রতিবছর আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে লোডশেডিং। লোডশেডিংকে আমরা আর হারাতে
চাই না। হূদয়গ্রাহী পারফরম্যান্সের জন্য একে ‘গোল্ড মেডেল’ দেওয়া উচিত।
আমাদের শোবার ঘরে ‘নিরাপত্তা’ ঢুকতে না পারলেও ‘লোডশেডিং’ ঠিকই ঢুকে বসে
থাকে! সময় মেনে, নিয়ম মেনে আসা-যাওয়া করে। জাতীয় জীবনে তার অবদান কতটা
awesome, তা জানাতেই মোমবাতির আলোয় বসে এই লেখা লিখছি।
এ যুগে ‘অ্যানালগ সামাজিকতা’ বিরল বস্তু। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কল্যাণে তা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। লোডশেডিংয়ের সময় গরমে ‘হিট স্ট্রোকের’ ভয়ে রাত-বিরাতে অনেকে বাসা থেকে বের হয়। ফলে প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। আবার বসতবাড়ির চারপাশে এই লোকসমাগম হওয়ায় চোর-ছেঁচড়দের উৎপাত কমে গেছে। পরিণামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে কেউ কেউ চলে যায় ছাদে। জ্যোৎস্নার আলো খেতে খেতে অণুকাব্য রচনা করে। এভাবে সামষ্টিক সুকুমারবৃত্তির চর্চা হওয়ায় ‘লোডশেডিংয়ের রাজ্যে পৃথিবী পদ্যময়’ হয়ে ওঠে!
ছুটির দিনেও লোডশেডিংয়ের কর্মতৎপরতা আমাদের আবেগাপ্লুত করে! এ থেকে আমরা কর্মঠ হওয়ার শিক্ষা পাই। কিন্তু এতটুকু শিক্ষা দিয়েই সে ক্ষান্ত হয় না। রাতে খেয়েই যাঁদের ঘুমানোর বদভ্যাস রয়েছে, তাঁদের মহৌষধ লোডশেডিং। বিছানায় শোয়ামাত্রই বিদ্যুৎ চলে যায়। বাধ্য হয়ে তাঁরা বিছানা থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি করেন। এভাবে জাতীয় সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়া ভ্যাপসা গরমে মধ্যরাতে বীরদর্পে ঘরে ঢুকে পরের দিনের কাজের জন্য লোডশেডিং আমাদের ‘ওয়ার্ম আপ’ করে!
দেশে চলছে হিন্দি সিরিয়ালের আগ্রাসন। তাই দরকার আমাদের সংস্কৃতির পুনর্বাসন। লোডশেডিংয়ের ঝাকানাকা অবদানে আমরা শিগগিরই ফিরে পাব হারানো সিংহাসন! কারণ বিদ্যুতের অভাবে হিন্দি চ্যানেল দেখা যায় না, যদিও অন্যান্য চ্যানেলও পটল তোলে। অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের ফলে আমাদের অজুহাত দেওয়াও অনেক সহজ হয়েছে! অন্ধকারে ঠিকমতো রান্না করা যায় না—এই অজুহাতে গিন্নিরা রান্না থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। একই অছিলায় হোমওয়ার্ক না করেও পার পেতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। কয়েকটি সিম দিয়ে যারা একাধিক প্রেম করে, তারা মোবাইল বন্ধের জন্য প্রেমিকাদের কাছে সহজেই কৈফিয়ত দিতে পারে, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে মোবাইলে চার্জ ছিল না।’ লোডশেডিং আমাদের ধৈর্য বাড়াতেও অবদান রাখছে। এত লোডশেডিংয়ের মধ্যেও আমরা যে হাসিমুখে সময় কাটাচ্ছি, এটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য! বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্য, যান চলাচল ইত্যাদিতে চরম অনিয়ম সত্ত্বেও আমরা হেসেখেলে জীবন পার করছি। এ জন্য আমাদের প্রত্যেকের নাম ‘রিপ্লিজ বিলিভ ইট অর নট’-এ অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।
পৃথিবীতে শক্তির অপচয় রোধে কত কিছুই না করা হচ্ছে! শক্তির এই অপচয় রোধে আমরা প্রতিনিয়ত দৃষ্টান্ত তৈরি করে চলেছি। এটা সম্ভব হচ্ছে লোডশেডিংয়ের ফলেই। আরেকটু চেষ্টা করলেই আমরা লোডশেডিংয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি। তখন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে আমাদের কিছুই যাবে-আসবে না! তদুপরি, লোডশেডিংয়ের বাম্পার ফলন নিশ্চিত করতে পারলে অতিরিক্ত লোডশেডিং বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা যেতে পারে! যুগে যুগে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কত কিছু আবিষ্কার করা হয়েছে। তেমনি একটু খাটুনি খাটলেই লোডশেডিং ব্যবহার করেও হয়তো নতুন কিছু আবিষ্কার করা সম্ভব হবে!
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজের জন্য অল্প হলেও বিদ্যুতের প্রয়োজন। যেমন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেটিং। অভিমানের সুরে নয়, অভিযোগের তালে বলছি, দূর-দূরান্ত থেকে আসা ‘অতিথি বিদ্যুৎ’ আমাদের দরকার নেই। বায়োগ্যাস বা সোলার প্যানেলের সাহায্যে আমরা ল্যাপটপে চার্জ দিতে পারি। বিদ্যুৎহীনতায় যাঁদের ব্যবসায় লালবাতি জ্বলেছে, তাঁরা কাছা মেরে আইপিএসের ব্যবসায় নেমে পড়ুন। দরকার হলে আইপিএস ব্যবহার করব; তবুও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া বিদ্যুৎকে আমরা ঘরে ঢুকতে দেব না। আসুন, আমরা স্বাগত জানাই লোডশেডিংকে। বৈশাখ আসার আগেই গেয়ে উঠি, ‘এসো হে লোডশেডিং, এসো এসো!’
এ যুগে ‘অ্যানালগ সামাজিকতা’ বিরল বস্তু। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কল্যাণে তা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। লোডশেডিংয়ের সময় গরমে ‘হিট স্ট্রোকের’ ভয়ে রাত-বিরাতে অনেকে বাসা থেকে বের হয়। ফলে প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। আবার বসতবাড়ির চারপাশে এই লোকসমাগম হওয়ায় চোর-ছেঁচড়দের উৎপাত কমে গেছে। পরিণামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে কেউ কেউ চলে যায় ছাদে। জ্যোৎস্নার আলো খেতে খেতে অণুকাব্য রচনা করে। এভাবে সামষ্টিক সুকুমারবৃত্তির চর্চা হওয়ায় ‘লোডশেডিংয়ের রাজ্যে পৃথিবী পদ্যময়’ হয়ে ওঠে!
ছুটির দিনেও লোডশেডিংয়ের কর্মতৎপরতা আমাদের আবেগাপ্লুত করে! এ থেকে আমরা কর্মঠ হওয়ার শিক্ষা পাই। কিন্তু এতটুকু শিক্ষা দিয়েই সে ক্ষান্ত হয় না। রাতে খেয়েই যাঁদের ঘুমানোর বদভ্যাস রয়েছে, তাঁদের মহৌষধ লোডশেডিং। বিছানায় শোয়ামাত্রই বিদ্যুৎ চলে যায়। বাধ্য হয়ে তাঁরা বিছানা থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি করেন। এভাবে জাতীয় সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়া ভ্যাপসা গরমে মধ্যরাতে বীরদর্পে ঘরে ঢুকে পরের দিনের কাজের জন্য লোডশেডিং আমাদের ‘ওয়ার্ম আপ’ করে!
দেশে চলছে হিন্দি সিরিয়ালের আগ্রাসন। তাই দরকার আমাদের সংস্কৃতির পুনর্বাসন। লোডশেডিংয়ের ঝাকানাকা অবদানে আমরা শিগগিরই ফিরে পাব হারানো সিংহাসন! কারণ বিদ্যুতের অভাবে হিন্দি চ্যানেল দেখা যায় না, যদিও অন্যান্য চ্যানেলও পটল তোলে। অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের ফলে আমাদের অজুহাত দেওয়াও অনেক সহজ হয়েছে! অন্ধকারে ঠিকমতো রান্না করা যায় না—এই অজুহাতে গিন্নিরা রান্না থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। একই অছিলায় হোমওয়ার্ক না করেও পার পেতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। কয়েকটি সিম দিয়ে যারা একাধিক প্রেম করে, তারা মোবাইল বন্ধের জন্য প্রেমিকাদের কাছে সহজেই কৈফিয়ত দিতে পারে, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে মোবাইলে চার্জ ছিল না।’ লোডশেডিং আমাদের ধৈর্য বাড়াতেও অবদান রাখছে। এত লোডশেডিংয়ের মধ্যেও আমরা যে হাসিমুখে সময় কাটাচ্ছি, এটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য! বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্য, যান চলাচল ইত্যাদিতে চরম অনিয়ম সত্ত্বেও আমরা হেসেখেলে জীবন পার করছি। এ জন্য আমাদের প্রত্যেকের নাম ‘রিপ্লিজ বিলিভ ইট অর নট’-এ অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।
পৃথিবীতে শক্তির অপচয় রোধে কত কিছুই না করা হচ্ছে! শক্তির এই অপচয় রোধে আমরা প্রতিনিয়ত দৃষ্টান্ত তৈরি করে চলেছি। এটা সম্ভব হচ্ছে লোডশেডিংয়ের ফলেই। আরেকটু চেষ্টা করলেই আমরা লোডশেডিংয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি। তখন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে আমাদের কিছুই যাবে-আসবে না! তদুপরি, লোডশেডিংয়ের বাম্পার ফলন নিশ্চিত করতে পারলে অতিরিক্ত লোডশেডিং বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা যেতে পারে! যুগে যুগে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কত কিছু আবিষ্কার করা হয়েছে। তেমনি একটু খাটুনি খাটলেই লোডশেডিং ব্যবহার করেও হয়তো নতুন কিছু আবিষ্কার করা সম্ভব হবে!
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজের জন্য অল্প হলেও বিদ্যুতের প্রয়োজন। যেমন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেটিং। অভিমানের সুরে নয়, অভিযোগের তালে বলছি, দূর-দূরান্ত থেকে আসা ‘অতিথি বিদ্যুৎ’ আমাদের দরকার নেই। বায়োগ্যাস বা সোলার প্যানেলের সাহায্যে আমরা ল্যাপটপে চার্জ দিতে পারি। বিদ্যুৎহীনতায় যাঁদের ব্যবসায় লালবাতি জ্বলেছে, তাঁরা কাছা মেরে আইপিএসের ব্যবসায় নেমে পড়ুন। দরকার হলে আইপিএস ব্যবহার করব; তবুও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া বিদ্যুৎকে আমরা ঘরে ঢুকতে দেব না। আসুন, আমরা স্বাগত জানাই লোডশেডিংকে। বৈশাখ আসার আগেই গেয়ে উঠি, ‘এসো হে লোডশেডিং, এসো এসো!’
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-04-09/news/238964