Powered By Blogger

সোমবার, ৪ জুন, ২০১২

‘এভারেস্ট জয় কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না’—এই মর্মে রুল জারি

সম্প্রতি এভারেস্ট জয় করেছেন বাংলাদেশের দুই নারী। এই দুজনের বদলে যদি বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের যেকোনো দুই রাজনীতিবিদ এভারেস্ট জয় করতেন, কী ঘটত তখন? জানাচ্ছেন আলিম আল রাজি

সরকারি দল
এভারেস্ট জয় করায় সারা দেশে আনন্দ মিছিল করত ছাত্রলীগ। পাড়ায় পাড়ায় মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যেত নেতাদের। বিভিন্ন জায়গায় করা হতো সভা-সমাবেশ। সেসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হতো। পত্রিকায় খবর আসত—এভারেস্টকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ। নিহত ৫, আহত ৫০।
এভারেস্টজয়ীকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাতেন বিরোধীদলীয় মহাসচিব। তিনি বলতেন, ‘আসলে সরকারি দল এভারেস্ট জয় করতে পেরেছে তার মূল কারণ হলো আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন এভারেস্টে ওঠার রাস্তাটি পাকা করে দিয়েছিলাম।’
ঠিক পরের দিন সংবাদ সম্মেলন করে আগে দেওয়া ধন্যবাদ ফিরিয়ে নিতেন বিরোধীদলীয় মহাসচিব। ‘আসলে প্রথম দিন বুঝিনি মূল ব্যাপারটা। আমি আরও ভেবেছিলাম বাসার ছাদকে এভারেস্ট বলা হয়। আজ আমার বুদ্ধি বেড়েছে। বুদ্ধি বাড়ার পর এখন দেখি ঘটনা অন্য রকম। এভারেস্ট উঁচু একটা জিনিস। এটার ওপরে তিনি উঠবেন কীভাবে? এত বড় মই তিনি পেলেন কোথায়? যে দেশে কোনো উন্নয়নই নেই, সে দেশে এত বড় মই তৈরি হতে পারে না। তাই এভারেস্ট জয় পুরো ফাউল একটা ব্যাপার!’ এই মর্মে বিবৃতি দিতেন তিনি।
এদিকে এভারেস্টজয়ীকে অভিনন্দন জানিয়ে বিশাল সমাবেশ করত ছাত্রলীগ। সেখানে জয়ীকে ‘এভারেস্ট মানব, এভারেস্ট মানবী’ ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করা হতো।
সঙ্গে সরকারের তরফ থেকে জানানো হতো, এই সরকারই আসলে এভারেস্টের মূল প্রতিষ্ঠাতা। এর আগে এভারেস্ট নামক কোনো কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। এই সরকার এসে এভারেস্ট তৈরি করেছে এবং জয় করেছে। এখন বিরোধী দল ষড়যন্ত্র করে এভারেস্ট ধ্বংস করতে চায়। তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।
চলমান এভারেস্ট জটিলতা নিরসনে দুই নেত্রীকে সংলাপে বসার আহ্বান জানাতেন জ্ঞানী লোকজন। ‘উক্ত সংলাপে’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের হস্তক্ষেপও কামনা করতেন অনেকে। সংলাপে বসার ব্যাপারে শত শত শর্ত জুড়ে দিত দুই দলই।
দেশে এত পাহাড় থাকতে সরকারি দল কেন বিদেশের এভারেস্টে উঠতে গেল। এর প্রতিবাদে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকত বিরোধী দল। সরকারকে বিদেশিদের দালাল বলে আখ্যা দিত তারা। তথাকথিত এভারেস্ট জয়ের অপরাধে এই তাঁবেদার সরকারের এখনই পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করতেন বিরোধী দলের নেতারা।
এভারেস্ট জয়ের প্রতিবাদে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলত। গাড়ি পুড়িয়ে মানুষ মারত বিরোধী দল। অন্যদিকে পুলিশ ভাইয়েরা বিরোধীদলীয় নেতাদের মেরে তাদের হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে দিত।
পরিশেষে সন্ধ্যাবেলা হরতাল সফল হয়েছে এবং সরকারের এভারেস্ট জয় জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে—এই মর্মে বিবৃতি দিত বিরোধী দল। জবাবে বিরোধী দলের হরতাল জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, এটা জানাত সরকারি দল।

বিরোধী দল
তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানাতেন বিরোধীদলীয় নেত্রী। তাঁর আশপাশে বসা থাকতেন ১৮ দলের নেতারা। ‘আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল সরকার। তাতে কী হয়েছে? আমার দল বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা এভারেস্টের চূড়ায় উঠে গিয়েছে। তাই আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। জনগণ আমাদের সাথে আছে।’ এই মর্মে বিবৃতি দিতেন তিনি।
বিরোধী দলের অন্য নেতারা জানাতেন, তাঁদের দল ক্ষমতায় এলে ঘরে ঘরে এভারেস্ট গড়ে তোলা হবে। ‘একটি বাড়ি একটি এভারেস্ট’ প্রকল্প চালু করা হবে। তখন আর কেউ একা এভারেস্টে উঠবে না। দেশের ১৫ কোটি মানুষকে নিয়ে তাঁদের সরকার এভারেস্ট জয় করবে।
আস্তে আস্তে মুখ খুলতে শুরু করত সরকারি দল। মন্ত্রীরা বলতেন, এভারেস্ট জয় এমন কোনো জরুরি ঘটনা নয়। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এক সভায় জানাতেন, তিনি তিন বেলা খাওয়ার আগে ও পরে এভারেস্ট জয় করেন। তা ছাড়া বিদেশিদের ‘শক্ত তরল’ খাইয়ে, ফোন করে এভারেস্ট জয় করার মূল্য নেই।

আরেক কাঠি বাড়িয়ে পরের দিন বক্তৃতা দিতেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলতেন, ‘এভারেস্ট বলে কিছু নেই। এভারেস্ট বিরোধী দলের কল্পনা মাত্র। যে জিনিসের অস্তিত্বই নেই, সেই জিনিস কীভাবে জয় করা যায়? তাই বিরোধী দলের এই দাবি অত্যন্ত ফালতু।’
‘এভারেস্ট জয় কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না’—এই মর্মে রুল জারি করা হতো। তিন দিনের ভেতরে সেই রুলের জবাব দিতে বলা হতো।
সরকারের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠত বিরোধী দল। সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের প্রতিবাদে এভারেস্ট অভিমুখে লংমার্চ ডাকত তারা। লংমার্চে হানা দিত পুলিশ ও ছাত্রলীগ। পিটিয়ে পিঠের ছাল তুলে ফেলা হতো বিরোধী দলের নেতাদের। লংমার্চ থেকে গ্রেপ্তার করে নেওয়া হতো ৩৩ জন নেতা-কর্মীকে।
বাতিল করে দেওয়া হতো এভারেস্ট জয়। গ্রেপ্তার করা হতো এভারেস্টজয়ীকে। তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হতো তাকে। পত্রিকায় খবর আসত, ‘এভারেস্ট নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন সেই এভারেস্টজয়ী।’ কী সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য তা আর জানার সুযোগ হতো না কারও।

হীরক রাজার দেশে পুলিশের বেশে!!!

গবেষক: রাজামশায়, রাজ্যে এমন কী ঘটেছে, আসতে হলো আবার
গত সপ্তায় না এলাম, এর ভেতরেই নতুন কাভার?
নিশ্চয় ঘটেছে ভয়ানক কিছু, তা না হলে রাজা কেন চুপ
কী এমন ঘটেছে রাজ্যে, কেন এমন তাহার রূপ?
রাজা: চুপ করো গবেষক, সাধে কী আর ডেকেছি,
রাজ্যে এসব হচ্ছেটা কী, এই জন্য কি তোমাদের রেখেছি?
গবেষক: রাজামশায়, কী হয়েছে সবকিছু বলুন খুলে
বেশিক্ষণ ধরে রাখলে শেষে না আবার পেটটা যায় ফুলে!
রাজা: রাজ্যে এসব হচ্ছেটা কী, প্রকাশ্যে পুলিশের হাতে প্রহার
গবেষক: ওদের খাদ্যাভ্যাসে চেঞ্জ এসেছে, এখন এসবই তো আহার!
রাজা: রাজ্যের পুলিশ কী শুরু করছে এই সব
দুই দিন পর পর অভিযোগ,
আজ একে মারে তো কাল ওর গায়ে তোলে হাত
কে দিল তাদের এ সুযোগ?
গবেষক: রাজামশায়, হাসালেন, এটা কোনো ঘটনা!
এই রকম কত কিছুই তো রটে, নাকি রটে না?
পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে হাত তুলেছে গায়,
এ নিয়ে টেনশন করা কি রাজার শোভা পায়?
রাজা: ছিঃ ছিঃ! আমার রাজ্যের পুলিশ এতই বোকা!
সামান্য কটা ঘটনা দিতে পারে না ধামাচাপা
এত এত ঘটনা চোখের সামনে তুলে রেখে
শেষে কিনা পচা শামুকে কাটলি দু-পা!
গবেষক: এই নিয়ে আপনি মোটেও নেবেন না পেইন,
হীরক রাজ্যে নতুন মন্ত্র—নো পেইন, অনলি গেইন!
রাজা: তা না হয় মানলাম কিন্তু এত কিছু কেন শুনি
রাজ্যে কেন চলছে এই সব নিয়ে কানাকানি!
জলদি করে বলে দাও, স্বয়ং রাজা চায় এর বিচার
আপাতত কাজ চালাতে এক-এ এক-এ মিলিয়ে দাও চার!
গবেষক: পুলিশের বিচার করবে পুলিশ!
পুলিশে পুলিশে জ্ঞাতি ভাই,
কাকের মাংস কাকে খায় না
ইহার উপর সত্য নাই!
রাজা: সত্য-মিথ্যা জানি না, একটা কিছু করো,
ভালো-খারাপ বুঝি না, আপাতত কজন ধরো!
গবেষক: পুলিশ এখন চলে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে,
রাজা: পুলিশকে কন্ট্রোল করার হিম্মত কি কারও নাই রে!
গবেষক: পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরে থাকতে
পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী,
রাজা: পুলিশ কি আর মানুষ নেই!
যন্ত্র-মানব নাকি ষড়যন্ত্রী?
গবেষক: রাজামশায়, রাজ্যের যত বড় বড় পুলিশ
শুনেছি সবার নাকি রাজার এলাকায় বাড়ি,
এটা কি রাজার নতুন কোনো শখ
নাকি অন্য এলাকার পুলিশগুলো আনাড়ি!
রাজা: কে বলে এসব কথা, কোত্থেকে বয় এই বাতাস?
ভেবেছ কী, ভাত না খেয়ে হীরকের রাজা খায় শুধু ঘাস?
গবেষক: রাজামশায়, মাফ করবেন, এতটা লাগবে বুঝিনি,
আপনার সাথে থাকি তো, টক-ঝাল বুঝি না, বুঝি শুধু চিনি!
রাজা: হীরকের দেশে পুলিশের বেশে কে হাসে ওই ভয়ানক হাসি?
গবেষক: আর কে মশায়, জামাটা খুললেই তো সেই পুরোনো-বাসি!
আচ্ছা, রাজামশায় কি পড়েছেন বইটা, ফ্রাংকেনস্টাইন নাম তার
রাজা: কী আছে ওতে, হঠাৎ এ বইয়ের কেন অবতার?
গবেষক: সেখানে ছিল এক পাগলা ডাক্তার,
মানুষ মেরে বেশ নামডাক তার।
রাজা: দেখেছ, মানুষ মারলেও নাম-ডাক হয়!
গবেষক: কিন্তু সেই নাম আর কয়দিনই বা রয়!
মৃত জোড়া দিয়ে সে বানিয়েছিল এক প্রকাণ্ড দানব
ভেবেছিল ওটা কথা শুনবে, হায়রে বোকা মানব!
রাজা: কী? কথা শোনেনি, এত বড় স্পর্ধা ওই সামান্য দানবের!
গবেষক: জি, নিজের তৈরি দানবই জান নিয়েছিল মনিবের!
রাজা: এতক্ষণে বুঝলাম, কিছু একটার ইঙ্গিত আছে তোমার কথায়,
ঝটপট বলে ফেলো, দেখি লুকিয়ে রেখেছ কোথায়?
গবেষক: রাজা দেখি আজকাল ইঙ্গিতও বোঝেন
আর কদিন পর তো হয়ে উঠবেন আইনস্টাইন,
শুধু এটা বোঝেন না, এই পোষা পুলিশগুলো
একদিন হয়ে উঠতে পারে ফ্রাংকেনস্টাইন!
রাজা: হীরকের রাজ্যে দানব আসবে?
রাজার চেয়ে বড় দানব আছে নাকি তল্লাটে!
কি, ঠিক কি না?
গবেষক: ঠিক ঠিক
এলে আসুক, আমরাও গুনে দেখব
কত বড় মাইক আছে কার কল্লাতে!
রাজা: শাট আপ, চুপ করো, ব্যাটা গবেষক
ভয় করছে, দরজায় কে যেন করল নক!
গবেষক: ছিঃ ছিঃ! রাজামশায়, ভয় পেলে কি চলবে?
হীরকের রাজা ভয় পেলে লোকে কী বলবে!
রাজা: লোকের কথার খেতা পুড়ি, আছে তো বেশ সুখে
জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে পুরব সবাই মুখে!
গবেষক: রাজা কিন্তু ভুল করছেন, জনগণের কথা ভাবুন
পুলিশের হাতে তুলে দেবেন না সব ক্ষমতা
যার যা প্রাপ্য ততটুকুই দিন তাকে
একবার স্বাদ পেলে কেউ ছাড়তে পারে না এর মমতা!
রাজা: বাদ দাও ওসব ফোরকাস্টিং শক
আমি আজ যাই গবেষক, মাথাটা করছে ঝিমঝিম!
গবেষক: আপনি রেস্ট নেন, পুলিশের বিষয়টা দেখছি,
দেখি ব্যাটারা কত দূর যায়, আর কী কী করে ঘোড়ার ডিম!
তবে পুলিশের এই নির্যাতনের কথা আজ বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত!
ওরা আসলেই আর মানুষ নেই, মস্তিষ্কবিকৃত!


http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-06-04/news/262989