Powered By Blogger

রবিবার, ২৯ মে, ২০১১

পাক-চীন সম্পর্ক ও এশিয়ায় নতুন সমীকরণ

ওসামা বিন লাদেন হত্যার নাটকীয় ঘোষণার পর পাক-মার্কিন সম্পর্কের টানাপড়েনকে কেন্দ্র করে এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ফাটলের সাথে এ অঞ্চলে চীনের দৃশ্যমান ভূমিকা ও মার্কিন প্রভাববলয় সঙ্কুচিত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। পাক-মার্কিন সম্পর্কে অবনতির দিকটি প্রথম প্রকাশ পায় জানুয়ারিতে সিআইর ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত রেমন্ড ডেভিস নামে এক মার্কিন গুপ্তচরকে আটকের পর। ডেভিসকে আটক করা হয়েছিল দুই পাকিস্তানিকে হত্যার অভিযোগে। তিন মাস কারাগারে আটক থাকার পর রক্তের মূল্য পরিশোধের বিনিময়ে তিনি মার্চে মুক্তি পান।


এরপর ধারণা করা হয়েছিল, পাকিস্তানের ওপর মার্কিন চাপ বাড়বে। ঠিক তা-ই হয়েছে। পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ভেতরে এক কমান্ডো অভিযানে বিন লাদেনকে হত্যার দাবি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই অভিযানকে পাকিস্তান দেশটির সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে দাবি করেছে; অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্খার বিরুদ্ধে লাদেনকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ আনে। যদিও এই অভিযানে প্রকৃত অর্থে লাদেনের মৃত্যু হয়েছে, না তিনি আগেই মারা গিয়েছিলেন কিংবা লাদেনের নামে অন্য কাউকে হত্যা করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। প্রকৃত বিন লাদেন মারা যাক বা না যাক এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান দীর্ঘ দিনের বন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। বিন লাদেন মারা যাওয়ার পনেরো দিনের মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি চীন সফর করেছেন। চীনা নেতারা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে এবং দেশটি সন্ত্রাসের শিকার। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর সম্মান দেখানো উচিত। পাকিস্তানের ওপর যে কোন আঘাতকে চীনের ওপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং পাকিস্তানের পাশে সব সময় চীন থাকবে। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রবল চাপের মধ্যে চীনের এই ঘোষণা শুধু পাকিস্তানের জন্য স্বস্তির বিষয় ছিল না, দেশটির বিপদে চীন যে সমর্থন জানাবে তারও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।


এই সফরে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাপকভিত্তিক কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর মধ্যে সামরিক সাহায্যের পাশাপাশি সমরপ্রযুক্তি হস্তান্তরের মতো বিষয় রয়েছে। একই সাথে দ্রুততম সময়ে ৫০টির বেশি জেএফ থান্ডার এয়ার ক্রাফট পাকিস্তানকে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে চীন। এ ছাড়া নৌবাহিনীর জন্য ফিন্সগেট ক্রয় ও সাবমেরিন চালানোর প্রশিক্ষণের বিষয় নিয়ে দুই দেশ একমত হয়। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ৭৫ শতাংশ অস্ত্র আসে চীন থেকে। খুব শিগগরই ২৬০ চীনা ফাইটার জেট পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ হবে। চীনের আগ্রহে আগামী বছরে পাকিস্তান সাংহাই কোঅপারেশনে অর্গানাইজেশনে পর্যবেক্ষক থেকে সদস্য হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে চীন-ভারত সম্পর্কে আরো নতুন মাত্রা পেতে পারে। কিন্তু গিলানীর এবারের সফরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সামরিক আলোচনা ছিল, চীনের সাহায্যে নির্মিত, পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরে একটি নৌঘাঁটি স্খাপনের প্রস্তাব।


ভারত মহাসাগরে চীন ও ভারতের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা বেশ পুরনো। তুলনামূলক ভারতের নৌবাহিনীও এখানে অনেক শক্তিশালী। বলা চলে, ভারত মহাসাগরে ভারতের একচ্ছত্র প্রভাব। এর সাথে যোগ হয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীর সাথে ভারতের নৌবাহিনীর নিরিড় সহযোগিতার সম্পর্ক। মধ্যপ্রাচ্য থেকে চীনের জ্বালানি সরবরাহ করতে হয় সঙ্কীর্ণ মালাক্কা প্রণালী দিয়ে ভারত আর মার্কিন নৌ-নজরদারির ভেতর দিয়ে। যেকোনো প্রতিকুল পরিস্খিতিতে চীনের এই জ্বালানি সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিতে পারে ভারত-মার্কিন নৌশক্তি। চীনের জ্বালানি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কৌশলের জন্য বিকল্প সমুদ্রপথ অনেক জরুরি। সেই সুযোগটি এবার পুরোপুরিভাবে পেতে যাচ্ছে চীন। গোয়াদরের এই বন্দরের সামরিক গুরুত্ব বহুমুখী। কার্যত এই বন্দর হবে এশিয়ার দক্ষিণ সমুদ্র উপকূলে চীনের প্রভাব বজায় রাখার মূল কেন্দ্রবিন্দু যেখান থেকে মার্কিন আর ভারতীয় নৌশক্তির ওপর নজরদারির কাজটিও চালাতে পারবে চীন।


ওমানের সমুদ্র উপকূলের কাছে গোয়াদর বন্দর। এখান থেকে পারস্য উপসাগরের দূরত্বও খুব বেশি নয়। ১৯৫৮ সালের আগ পর্যন্ত গোয়াদর ওমানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে তা পাকিস্তানের হাতে ছেড়ে দেয় ওমান। ১৯৭৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন পাকিস্তান সফরে এলে প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো গোয়াদরে একটি বন্দর নির্মাণের জন্য সাহায্য চান। প্রস্তাব করেন, মার্কিন সহযোগিতায় এই বন্দর তৈরী হলে এর সুবিধা মার্কিন নৌবাহিনী যাতে পায় তা নিশ্চিত করা হবে। জুলফিকার আলী ভুট্টোর এই প্রস্তাবে সাড়া দেননি নিক্সন। মার্কিন সাহায্য না পেলেও এখানে বন্দর নির্মাণের চিন্তা পরিত্যাগ করেনি পাকিস্তান। তারা পরে চীনের সাহায্য চায়। চীনের সহায়তায় ২০০২ সালে শুরু হয় এই বন্দর নির্মাণের কাজ। চীন এই বন্দর নির্মাণে বিনিয়োগ করে ২০০ মিলিয়ন ডলার। ২০০৬ সালে বন্দরের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়। বন্দর ব্যবস্খাপনার দায়িত্ব দেয়া হয় সিঙ্গাপুর পোর্ট ম্যানেজমেন্ট অথরিটিকে। এখন সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটির কাছ থেকে এই বন্দর ব্যবস্খাপনার দায়িত্ব দেয়া হবে চীনকে। শিগগিরই সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটির বন্দর ব্যবস্খাপনার বিষয়টি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।


এই বন্দরের সাথে চীনা ভূখণ্ডের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথও তৈরির কাজ শুরু করে, যাতে তেলের ট্যাংকারগুলো বন্দর থেকে চীনা ভূখণ্ডে নেয়া যায়। চীন কারাকোরাম হাইওয়ে পাকিস্তানের গিলগিট বাল্টিস্খান হয়ে জিনজিয়াং প্রদেশ পর্যন্ত রাস্তায় সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে। ২০০৬ সালে দু’দেশ কাশগড় থেকে পাকিস্তানে অ্যাবোটাবাদ পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কারাকোরাম হাইওয়ে বড় বড় কনটেইনার বা ট্যাংকার পরিবহনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে­ এই বিবেচনায় বিকল্প যোগাযোগের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়। ২০১০ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি চীন সফর করেন। চীনা প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের সাথে আলোচনায় কাশগড় থেকে গোয়াদর পর্যন্ত তিন হাজার কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।


নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, চীন এই বন্দর সামরিক ও বেসামরিক উভয় দিকে সমানভাবে ব্যবহার করবে। এখানে শুধু চীনের জাহাজ থাকবে না, সাবমেরিনগুলোর ঘাঁটিও হবে। নয়াদিল্লিভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বন্দর ভারতের জন্য সরাসরি হুমকি। গোয়াদর বন্দর হরমুজ প্রণালীর খুব কাছে। প্রতিকূল পরিস্খিতিতে পাকিস্তান এই জ্বালানি রুটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারবে। অপর দিকে বেইজিং এই বন্দর থেকে পারস্য উপসাগর ও আরব সাগরে ইন্দো-আমেরিকান নৌতৎপরতার ওপর পুরোপুরি নজরদারি করতে পারবে।


চীনের সাথে পাকিস্তানের এই কৌশলগত নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়ই উদ্বিগ্ন। অনেকে মনে করেন, সিআইএ ও আইএসআই’র মধ্যে বিরোধের মূলে রয়েছে চীনের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কের বিষয়টি।


পশ্চিমা দেশগুলোর অব্যাহত চাপের মধ্যে পাকিস্তান যখন চীনা কার্ডটি দক্ষতার সাথে খেলছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানের প্রতি তার সুর খানিকটা নরম করে ফেলছে বলে মনে হচ্ছে। হিলারি ক্লিনটন জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ অ্যাডমিরাল মাইক মুলেনকে সাথে নিয়ে আকস্মিক ইসলামাবাদ সফরে আসেন। পাকিস্তানের সাথে সহযোগিতা ও সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।


এত দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে পাকিস্তানি গোয়েন্দাসংস্খার আশ্রয়ে বিন লাদেন লুকিয়ে ছিলেন। এখন পাকিস্তান সফরে এসে হিলারি বলছেন তিনি বিশ্বাস করেন না, বিন লাদেনের লুকিয়ে থাকার বিষয়টি পাকিস্তানি শীর্ষ কর্মকর্তারা জানতেন।


পাকিস্তানকে দেয়া সাহায্য বন্ধ করা হবে না বলে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা আগেই ঘোষণা দিয়েছেন। পাকিস্তান পুরোপুরি চীনের প্রভাববলয়ে চলে যাচ্ছে­ এমন পরিস্খিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ফুটে উঠেছে। তালেবান জঙ্গিদের নির্মূলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা চালালেও তুরস্কের মধ্যস্খতায় তালেবানদের সাথে আলোচনাও চলছে। মধ্যমপর্যায়ের তালেবান নেতাদের সাথে ন্যাটো কর্মকর্তাদের বৈঠকও হয়েছে। তুরস্কের প্রভাবশালী সংবাদপত্র টুডেস জামানকে সম্প্রতি ন্যাটোর সাবেক কর্মকর্তা ও তুরস্কের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিকমত সেতিন জানিয়েছেন, শিগগিরই তুরস্কে তালেবানদের সাথে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, তালেবানদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ এখনো বহাল রয়েছে। অপর দিকে পাকিস্তানও তালেবানদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। করাচিতে পাকিস্তানের নৌঘাঁটিতে হামলা এবং অত্যাধুনিক দু’টি নৌনজরদারি বিমান ধ্বংস করে দেয়ার নেপথ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে পাকিস্তানের ভেতর থেকে এখন প্রশ্ন উথাপিত হয়েছে। এই হামলার মাধ্যমে বিশেষ কোনো বার্তা দেয়া হচ্ছে কি না। হামলার ধরন থেকে স্পষ্ট, পাকিস্তানের সামরিক শক্তিতে আঘাত হানা ছিল এই হামলার লক্ষ্য। পাকিস্তানের কোনো কোনো গণমাধ্যমে অভিযোগ করা হচ্ছে, পাকিস্তান তালেবানের নামে যারা এসব হামলা চালাচ্ছে তাদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্খার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।


অপর দিকে চীনের সাথে পাকিস্তানের সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারে ইতোমধ্যে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন বাহিনীর হত্যার দাবির পর নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে এমন আভাষ দেয়া হয়েছিল, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতও এ ধরনের অভিযান চালাতে পারে। ভারতের এই আকাঙ্ক্ষার যে প্রতিক্রিয়া পাকিস্তান দেখিয়েছে, তা ভারতের জন্য আরেক দফা উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান জানিয়ে দেয়, ভারত যদি এ ধরনের অভিযানের সাহস দেখায় তাহলে স্বল্পমাত্রার পারমাণবিক অস্ত্র বা ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার আর্মস ব্যবহার করবে। পাকিস্তানের কাছে যে এ ধরনের অত্যাধুনিক পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে তা এত দিন অজানা ছিল। একই সময়ে ভারত কূটনৈতিকভাবে আরেকটি বাজে পরিস্খিতির মধ্যে পড়ে যায়। দেশটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অবস্খানরত ৫০ জন সন্ত্রাসীর একটি তালিকা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। এদের বিচারের জন্য ভারতের কাছে হস্তান্তরের দাবি করে। এর এক দিন পর ভারতের সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়, এই তালিকার দু’জন ভারতের কারাগারে আটক রয়েছে। অর্থাৎ পাকিস্তানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতও চাপ প্রয়োগ করতে গিয়ে উল্টো ভারত চাপের মধ্যে পড়েছে এবং দেশটির ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে।


ওসামা বিন লাদেন হত্যার পর পাকিস্তানকে ঘিরে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের এই প্রতিযোগিতা এশিয়ায় পরাশক্তিগুলোর নতুন কৌশলগত সমীকরণের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর এতে ইরানও যোগ হয়েছে। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সংহতির প্রতি ইরান সমর্থন জানিয়েছে। ইরানের সাথেও পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তারা যোগাযোগ রাখছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাকিস্তান শুধু চীন নয়, রাশিয়ার সাথেও সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি রাশিয়া সফর করেছেন। তাকে রাশিয়ায় উষ্ণ সংর্বধনা দেয়া হয়। পাকিস্তান ও ইরানের সাথে চীন ও রাশিয়ার নতুন সম্পর্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভবিষ্যতে বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। এর ফলে শুধু আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর অবস্খান দুর্বল হবে না, মধ্য এশিয়ার জ্বালানি সম্পদের ওপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ আরোপের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা বড় ধরনের হোঁচট খাবে। কারণ ইতোমধ্যে রাশিয়ার পাশাপাশি চীনও মধ্য এশিয়ায় প্রভাব বাড়াচ্ছে। পাকিস্তান-চীন সহযোগিতার সম্পর্ক চীনকে এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেবে। মধ্য এশিয়ার সাথে সড়ক যোগাযোগ আর বন্দর সুবিধার কারণে পাকিস্তানের গুরুত্ব বেড়েছে। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানামুখী চাপ আর দেশের অভ্যন্তরে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা সত্ত্বেও ভূকৌশলগত অবস্খানের কারণে পাকিস্তান চীন ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের কার্ডগুলো খেলছে। আর এটাই পাকিস্তানের মূল অস্ত্র। এ কারণে পাকিস্তানকে নিয়ে সমালোচনা করা যতটা সহজ, উপেক্ষা করা ততটাই কঠিন।
[সূত্রঃ নয়া দিগন্ত, ২৯/০৫/১১]

আলফাজ আনাম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন