সিএনএনসহ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে এ কথা অবিরাম প্রচারিত হচ্ছে যে মার্কিন
জনগণ ভোট দিয়ে তাঁদের দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন ঠিক, তবে এই
নির্বাচন সারা দুনিয়ার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এ কথা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই যে
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই দেশে রাষ্ট্র পরিচালনা বা পররাষ্ট্রসম্পর্কিত
যেকোনো নীতি বা সিদ্ধান্ত বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন
জীবনকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম। কিন্তু এই নির্বাচন কি আসলেই কোনো পরিবর্তন
আনতে পারবে? বুশ থেকে ওবামা পরিবর্তনে বিশ্বে মার্কিন ভূমিকার কি কোনো
পরিবর্তন এসেছে? ক্ষমতার অন্যান্য স্তম্ভ অপরিবর্তিত রেখে প্রেসিডেন্ট
পরিবর্তনে কি ঘরে-বাইরে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সম্ভব?
নির্বাচন সামনে রেখে ওবামা-রমনি বিতর্ক ঘিরে মাসাধিক কাল ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। ব্যাপকভাবে জনগণের বিভিন্ন অংশ এই বিতর্ক দেখেছেন। ওই সময়ে আমার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার এবং নানা পেশার অনেকের কথা শোনার সুযোগ হয়েছিল। ওবামা-রমনি বিতর্কের প্রথমটি আমি শুনেছি সানফ্রানসিসকোতে। ওয়াশিংটনে শুনেছি ওবামা-রমনি দ্বিতীয় দফা বিতর্ক, আর বিদেন-রায়ান বিতর্ক শুনেছি নিউইয়র্কে। তৃতীয় বিতর্কের সময় ছিলাম ফিরতি পথে। প্রথম বিতর্ক শোনাকালে আমার প্রতি এই প্রশ্ন নিক্ষেপ করেছিলেন সেখানে উপস্থিত মার্কিনরা, এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য কী প্রভাব ফেলতে পারে? কে নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে? উত্তর আমি দিয়েছিলাম কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে, সেটা পরে বলছি। সঙ্গে তাঁদেরও আমি একটি প্রশ্ন করেছিলাম, ‘মার্কিন নির্বাচন সম্পর্কে বার্ট্রান্ড রাসেলের কথার সঙ্গে কি তোমরা একমত?’ রাসেলের কথাটি তাঁদের জানা ছিল না। বললাম, যা রাসেল বলেছিলেন, ‘মার্কিন জনগণের ট্র্যাজেডি হলো, তারা যাদের নির্বাচিত করে তারা দেশ চালায় না, আর দেশ যারা চালায় তাদের নির্বাচিত করার কোনো সুযোগ মার্কিন নাগরিকদের নেই।’ কারা তারা? এরা বৃহৎ সব বহুজাতিক সংস্থা আর এদের সহযোগী অস্ত্র ব্যবসায়ী, পেন্টাগনসহ মিলিটারি এস্টাবলিশমেন্ট—সব মিলিয়ে মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স। গত মাসে ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হু ওউনস দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক বক্তব্যে এমআইটির প্রফেসর নোয়াম চমস্কিও একই কথা বললেন। এ কারণেই চমস্কি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে এদের অবস্থানে কার্যত কোনো পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না। এই দুইয়ের মধ্যে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রাখতে সব আয়োজন শক্তিশালী।
নির্বাচনের সব কটি বিতর্কেই বেকারত্ব, ঋণগ্রস্ততা, স্বাস্থ্যসুবিধার সংকট, বৈষম্য, যুদ্ধব্যয়—এসব প্রসঙ্গ এসেছে। এসব বিতর্কেই উঠে এসেছে কিছু ভয়ংকর চিত্র; পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ও সম্পদশালী দুনিয়ার অনেক অঞ্চলের সম্পদ লুণ্ঠনকারী দেশের জন্য যা অবিশ্বাস্য মনে হবে। ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থানকারী এই ব্যক্তিরাই বললেন, মার্কিন দেশে এখন প্রায় তিন কোটি মানুষ কখনো না কখনো অনাহারে থাকে। ৪ দশমিক ৭ কোটি মানুষ চিকিৎসা বিমার বাইরে, মানে চিকিৎসাসেবা নিতে অক্ষম। সমান কাজ হলেও নারীর জন্য মজুরি পুরুষের শতকরা ৭০ ভাগ। জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। বেকারত্বের বোঝা কমেনি। নির্বাচনের আগে আগে সরকারি তথ্যেই দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪ দশমিক ৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। শিশুদের প্রতি পাঁচজনের একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে।
এই বিশাল অনাহারী মানুষের জন্য কি এই সম্পদশালী দেশে সম্পদের অভাব? এটা ঠিক যে অনাহারী মানুষের খাদ্য সরবরাহের জন্য ফুড স্ট্যাম্পসহ নানা ব্যবস্থা আছে। এর জন্য বছরে বছরে খরচ বেড়েছে। ফুড স্ট্যাম্পসহ গরিবদের সমর্থনের নানা খাতে ব্যয় এখন প্রায় ৬০ বিলিয়ন (এক বিলিয়ন সমান ১০০ কোটি) মার্কিন ডলার, যা কমানোর চাপ আছে। কিন্তু এই দেশেরই কারাগারের পেছনে এখন বার্ষিক ব্যয় ৮০ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রই এখন বৃহত্তম কারাগার, অর্থাৎ বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ কারাগারে বাস করে। ১ নভেম্বর আল-জাজিরায় প্রদর্শিত এক তথ্যচিত্রে একজন মার্কিন গবেষক বলছিলেন, ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে যত কৃষ্ণাঙ্গ কারাগারে আছে, সেই সংখ্যা দাসবাণিজ্যকালে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চসংখ্যক কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের চেয়ে বেশি।’ আর এই দেশেই ৭০০ বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর খরচ হয় অন্য দেশ দখল, গোয়েন্দাবৃত্তি আর গণহত্যায়। এই ব্যয়ে লাভবান হয় শতকরা ১ ভাগেরও কম জনসংখ্যার ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী, তেল, অস্ত্র নির্মাণসহ বিভিন্ন কোম্পানি। নানা রকম ভর্তুকি, করসুবিধা, নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষতিকর বিনিয়োগ ও জালিয়াতি, দেশে দেশে অবাধ তৎপরতা এদের উচ্চ আয়ের উৎস।
সরকারি হিসাবই বলে, এই শতকরা ১ ভাগের আয় দেশের আয়ের শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ, আর শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ সম্পদ তাদের দখলে। রাসেলের মতো উদারনীতিক দার্শনিক এদের ক্ষমতার প্রতিই ইঙ্গিত করেছিলেন। এদের খাঁই পূরণ করতে গিয়ে বিশ্ব এখন স্থায়ী সন্ত্রাসের ভূমি আর যুক্তরাষ্ট্র নিজেই সবচেয়ে বড় ঋণগ্রস্ত দেশ। এখন মার্কিন ঋণ প্রায় তার বার্ষিক জিডিপির সমান। ঋণের মাত্রা যা আগে নির্দিষ্ট করা ছিল, কিছুদিন আগেই কংগ্রেস তা বৃদ্ধি করেছে। বৈষম্যের মাত্রাও এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কদিন আগে নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডির আঘাতে বিপদগ্রস্ত হলো। স্থায়ী ও নিয়মিত বেতন বা মজুরি পান, তার তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। অস্থায়ী, খণ্ডকালীনও অনেকে। স্বাস্থ্যবিমাহীন, খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসার সমস্যায় যাঁরা আগেই ছিলেন, তাঁদের নাজুক অবস্থা আরও বাড়ল। নিউ অরলিন্সে বুশ আমলের ঘটা ক্যাটরিনার ক্ষত অনেকের জন্য এখনো পুরোপুরি সারেনি। লক্ষাধিক মানুষ তখন গৃহহীন হয়েছে। এই দরিদ্র মানুষের জন্য কোনো জাতীয় পরিকল্পনা তখন দেখা যায়নি। ঋণের বোঝা বেড়েছে তাদের। কিন্তু পুনর্গঠনের নামে ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির হেলিবার্টনসহ কয়েকটি কোম্পানি ঠিকই বিলিয়ন ডলার কন্ট্রাক্ট পেয়েছে।
মার্কিন আগ্রহী শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমাদের কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরলাম। ২০০১ সালের ১৫ মে ঢাকায় এক বক্তব্যে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মেরি অ্যান পিটার্স কয়েক মাস পরে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের নির্বাচনে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁদের প্রথম ১০০ দিনে করণীয় ঠিক করে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিল মার্কিন কোম্পানি ইউনোকলের প্রস্তাব অনুযায়ী ভারতে গ্যাস রপ্তানি ও চট্টগ্রাম বন্দরকে মার্কিন এক কোম্পানির হাতে ২০০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া। সেটা ছিল জুনিয়র বুশ আমল। সেই বুশ আমলের আট বছর এই একই ধারায় আরও তৎপরতা চলেছে। এরপর ২০০৮ সালে শুরু হলো ওবামা আমল। উইকিলিকস সূত্র পরিষ্কার করেছে, এই আমলের রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি জ্বালানি উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধরেছেন কনোকোফিলিপসের সঙ্গে গ্যাস রপ্তানিমুখী চুক্তি সম্পাদন করতে। একই সঙ্গে তিনি বিশেষ জোর দিয়েছেন, এশিয়া এনার্জির উন্মুক্ত খনি অতিশিগগিরই অনুমতি দেওয়ার জন্য। লন্ডনে তালিকাভুক্ত ও জনপ্রতিরোধের মুখে বিতাড়িত একটি অনভিজ্ঞ কোম্পানির মাধ্যমে মাটি-পানি-মানুষবিনাশী একটি ধ্বংসযজ্ঞের প্রকল্প বাস্তবায়নে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কেন এত আগ্রহ? উত্তর আসে উইকিলিকসে পাওয়া তাঁর বক্তব্য থেকেই। তিনি বলেছেন, এতে তাদের শতকরা ৬০ ভাগ স্বার্থ আছে। এটি ছিল ২০০৯ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। তিনি গেলেন। এরপর বর্তমান রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা গত কিছুদিনে অনেক বক্তব্য দিয়েছেন। কয়েক দফায় তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, অবশ্যই ফুলবাড়ী উন্মুক্ত খনির প্রকল্প তাড়াতাড়ি চালু করতে হবে। বঙ্গোপসাগরের গ্যাস ব্লকসহ আরও সর্বনাশা চুক্তি করাসহ তিনি বাংলাদেশ থেকে গ্যাস, কয়লা এমনকি বিদ্যুৎও রপ্তানির ওপর জোর দিয়েছেন (ডেইলি সান, ১২ অক্টোবর ২০১২)। নিরাপত্তার নামে নানা সামরিক চুক্তির বিষয়েও একই ধারাবাহিকতা দেখা যায়। ‘মুক্ত বাজার অর্থনীতির’ সব নিয়মনীতি ভঙ্গ করে মার্কিন সব সরকারই বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য আমদানির ওপর উচ্চ শুল্কহার বসিয়ে রেখেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘বিদেশি সাহায্য’ নামে যে পরিমাণ অর্থ আসে, তার চার গুণ তারা আয় করে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের ওপর আরোপিত উচ্চহারের শুল্ক থেকে। এসব দৃষ্টান্ত দেখিয়েই বললাম, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে কোনো পার্থক্য আমরা টের পাই না। আমার কথা শুনে শ্রোতাদের মধ্য থেকেই একজন বললেন, এসব দূতাবাস যার করের পয়সায় চলে, সেই মার্কিন জনগণের প্রতিনিধিত্ব তারা করে না। তারা আসলে বৃহৎ করপোরেট স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে!
উপস্থিত অধিকাংশই ছিলেন ‘আমরা ৯৯ শতাংশ’ আন্দোলনের অংশীদার।
মার্কিন জনগণ ওবামার ওপর অনেক ভরসা করেছিলেন। পরিবর্তনের কথা বলেই তিনি প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসেছিলেন। নির্বাচনের আগে আগে তাঁর লেখা অডাসিটি অব হোপ গ্রন্থটি তরুণদের মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছিল। মানুষ তখন বুশ-চেনি-রামসফেল্ড-রাইস চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মরিয়া। ক্ষমতায় এসেছিলেন ওবামা। তিনি পরিবর্তন করতে পারেননি, নিজেই পরিবর্তিত হয়েছেন মেশিনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য। যতটুকু ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তাতেই রিপাবলিকানদের প্রচারণায় তিনি বামপন্থী! এবারে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, ওবামার এককালীন সমর্থকেরা সাধারণভাবে হতাশ, কিন্তু রমনির ভয়েই শেষ পর্যন্ত তাঁদের ওবামাকেই ভোট দিতে হবে। কেননা, দেশের ভেতরে ওবামা কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না আনতে পারলেও রমনি যে রিপাবলিকানদের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাদের নীতি ও কর্মসূচি ধনিক শ্রেণীর পক্ষে। শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, অশ্বেতাঙ্গ, ইমিগ্র্যান্ট ও নারীর জন্য আরও প্রতিকূল। সেটাই ব্যর্থতা বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ সত্ত্বেও ওবামার প্রধান ভরসা।
শিল্পায়িত বিশ্বের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই শ্রমজীবী মানুষ সবচেয়ে অসংগঠিত। অভিবাসীদের দেশ হওয়ার কারণে বিভক্তি বজায় রাখা খুব সহজ। শতকরা মাত্র সাতজন সেখানে ইউনিয়নভুক্ত। বাকি সবাই অসংগঠিত। নানা ধরনের শ্রমিকেরা সংখ্যায় গরিষ্ঠ হলেও তাঁদের অস্তিত্ব ঢেকে ফেলার চেষ্টাই বরাবর সফল হয়েছে। মে দিবস তৈরি হয়েছিল এই যুক্তরাষ্ট্রেরই শিকাগো শহরে, অথচ মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রশাসিত দেশগুলোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রই হচ্ছে উল্লেখযোগ্য দেশ, যেখানে মে দিবস সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। শ্রমিকদের লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা ভুলিয়ে দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন। মিলান কুন্ডেরার ভাষায়, মানুষের লড়াই আসলে ভুলিয়ে দেওয়ার জাল থেকে নিজেকে উদ্ধার করা। সে জন্যই যুক্তরাষ্ট্রে ‘আমরা ৯৯ শতাংশ’ নামে নতুন পরিচয়ের উদ্ভব হয়েছে। রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তা এখনো স্পষ্ট রূপ নেয়নি। তার ফলে নির্বাচনের নামে ১ শতাংশ ধনপতিদের মুখপাত্র বাছাইয়ের এই বছরের পর্বেও মানুষের সামনে অপশন বা বাছাই করার সুযোগ সীমিত—‘বিগ অর বিগার এভিল’। এই অসহায়ত্ব বাংলাদেশের মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হবে না।
৩ নভেম্বর ২০১২
আনু মুহাম্মদ: অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
নির্বাচন সামনে রেখে ওবামা-রমনি বিতর্ক ঘিরে মাসাধিক কাল ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। ব্যাপকভাবে জনগণের বিভিন্ন অংশ এই বিতর্ক দেখেছেন। ওই সময়ে আমার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার এবং নানা পেশার অনেকের কথা শোনার সুযোগ হয়েছিল। ওবামা-রমনি বিতর্কের প্রথমটি আমি শুনেছি সানফ্রানসিসকোতে। ওয়াশিংটনে শুনেছি ওবামা-রমনি দ্বিতীয় দফা বিতর্ক, আর বিদেন-রায়ান বিতর্ক শুনেছি নিউইয়র্কে। তৃতীয় বিতর্কের সময় ছিলাম ফিরতি পথে। প্রথম বিতর্ক শোনাকালে আমার প্রতি এই প্রশ্ন নিক্ষেপ করেছিলেন সেখানে উপস্থিত মার্কিনরা, এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য কী প্রভাব ফেলতে পারে? কে নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে? উত্তর আমি দিয়েছিলাম কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে, সেটা পরে বলছি। সঙ্গে তাঁদেরও আমি একটি প্রশ্ন করেছিলাম, ‘মার্কিন নির্বাচন সম্পর্কে বার্ট্রান্ড রাসেলের কথার সঙ্গে কি তোমরা একমত?’ রাসেলের কথাটি তাঁদের জানা ছিল না। বললাম, যা রাসেল বলেছিলেন, ‘মার্কিন জনগণের ট্র্যাজেডি হলো, তারা যাদের নির্বাচিত করে তারা দেশ চালায় না, আর দেশ যারা চালায় তাদের নির্বাচিত করার কোনো সুযোগ মার্কিন নাগরিকদের নেই।’ কারা তারা? এরা বৃহৎ সব বহুজাতিক সংস্থা আর এদের সহযোগী অস্ত্র ব্যবসায়ী, পেন্টাগনসহ মিলিটারি এস্টাবলিশমেন্ট—সব মিলিয়ে মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স। গত মাসে ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হু ওউনস দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক বক্তব্যে এমআইটির প্রফেসর নোয়াম চমস্কিও একই কথা বললেন। এ কারণেই চমস্কি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে এদের অবস্থানে কার্যত কোনো পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না। এই দুইয়ের মধ্যে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রাখতে সব আয়োজন শক্তিশালী।
নির্বাচনের সব কটি বিতর্কেই বেকারত্ব, ঋণগ্রস্ততা, স্বাস্থ্যসুবিধার সংকট, বৈষম্য, যুদ্ধব্যয়—এসব প্রসঙ্গ এসেছে। এসব বিতর্কেই উঠে এসেছে কিছু ভয়ংকর চিত্র; পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ও সম্পদশালী দুনিয়ার অনেক অঞ্চলের সম্পদ লুণ্ঠনকারী দেশের জন্য যা অবিশ্বাস্য মনে হবে। ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থানকারী এই ব্যক্তিরাই বললেন, মার্কিন দেশে এখন প্রায় তিন কোটি মানুষ কখনো না কখনো অনাহারে থাকে। ৪ দশমিক ৭ কোটি মানুষ চিকিৎসা বিমার বাইরে, মানে চিকিৎসাসেবা নিতে অক্ষম। সমান কাজ হলেও নারীর জন্য মজুরি পুরুষের শতকরা ৭০ ভাগ। জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। বেকারত্বের বোঝা কমেনি। নির্বাচনের আগে আগে সরকারি তথ্যেই দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪ দশমিক ৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। শিশুদের প্রতি পাঁচজনের একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে।
এই বিশাল অনাহারী মানুষের জন্য কি এই সম্পদশালী দেশে সম্পদের অভাব? এটা ঠিক যে অনাহারী মানুষের খাদ্য সরবরাহের জন্য ফুড স্ট্যাম্পসহ নানা ব্যবস্থা আছে। এর জন্য বছরে বছরে খরচ বেড়েছে। ফুড স্ট্যাম্পসহ গরিবদের সমর্থনের নানা খাতে ব্যয় এখন প্রায় ৬০ বিলিয়ন (এক বিলিয়ন সমান ১০০ কোটি) মার্কিন ডলার, যা কমানোর চাপ আছে। কিন্তু এই দেশেরই কারাগারের পেছনে এখন বার্ষিক ব্যয় ৮০ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রই এখন বৃহত্তম কারাগার, অর্থাৎ বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ কারাগারে বাস করে। ১ নভেম্বর আল-জাজিরায় প্রদর্শিত এক তথ্যচিত্রে একজন মার্কিন গবেষক বলছিলেন, ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে যত কৃষ্ণাঙ্গ কারাগারে আছে, সেই সংখ্যা দাসবাণিজ্যকালে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চসংখ্যক কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের চেয়ে বেশি।’ আর এই দেশেই ৭০০ বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর খরচ হয় অন্য দেশ দখল, গোয়েন্দাবৃত্তি আর গণহত্যায়। এই ব্যয়ে লাভবান হয় শতকরা ১ ভাগেরও কম জনসংখ্যার ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী, তেল, অস্ত্র নির্মাণসহ বিভিন্ন কোম্পানি। নানা রকম ভর্তুকি, করসুবিধা, নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষতিকর বিনিয়োগ ও জালিয়াতি, দেশে দেশে অবাধ তৎপরতা এদের উচ্চ আয়ের উৎস।
সরকারি হিসাবই বলে, এই শতকরা ১ ভাগের আয় দেশের আয়ের শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ, আর শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ সম্পদ তাদের দখলে। রাসেলের মতো উদারনীতিক দার্শনিক এদের ক্ষমতার প্রতিই ইঙ্গিত করেছিলেন। এদের খাঁই পূরণ করতে গিয়ে বিশ্ব এখন স্থায়ী সন্ত্রাসের ভূমি আর যুক্তরাষ্ট্র নিজেই সবচেয়ে বড় ঋণগ্রস্ত দেশ। এখন মার্কিন ঋণ প্রায় তার বার্ষিক জিডিপির সমান। ঋণের মাত্রা যা আগে নির্দিষ্ট করা ছিল, কিছুদিন আগেই কংগ্রেস তা বৃদ্ধি করেছে। বৈষম্যের মাত্রাও এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কদিন আগে নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডির আঘাতে বিপদগ্রস্ত হলো। স্থায়ী ও নিয়মিত বেতন বা মজুরি পান, তার তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। অস্থায়ী, খণ্ডকালীনও অনেকে। স্বাস্থ্যবিমাহীন, খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসার সমস্যায় যাঁরা আগেই ছিলেন, তাঁদের নাজুক অবস্থা আরও বাড়ল। নিউ অরলিন্সে বুশ আমলের ঘটা ক্যাটরিনার ক্ষত অনেকের জন্য এখনো পুরোপুরি সারেনি। লক্ষাধিক মানুষ তখন গৃহহীন হয়েছে। এই দরিদ্র মানুষের জন্য কোনো জাতীয় পরিকল্পনা তখন দেখা যায়নি। ঋণের বোঝা বেড়েছে তাদের। কিন্তু পুনর্গঠনের নামে ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির হেলিবার্টনসহ কয়েকটি কোম্পানি ঠিকই বিলিয়ন ডলার কন্ট্রাক্ট পেয়েছে।
মার্কিন আগ্রহী শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমাদের কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরলাম। ২০০১ সালের ১৫ মে ঢাকায় এক বক্তব্যে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মেরি অ্যান পিটার্স কয়েক মাস পরে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের নির্বাচনে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁদের প্রথম ১০০ দিনে করণীয় ঠিক করে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিল মার্কিন কোম্পানি ইউনোকলের প্রস্তাব অনুযায়ী ভারতে গ্যাস রপ্তানি ও চট্টগ্রাম বন্দরকে মার্কিন এক কোম্পানির হাতে ২০০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া। সেটা ছিল জুনিয়র বুশ আমল। সেই বুশ আমলের আট বছর এই একই ধারায় আরও তৎপরতা চলেছে। এরপর ২০০৮ সালে শুরু হলো ওবামা আমল। উইকিলিকস সূত্র পরিষ্কার করেছে, এই আমলের রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি জ্বালানি উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধরেছেন কনোকোফিলিপসের সঙ্গে গ্যাস রপ্তানিমুখী চুক্তি সম্পাদন করতে। একই সঙ্গে তিনি বিশেষ জোর দিয়েছেন, এশিয়া এনার্জির উন্মুক্ত খনি অতিশিগগিরই অনুমতি দেওয়ার জন্য। লন্ডনে তালিকাভুক্ত ও জনপ্রতিরোধের মুখে বিতাড়িত একটি অনভিজ্ঞ কোম্পানির মাধ্যমে মাটি-পানি-মানুষবিনাশী একটি ধ্বংসযজ্ঞের প্রকল্প বাস্তবায়নে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কেন এত আগ্রহ? উত্তর আসে উইকিলিকসে পাওয়া তাঁর বক্তব্য থেকেই। তিনি বলেছেন, এতে তাদের শতকরা ৬০ ভাগ স্বার্থ আছে। এটি ছিল ২০০৯ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। তিনি গেলেন। এরপর বর্তমান রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা গত কিছুদিনে অনেক বক্তব্য দিয়েছেন। কয়েক দফায় তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, অবশ্যই ফুলবাড়ী উন্মুক্ত খনির প্রকল্প তাড়াতাড়ি চালু করতে হবে। বঙ্গোপসাগরের গ্যাস ব্লকসহ আরও সর্বনাশা চুক্তি করাসহ তিনি বাংলাদেশ থেকে গ্যাস, কয়লা এমনকি বিদ্যুৎও রপ্তানির ওপর জোর দিয়েছেন (ডেইলি সান, ১২ অক্টোবর ২০১২)। নিরাপত্তার নামে নানা সামরিক চুক্তির বিষয়েও একই ধারাবাহিকতা দেখা যায়। ‘মুক্ত বাজার অর্থনীতির’ সব নিয়মনীতি ভঙ্গ করে মার্কিন সব সরকারই বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য আমদানির ওপর উচ্চ শুল্কহার বসিয়ে রেখেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘বিদেশি সাহায্য’ নামে যে পরিমাণ অর্থ আসে, তার চার গুণ তারা আয় করে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের ওপর আরোপিত উচ্চহারের শুল্ক থেকে। এসব দৃষ্টান্ত দেখিয়েই বললাম, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে কোনো পার্থক্য আমরা টের পাই না। আমার কথা শুনে শ্রোতাদের মধ্য থেকেই একজন বললেন, এসব দূতাবাস যার করের পয়সায় চলে, সেই মার্কিন জনগণের প্রতিনিধিত্ব তারা করে না। তারা আসলে বৃহৎ করপোরেট স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে!
উপস্থিত অধিকাংশই ছিলেন ‘আমরা ৯৯ শতাংশ’ আন্দোলনের অংশীদার।
মার্কিন জনগণ ওবামার ওপর অনেক ভরসা করেছিলেন। পরিবর্তনের কথা বলেই তিনি প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসেছিলেন। নির্বাচনের আগে আগে তাঁর লেখা অডাসিটি অব হোপ গ্রন্থটি তরুণদের মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছিল। মানুষ তখন বুশ-চেনি-রামসফেল্ড-রাইস চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মরিয়া। ক্ষমতায় এসেছিলেন ওবামা। তিনি পরিবর্তন করতে পারেননি, নিজেই পরিবর্তিত হয়েছেন মেশিনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য। যতটুকু ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তাতেই রিপাবলিকানদের প্রচারণায় তিনি বামপন্থী! এবারে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, ওবামার এককালীন সমর্থকেরা সাধারণভাবে হতাশ, কিন্তু রমনির ভয়েই শেষ পর্যন্ত তাঁদের ওবামাকেই ভোট দিতে হবে। কেননা, দেশের ভেতরে ওবামা কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না আনতে পারলেও রমনি যে রিপাবলিকানদের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাদের নীতি ও কর্মসূচি ধনিক শ্রেণীর পক্ষে। শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, অশ্বেতাঙ্গ, ইমিগ্র্যান্ট ও নারীর জন্য আরও প্রতিকূল। সেটাই ব্যর্থতা বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ সত্ত্বেও ওবামার প্রধান ভরসা।
শিল্পায়িত বিশ্বের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই শ্রমজীবী মানুষ সবচেয়ে অসংগঠিত। অভিবাসীদের দেশ হওয়ার কারণে বিভক্তি বজায় রাখা খুব সহজ। শতকরা মাত্র সাতজন সেখানে ইউনিয়নভুক্ত। বাকি সবাই অসংগঠিত। নানা ধরনের শ্রমিকেরা সংখ্যায় গরিষ্ঠ হলেও তাঁদের অস্তিত্ব ঢেকে ফেলার চেষ্টাই বরাবর সফল হয়েছে। মে দিবস তৈরি হয়েছিল এই যুক্তরাষ্ট্রেরই শিকাগো শহরে, অথচ মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রশাসিত দেশগুলোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রই হচ্ছে উল্লেখযোগ্য দেশ, যেখানে মে দিবস সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। শ্রমিকদের লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা ভুলিয়ে দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন। মিলান কুন্ডেরার ভাষায়, মানুষের লড়াই আসলে ভুলিয়ে দেওয়ার জাল থেকে নিজেকে উদ্ধার করা। সে জন্যই যুক্তরাষ্ট্রে ‘আমরা ৯৯ শতাংশ’ নামে নতুন পরিচয়ের উদ্ভব হয়েছে। রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তা এখনো স্পষ্ট রূপ নেয়নি। তার ফলে নির্বাচনের নামে ১ শতাংশ ধনপতিদের মুখপাত্র বাছাইয়ের এই বছরের পর্বেও মানুষের সামনে অপশন বা বাছাই করার সুযোগ সীমিত—‘বিগ অর বিগার এভিল’। এই অসহায়ত্ব বাংলাদেশের মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হবে না।
৩ নভেম্বর ২০১২
আনু মুহাম্মদ: অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।