Powered By Blogger

রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৪

সহজে দূর করুন হার্ডডিস্কের ত্রুটি

উইন্ডোজের chkdsk কমান্ড অপশনটি ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেম বা ডস থেকে হালের সব অপারেটিং সিস্টেমেই চলে আসছে। হার্ডডিস্কের বর্তমান অবস্থা কী রকম, সেটি পরীক্ষা করা এবং কোনো ত্রুটি বা ব্যাড সেক্টর থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করতে এ কমান্ডটি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে একদিকে হার্ডডিস্কের কর্মদক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি পরবর্তী সময়ে ডেটা নষ্ট বা করাপ্ট হওয়ার হাত থেকেও বাঁচা যায়। 
এ কমান্ডটি ব্যবহার করতে চাইলে কমান্ড প্রম্পট উইন্ডো খোলার প্রয়োজন হবে। উইন্ডোজ এক্সপি হলে, স্টার্ট বাটন চেপে রানে ক্লিক অথবা Windows Key + R চেপে রান টুল চালু করে বক্সে লিখতে হবে cmd এবং এন্টার চাপতে হবে। উইন্ডোজ ৭ হলে, স্টার্ট বাটনে ক্লিক করে লিখতে হবে cmd এবং তালিকায় কমান্ড প্রম্পট অপশন এলে তাতে ডান ক্লিক করে Run as administৎatoৎ অপশনে ক্লিক করুন। 
কমান্ড প্রম্পট চালু হলে লিখতে হবে chkdsk C: /f। এর মানে হলো ড্রাইভ C: পরীক্ষা করে কোনো ত্রুটি পেলে সেটি সারিয়ে তোলা। এখানে C: ড্রাইভের জন্য কমান্ডটি লেখা হয়েছে, একইভাবে অন্যান্য ড্রাইভের জন্য এর পরিবর্তে সেই ড্রাইভের অক্ষরটি লিখতে হবে। যদি ওই ড্রাইভের কোনো ফাইল খোলা বা ব্যবহূত অবস্থায় থাকে, তাহলে কম্পিউটার পরবর্তী সময়ে চালু হলে হার্ডডিস্ক পরীক্ষা করা হবে কি না সে ব্যাপারে কমান্ড প্রম্পটে নির্দেশনা চাইতে পারে। সে ক্ষেত্রে Y লিখে এন্টার চাপুন। এই কমান্ড ব্যবহার করে আরও বাড়তি কিছু সুবিধা পেতে চাইলে chkdsk /? লিখে এন্টার চাপলে কমান্ডের নিয়মগুলো দেখা যাবে।
উইন্ডোজ ৮ অপারেটিং সিস্টেমে আবার ভিন্ন কমান্ড প্রম্পট ব্যবহার করা হয়। Windows Key + S চেপে অথবা শুধু উইন্ডোজ কি চেপে লিখুন cmd এবং এন্টার চেপে কমান্ড প্রম্পট খুলুন। এবার তাতে chkdsk C: /scan লিখে এন্টার চাপলে হার্ডডিস্ক স্ক্যান করা শুরু হবে এবং সিস্টেম ফাইলে এর একটি তালিকা জমা হবে। কোনো ত্রুটি পাওয়া গেলে সেগুলো সারিয়ে তোলার জন্য লিখতে হবে chkdsk C: /spotfix। নতুন এই কমান্ডে কম্পিউটার রিস্টার্ট দেওয়া ছাড়াই কাজটি করা যায়, যা উইন্ডোজের আগের সংস্করণগুলোতে সুবিধাটি ছিল না। — মঈন চৌধুরী




http://www.prothom-alo.com/technology/article/168811/%E0%A6%B8%E0%A6%B9%E0%A6%9C%E0%A7%87_%E0%A6%A6%E0%A7%82%E0%A6%B0_%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%A8_%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A1%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%9F%E0%A6%BF

শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০১৪

আমরা হবো তালেবান! বাংলা হবে আফগান! (অসম্ভব)


সময়টা যে কবে তা ঠিক মনে করতে পারছিনা। তবে ১৮/১৯ বছর পূর্বেকার ঘটনাই হবে বোধ হয়। ঢাকার রাস্তায় চলতে গিয়ে মাঝে মধ্যে দেখা যেতো ছোট খাটো মিছিল-মিছিলকারীরা শ্লোগান তুলছে-আমরা হবো তালেবান- বাংলা হবে আফগান। দেশবাসী তখনো সেইসব শ্লোগানকারীদেরকে কিংবা শ্লোগানকে মন্দ ভাবতে শিখেনি। বরং ধর্মপ্রান বাঙালীর কেমন যেনো নীরব এক সমর্থন ছিলো তালেবান শব্দটির ওপর। অনেক যুবক স্বপ্ন দেখতো তালেবান হবার জন্য। আবার কেউ কেউ প্রকাশ্য ঘোষনা দিয়ে আফগানিস্তান চলে গিয়েছিলো লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য। অনেক যুবক সেখানে যেতো-আবার যুদ্ধ ঠুদ্ধ করে ফেরতও আসতো। কেউ কেউ মারাও যেতো-আর তাদের আত্মীয় স্বজন গর্বভরে বলতো- তাদের ছেলে শহীদ হয়েছে। শহীদ পরিবার বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবে- এই স্বপ্ন সুখ নিয়ে শত অভাবের মধ্যেও তারা এক ধরনের আত্মতৃপ্তি নিয়ে প্রাকৃতিক নিয়মে ভবলীলা সাঙ্গ করতো।
আফগানিস্তানে যারা যুদ্ধ করতে যেতো তারা নিজেদেরকে মুজাহিদ পরিচয় দিতো। আফগানিস্তানে যাওয়ারও বহু আগে বাঙালী যেতো সুদুর মধ্য প্রাচ্যে- প্যালেস্টাইনে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য হাজার হাজার বাঙালী মুসলমান প্যালেস্টাইনীদের কিংবদন্তী নেতা ইয়াসির আরাফাতের প্যালেস্টাইন আর্মি যার নাম ছিলো ঝটিকা বাহিনী-তাতে যোগ দিতো বেহেশত পাওয়ার জন্য। ইয়াসীর আরাফাত ছিলেন মার্কিনীদের জানি দুশমন। অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়া তথা কম্যুনিস্টদের মানষপুত্র। ফলে বাংলাদেশের তৎকালীন শক্তিশালী বাম ঘরানার নাস্তিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও সরলমনা ধর্মপ্রান বাঙালী যুবকদেরকে বেহেশত লাভের সফরে উৎসাহ ও উদ্দীপনা যোগাত। ফলে প্যালেস্টাইন আর্মির বিভিন্ন গ্র“প বা উপগ্র“পে বছরের পর বছর চাকুরী করার পর যখন মুসলমান যুবকরা গাজী উপাধী মনে মনে ধারণ করে বাংলাদেশে ফেরত আসলো তখন নাক উঁচু বুদ্ধিজীবিদের কেউ তাদেরকে জঙ্গী বলে গালি দিলো না।
আফগানিস্তানে গমনকারীদেরকেও গালি দেয়া হতো না। কারন আফগান তালেবানরা তখন দখলদার সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রানপন লড়াই করে যাচ্ছিলো- সীমাহীন বীরত্ব আর অসাধারন সাহসিকতার সঙ্গে। তখনো তালেবানদের সঙ্গে আল কায়েদার সংযোগ স্থাপিত হয়নি। কিংবা মার্কিন সিআইএ বা পাকিস্তানী আই এস আই তখনো পর্যন্ত তালেবানদেরকে সমর্থন বা সাহায্য প্রদান শুরু করেনি। বিশ্বের প্রবল পরাক্রান্ত একটি রাষ্ট্রশক্তির ততোধিক পরাক্রান্ত ও সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর আধুনিক মারনাস্ত্রের সম্মুখে ভূখা, নাঙ্গা, অশিক্ষিত এবং বলতে গেলে প্রায় নিরস্ত্র আফগানীরা অসীম সাহস নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে-এই খবর বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে সারা দুনিয়ায় সাহসী মুসলমান যুবকদের রক্তে নাচন ধরা শুরু করলো। তারা স্বেচ্ছায় এবং দলে দলে তালেবান বাহিনীতে যোগ দেবার জন্য আফগানিস্তানের পথে রওয়ানা করলো। আমি যে সময়টার কথা বলছি তখন ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্যে মিছিল মিটিং করে ইসলাম পন্থী দলগুলো তালেবান বা আফগানিস্তানের মুজাহিদ হবার জন্য আহবান জানালো।
মোল্লা ওমর কিংবা ওসামা বিন লাদেন তখনো দৃশ্যপটে আসেননি। তালেবানদের তখনকার নেতা ছিলেন আহম্মদ শাহ মাসুদ এবং আব্দুর রশিদ দস্তাম। এই দুই জনেই আবার ছিলেন পরস্পরের শত্র“। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তারা এককভাবে এবং নিজেদের চেষ্টায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলো। ১৯৯৬ সালে এসে সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তান সম্মিলিত ভাবে তালেবানদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর তালেবানরা রাজধানী কাবুল দখল করে। আফগানিস্তানের নতুন নামকরন করা হয় ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তান।
মোল্লা ওমরের উত্থান, আল কায়েদা নামক সংগঠনটির সঙ্গে তার সম্পর্ক। ওসামা বিন লাদেনের আফগানিস্তান আগমন, মার্কিনীদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি এবং ঘটনা পরিক্রমায় নাইন ইলেভেন-টুইন টাওয়ার ধ্বংশ উপাখ্যান নিয়ে বহু কথা বলা যেতে পারে। যে তালেবান নিয়ে বিশ্বের মুক্তিকামী মুসলমানরা গর্ব করতো সে নামটির সঙ্গে মার্কিন মদদে সৃষ্ট আল কায়েদার বন্ধুত্ব এবং আর্ন্তজাতিক মিডিয়ার বহুমুখী প্রপাগান্ডায় এখন আর বাংলাদেশে কেউ তালেবান হতে চায় না। গত ৬/৭ বছর ধরেই তালেবান, আফগান এবং আল-কায়েদা শব্দগুলো এদেশে আর গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়না।
আজকের লিখার বিষয় বস্তু অবশ্য তালেবান বা আফগানিস্তান নয়। বিষয়বস্তু হলো- বাংলাদেশের মাটি, মানুষ এবং ভূ-রাজনৈতিক বৈশিষ্ট। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে- একটি মহল বা গোষ্ঠী প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে যে, এই বুঝি বাংলাদেশের লোকজন সব তালেবান হয়ে গেলো। দেশটিও আফগানিস্তান হয়ে যাচ্ছে। দেশের নদীনালা শুকিয়ে উষর মরুভূমিতে পরিনত হবার পর হয়তো সেই মরুস্তানের বালুকা রাশি ফুড়ে শিলা নুড়ীর পাহাড় জেগে উঠবে। দেশের সবুজ বন-বনানীসব ধ্বংশ হয়ে যাবে। সুন্দর বন নামের ম্যানগ্রোভটি বিলীন হবার আগেই বাঘেরা সব পালিয়ে যাবে এবং কুমিরেরা সব মনের দুঃখে আত্মহত্যা করবে। আবহমান বাংলার ধান, গম আর বাঙ্গী চাষীরা সবকিছু বাদ দিয়ে আফিম চাষ শুরু করবে। সেই আফিম নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে ভোতা বাঙালী হয়ে উঠবে যুদ্ধবাজ তালেবান।
তাই তোমরা কে কোথায় আছ-আসো! আমাদের নদী-নালা, বন-জঙ্গল, বাঘ, কুমীর আর কৃষকের কৃষিকে বাঁচাও-নচেৎ সত্যিই দেশটি আফগান হয়ে যাবে আর লোকজন হয়ে যাবে তালেবান- কোন কল্পনা বিলাসী কবি যদি এমন কথাও বলেন তবে আমি বলবো - অসম্ভব। বাংলা কখনো আফগান হবেনা। আর বাঙালী কখনো তালেবান হবে না। শতকোটি চেষ্টা করেও তা সম্ভব নয়। কেনো সম্ভব নয়- সেই কথাই হবে আজকের লেখার প্রতিপাদ্য বিষয়।
প্রথমেই বলে নেই আফগানিস্তান যায়গাটি আসলে কেমন। কেনই বা ঐ ভূমি সুলতান মাহমুদ, বাবুর, শেরশাহ এবং তৈমুর লংদের মতো মহাবীর পয়দা করে! আবার কেনই বা ঐ ভূমিতে কোন উদ্ধত পা রাখতে সাহস পাননি চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, আলেকজান্ডার কিংবা জুলিয়াস সিজারের মতো দুনিয়া কাঁপানো মহা বীরেরা। কেনই বা অনাদীকাল থেকে দেশটি স্বাধীনতা ভোগ করে আসছে! কিংবা বিশ্বের কোন পরাশক্তি ইতিহাসের যে কোন সন্ধিক্ষনে কেনো জাতিটিকে পরাভূত করতে পারেনি। তাবৎ দুনিয়ার জ্ঞানী গুনী ব্যক্তিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আফগানিস্তান নিয়ে গবেষনা করে আসছে।
প্রায় পঞ্চাশ হাজার বছর ধরে আফগানিস্তান এলাকায় লোকজন বসবাস করে আসছে। দেশটির রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সভ্যতাও পৃথিবীর অন্য যে কোন প্রান্তের তুলনায় কোন মতেই পেছানো নয়। ভূ-মধ্য সাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে চীন দেশের চলাচলের ঐতিহাসিক সিল্ক রোডটি গেটওয়ে আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। হিন্দুকুশ পর্বতমালা, ইন্দুস উপত্যাকা, ভারতে ঢোকার একমাত্র প্রবেশপথ এবং মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হলো আফগানিস্তান। ফলে সভ্যতার সেই আদিমকাল থেকেই আফগান জাতি কিছু না থাকা সত্বেও নিজেদেরকে ধনী এবং প্রভাবশালী মনে করতো। মরুভূমির উষ্ণ বাতাস, বরফ আচ্ছাদিত পাহাড়ের হাড় কাঁপানো বাতাস আর রুক্ষ শিলাময় পাহাড়ের ধুলিময় বাতাসের- ত্রিমুখী শক্তি আফগান জাতিকে করে তুলেছে দূর্বার, দুরন্ত আর দুঃসাহসী।
অন্যদিকে গাঙ্গেয় ব দ্বীপের বাংলা নামক ভূ-খন্ডের আদ্র এবং নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এ জাতিকে করে তুলেছে আরাম প্রিয়, গল্পবাজ এবং নানা রকম ফাজলামো মূলক কর্মকান্ডের মহা পন্ডিত। আফগান দরবারে বসে যখন মহাকবি ফেরদৌসী শাহনামা রচনা করেছেন তখন আমাদের দেশে কি হয়েছে। এই বঙ্গে কবে কোন বীর পয়দা হয়ে রাজত্ব করেছিলো তা আজ অবধি কেউ খুঁজে পায়নি। আমাদের বঙ্গ সন্তানেরা সমূদ্র পাড়ি দিয়ে অন্য দেশ জয় করবে একথা কোন কালে কেউ কল্পনা করেনি। আমাদের সাহিত্যের নায়কের নাম মদন কুমার- নায়িকার নাম মধুবালা। নায়ক জন্মগত ভাবে অটিষ্টিক এবং বদ্ধ উম্মাদ। আর নায়িকা হলো সমুদ্রের ওপাড়ের স্বপ্নের দেশের রাজকন্যা। নায়ক দুনিয়ার কোন শক্তি বা যন্ত্রকৌশলের সাহায্য নিয়ে নায়িকার দেশে যেতে পারেনা। পরীস্তান থেকে পরীরা এসে উম্মাদ নায়ককে নায়িকার কাছে নিয়ে যায়। কোন রকম আনুষ্ঠানিকতা, পিতামাতার অনুমতি কিংবা সমাজের স্বাভাবিক ভদ্রতাটুকু না দেখিয়ে নায়ক নায়িকা শয়ন ঘরে মালা বদল করে বিয়ে থা করে রতিক্রিয়া আরম্ভ করে। অলস বাঙালী হেলেনকে পাওয়ার জন্য যুবরাজ প্যারিস যে কষ্ট করেছিলো কিংবা তাকে উদ্ধার করার জন্য যে কষ্টসাধ্য যুদ্ধ করা হয়েছিলো তা করতে একেবারেই নারাজ। তারা স্বপ্নে রাজকন্যার সঙ্গে রমন করবে, মনে মনে কলা খাবে এবং ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রসগোল্লা খাবে। আর সারাদিন ফন্দি ফিকির করবে কিভাবে প্রতিপক্ষকে ঠকানো যায় কিংবা প্রতারনার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের অর্জিত সম্পত্তি কুক্ষিগত করা যায়!
বাঙালীর অদ্ভূত সব স্বভাব আর ভীরুতা নিয়ে নানা রকম গল্প উপাখ্যান রচিত হয়েছে যুগে যুগে। এদেশের রাজা বাদশারা যে কতবড় নাদান আর বেকুব ছিলো তা গোপাল ভাঁড়ের কাহিনী পড়লে জানা যায়। এদেশের জনগন যে কতবড় ভীরু আর কাপুরুষ ছিলো তা ঐতিহাসিক মিনহাজুস সিরাজের লেখায় পাওয়া যায়। এদেশের জনগন জর্দা, সুপারী আর চুন দিয়ে পান খায়। গোসলের আগে নাভী এবং ভূড়ির ওপর আচ্ছা করে সরিষার তেল মাখে। এরা তাদের দেবী সীতাকে উদ্ধার করার জন্য হনুমানের সাহায্য গ্রহন করে। অন্যদিকে অসুরকে বধ করার জন্য দশহাত বিশিষ্ট নারী দেবী দূর্গার আরাধনা করে।
বাঙালীর ঐতিহাসিক যে সকল বীর কিংবা দেবতার ছবি বা মূর্তি আজ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে তারা সবাই ছিলো মেদ বহুল শরীরের অধিকারী। বিশাল পেট, সারা শরীরে থলথলে চর্বি আর পরনে ধুতি, হাফ প্যান্ট কিংবা নিদেন পক্ষে পাজামা। কোন কোন বীরকে দেখা যায় সম্পূর্ন খালি গায়ে নেংটি পরা অবস্থায়। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে গ্রীক, রোমান সৈন্যরা যখন সামরিক পোশাক পরে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে বিশ্বজয় করতো তখন এদেশীয় বীরেরা যুদ্ধ যাত্রার পূর্বে হোম যজ্ঞ করতো এবং ভূত প্রেতের সাহায্য কামনা করতো। কোন বাঙালী রাজ পুরুষ বিদেশী দখলদার বাহিনীকে যুদ্ধে পরাভূত করে রাজত্ব কায়েম করেছে- এমন সুসংবাদ ঐতিহাসিকগন লিপিবদ্ধ করতে পারেননি। বরং বিদেশ থেকে বীরের বেশে এদেশে এসে অনেকেই ভেড়া বনে গেছেন- এমন উদাহরন দেয়া যাবে শত শত।
আমার এতো কথা বলার অর্থ হলো- হাজার বছরের মন এবং মনশীলতা নিয়ে বাঙালী কখনোই তালেবান হতে পারবে না। কারন তালেবান হবার মতো মুরদ কিংবা ইচ্ছাশক্তি কিংবা আত্মত্যাগ এই ভূখন্ডে কেউ কখনো দেখাতে পারেনি। ঢাকার রাস্তায় রিকসার টায়ার পাংচার হলে লোকজন দৌড় মারে। ট্রাকের চাকা ফেটে দুড়–ম করে আওয়াজ হলে লোকজন ফিট পড়ে। কোন রাস্তায় যদি বিদ্যুতের একটি ট্রান্স ফরমার ফেটে যায়- ঐ এলাকার অনেক কাক ভয়ের চোটে পায়খানা করে দেয়- সেই দেশে কিভাবে তালেবান হবে তা আমার মাথায় ঢোকেনা।
আমরা সেই জাতি- যারা কমেডির চেয়ে ট্রাজেডী ভালোবাসি। বাঙালীকে বলা হয় রঙ্গ প্রিয়। কিন্তু আসলে তারা কান্না প্রিয়। কোন নাটক সিনেমায় বা যাত্রা পালায় পর্যাপ্ত কান্নার দৃশ্য না থাকলে তা কখনোই দর্শক প্রিয়তা পায়না। যে নায়ক বা নায়িকা যতো বেশী কাঁদতে পারে এবং মানুষের জুলুম নীরবে সৈহ্য করতে পারে আমাদের জনমত তাকেই জনপ্রিয় করে তোলে। কারো বিশ্বাস না হলে মীনা কুমারী, সুচিত্রা সেন কিংবা বাংলাদেশের শাবানার সিনেমাগুলো আরো একবার দেখে নিতে পারেন। যে দেশের পথে ঘাটে ধোড়া সাপ, কুইচা, কেঁচো গিজ গিজ করে; কিংবা যে দেশের জনগন মশার যন্ত্রনায় দুদন্ড চুপচাপ বসতে পারে না অথবা যে দেশের বিশির ভাগ লোক গুড়া কৃমির আক্রমনের শিকার - সেই ভূ-খন্ড কিভাবে আফগান হবে? হতে পারেনা এবং পারবেও না। কারন আফগানিস্তানের তালেবানদেরকে অস্ত্র হাতে শত্র“র বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় জীবন বাজি রেখে, দিনের পর দিন, বা মাসের পর মাস- আবার কখনো স্ত্রী পুত্র পরিজন রেখে বছরের পর বছর ধরে। পেটে খাবার থাকে না, পরনে কাপড় থাকেনা কিন্তু আত্ম মর্যাদায় মস্তিষ্ক টন টন করতে থাকে। শত্র“কে ঘায়েল করার জন্য তারা রুক্ষ পাহাড়ের চুড়ায় বসে থাকে সীমান্ত ঈগলের মতো। কখনো পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে জীবন দেয় আবার কখনো বুকে গ্রেনেড বেঁধে ঝাপিয়ে পড়ে শত্র“ শিবিরে। সেই দেশের লোকদের পেটে যদি আমাদের মতো গন্ডগোল থাকতো তাহলে যুদ্ধ শুরু করার আগে বলতো- দাঁড়াও, একটু অপেক্ষা কর- জায়গামতো একটু খাউজাইয়্যা নেই।
এদেশের লোকজনের সাহস শক্তির একটি ক্ষুদ্র ঘটনা বর্ননা করে আজকের লেখা শেষ করবো। গ্রামের নাম কুসুমপুর। পদ্মা পাড়ের কুসুমপুর গ্রামে গফুর পাহ্লোয়ানের নাম ডাকে ভূত প্রেত পর্যন্ত পালিয়ে যায়। মস্তবড় বীর। চার চারটে বউ-আর দুলাল নামের একটি মর্দা ঘোড়ার মালিক গফুর পাহলোয়ান রাস্তায় বের হলে লোকজন সব ভয়ে থর থর করে কাঁপতে শুরু করে। দুলালের পীঠে চড়ে গফুর মর্দ হাডুডু খেলতে যায়-দশ-বিশটা গ্রামে কেউ তার সঙ্গে হাডুডু খেলায় পেরে উঠেনা। তার যতো বীরত্ব খেলার মাঠে এবং ঘরের মধ্যে চার চারটা বউয়ের সঙ্গে। বউ পেটানো তার জন্মগত অভ্যাস, ইদানিংকালে মনে হচ্ছে বউ পিটিয়ে সে খুব আনন্দ লাভ করে। আর গফুরের বউগুলোও ভারী বজ্জাত। গফুর মারতে থাকে আর তারা চোপা চালাতে থাকে- সেকি গালিরে বাবা- মরা মানুষ জিন্দা হবার উপক্রম!
চার বউয়ের মধ্যে আবার ভারী মিল। তারা একসঙ্গে গান গায় আর পান খায়। এক রঙ্গের শাড়ী পরে মেলায় যায় এবং সকলে মিলে প্রতিপক্ষের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ঝগড়া করে। প্রতিপক্ষ বলতে পাশের বাড়ীর হাকির দুই বউ। হাকি মিয়া ঘোড়ার গাড়ী চালায়- দুইটি ঘোড়াই মাদি। গফুর মিয়ার চার বউ চুপি চুপি পরামর্শ করে- কিভাবে হাকির বউদেরকে অপদস্ত করা যায়। অন্যদিকে চারজনে মিলে গফুর মিয়াকে ছ্যাঁচা দেয়ার বহু চক্রান্ত তারা বহুদিন করেছে- কিন্তু স্বামীর সামনে পড়লে সবারই শুরু হয় হাটু কাঁপুনী, গফুর মিয়ার হয়েছে মহা যন্ত্রনা- একজনকে মারলে চারজন মিলে কান্নাকাটি করে আর তার মরা বাপ মা তুলে যাচ্ছেতাই গালাগালি করে। সেইসব গালি শুনে পাশের বাড়ির হাকি আর তার বউয়েরা দাঁত বের করে ভ্যাটকাইয়া ভ্যাটকাইয়া হাসতে থাকে।
এই ভাবেই চলছিলো বহুদিন। কিন্তু গন্ডগোল বাঁধলো সেইদিন যেদিন হাকি একটা মর্দা ঘোড়া কিনে আনলো এবং ঘোড়ার নাম রাখলো দুলাল। গফুর পাহ্লোয়ানের চার বউ কোমরে কাপড় বেঁধে ঝগড়া করতে গেলো হাকির বউদের সঙ্গে। কার ঘোড়া কত বড় এই নিয়ে ঝগড়া। কোন ঘোড়ার লেজ বড়, কোনটার শরীরে শক্তি বেশি ইত্যাদি নিয়ে বিতর্ক করতে করতে চলে এলো ঘোড়াটির বিশেষ অঙ্গ পর্যন্ত। সেদিন হাকি এবং গফুর দুজনেই বাড়ীতে ছিলো। এক পর্যায়ে তারা নিজ নিজ বউদের পক্ষে ঝগড়ায় যোগ দেবার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে এলো। হাকি চিকন চাকন পাতলা মানুষ-তার শরীরে তেমন শক্তি না থাকলেও চোপা খুব খারাপ। অন্যদিকে তার বউরা তুলনামূলক সুন্দরী এবং মিষ্ট ভাষী। হাকি যখন দেখলো- বউরা পারছেনা তখন সে গফুর পাহ্লোয়ানের বউদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চোপা চালাতে লাগলো। পাড়ার দুষ্ট ছেলেরা দলে দলে এগিয়ে এলো ঝগড়া শোনার জন্য। তারা ভারী মজা পেলো এবং ঝগড়া যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য কেউ একজন জোরে জোরে সিকা নাড়াতে লাগলো।
গফুর মিয়া তেমন কথাবার্তা বলেনা। হাকি তাকে আজীবন যমের মতো ভয় পেতো। আজ হাকির বাড়াবাড়ি দেখে তার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। সে হাকিকে লক্ষ্য করে মারলো জোরে এক ঘুষি। হাকি শরীরটা বাঁকা করে ঘুষি থেকে রক্ষা পেলো বটে কিন্তু ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেলো। সে মনে করলো তার শরীরে বোধ হয় ঘুষি লেগেছে। সে সঙ্গে সঙ্গে ফিট পড়লো- বউরা সব তার গলা ধরে কান্না কাটি শুরু করলো।
ঘটনার আকস্মিকতায় গফুর পাহ্লোয়ান কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো। তার বউরা ডরে চোয়া চোয়া করে মিহিসুরে কেঁদে উঠলো। গফুর বললো- এই মাগীরা কান্না থামা। এদিকে আয়, তোরা সবাই মিলে আমারে মারতে থাক আর আমি ফিট পড়ার ভান করি। তোরা তখন কান্নাকাটি করে বলবি-হাকি আর তার বউরা আমারে একলা পেয়ে মেরে অজ্ঞান করে ফেলেছে । গফুর পাহলোয়ানের বউরা কিসে কি বুঝলো- আল্লায়ই জানে। ঘর থেকে চারটা মুগুর এনে বেধড়ক পেটাতে শুরু করলো সাধের নাগরকে। ২/৩ মিনিট পর গফুর সত্যিই মুর্ছা গেলো। বউরা বুঝলো - সত্যিই সর্বনাশ হয়ে গেছে-আর অমনি শুরু করলো অতিস্বরে আহাজারি।


কম্পিউটার বন্ধের যত উপায় Windows 8

নতুন অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৮-এ কম্পিউটার বন্ধ বা পুনরায় চালু করতে হলে প্রথমে মাউসটিকে পর্দার একেবারে ডান পাশে নিয়ে যেতে হয়। তখন উইন্ডোজের কিছু অপশন আসে, সেখান থেকে সেটিংস নির্বাচন করে পাওয়ার অপশন থেকে তবেই কম্পিউটার বন্ধ বা পুনরায় চালু করতে হয়। এই ঝামেলা এড়াতে চাইলে প্রথমে Windows Key + D চেপে উইন্ডোজের ডেস্কটপ মোডে চলে আসুন। ডেস্কটপের খালি জায়গায় ডান ক্লিক করে New নির্বাচন করে Shortcut অপশনে ক্লিক করুন। এ উইন্ডোটি শর্টকাটের অবস্থান জানতে চাইবে। শাটডাউন প্রক্রিয়ার শর্টকাট তৈরি করতে চাইলে লোকেশনের জায়গায় লিখুন shutdown /p তারপর নেক্সট চাপুন, যেকোনো একটি নাম দিন অথবা শাটডাউন নামে যা আছে তাই রেখে ফিনিশ করুন। নতুন বানানো শর্টকাটে ডান ক্লিক করে Pin to Start নির্বাচন করুন। স্টার্ট স্ক্রিনে গিয়ে দেখুন সেখানে শাটডাউন নামে নতুন একটি টাইল যুক্ত হয়েছে। ডেস্কটপে রাখা শর্টকাটটিতে অথবা স্টার্ট পর্দায় বানানো টাইলসটিতে ক্লিক করলে কম্পিউটার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে। একইভাবে উইন্ডোজ এক্সপি এবং ৭ অপারেটিং সিস্টেমেও ডেস্কটপে এই শর্টকাট তৈরি করে কম্পিউটার বন্ধের কাজটি করা যাবে।
একইভাবে রিস্টার্ট শর্টকাট বানাতে চাইলে লোকেশনের জায়গায় শুধু লিখতে হবে shutdown /r /t 0 (এখানে শেষ অক্ষরটি শূন্য)। ডেস্কটপের এই শর্টকাটে ডান ক্লিক করে Pin to Start নির্বাচন করলে স্টার্ট পর্দায় রিস্টার্ট নামে নতুন একটি টাইলস চলে আসবে। ডেস্কটপের শর্টকাটে অথবা স্টার্ট পর্দায় টাইলসটি ক্লিক করলে কোনো সতর্ক বার্তা দেওয়া ছাড়াই কম্পিউটার বন্ধ হয়ে পুনরায় চালু হবে। শুধু ডেস্কটপ শর্টকাট তৈরির ক্ষেত্রে একইভাবে এটি উইন্ডোজ এক্সপি এবং ৭-এ প্রযোজ্য হবে।
আপনি যদি উইন্ডোজ ৮.১ ব্যবহার করেন, তাহলে নতুন একটি সুবিধা পাবেন। কি-বোর্ডের Windows Key + X চেপে অথবা স্টার্ট বোতামে ডান ক্লিক করলে Shut down or sign out নামে একটি অপশন পাবেন, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কাজটি সারা যাবে। উইন্ডোজ এক্সপির ক্ষেত্রে Windows Key চেপে ধরে দুবার U চাপলে সেটি বন্ধ অথবা একবার U ও আরেকবার R চেপে রিস্টার্ট করা যায়। উইন্ডোজ সাতে Windows Key চাপার পর ডান তির চিহ্নিত বোতাম বা রাইট অ্যারো চেপে এন্টার চাপলে সেটি বন্ধ হবে অথবা উইন্ডোজ কি চাপার পর দুবার ডান অ্যারো চেপে এবং দুবার আপ অ্যারো চেপে এন্টার করলে রিস্টার্ট হবে। —মঈন চৌধুরী

বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩

Joint Defence Statement: “Bangladesh at the Precipice”

By 
9BR copy
The following is a joint defence statement from Steven Kay QC, John Cammegh and Toby Cadman concerning the sentence to death of Mr. Abdul Quader Mollah by the Appellate Division of the Supreme Court.  A signed PDF version of the statement may be downloaded here:
The timing of the planned execution of Abdul Quader Mollah is a disgracefully cynical attempt to bury bad news as the international media concentrates on events in South Africa. The contrast between a man who stood for and dedicated his life to reconciliation and forgiveness with the behavior of the Bangladesh Prime Minister Sheikh Hasina could not be greater.
The international community now stands united against this execution. The UN, EU, Britain, United States and Australian governments, to name a few, have in the past day called for a halt to this unwarranted sentence that serves no purpose, other than to divide Bangladesh and take the country a further step away from reconciliation and unity. Sheikh Hasina and her ruling party should know that they will lose all credibility amongst the international community if this sentence is carried out. The government and its leadership will become international pariahs.
We would also like to remind the Bangladeshi Prime Minister that any attempt to cling on to power that results in significant misery for her people would not be ignored. The International Criminal Court is already prosecuting one former state leader who attempted such a move in the Ivory Coast.
The sentence to death of an opposition leader is a cynical political move of the worst kind. With a UN deal on the table that could secure viable elections, ensuring UN and EU monitoring, this execution is a deliberate attempt to provoke a crisis, create a State of Emergency, and to prolong Sheikh Hasina and the Awami League’s grip on power.
The analysis that Sheikh Hasina is a bulwark against the rise of Islamism in South East Assia is wholly misplaced.  Her exclusion and demonisation of Islamic politicians, combined with the planned execution of their leaders in a deeply flawed judicial process, will only polarise Bangladesh further, and give rise to more extremist political factions. So far she is singularly responsible for a rapid partisan tension that may cause  significant civil unrest, including many deaths and injuries.
The International Crimes Tribunal was set up to bring justice to the victims of the 1971 Independence War. However, it is now very clear the government hijacked the process so it could destabilise its opponents under the guise of “justice.” The government’s hijacking of the most painful part of a nation’s collective memory for its own political ends is deplorable. Their retroactive changing of the law in the Mollah case makes the repeated claims of the government, including senior cabinet members, that the Tribunal should be heralded as upholding international standards completely preposterous.
During the course of the trial and appeal process a number of disclosures have emerged that demonstrate the very serious failings in the judicial process and exposed direct governmental interference.  Judges met with key prosecution witnesses.  Judges were removed from trials at random.  Severe restrictions were placed on the defence case.  However, all of this pales in comparison to the disclosure that the very person who gave evidence at Mollah’s trial and whose evidence has sent him to the gallows, may not even be the person named on the statement, but an impersonator fully prepared by the authorities to give false evidence.
The case of Abdul Quader Mollah is a gross miscarriage of justice. His case warrants a full international inquiry.  To do otherwise makes a mockery of the international justice process.  Sierra Leone, Rwanda and the Balkan countries have been through a process of reconciliation in which both restorative and retributive    justice played an important part. At the hands of a leadership intent only on personal gain, it is a tragedy Bangladesh has gone in the opposite direction.  The work to halt the miscarriages of justice of the ICT and highlight its gross injustices will continue. Those standing up for justice and human rights in Bangladesh will not be swayed.
Finally, we urge all Bangladeshis, from across the political divide, to turn away from violence. While protests are inevitable and justified, we hope they are conducted in a peaceful manner.  Furthermore, before the Government manipulates the protests to justify the status quo, they should remember it is their conduct that has directly resulted in the tensions witnessed on the streets of Bangladesh today.

Dated:
Wednesday 11 December 2013

Signed:
Steven Kay QC, Nairobi, Kenya
John Cammegh, London, UK
Toby M. Cadman, Washington DC, USA

Contact:
9 BEDFORD ROW INTERNATIONAL
Chambers of Anthony Berry QC, 9 Bedford Row. London, WC1R 4AZ
T +44 20 7489 2727       F +44 20 7489 2828       E clerks@9bedfordrow.co.uk

বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৩

এক্সক্লুসিভ:উইকিলিকসের চাঞ্চল্যকর তথ্য..হাসিনা,আওয়ামীলীগ ও RAW বিডিয়ার হত্যাকান্ডে জড়িত


২৫ ফেব্রুআরির পিলখানায় নারকিয় সেনা হত্যাযঙ্গের কথা আজও ভুলতে পারেনি জাতি। কি হয়েছিল সেদিন? কারা বা কাদের নির্দেশে এই হত্যাযঙ্গ সংগঠিত হয়েছিল?? উইকিলিকসের সেই কথাটিই ব্লাসট করে দিল। নিচে পড়তে থাকুন>>
সেনা হত্যা নিয়ে সেনাবাহিনীর গঠিত তদন্ত রিপোর্টে মোটামুটি উঠে এসেছিল সব কিছু। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সে তদন্ত রিপোর্ট বাতিল করে দিয়েছে। তবে অনলাইনের কল্যানে জনগণ সব জেনে গেছে ভেতরের গোপন কথা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিক ও অফিসার জানে – কেনো, কোন্ পরিকল্পনায়, কারা পিলখানায় ৫৭ সেনা অফিসার হত্যা করেছে। সেটাই সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো।

১. RAW: ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘R&AW’এর পরিকল্পনায় ও ব্যবস্থাপনায় ”পিলখানা হত্যাকান্ড” ঘটে। এর মূল লক্ষ ছিল- পাদুয়া ও রৌমারীর ঘটনার বদলা নেয়া এবং বিডিআর বাহিনী ধংস করে দেয়া। ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বিডিআর-বিএসএফ যুদ্ধে ১৫০ জন বিএসএফ নিহত হয়। এর আগে পাদুয়ায় নিহত হয় ১৫ বিএসএফ। বিডিআর ডিজি মেজর জেনারেল এএলএম ফজলুর রহমানের নির্দেশে ঐ যুদ্ধে অংশ নেয় বিডিআর। ঐ ঘটনার পরে ভারতীয় ডিফেন্স মিনিষ্টার জসবন্ত সিং উত্তপ্ত লোকসভায় জানান, ”এ ঘটনার বদলা নেয়া হবে।” লক্ষ করুন, ১৯৭১ সালে যে সব শর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সামরিক সাহায্য দেয়, তার অন্যতম শর্ত ছিল “Frontier Guards will be disbanded” (CIA Report SC 7941/71). অর্থাৎ বাংলাদেশের কোনো বর্ডার গার্ড থাকবে না। কিন্তু স্বাধীনতার পরে নানা কারনে পাকিস্তান রাইফেলস বালাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) রূপ নেয়। বিডিআর বাহিনীটি ছিলো আধাসামরিক বাহিনী, যার মূল কমান্ড ও ট্রেনিং ছিলো সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মত। অন্যদিকে ভারতের বিএসএফ ছিলো সিভিল বাহিনী, যাদের ট্রেনিং, জনবল সবই ছিলো নিম্নমানের। এসব কারনে বর্ডারে কোনো যু্দ্ধ হলে তাতে বিডিআর সামরিক পেশাদারিত্ব দিয়ে বিজয়ী হত।
পাদুয়া-রৌমারীর বদলা নেয়ার জন্য বিডিআর বাহিনী ধংস করার পরিকল্পনা করে ভারত। এ লক্ষে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী সময়টিকে বেছে নেয়া হয়- যখন হাসিনার নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহনের পর পর নাজুক সময়। অনেকেই মনে করেন, ভারতীয় পরিকল্পনায় নির্বাচন ছাড়া অপ্রত্যাশিত পদ্ধতিতে হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর নানা শর্তের মধ্যে একটি গোপন শর্ত থাকতে পারে “বিডিআর ধংস করা।” চুড়ান্ত রিস্ক থাকা স্বত্ত্বেও হাসিনাকে তা মেনে নিতে হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিডিআর সৈনিকদের দাবীদাওয়ার আড়ালে মুল প্লানটি বাস্তবায়নের জন্য মোট ৬০ কোটি রুপী বরাদ্দ করে ভারত। এর মধ্যে পিলখানায় ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা বিলি হয়, যাতে প্রতিটি অফিসারের মাথার বদলে ৪ লক্ষ টাকা ইনাম নির্ধারন করা হয়। ১৯ ও ২১ ফেব্রুয়ারী ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বাছাই করা ১৫ জন শুটারকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়, যারা পশ্চিম বঙ্গ সরকারের পাঠানো (প্রেমের নিদর্শন) ১ লক্ষ মিষ্টির সাথে বাংলাদেশে ঢুকে। একজন বেসামরিক দর্জি’র কাছ থেকে বিডিআর এর পোশাক বানিয়ে বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে পিলখানায় উপস্থিত থাকে শুটাররা। তাদের দায়িত্ব ছিলো লাল টেপওয়ালা (কর্নেল ও তদুর্ধ) অফিসারদের হত্যা করা। তারা একটি বেডফোর্ড ট্রাক ব্যাবহার করে ৪ নং গেইট দিয়ে প্রবেশ করে ২৫ তারিখ সকালে। ঘটনার দিন সকাল ১১টায় বাংলাদেশের কোনো সংবাদ মাধ্যম জানার আগেই ভারতের “২৪ ঘন্টা” টিভিতে প্রচার করা হয় জেনারেল শাকিল সস্ত্রীক নিহত। অর্থাৎ মূল পরিকল্পনা অনুসারেই খবর প্রচার করে ভারতীয় গণমাধ্যম!
পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে বা আর্মির পদক্ষেপে শেখ হাসিনার জীবন বিপন্ন হলে তাকে নিরাপদে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় ৩০ হাজার সৈন্য, ছত্রীবাহিনী ও যুদ্ধবিমান আসামের জোরহাট বিমানবন্দরে তৈরী রেখেছিলো ভারত। বিদ্রোহের দিন ভারতের বিমান বাহিনী IL-76 হেভি লিফ্‌ট এবং AN-32 মিডিয়াম লিফ্‌ট এয়ারক্রাফট নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে পূর্ণ সহায়তা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলো। ঐসময় প্রণব মুখার্জীর উক্তি মিডিয়ায় আসে এভাবে, “এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সব ধরণের সহায়তা দিতে ভারত প্রস্তুত। … আমি তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর সতর্কবাণী পাঠাতে চাই, যারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, তারা যদি এ কাজ অব্যাহত রাখে, ভারত হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, প্রয়োজনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে।”
২. শেখ হাসিনা : ভারতের এই পরিকল্পনাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয় বেশ আগেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নিমিত্তে ঘটনার ১ সপ্তাহ আগে তড়িঘড়ি করে প্রধানমন্ত্রীকে সুধাসদন থেকে সরিয়ে যমুনা অতিথি ভবনে নেয়া হয়, কেননা পিলখানার ডেঞ্জার এরিয়ার মধ্যে ছিল ওটা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার মেরামত শেষ না হওয়া স্বত্ত্বেও ভারতের সিগনালে খুব দ্রুততার সাথে হাসিনাকে সুধাসদন থেকে সরানো হয়। এটা এক অসম্ভব ঘটনা। পিলখানা হত্যাকান্ডের পরিকল্পনায় বিরাট সংখ্যায় সেনা অফিসার হত্যা করা হবে, যেটা ১৯৭৫ সালে তার পিতৃ হত্যার একটা বদলা হিসাবে হাসিনার কাছে সুখকর ছিলো। এর মাধ্যমে বিডিআর নিশ্চিহ্ন হবে, টার্গেট করে বিপুল সংখ্যক সেনা অফিসার হত্যা করা হলে তাতে মূল সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙ্গে যাবে। গোয়েন্দা খবর পেয়ে ২৫ তারিখে পৌনে ন’টার মধ্যেই এনএসআই ডিজি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে- “পিলখানায় বিদ্রোহ হচ্ছে। ” প্রধানমন্ত্রী নিরব থাকেন! আক্রমনের পরে অফিসারদের SOS পেয়ে সকাল ১০টার মধ্যে র‌্যাবের একটি দল, এবং ১০.২৫ মিনিটে সেনাবাহিনীর একটি দল পিলখানার গেটে পৌছায়। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো অভিযান চালানোর অনুমতি দেয়নি। আশ্চয্যজনকভাবে তিনি সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। আর এর মধ্যে ঘটতে থাকে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। খেয়াল করুন, সেনা অফিসাররা কোনো প্রতিরোধ করেনি, কাজেই কি কারনে বিডিআর সৈনিকরা অফিসারদের হত্যা করবে? এটা ছিল সুপরিকল্পিতভাবে সেনা অফিসার হত্যাকান্ড। সারাদিন হত্যাকান্ড চালানোর সুযোগ দিয়ে বিকালে শেখ হাসিনা হত্যাকারীদের সাথে বৈঠক করে তাদের সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করেন। কিন্তু তিনি একবারও জানতে চাননি, ডিজি শাকিল কোথায়? কি বিস্ময়!! জেনারেল জাহাঙ্গীরের তদন্ত কমিটি শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের সুপারিশ করেছিল, যার ফলে হাসিনা ক্ষেপে গিয়ে ঐ রিপোর্ট ধামাচাপা দেন।
৩. গোয়েন্দা সংস্থা: ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোর এক সাংবাদিক ঘটনার আগের দিন এটা জানার পর সে এনএসআইকে এই মর্মে অবহিত করে যে, পিলখানা য় বিদ্রোহের প্রস্তুতি চলছে যার সাথে বিডিআর ও আওয়ামীলীগের নেতারা জড়িত। এনএসআই থেকে উক্ত সাংবাদিককে বলা হয় বিষয়টা চেপে যেতে। ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর পিলখানায় যাওয়ার আগের দিন পিলখানা অস্ত্রাগার থেকে ৩টি এসএমজি খোয়া যায়। তখন সেনা অফিসারদের দায়িত্ব দেয়া হয় অস্ত্রাগার পাহারায়। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোয়েন্দাগিরি বহাল থাকে। নূন্যতম কোনো বিচ্যুতি ঘটলে প্রোগ্রাম বাতিল হয়। এত কিছু সত্তেও ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী সেখানে যান। মূলত: বিদ্রোহের আগাম বার্তা সেনাপ্রধান ম্ইন, ডিজিএফআই প্রধান মোল্লা ফজলে আকবর (ইনি হাসিনার এক সময়ের প্রেমিক ছিলেন), এনএসআই প্রধান মেজর জেনারেল মুনির, সিজিএস মেজর জেনারেল সিনা জামালী, বিডিআর কমিউনিকেশন ইনচার্জ লেঃ কর্নেল কামরুজ্জামান, ৪৪ রাইফেল’এর সিও শামস, মুকিম ও সালাম-এর জানা ছিল। কেননা ২৫ তারিখের আগেই দাবী দাওয়ার লিফলেটের কপি ডিজি শাকিল, এনএসআই ও সরকারের কাছে পৌছে। এমনকি মাঠ পর্যায়ের বহু সেক্টর কমান্ডাররা জানত, ২৫ তারিখে একটা ঘটনা ঘটবে। পরিকল্পনামত প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে ২৪ তারিখে জানিয়ে দেয়া হয়, প্রধানমন্ত্রী ২৬ তারিখের নৈশভোজে যাচ্ছেন না। এমন ঘটনা অতীত কখনও কখনো ঘটেনি!
৪. জেনারেল মইন উ আহমেদ: তৎকালীন সেনাপ্রধান ও ১/১১র প্রধান কুশীলব। ২০০৮ সালের গোড়ার দিকে ভারত সফর করে মইন চেয়েছিলেন পূর্ন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতীয় সমর্থন। ভারত রাজী হয়নি, বরং আ’লীগকে ক্ষমতায় আনার লক্ষে মইনকে কাজ করতে বলে, বিনিময়ে সেফ প্যাসেজ পাবে কুশীলবরা। উপায়ান্তর না দেখে মইন রাজী হয় এবং ২৯ ডিসেম্বর পূর্বপরিকল্পিত ফলাফলের নির্বাচনে ক্ষমতার পালবদল ঘটায়। মইনের বদলে আসেন হাসিনা! ওয়ান ইলেভেনের খলনায়করা যে সব রাজনীতিবিদদের অত্যাচার করেছে, তাদের বিচারের জন্য ফেব্রুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহে সংসদে প্রবল দাবী ওঠে। তখন সেনাবাহিনীর চাপের মুখে জেনারেল মইন নিজে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সাথে সংসদ অফিসে। এরপর শেখ হাসিনা ধমকে দেন মখা আলমগীর, আবদুল জলিলদের, যাতে করে সেনাবাহিনীর বিচারের দাবী আর না তুলে। হাসিনা এ সময় হুশিয়ার করেন, “কিভাবে ক্ষমতায় এসেছি, সেটা কেবল আমিই জানি।” অন্যদিকে ঐ সময়ই ভারত তার প্লানমত এগিয়ে যায় বিডিআর অপারেশনে। মইনকে বলা হয় প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিতে। মইন তার দু’বছরের অপকর্মের স্বাক্ষী আর্মি অফিসারদের আগে থেকেই পোষ্টিং দিয়ে জড়ো করে বিডিআরে। এদের নিধন করা হলে মইনের অপকর্মের সাক্ষী আর পাওয়া যাবে না। ফলে মইনের বিরাট প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল এই হত্যাযজ্ঞ। অন্যদিকে এত সেনা অফিসার নিহত হলে ১/১১ নিয়ে সেনাবাহিনী তথা মইনের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদরা আর মুখ খুলবে না। এতকাল আর্মির রদ্দিমালগুলো যেতো বিডিআরে। কিন্তু এবারে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র- পরিকল্পিতভাবে অনেক চৌকশ অফিসার একসাথে পাঠানো হয় বিডিআরে। পিলখানা হত্যাকান্ডের মাত্র ২ মাস আগে গুলজারকে ষ্টান্ড রিলিজ করে বিডিআরে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। রাইফেলস সপ্তাহের আগেই কানাঘুসা শুরু হয়- ২৫ তারিখে বিদ্রোহ হবে। তাই অনেক অফিসার নানা অযুহাত দিয়ে ছুটিতে চলে যায়। সেনাপ্রধান মইনের পিলখানা হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ছিল, যার প্রমান মেলে ঘটনার সাথে সাথেই আক্রান্ত ডিজি শাকিল ও অফিসাররা মইনকে ফোনে জানায়। মইন আশ্বাস দেন সেনা পঠাচ্ছি। অথচ তিনি কোনো ব্যবস্থা নেন নি, সময় ক্ষেপন করে হত্যার সুযোগ তৈরী করে দেয়। ম্ইন চলে যায় যমুনায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে। তেজগাওয়ে এয়ারফোর্স রেডি, আর্মি রেডি সেনিাবাসে। কিন্তু হুকুম আসে না। বিকালে কিছু সেনা ও যানবাহন ধানমন্ডি পর্যন্ত পৌছে গেলেও অপারেশনের অনুমতি দেয়নি হাসিনা ও ম্ইন। ঘটনার ৪ দিন পরে ১ মার্চে হাসিনা সেনাকুঞ্জে গেলে মইন সেনা অফিসারদের ব্যাপক অসন্তোষের মুখে পরেন। এমনকি নিহতদের জানাজার সময় মইনকে চেয়ার তুলে মারতে যায় কেউ কেউ। উল্টো, সেনাকুঞ্জে যে সব সেনা অফিসার বিচার চেয়ে জোর গলায় বক্তৃতা করেছিল, প্রতিবাদ করেছিল- ভিডিও দেখে দেখে এমন প্রায় দু’শ জনকে চাকরীচ্যুত করেছে মইন অনেক অফিসারকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মামলায় কারাদন্ডও দেয়া হয়েছে।
৫. সজীব ওয়াজেদ জয়: শেখ হাসিনার এই পুত্রটি আগে থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর ক্ষিপ্ত ছিলো। ২০০৮ সালের নির্বাচনের দেড় মাস আগে (১৯ নভেম্বর) হাসিনার উপদেষ্টা ও পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় তার Stemming the Rise of Islamic Extremism in Bangladesh শীর্ষক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, জোট সরকারের আমলে সেনাবাহিনীতে ৩০% মাদ্রাসার ছাত্ররা ঢুকানো হয়েছে। এদের নির্মুল করে সেনাবাহিনী পূনর্গঠন করতে হবে। পিলখানায় বিপুল সেনা অফিসার হত্যা করা হলে সেনাবাহিনীতে ব্যাপক সংস্কার করা সহজ হবে, এবং নতুন নিয়োগ করা যাবে- এমন বিবেচনায় জয় ভারতীয় প্রস্তাবটি গ্রহন করেন। পিলখানা হত্যার পরে জয় দুবাই যান এবং সেখানে ঢাকা থেকে আগত হত্যাকারীদের নগদ পুরস্কৃত করেন বলে খবর প্রকাশ।
৬. শেখ ফজলে নূর তাপস: হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে এই তাপস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘটনায় তার পিতা নিহত হয়। তাপস ঢাকা-১২র নির্বাচন করতে গিয়ে বিডিআর এলাকায় ৫ হাজার ভোট প্রাপ্তির লক্ষে ৪৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি তোরাব আলী’র মাধ্যমে বিডিআর নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে। তাপসকে নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে, বিডিআর সকল সদস্য নৌকায় ভোট দিবে। তার বদলে তাপস আশ্বাস দিয়েছিল বিডিআরের দাবী দাওয়া মেনে নেয়ার ব্যবস্থা করবে। তাপসের বাসায় (স্কাই ষ্টার) বিডিআরের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে একাধিক বৈঠক করে। এমনকি দাবীদাওয়া পুরন না হওয়ায় পিলখানা বিদ্রোহের আগের দিন তাপসকে সম্ভাব্য বিদ্রোহের কথা জানানো হয়। তাপস তাতে সম্মতি দেয় এবং তাদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেয়। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাপসও এই ষড়যন্ত্রকে কার্যকর হিসাবে মনে করে। ২৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ফজলে নুর তাপসের ধানমন্ডিস্থ বাসায় ২৪ জন বিডিআর হত্যাকারী চুড়ান্ত শপথ নেয়। তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটন পরিকল্পনাকারীদেরকে গোপন আস্তানা ও যাবতীয় সহায়তা প্রদান করে। বিডিআর বিদ্রোহের পরের দিন বিকালে শেখ তাপসের ঘোষনা প্রচার করা হয়, যাতে করে পিলখানার ৩ মাইল এলাকার অধিবাসীরা দূরে সরে যান। আসলে এর মাধ্যমে খুনীদের নিরাপদে পার করার জন্য সেফ প্যাসেজ তৈরী করা হয়েছিল। তাপসের এহেন কর্মকান্ডের বদলা নিতে তরুন সেনা অফিসাররা পরবর্তীতে তাপসের ওপর হামলা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। পরে ৫ চৌকস কমান্ডো অফিসার চাকরীচ্যুত হয়ে কারাভোগ করছে। বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে সেনা তদন্ত এড়াতে তাপস কিছুদিন গা ঢাকা দেয় বিদেশে।
৭. মীর্জা আজম: যুবলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এই হুইপটি পিলখানার ঘটনাকালে বিদ্রোহীদের সাথে সেল ফোনে কথা বলতে শুনা যাচ্ছিল। সে হত্যাকারীদের সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেয় কর্নেল গুলজারের চোখ তুলে ফেলতে এবং দেহ নষ্ট করে ফেলতে (এর অডিও রেকর্ড আছে), কেননা র‌্যাবের পরিচালক কর্নেল গুলজারের নেতৃত্বে জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানকে ধরা হয়েছিল ও পরে ফাঁসি দেয়া হয়। শায়খ রহমান ছিল মির্জা আজমের দুলাভাই। আজম এভাবেই দুলাভাই হত্যার বদলা নেয় গুলজারকে হত্যা করে, এমনকি তার লাশও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও ২০০৪ সালে নানক-আজমের ব্যবস্থাপনায় শেরাটন হোটেলের সামনে গানপাউডার দিয়ে দোতলা বাসে আগুন লাগিয়ে ১১ বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারার ঘটনা তদন্ত করে এই গুলজারই নানক-আজমকে সম্পৃক্ত করে। এর প্রতিশোধেই গুলজারে শরীর এমন ভাবে নষ্ট করা হয়, যেনো কেউ চিনতে না পারে। ১৫ দিন পরে ডিএনএ টেষ্ট করে চিহ্নিত করা হয় গুলজারের লাশ।
৮. জাহাঙ্গীর কবির নানক: এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী। উনি বিডিআরের ঘাতকদের নেতা ডিএডি তৌহিদের ক্লাশমেট। বিডিআর ট্রাজেডির আগে থেকেই তৌহিদ যোগাযোগ রাখত নানকের সঙ্গে। ঘটনার দিন ২০৪ মিনিট কথা বলে তৌহিদ-নানক। ২৫ তারিখ বিকালে পিলখানার বিদ্রোহীদের নিয়ে শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে মিটিং করিয়ে নিরাপদে ফেরত পাঠায় সে। ডিএডি তৌহিদকে বিডিআরের অস্থায়ী ডিজি ঘোষণা করে নানক। কর্নেল গুলজার হত্যায় মীর্জা আজমের সাথে নানক সরাসরি জড়িত। কেননা, র‌্যাবের পরিচালক গুলজারই তদন্ত করে উদঘাটন করে- শেরাটনের সামনে দোতলা বাস জ্বালিয়ে ১১ যাত্রী হত্যা করা হয় নানকের নির্দেশে। ২৫ তারিখে বেঁচে যাওয়া লে: কর্নেল মঞ্জুর এলাহী পালিয়ে ছিল ম্যানহোলে। তার স্বজনরা এসএমএস মারফত খবর পেয়ে নানকের সাহায্য চায়। উদ্ধার করার বদলে ঐ অফিসারটিকে খুঁজে বের করে হত্যা করায় নানক। এটা সেনানিবাসের সবাই জানে। সেনাবাহিনীর তদন্ত পর্ষদ এড়াতে তদন্তের সময় নানক হঠাৎ বুকের ব্যথার অযুহাতে চিকিৎসার কথা বলে অনেকদিন সরে থাকে সিঙ্গাপুরে। এ নিয়ে সেনা অফিসারদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ব্রিগেডিয়ার হাসান নাসিরকে চাকরীচ্যুত করে হাসিনা।
৯. সাহারা খাতুনঃ সুপরিকল্পিত বিডিআর ধংসযজ্ঞ সংগঠনের নিমিত্ত ভারতের পরামর্শে হাসিনার কেবিনেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিয়োগ করা হয় অথর্ব সাহার খাতুনকে। বিদ্রোহের দিন কোনো তৎপরতা ছিলো না সাহারার। বরং সেনা অভিযান ও পিলখানায় র‌্যাব ঢোকার অনুমতি চাইলে সাহারা খাতুন ‘না’ করে দেন। বিকালে বিদ্রোহীদের সাথে করে প্রেস ব্রিফিং করে এই মন্ত্রী। অথচ ডিজি শাকিলের কোনো খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেননি। কারন সে সব জানত। বিদ্রোহীদের সাথে সমঝোতার পরে রাতে তিনি পিলখানায় যেতে চাননি। বরং আইজি নূর মোহাম্মদ তার মেয়েকে পিলখানা থেকে উদ্ধারের জন্য একাই অভিযান চালাতে উদ্যত হলে ঠেলায় পরে সাহারা যান পিলখানায়, তাও প্রধানমন্ত্রীর বুলেটপ্রুফ গাড়িতে চড়ে। তিনি বিডিআর অফিসারদের পরিবার পরিজন উদ্ধার না করে কেবল আইজিপি নুর মোহাম্মদের কন্যাকে উদ্ধার করেন। অথচ বাকী পরিবার ঐ রাতের আঁধারে নির্যাতিত হয়। সাহারা খাতুনের সাথে প্রধানমন্ত্রীর মেডিকেল টীমের এম্বুলেন্স ও রেড ক্রিসেন্টের এম্বুলেন্স পিলখানায় ঢুকে। এরপরে পিলখানার বাতি নিভিয়ে ঘাতকদের ঐ এম্বুলেন্সে করে পিলখানার বাইরে নিরাপদ যায়গায় সরানো হয়। তখনও অনেক অফিসার আহত হয়ে পিলখানা নানাস্থানে লুকিয়ে ছিলো। কিন্তু সাহারা এদের উদ্ধার করেনি। কর্নেল এমদাদ, কর্নেল রেজা্, আফতাব ও কর্নেল এলাহীকে সাহারা পিলখানা ত্যাগ করার পরে হত্যা করা হয়।
১০. শেখ সেলিম: শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই। ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ ঘটনায় সে ধরা পরেও রহস্যজনকভাবে বেঁচে যায়, কিন্তু তার ভাই শেখ মনি নিহত হয়। সেনাবাহিনীর ওপরে তারও রাগ ছিলো প্রচন্ড। তা ছাড়া ১/১১র পরে সেনারা ধরে নিয়ে যায়ে এই সেলিমকে, এবং ডিজিএফআই সেলে ব্যাপক নির্যাতন করে শেখ হাসিনার অনেক গোপন কথা, চাঁদাবাজি, বাসে আগুণ দেয়া সংক্রান্ত জবানবন্দী আদায় করে। এতে করে সেনাবাহিনীর ঐ সেটআপের উপর তার রাগ ছিল। বিডিআরের ঘটনার আগে বিদ্রোহী দলটি কয়েকদফা মিটিং করে শেখ সেলিমের সাথে। ১৩ ফেব্রুয়ারীতে শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় এ ধরনের একটি মিটিং হয় বলে সেনা তদন্তে প্রমান পাওয়া গেছে।
১১. সোহেল তাজ: স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। শেখ সেলিমের বাসায় অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে সোহেল যোগ দেয়। বিদেশী হত্যাকারীদেরকে নিরাপদে মধ্যপ্রাচ্য, লন্ডন ও আমেরিকায় পৌছানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সোহেল তাজকে। জনগনকে ধোকা দেয়ার জন্য প্রচার করা ঘটনার সময় তাজ আমেরিকায় ছিল। এটি সম্পুর্ন মিথ্যা কথা। সে সময়ে তাজ ঢাকায়ই ছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারী সন্ধায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে কয়েকজন হত্যাকারীসহ তাকে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং সে রাতেই তাজ ওসমানী বিমানবন্দর থেকে হত্যাকারীদের সাথে নিয়ে বিদেশের পথে যাত্রা করে। সেই হেলিকপ্টারের একজন পাইলট ছিল লেঃ কর্নেল শহীদ। যাকে পরে হত্যা করা হয়, টাঙ্গাইলে রহস্যজনক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলামের সাথে। এছাড়া বিমানের বিজি ফ্লাইট ০৪৯ দু’ঘন্টা বিলম্ব করে চারজন খুনী বিডিআরকে দুবাইতে পার দেয়া হয়। এ খবরটি মানবজমিন ছাপে ৩ মার্চ ২০০৯.
১২. কর্নেল ফারুক খান: তিনি ছিলেন পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তের লক্ষে গঠিত ৩টি কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে। জনগণকে ধোকা দেয়ার জন্য প্রথমেই তিনি ঘোষণা করেন, পিলখানার ঘটনায় ইসলামী জঙ্গীরা জড়িত। এটা খাওয়ানোর জন্য সোবহান নামে এক লোককে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়। পরে কুলাতে না পেরে সেখান থেকে সরে আসেন। সেনাবাহিনীর তদন্তে অনেক সত্য কথা উঠে আসলেও তা আলোর মুখ দেখেনি এই ফারুক খানের জন্য। ধামাচাপা দেয়া হয় মূল রিপোর্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মূল রিপোর্ট বদল করে গোজামিলের রিপোর্ট তৈরী করান ফারুক খান।
১৩. হাজী সেলিম: লালবাগ এলাকার আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি। বিডিআর হত্যাকান্ডের সময় তিনি খুনীদের রাজনৈতিক সাপোর্ট দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে হাজী সেলিম বেশ কিছু গোলাবারুদ ক্রয় করে, যা ভারতীয় খুনীরা প্রথমে ব্যবহার করে। ঘটনার দিন দুপুরে হাজী সেলিমের লোকেরা বিডিআর ৪ নং গেটে বিদ্রোহীদের পক্ষে মিছিল করে। ২৫ তারিখ রাতের আঁধারে পিলখানার বাতি নিভিয়ে দেয়াল টপকে সাধারন পোষাক পরে বিদ্রোহীরা লালবাগ এলাকা দিয়ে পালিয়ে যায় হাজী সেলিমের সিমেন্ট ঘাটকে ব্যবহার করে। হাজী সেলিমের সন্ত্রাসীরা স্থানীয় জনগনকে সেখান থেকে সরিয়ে রাখে। একটি বেসকারী টিভি চ্যানেল ২৫ তারিখ রাত ১টার সংবাদে উক্ত ঘটনার খবর প্রচার করে। সেই রিপোর্টে ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য তুলে ধরে, যাতে বলা হয় যে, বেশ কিছু স্পীডবোর্টকে তারা আসা যাওয়া করতে দেখেছে; কিন্তু তারা কাছাকাছি যেতে পারেনি যেহেতু আওয়ামীলীগের কিছু কর্মীরা তাদেরকে সেদিকে যেতে বাধা দেয়।
১৪. তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটন: আওয়ামীলীগের ৪৮ নং ওয়ার্ডের সভাপতি। ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে এ্বই তোরাব আলী বিডিআর বিদ্রোহীদের পরিচয় করিয়ে দেয় এমপি তাপসের সাথে। মূল পরিকল্পনায় তোরাব আলীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় স্থানীয় লজিষ্টিক সম্বয় সাধনের জন্য। তার বাড়িতেও বিদ্রোহীদের মিটিং হয়েছে। সে মূলত অবৈধ অস্ত্রের ডিলার। তার ছেলে সন্ত্রাসী লেদার লিটনের মাধ্যমে বিদ্রোহী বিডিআরদের পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে। এ সংক্রান্ত খরচাদি আগেই তাকে দেয়া হয়। উক্ত লিটনকে ২ মাস আগে তাপস ও নানক জেল থেকে ছাড়িয়ে আনে। ২৫ ফেব্রুয়ারী রাত ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে স্পীড বোটযোগে হত্যাকারীদের বুড়িগঙ্গা নদী পার করিয়ে দেয় লেদার লিটন।
১৫. মহিউদ্দিন খান আলমগীর: পিলখানার ঘটনার সময় এই সাবেক আমলা ও জনতার মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা মখা মেতে উঠেন বিভৎস উল্লাসে। বার বার ফোন করে খোঁজ নেন বিদ্রোহীদের কাছে, এর অডিও রেকর্ড আছে। এমনকি নিহতদের লাশ গোপন করার জন্য এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার হুকুমদাতা ছিলেন তিনি। যার বদৌলতে তাকে পরে প্রমোশন দেয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীতে।
১৬. হাসানুল হক ইনু: বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার গলির নেতা। তিনি ১৯৭৫ সালে অনেক সেনা অফিসার হত্যা করেছেন কর্নেল তাহের বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড থেকে। ১৯৭৫ সাল থেকে অদ্যাবধি দেশে সংঘটিত সকল সামরিক অভ্যুত্থানে তার যোগসাজস রয়েছে। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের সময় তিনি তার ঘনিষ্ট বিডিআরদের ফোন করে হত্যায় উৎসাহ যুগিয়েছেন, এবং তাদের পরামর্শ দিয়েছেন কি করে লাশ গোপন করতে হবে।
পাঁচ বছর হয়ে গেছে ৫৭ সেনা অফিসার সহ ৭৭ মানুষ হত্যার। বিডিআর বাহিনী বিলুপ্ত করা হয়েছে। ভারতীয় সহায়তায় বিজিবি গঠন করা হয়েছে, যারা এখন বিএসএফের সাথে ভাগাভাগি করে ডি্উটি করে! কয়েক হাজার বিডিআর সদস্যকে কোমরে দড়ি লাগিয়ে বিচারের প্যারেড করানো হয়েছে। জেল হয়েছে সবার। অন্যদিকে রাঘব বোয়লদের বিরুদ্ধে সাক্ষী গায়েব করতে ৫৩ জন বিডিআরকে পিটিয়ে হত্ো করা হয়েছে। কিন্তু ৫৭ সেনা হত্যার বিচার এখনো বাকী। যেনো তেনো কোনো বিচার চায়না সেনাবাহিনী। তাই হত্যা মামলাও আগাচ্ছে না। যতদিন লাগে লাগুক, হয় কঠিন বিচার হবে, নয়ত বদলা হবে, এটাই তাদের চাওয়া।।

সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৩

হল-মার্কের অর্থ আত্মসাৎ----------------- সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ সদস্যরা অভিযুক্ত হননি

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হল-মার্কের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় অবশেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। টানা এক বছর তদন্ত শেষে এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এ জন্য ২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আজ সোমবার জমা দেওয়া ১১টি অভিযোগপত্রে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কারও বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনা হয়নি। পর্ষদের সদস্যরা ছিলেন বর্তমান সরকার কর্তৃক দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত।
অভিযোগপত্র প্রথমে রমনা থানায় জমা দেওয়া হয়। থানা থেকে পরে অভিযোগপত্রগুলো নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে। দুদকের উপপরিচালক ও তদন্ত কমিটির প্রধান মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের তদন্ত দল এসব অভিযোগপত্র থানায় নিয়ে যায়।
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে হোটেল রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন) শাখা থেকে হল-মার্ক গ্রুপ দুই হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে পরিশোধিত (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা। গত বছরের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় এই অভিযোগে পৃথক ১১টি মামলা করেছিল দুদক।
মীর জয়নুল আবেদীন অভিযোগপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা কোনো ঋণ নয়, ব্যাংক ডাকাতি করে অর্থ তুলে নিয়েছেন তাঁরা।’
‘ব্যাংক ডাকাতি’র জন্য অভিযুক্তরা হলেন: হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ, তাঁর স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম (জামিনে আছেন), ভায়রা ভাই ও মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদ, গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের জিয়াউর রহমান, আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের জাহাঙ্গীর আলম, অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের শহিদুল ইসলাম, স্টার স্পিনিং মিলসের জাহাঙ্গীর আলম, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক এবং সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন সরকার।
‘ডাকাতি’তে সহযোগিতার জন্য হল-মার্কের বাইরে অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবির, দুই ডিএমডি মাইনুল হক ও আতিকুর রহমান, দুই জিএম ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান (চারজনই ওএসডি), দুই ডিজিএম শেখ আলতাফ হোসেন (সাময়িক বরখাস্ত) ও মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ (সাময়িক বরখাস্ত), দুই এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান (সাময়িক বরখাস্ত) এবং এজাজ আহম্মেদ। এ ছাড়া রূপসী বাংলা শাখায় কাজ করতেন এমন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান, সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন ও জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা।
এই ২৫ জনের মধ্যে টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের তসলিম হাসান, প্যারাগনের সাইফুল ইসলাম, নকশী নিটের আবদুল মালেক, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন সরকার ও সোনালী ব্যাংকের এজাজ আহম্মেদের নাম মামলার এজাহারে ছিল না।
মীর জয়নুল আবেদীন অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানান, হল-মার্কের অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। এমন আত্মসাৎ এর আগে আর হয়নি। তদন্তে দেখা গেছে, ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর এক দিনে হল-মার্কের নামে রূপসী বাংলা শাখার অসাধু কর্মকর্তারা ৮০৪টি এলসি খুলেছিলেন। প্রতি মিনিটে ২ দশমিক ২৩টি করে এলসি খোলা হয়, যা অবিশ্বাস্য।
মীর জয়নুল আবেদীন আরও জানান, ১১টি মামলার প্রতিটি অভিযোগপত্রের জন্য ৭০ থেকে ৮০ জন করে সাক্ষী রয়েছে। ব্যাংকের পর্ষদকে অভিযোগপত্রে না আনার বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ঋণের ক্ষেত্রে পর্ষদের কাছে অনুমোদন নিতে হয়। আর হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে কোনোটাই সরাসরি বন্ধকি ঋণ নয়। এগুলো ছিল বিভিন্ন ধরনের বৈদেশিক লেনদেনের জন্য তৈরি করা বিল-ভাউচার। কিছু বিলের মাধ্যমে এরা সরাসরি ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিয়েছে। কিছু বিলের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের জামানতের দায়বদ্ধতায় অন্য ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে পর্ষদকে জড়িত করা যায়নি। তবে পর্ষদের মধ্যে সন্দেহভাজনদের বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধান চলছে বলে জানান তিনি।
অভিযোগপত্রে হল-মার্কের অর্থ আত্মসাতের মূল সহযোগী হিসেবে এ কে এম আজিজুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই আজিজুর রহমান শাখার বাইরে হোটেল সাকুরা এবং সাকুরা পেছনের ইউরেকা প্যালেসের একটি ফ্ল্যাটে ব্যাংকের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি নিয়ে যেতেন, যা ব্যবহার করে হল-মার্কের তানভীর ও তাঁর কর্মচারীরা বিভিন্ন ধরনের বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র তৈরি করতেন।
এসব বিষয়ে তদন্ত দলের প্রধান মীর জয়নুল আবেদীন বলেন, এ ছাড়া এলসি নিয়ে জালিয়াতির চক্রের মূল হোতা তানভীর মাহমুদ, তুষার আহমেদ, তসলিম হাসান, সাইফুল ইসলাম ও আবদুল মালেক। এই চক্রটিই পরে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এলসি জালিয়াতি করা শিখিয়ে দিয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ম্যাক্স স্পিনিং, আনোয়ারা স্পিনিং, সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল, অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজ ও স্টার স্পিনিং মিলসের মালিকেরা সবাই ভুয়া। আসলে এই কথিত মালিকেরা সবাই হল-মার্কের কর্মচারী। ম্যাক্স ও আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই।

বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত


বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত কোনটি? এ প্রশ্নের জবাবে আমাদের মনে ভেসে উঠতে পারে ফিলিস্তিনিদের গাজা ভূখণ্ডের সঙ্গে ইসরায়েলের সীমান্তের কথা। কেননা, বছরের পর বছর সেখানকার বহু ফিলিস্তিনির নিষ্ঠুর হত্যার খবর বিশ্বের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছে। এখন অবশ্য ২৫ মাইল সীমান্তজুড়ে তারা গড়ে তুলেছে নিরাপত্তাপ্রাচীর এবং পাঁচটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ। অবশ্য, গাজা এখন কার্যত বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত জেলখানা। অন্য আর যে সীমান্তে রক্ষীদের গুলিতে প্রাণহানির কথা শোনা যেত, সেটি হলো আমেরিকা মহাদেশে যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকোর সীমান্ত। কিন্তু গুগলে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে এই প্রশ্নের উত্তরটি হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। কেননা, সংখ্যার দিক থেকে সীমান্তে প্রাণহানিতে বিশ্ব রেকর্ডটি আমাদেরই। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে হতাহতের সবাই না হলেও অন্তত ৯৫ শতাংশই বাংলাদেশি।
কিছুদিন পর পর সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে খবর চোখে পড়লেও বিষয়টি যে একটা বিশ্ব রেকর্ডে দাঁড়িয়েছে, সেটা প্রথম গণমাধ্যমের নজরে আসে বছর চারেক আগে ব্রিটেনের চ্যানেল ফোর-এর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের এই আচরণ যে এতটা ভয়াবহ এবং গুরুতর রূপ নিয়েছে, সেটা বুঝতে না পারার কারণ প্রধানত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা। সামগ্রিকভাবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় সন্দেহভাজনদের হত্যার বিষয়টিকে যে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের প্রাতিষ্ঠানিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে, সেটা বুঝতে আমাদের সময় লেগেছে অনেক।
‘ইন্ডিয়া’স গ্রেট ওয়াল—দ্য ওয়ার্ল্ডস ডেডলিয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয় ২০০৯ সালের ২৩ জুলাই। চ্যানেল ফোরের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সংবাদদাতা জোনাথন রাগম্যানের প্রায় সাড়ে আট মিনিটের এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি ইন্টারনেটে এখনো পাওয়া যায়। তাঁর প্রতিবেদনে তিনি দেখিয়েছেন যে সীমান্তে হতাহত ব্যক্তিদের সবাই গরু পাচারকারী অথবা চোরাকারবারি নন। এসব অবৈধ কারবারে কেউ কেউ নিশ্চয়ই জড়িত, কিন্তু তার চেয়েও বেশি দুর্ভোগ এবং বিপদের শিকার হচ্ছেন সীমান্ত এলাকার সাধারণ কৃষক এবং তাঁদের পরিবারগুলো। চাষাবাদের কাজ করার সময় বিএসএফের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন অথবা গুলি খেয়ে বেঁচে গেছেন এ রকম বেশ কিছু গ্রামবাসীর সাক্ষাৎকার রয়েছে ওই প্রতিবেদনে। অভিন্ন নদীর প্রবাহে সীমান্ত বিভাজন হয়েছে এ রকম তিস্তার এক অংশে নৌকায় বাংলাদেশি নারীদের একটি দলকে পাচারের দৃশ্যও তাঁর প্রতিবেদনে রয়েছে। সীমান্তে যে প্রায় দুই হাজার মাইলজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি হচ্ছিল, তার পাশ ধরে লোকজনের চলাচল এবং সীমান্তরক্ষীদের সতর্ক নজরদারি ওসব জনপদের মানুষের জীবনযাত্রায় যে কী ধরনের ছন্দপতন ঘটিয়েছে, তার প্রতিফলন আছে জোনাথনের প্রতিবেদনে।
কিন্তু চ্যানেল ফোরের প্রতিবেদন ইংল্যান্ডের দর্শকদের আলোড়িত করলেও বাংলাদেশ বা ভারতে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। এই দুই দেশের কোনো টিভি চ্যানেল ফোরের ওই প্রতিবেদন পুনঃপ্রচার অথবা তারপর কী ঘটছে, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে নিজস্ব কোনো রিপোর্ট বা অনুষ্ঠান করেছে বলে শোনা যায়নি। অথচ, বিষয়টি নিয়ে দুই দেশেই জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক সূচনার মতো ‘ফলোআপ’ করার এক চমৎকার সুযোগ তখন তৈরি হয়েছিল। সুযোগ বলছি এ কারণে যে এ ধরনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য বিশেষভাবে বাংলাদেশে কোনো চ্যানেলই অর্থের সংস্থান করে না। সুতরাং বড় ধরনের অনুসন্ধানের কাজ ছাড়াই চ্যানেল ফোরের প্রতিবেদনকে তখন কাজে লাগানোর একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
চ্যানেল ফোরের রিপোর্টেরও দেড় বছর পর ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এ ধরনের নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ‘ট্রিগার হ্যাপি’ শিরোনামে বিশদ আকারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই শতকের প্রথম ১০ বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছেন এক হাজারের মতো বাংলাদেশি, যার অর্থ হচ্ছে গড়ে প্রতিবছর ১০০ জন অর্থাৎ প্রতি সাড়ে তিন দিনে একজন করে বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। কোনো ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ ছাড়া শান্তির সময়ে কোনো দেশ তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাগরিকদের এই হারে হত্যা করছে—এটা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নেতৃত্ব এবং নাগরিক সমাজ বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেবে তা কল্পনা করাও দুষ্কর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতেও যেমন বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে, তেমনি বাংলাদেশের রাজনীতিকেরা এর ভয়াবহতা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা ফেলানীর নিথর দেহের ছবি সাময়িকভাবে আমাদের কিছুটা বিচলিত করলেও সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। এই ব্যর্থতা শুধু ক্ষমতাসীনদের একার নয়, এর আগে যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন তাঁদেরও।
ফেলানী হত্যার বিচার বিএসএফের আদালতে না করে ফৌজদারি আদালতে অনুষ্ঠানের জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশ কোনো দাবি জানিয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। নাকি সরকার আশা করেছিল বিএসএফ তাদের নিজেদের বিচারে নিজেদের দোষী সাব্যস্ত করবে? ‘সীমান্তে সন্দেহভাজনদের গুলি করা বন্ধ হবে না’ মর্মে বিএসএফের সাবেক প্রধান ইউ কে বনশলের বহুল প্রচারিত বক্তব্য (ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১২ বিবিসি) বাংলাদেশের কর্তাব্যক্তিরা কি ভুলে গিয়েছিলেন? ফেলানীর হত্যাকারী তো তাঁর বাহিনীপ্রধানের নির্দেশনাই অনুসরণ করেছেন। তাহলে সেই বাহিনীর আদালত কেন তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করবেন?
২০১১ সালের ২৫ জুলাই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাছে চিঠি দিয়ে সীমান্তে নতুন করে হত্যা এবং নির্যাতনের যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর দ্রুত ও স্বচ্ছ ফৌজদারি তদন্ত এবং ন্যায়বিচার দাবি করেছিল। ওই চিঠিতে তারা বলেছিল, ‘শ্রীলঙ্কার সমুদ্রসীমায় প্রবেশের কারণে ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে কলম্বো কোনো পদক্ষেপ নিলে ভারত যখন প্রতিবাদ করে, তখন তাদেরই সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের এত দ্বিধা কেন?’ এ ধরনের যুক্তি বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কণ্ঠে শোনা যায় না। বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে এটুকু নৈতিক অবস্থান তুলে ধরতে না পারলে সেই সম্পর্কে বন্ধুত্বের আর কি অবশিষ্ট থাকে?
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের আরেকটি খবরের উল্লেখ এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঝুঁকি নির্ধারণের একটি গবেষণা চালায়। তাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কী ধরনের রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হতে পারে, তার সম্ভাব্য কয়েকটি কাল্পনিক অবস্থার বিশ্লেষণ করা হয়। এতে যেসব সম্ভাব্য চিত্র তাদের সামনে উত্থাপিত হয়, তার একটি ছিল বাংলাদেশের একটি বিশাল এলাকা সাগরে তলিয়ে যাওয়ার কারণে কোটি মানুষের বাস্তুহারা হওয়া। এসব বাস্তুহারা স্বভাবতই বাঁচার আশায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতমুখী হতে চাইবে এবং তখন যে রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে, সেটা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দিতে পারে।
একাত্তরে কোটি খানেক বাংলাদেশিকে আশ্রয় দেওয়ার অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি ভারতের পক্ষে কি মেনে নেওয়া সম্ভব? সুতরাং দুই হাজার মাইল কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ তো একটা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। বিএসএফের নিষ্ঠুরতার কারণে এই সীমান্তে বাংলাদেশিদের সন্ত্রস্ত রাখাটাই হয়তো তাদের কৌশলের অংশ। সীমান্ত এলাকায় চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) মোতায়েনের ঘোষণা (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩) এ ধারণাকেই সমর্থন করে। যদিও বিএসএফ-প্রধান বাংলাদেশ সীমান্তে এ ধরনের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছেন। অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকের মতে, ভারতে সন্ত্রাসীদের কথিত অনুপ্রবেশের সমস্যা পাকিস্তান সীমান্তে প্রকট হলেও ভারতের কাছে বাংলাদেশ সীমান্তের গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। এর উপসর্গ বা লক্ষণ হিসেবে তাই তারা বলে থাকে যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান, চীন কিংবা মাওবাদী সন্ত্রাসকবলিত নেপালের সীমান্তে প্রাণহানির ঘটনা বাংলাদেশ সীমান্তের মতো এতটা নয়।
সীমান্ত সম্মেলনের মতো বিচ্ছিন্ন আলোচনা বা উদ্যোগে ভারতের এই সীমান্ত রক্ষানীতিতে যে পরিবর্তন আসবে না, সেটা বোঝার জন্য ইতিমধ্যেই অনেক কালক্ষেপণ হয়েছে। প্রাণ গেছে অনেক বেশি নিরীহ বাংলাদেশির। অথচ এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা শুধু এখনো পর্যন্ত শুধু বক্তৃতা-বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ। সীমান্তে হত্যা বন্ধের জন্য ভারতের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির ন্যূনতম একটি পদক্ষেপ হতে পারে জাতীয় সংসদে সর্বদলীয় প্রস্তাব পাস, যাতে তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায় যে তাদের নাগরিকের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, ছোট প্রতিবেশীর অনুভূতি তার থেকে আলাদা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক বিরোধের বিষয়ে নিজেরা একে অপরকে রাজপথে মোকাবিলায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকলেও সীমান্তে মৃত্যুর মিছিল বন্ধে অন্তত একটা সমঝোতা হওয়া উচিত। তাহলে ওই প্রস্তাবে গণতান্ত্রিক ভারতের নেতাদের এ কথাটিও স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাবে যে ‘ট্রিগার হ্যাপি’ পরিচয়টি কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মর্যাদা বাড়ায় না। সামগ্রিক সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তন না ঘটিয়েও তা সম্ভব হতে পারে।
কামাল আহমেদ: প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি, লন্ডন।