আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গোলাম আযমকে দোষী সাব্যস্ত করার প্রক্রিয়া ভুল এবং বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়নি।
এইচআরডব্লিউর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, সংস্থাটির বিবৃতি ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘অযৌক্তিক’।
‘বাংলাদেশ: আযম কনভিকশন বেজড অন ফ্লড প্রসিডিংস’ শীর্ষক ওই বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ‘গোলাম আযমের রায় দেওয়ার আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) নিজ উদ্যোগে তদন্ত চালানোর যে কথা জানিয়েছেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল তা করতে পারেন না। ট্রাইব্যুনালের তদন্তের বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও অবগত ছিলেন না বলে বিচারকদের সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণের বিরুদ্ধে তাঁরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে বা কথা বলতে পারেননি। ফলে তা বেসামরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির ১৪ ধারাকে লঙ্ঘন করেছে। কারণ, বাংলাদেশও এই চুক্তিতে সই করেছে।’
স্কাইপসহ অন্যান্য মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও বাইরের পরামর্শকদের মধ্যে কথোপকথন-বিষয়ক ‘দি ইকোনমিস্ট’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে পক্ষপাতের যে অভিযোগ উঠেছে, ট্রাইব্যুনাল তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি। কয়েকটি কথোপকথনে গোলাম আযমের প্রসঙ্গ রয়েছে। একটি কথোপকথনে প্রসিকিউশনের জন্য বিচারকদের নীলনকশার প্রসঙ্গ রয়েছে, যাতে উল্লেখ রয়েছে, কীভাবে বিচারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে, কোন সাক্ষীকে আগে ডাকতে হবে, কীভাবে সাক্ষীকে জেরা করতে হবে। এসব কথোপকথনে পরিষ্কার হয়ে গেছে, গোলাম আযমের মামলা সাজানোর ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরা প্রসিকিউশনকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
গোলাম আযমের বিচারপ্রক্রিয়ায় পাঁচটি বিষয়কে ‘ত্রুটি’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে। এগুলো হলো, প্রসিকিউশনের পক্ষে ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের অযথার্থ তদন্ত পরিচালনা, প্রসিকিউটর ও বিচারকদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব, আসামিপক্ষের সাক্ষীদের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ নিতে সরকারের ব্যর্থতা, ট্রাইব্যুনালের বিচারক পরিবর্তন, সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণের ঘাটতি।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যে আইন ও প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে, তার ত্রুটির বিষয়ে আমরা নিজেদের উদ্বেগের কথা বাংলাদেশের সরকারকে জানিয়েছি। তবে তারা তা আমলে নেয়নি। যে রায় সরকার চেয়েছিল, তা তারা পেয়েছে। কিন্তু সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
আইনমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
এইচআরডব্লিউর বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পর বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে টেলিফোনে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ জানান, সংস্থাটির যে যুক্তির ওপরে বিবৃতি দিয়েছে, তা ভিত্তিহীন।
আইনমন্ত্রী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনেই একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হচ্ছে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ ও সময় দেওয়া হয়েছে। কাজেই ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত ইউএনবিকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায় সম্পর্কে মন্তব্য করার এইচআরডব্লিউ কে? রায় ভুল না সঠিক ছিল, তা সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত দেবেন। এইচআরডব্লিউ এর দায়িত্ব নিচ্ছে কেন?
রানা দাশগুপ্ত দাবি করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ করা লবিস্টদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে এইচআরডব্লিউ এ ধরনের বিবৃতি ছড়াচ্ছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি, দুষ্কর্মে সহযোগিতা, হত্যা, নির্যাতনের অভিযোগে ২০১০ সালের মার্চ মাসে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ আনা হয়। সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ১৫ জুলাই ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেন। ১২ আগস্ট প্রসিকিউশন অধিকতর শাস্তির দাবিতে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন