীং দেখছি নিজেও ঘুরছো... আরও কি সব বলে গজগজ করতে করতে ঘুমিয়ে গেলেন স্ত্রী। তিনি জনগণকে লাট্টুর মতো ঘুরান? স্ত্রীর বাক্যটা যেন ঘৃতে অগ্নিসংযোগ ঘটাল, তার মাথার ভেতরটা গরম হয়ে গেল, তার ইচ্ছে হলো স্ত্রীকে কয়েকটা কড়া কথা বলবেন—তা না বলে তিনি উঠে বসলেন। বিছানা থেকে নেমে ড্রইংরুমে গিয়ে বসলেন। তারপর কি মনে করে দরজা খুলে নিঃশব্দে গেটের কাছে এসে দেখেন, কম বয়সী দারোয়ান ছেলেটা টুলে বসে আছে। তিনি আশা করেছিলেন, এসে দেখবেন দারোয়ান ছেলেটা ঘুমুচ্ছে এবং একটা ধমক দেবেন। স্ত্রীর ওপর রাগটা ওর ওপর ঝাড়বেন। কিন্তু ছেলে জেগে আছে। তাকে দেখে টুল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিল। রাত তখন আড়াইটা।
-তুমি রাতে ঘুমাও না?
-জি না স্যার।
-সত্যি ঘুমাও না?
-না স্যার। রাতে ঘুমালে ডিউটি হবে কেমনে?
আলম সাহেবের হঠাত্ মনে হলো এই বাচ্চা ছেলেটা যার বেতন মাত্র এক হাজার টাকা, সে তার বাড়ি পাহারা দেয় রাত জেগে আর তিনি ভেতরে এসির মধ্যে ঘুমান!
-যাও তুমি আজ ঘুমাতে যাও, আমি এখানে বসি।
-কি বলছেন স্যার? আপনি এই টুলে বসবেন?
-হ্যাঁ যাও... তুমি আজ ঘুমাও। আমার বাড়ি আজ আমিই পাহারা দেই। ছেলেটি অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, আর শক্ত টুলটায় তিনি সত্যি সত্যি বসেন।
-কি হলো, যাও বলছি।
দারোয়ান ছেলেটি কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর চলে গেল। টুলে বসে থাকলেন দেশের জনপ্রিয় নেতা কাজী আলম তালুকদার। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। আকাশে গোল একটা চাঁদ। গলার কাছটা আইঢাই করছে। তিনি কি সত্যিই বেশি খেয়ে ফেলেছেন?... আর তখনই তিনি একটা ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি যা খেয়েছেন, সব উগরে দিবেন। হ্যাঁ, কালই তিনি সব উগরে দিবেন। সত্যিই দিবেন।
সারা দেশে হইচই। দেশের জনপ্রিয় নেতা কাজী আলম তালুকদার তার সব সম্পদ রাষ্ট্রকে বুঝিয়ে দিয়ে দেশ ছেড়ে হিমালয়ের দিকে রওনা দিয়েছেন। খবর পেয়ে দেশের ঊনত্রিশটা চ্যানেল ছুটে এলো।
-স্যার, আপনি সত্যিই হিমালয়ের গুহায় চলে যাচ্ছেন সব ত্যাগ করে?
-হ্যাঁ, সত্যি।
-কিন্তু কেন স্যার?
-আমি হিমালয়ের গুহায় বসে ঈশ্বরের সন্ধান করব।
-এতদিন তাহলে কিসের সন্ধান করেছেন?
-এতদিন সম্পদের পেছনে ছুটেছি... জনগণকে ধোঁকা দিয়েছি, লাট্টুর মতো ওদের ঘুরিয়েছি... তাই হঠাত্ ঠিক করলাম...
-আপনার এই বোধোদয় হওয়ার কারণ?
-কোনো কারণ নেই, আমার গলার কাছটা আইঢাই করত... তারপর...
ঊনত্রিশ চ্যানেলকে বিদায় করে... বর্ডার ক্রস করে, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে তিনি উপস্থিত হলেন হিমালয়ের এক গুহায়। সেখানে আগে থেকেই এক সাধু বসে আছে। সাধুর সামনে একটা ল্যাপটপ!
-কি চাস এখানে? সাধু হুঙ্কার দিল।
-জি আমি ইশ্বরের সন্ধানে এসেছি।
-ওরে বোকা ঈশ্বরের সন্ধান পাওয়া এত সোজা? আমি কত বছর ধরে চেষ্টা করছি... এক্সেস ডিনাইড বলছে।
-কি বলেন? গুহায় বসে আপনি ল্যাপটপে ঈশ্বরকে খুঁজছেন?
-আরে ভাই টানা ১০ বছর ধ্যান করে দেখেছি লাভ হয়নি। তাই আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে চেষ্টা করছি... গড ডট কমে ঢুকে চেষ্টা করলাম অনেকক্ষণ, এক্সেস ডিনাইড বলছে। গুগলেও চেষ্টা করেছিলাম।
-জনাব আমার একটা প্রশ্ন ছিল।
-বলে ফেলুন।
-আপনি কেন গুহায় বসে ঈশ্বরের সন্ধান করছেন?
-আরে ভাই, আগে আমি ভালোই ছিলাম। বেশ ভালো ছিলাম... নিজের দেশে গাড়ি-বাড়ি, নারী, ফ্ল্যাট, গার্মেন্ট সবই ছিল... কিন্তু হঠাত্ আবিষ্কার করলাম গলার কাছটা কেমন আইঢাই করছে... তারপর...
-বুঝতে পেরেছি, আর বলতে হবে না।
কাজী আলম তালুকার ফিরে চলেছেন তার দেশে নিজ বাসভূমে। তিনি ঈশ্বরকে পেয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন ঈশ্বর আসলে মানুষের ভেতরেই বাস করেন। তাকে খুঁজে পেতে হিমালয়ের গুহা জরুরি নয়। তিনি তার মানুষের কাছে ফিরে চললেন... তিনি টের পেলেন তার গলার ভেতর সেই আইঢাই ভাবটা আর নেই...! হ
আ হ সা ন হা বী ব.
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/04/14/140894
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)