Powered By Blogger

বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১১

আবুল হোসেনের মন্ত্রী হওয়া প্রসঙ্গে গোলাম মাওলা রনি সে জোরে দৌড় দিল, সত্যিই সে ফার্স্ট হলো

এবার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মন্ত্রিত্ব পাওয়ার গল্প শোনালেন পটুয়াখালী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ গোলাম মাওলা রনি। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের টক শো তৃতীয় মাত্রায় তিনি এ কাহিনি শোনান।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জিল্লুর রহমানকে টক শোর একপর্যায়ে আবুল হোসেনের যোগাযোগমন্ত্রী হওয়া প্রসঙ্গে গোলাম মাওলা বলেন, ‘মন্ত্রী হওয়ার কাহিনি যদি শোনেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর একটি গিফট (উপহার) বলা যায়।’ জিল্লুর তখন সাংসদের কাছে এ কাহিনি জানেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই।’ জিল্লুর বলেন, ‘শোনাবেন?’ অবশ্যই বলে গল্পটি শুরু করেন রনি।



অনুষ্ঠানে সাংসদ রনি তখন বলতে থাকেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন, সম্ভবত ২০০৫, ’০৪, ’০৬ সালে, তখন তিনি একবার চীন ভ্রমণে গেলেন। সেখানে হ্যাংঝো প্রদেশে ওয়েস্ট লেক আছে। আপনারা জানেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর মধ্যে একটা সরলতা কাজ করে। অনেক সময় তিনি গান শুরু করেন, আলাপ-আলোচনা করেন, একটা পারিবারিক আবহ সৃষ্টি করেন। ওয়েস্ট লেকের ওই পরিবেশে গিয়ে হঠাত্ তার কী যে মনে হলো, তিনি বলেন যে, ‘একটা বাঁশি ম্যানেজ করো তো। যেভাবেই হোক একটা বাঁশি ম্যানেজ করা হলো।’
সাংসদ রনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সাবের হোসেন চৌধুরী ছিলেন, ওবায়দুল কাদের ছিলেন এবং সৈয়দ আবুল হোসেন (বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী) ছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে রনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘আমি বাঁশিতে একটা ফুঁ দেব। তোমরা তিনজন দৌড় দেবে। দৌড়ে যে ফার্স্ট হবে, তাকে আমি মন্ত্রী বানাব।’"
বর্ণনা করে চলেন রনি, এখন যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাই ওবায়দুল কাদের, সাবের হোসেন চৌধুরী উনারাও ...দৌড় দিলেন। কিন্তু সৈয়দ আবুল হোসেন টুক ইট ভেরি সিরিয়াসলি। সে জোরে দৌড় দিল, দৌড় দিয়ে সত্যিই সে ফার্স্ট হলো। ফিরে এসে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলছেন, ‘আপনি আমাকে কমিটমেন্ট করেছেন, আমাকে মন্ত্রী বানাতে হবে এবং যোগাযোগমন্ত্রী।’"
রনি আবারও প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যতই বারবার বলেন না কেন, আমি তোমার সঙ্গে দুষ্টামি করেছি। আমি এখন বিরোধীদলীয় নেত্রী...আগামীতে ক্ষমতায় আসব কি না আসব, তার ইয়ত্তা নাই, কীসব কথাবার্তা বলো।’ তিনি বললেন, ‘না আপনি হবেন। আমাকে কথা দিতে হবে যোগাযোগমন্ত্রী। এবং এমপি হওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সেই কমিটমেন্ট স্মরণ করিয়ে দিলেন।’ এই হলো তাঁর যোগাযোগমন্ত্রী হওয়ার সত্যিকার ইতিহাস। এর বাইরে যা কিছুই বলেন, ‘ইটস নট দ্য রিয়েলিটি’ (কিছুই সত্য না)। আমরা তো কাছাকাছি থাকি, অনেক জিনিসই জানি।'
সাংসদ রনি জাতীয় সংসদে যোগাযোগমন্ত্রীকে নিয়ে হাসাহাসি করে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে বলেন, ‘মাননীয় যোগাযোগমন্ত্রী নিজেকে এমনভাবে চেনান, আমরা আসলে তাঁকে ওইভাবে চিনি না। যেমন আমরা যখন সংসদে উনাকে প্রশ্ন করি, উনি উত্তর দেন। তিনি সকলের নাম আরবিতে, সেটার বাংলা অর্থ কী, তিনি সেটা অনেকক্ষণ ধরে ব্যাখ্যা দেন। সমস্ত সংসদে তিনি ঠাট্টা-মশকরা করেন। উনি বোঝেন না যে এটা নিয়ে উনাকে ঠাট্টা করা হচ্ছে। তিনি (যোগাযোগমন্ত্রী) মনে করেন সবাই তো হাসাহাসি করছে, মনে হয় তাঁর প্রশংসা করছে, এই একটি ব্যাপার।’
সাংসদ রনি অনুষ্ঠানে আরও বলেন, ‘ছয়-সাত মাস আগে তিনি বললেন, রনি সারা পৃথিবীতে ট্রান্সপোর্ট মিনিস্টার মানে বিমান মন্ত্রণালয় তাঁর অধীনে থাকে। যোগাযোগ ও নৌপরিবহনও তাঁর অধীনে থাকবে। আমি তো এই কাজগুলো এত দক্ষতার সঙ্গে করার পরও আমার হাতে প্রচুর সময়। বিমান চালাতে পারছে না। না পারলে আমাকে দিক, যদি নৌপরিবহনমন্ত্রী না চালাতে পারে, আমাকে দিক। আমি সবগুলো চালাতে পারি। কীভাবে কাজ করতে হয় আমি দেখিয়ে দিতে চাই। আজ থেকে ছয় মাস আগে এই হলো তাঁর অনুভূতি।’
পদ্মা সেতুর ঋণ সহায়তা চুক্তি স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে গোলাম মাওলা বলেন, ‘আশ্চর্য একটি ব্যাপার, মানুষ যে কোনো পরিবেশে, মানুষ যখন মারা যায়, তখন আপনার যত রকম শক্র মারা যাক, আপনি হাসতে পারেন না। এত বড় একটি পদ্মা সেতু নিয়ে কেলেঙ্কারি হলো, এতকিছু হলো। তিনি এয়ারপোর্টে নেমে সাংবাদিকদের সঙ্গে যেভাবে ভাব-বিনিময় করছেন, তথ্য-বিনিময় করছেন এবং হাসাহাসি করছিলেন। সমস্ত মানুষ তাঁর সেন্স অব হিউমার, দায়িত্ব এবং কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।’

ভিটিওচিত্রটি চ্যানেল আই ও ফেসবুকের সৌজন্যে