Powered By Blogger

বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩

Joint Defence Statement: “Bangladesh at the Precipice”

By 
9BR copy
The following is a joint defence statement from Steven Kay QC, John Cammegh and Toby Cadman concerning the sentence to death of Mr. Abdul Quader Mollah by the Appellate Division of the Supreme Court.  A signed PDF version of the statement may be downloaded here:
The timing of the planned execution of Abdul Quader Mollah is a disgracefully cynical attempt to bury bad news as the international media concentrates on events in South Africa. The contrast between a man who stood for and dedicated his life to reconciliation and forgiveness with the behavior of the Bangladesh Prime Minister Sheikh Hasina could not be greater.
The international community now stands united against this execution. The UN, EU, Britain, United States and Australian governments, to name a few, have in the past day called for a halt to this unwarranted sentence that serves no purpose, other than to divide Bangladesh and take the country a further step away from reconciliation and unity. Sheikh Hasina and her ruling party should know that they will lose all credibility amongst the international community if this sentence is carried out. The government and its leadership will become international pariahs.
We would also like to remind the Bangladeshi Prime Minister that any attempt to cling on to power that results in significant misery for her people would not be ignored. The International Criminal Court is already prosecuting one former state leader who attempted such a move in the Ivory Coast.
The sentence to death of an opposition leader is a cynical political move of the worst kind. With a UN deal on the table that could secure viable elections, ensuring UN and EU monitoring, this execution is a deliberate attempt to provoke a crisis, create a State of Emergency, and to prolong Sheikh Hasina and the Awami League’s grip on power.
The analysis that Sheikh Hasina is a bulwark against the rise of Islamism in South East Assia is wholly misplaced.  Her exclusion and demonisation of Islamic politicians, combined with the planned execution of their leaders in a deeply flawed judicial process, will only polarise Bangladesh further, and give rise to more extremist political factions. So far she is singularly responsible for a rapid partisan tension that may cause  significant civil unrest, including many deaths and injuries.
The International Crimes Tribunal was set up to bring justice to the victims of the 1971 Independence War. However, it is now very clear the government hijacked the process so it could destabilise its opponents under the guise of “justice.” The government’s hijacking of the most painful part of a nation’s collective memory for its own political ends is deplorable. Their retroactive changing of the law in the Mollah case makes the repeated claims of the government, including senior cabinet members, that the Tribunal should be heralded as upholding international standards completely preposterous.
During the course of the trial and appeal process a number of disclosures have emerged that demonstrate the very serious failings in the judicial process and exposed direct governmental interference.  Judges met with key prosecution witnesses.  Judges were removed from trials at random.  Severe restrictions were placed on the defence case.  However, all of this pales in comparison to the disclosure that the very person who gave evidence at Mollah’s trial and whose evidence has sent him to the gallows, may not even be the person named on the statement, but an impersonator fully prepared by the authorities to give false evidence.
The case of Abdul Quader Mollah is a gross miscarriage of justice. His case warrants a full international inquiry.  To do otherwise makes a mockery of the international justice process.  Sierra Leone, Rwanda and the Balkan countries have been through a process of reconciliation in which both restorative and retributive    justice played an important part. At the hands of a leadership intent only on personal gain, it is a tragedy Bangladesh has gone in the opposite direction.  The work to halt the miscarriages of justice of the ICT and highlight its gross injustices will continue. Those standing up for justice and human rights in Bangladesh will not be swayed.
Finally, we urge all Bangladeshis, from across the political divide, to turn away from violence. While protests are inevitable and justified, we hope they are conducted in a peaceful manner.  Furthermore, before the Government manipulates the protests to justify the status quo, they should remember it is their conduct that has directly resulted in the tensions witnessed on the streets of Bangladesh today.

Dated:
Wednesday 11 December 2013

Signed:
Steven Kay QC, Nairobi, Kenya
John Cammegh, London, UK
Toby M. Cadman, Washington DC, USA

Contact:
9 BEDFORD ROW INTERNATIONAL
Chambers of Anthony Berry QC, 9 Bedford Row. London, WC1R 4AZ
T +44 20 7489 2727       F +44 20 7489 2828       E clerks@9bedfordrow.co.uk

বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৩

এক্সক্লুসিভ:উইকিলিকসের চাঞ্চল্যকর তথ্য..হাসিনা,আওয়ামীলীগ ও RAW বিডিয়ার হত্যাকান্ডে জড়িত


২৫ ফেব্রুআরির পিলখানায় নারকিয় সেনা হত্যাযঙ্গের কথা আজও ভুলতে পারেনি জাতি। কি হয়েছিল সেদিন? কারা বা কাদের নির্দেশে এই হত্যাযঙ্গ সংগঠিত হয়েছিল?? উইকিলিকসের সেই কথাটিই ব্লাসট করে দিল। নিচে পড়তে থাকুন>>
সেনা হত্যা নিয়ে সেনাবাহিনীর গঠিত তদন্ত রিপোর্টে মোটামুটি উঠে এসেছিল সব কিছু। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সে তদন্ত রিপোর্ট বাতিল করে দিয়েছে। তবে অনলাইনের কল্যানে জনগণ সব জেনে গেছে ভেতরের গোপন কথা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিক ও অফিসার জানে – কেনো, কোন্ পরিকল্পনায়, কারা পিলখানায় ৫৭ সেনা অফিসার হত্যা করেছে। সেটাই সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো।

১. RAW: ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘R&AW’এর পরিকল্পনায় ও ব্যবস্থাপনায় ”পিলখানা হত্যাকান্ড” ঘটে। এর মূল লক্ষ ছিল- পাদুয়া ও রৌমারীর ঘটনার বদলা নেয়া এবং বিডিআর বাহিনী ধংস করে দেয়া। ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বিডিআর-বিএসএফ যুদ্ধে ১৫০ জন বিএসএফ নিহত হয়। এর আগে পাদুয়ায় নিহত হয় ১৫ বিএসএফ। বিডিআর ডিজি মেজর জেনারেল এএলএম ফজলুর রহমানের নির্দেশে ঐ যুদ্ধে অংশ নেয় বিডিআর। ঐ ঘটনার পরে ভারতীয় ডিফেন্স মিনিষ্টার জসবন্ত সিং উত্তপ্ত লোকসভায় জানান, ”এ ঘটনার বদলা নেয়া হবে।” লক্ষ করুন, ১৯৭১ সালে যে সব শর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সামরিক সাহায্য দেয়, তার অন্যতম শর্ত ছিল “Frontier Guards will be disbanded” (CIA Report SC 7941/71). অর্থাৎ বাংলাদেশের কোনো বর্ডার গার্ড থাকবে না। কিন্তু স্বাধীনতার পরে নানা কারনে পাকিস্তান রাইফেলস বালাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) রূপ নেয়। বিডিআর বাহিনীটি ছিলো আধাসামরিক বাহিনী, যার মূল কমান্ড ও ট্রেনিং ছিলো সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মত। অন্যদিকে ভারতের বিএসএফ ছিলো সিভিল বাহিনী, যাদের ট্রেনিং, জনবল সবই ছিলো নিম্নমানের। এসব কারনে বর্ডারে কোনো যু্দ্ধ হলে তাতে বিডিআর সামরিক পেশাদারিত্ব দিয়ে বিজয়ী হত।
পাদুয়া-রৌমারীর বদলা নেয়ার জন্য বিডিআর বাহিনী ধংস করার পরিকল্পনা করে ভারত। এ লক্ষে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী সময়টিকে বেছে নেয়া হয়- যখন হাসিনার নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহনের পর পর নাজুক সময়। অনেকেই মনে করেন, ভারতীয় পরিকল্পনায় নির্বাচন ছাড়া অপ্রত্যাশিত পদ্ধতিতে হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর নানা শর্তের মধ্যে একটি গোপন শর্ত থাকতে পারে “বিডিআর ধংস করা।” চুড়ান্ত রিস্ক থাকা স্বত্ত্বেও হাসিনাকে তা মেনে নিতে হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিডিআর সৈনিকদের দাবীদাওয়ার আড়ালে মুল প্লানটি বাস্তবায়নের জন্য মোট ৬০ কোটি রুপী বরাদ্দ করে ভারত। এর মধ্যে পিলখানায় ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা বিলি হয়, যাতে প্রতিটি অফিসারের মাথার বদলে ৪ লক্ষ টাকা ইনাম নির্ধারন করা হয়। ১৯ ও ২১ ফেব্রুয়ারী ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বাছাই করা ১৫ জন শুটারকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়, যারা পশ্চিম বঙ্গ সরকারের পাঠানো (প্রেমের নিদর্শন) ১ লক্ষ মিষ্টির সাথে বাংলাদেশে ঢুকে। একজন বেসামরিক দর্জি’র কাছ থেকে বিডিআর এর পোশাক বানিয়ে বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে পিলখানায় উপস্থিত থাকে শুটাররা। তাদের দায়িত্ব ছিলো লাল টেপওয়ালা (কর্নেল ও তদুর্ধ) অফিসারদের হত্যা করা। তারা একটি বেডফোর্ড ট্রাক ব্যাবহার করে ৪ নং গেইট দিয়ে প্রবেশ করে ২৫ তারিখ সকালে। ঘটনার দিন সকাল ১১টায় বাংলাদেশের কোনো সংবাদ মাধ্যম জানার আগেই ভারতের “২৪ ঘন্টা” টিভিতে প্রচার করা হয় জেনারেল শাকিল সস্ত্রীক নিহত। অর্থাৎ মূল পরিকল্পনা অনুসারেই খবর প্রচার করে ভারতীয় গণমাধ্যম!
পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে বা আর্মির পদক্ষেপে শেখ হাসিনার জীবন বিপন্ন হলে তাকে নিরাপদে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় ৩০ হাজার সৈন্য, ছত্রীবাহিনী ও যুদ্ধবিমান আসামের জোরহাট বিমানবন্দরে তৈরী রেখেছিলো ভারত। বিদ্রোহের দিন ভারতের বিমান বাহিনী IL-76 হেভি লিফ্‌ট এবং AN-32 মিডিয়াম লিফ্‌ট এয়ারক্রাফট নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে পূর্ণ সহায়তা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলো। ঐসময় প্রণব মুখার্জীর উক্তি মিডিয়ায় আসে এভাবে, “এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সব ধরণের সহায়তা দিতে ভারত প্রস্তুত। … আমি তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর সতর্কবাণী পাঠাতে চাই, যারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, তারা যদি এ কাজ অব্যাহত রাখে, ভারত হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, প্রয়োজনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে।”
২. শেখ হাসিনা : ভারতের এই পরিকল্পনাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয় বেশ আগেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নিমিত্তে ঘটনার ১ সপ্তাহ আগে তড়িঘড়ি করে প্রধানমন্ত্রীকে সুধাসদন থেকে সরিয়ে যমুনা অতিথি ভবনে নেয়া হয়, কেননা পিলখানার ডেঞ্জার এরিয়ার মধ্যে ছিল ওটা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার মেরামত শেষ না হওয়া স্বত্ত্বেও ভারতের সিগনালে খুব দ্রুততার সাথে হাসিনাকে সুধাসদন থেকে সরানো হয়। এটা এক অসম্ভব ঘটনা। পিলখানা হত্যাকান্ডের পরিকল্পনায় বিরাট সংখ্যায় সেনা অফিসার হত্যা করা হবে, যেটা ১৯৭৫ সালে তার পিতৃ হত্যার একটা বদলা হিসাবে হাসিনার কাছে সুখকর ছিলো। এর মাধ্যমে বিডিআর নিশ্চিহ্ন হবে, টার্গেট করে বিপুল সংখ্যক সেনা অফিসার হত্যা করা হলে তাতে মূল সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙ্গে যাবে। গোয়েন্দা খবর পেয়ে ২৫ তারিখে পৌনে ন’টার মধ্যেই এনএসআই ডিজি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে- “পিলখানায় বিদ্রোহ হচ্ছে। ” প্রধানমন্ত্রী নিরব থাকেন! আক্রমনের পরে অফিসারদের SOS পেয়ে সকাল ১০টার মধ্যে র‌্যাবের একটি দল, এবং ১০.২৫ মিনিটে সেনাবাহিনীর একটি দল পিলখানার গেটে পৌছায়। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো অভিযান চালানোর অনুমতি দেয়নি। আশ্চয্যজনকভাবে তিনি সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। আর এর মধ্যে ঘটতে থাকে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। খেয়াল করুন, সেনা অফিসাররা কোনো প্রতিরোধ করেনি, কাজেই কি কারনে বিডিআর সৈনিকরা অফিসারদের হত্যা করবে? এটা ছিল সুপরিকল্পিতভাবে সেনা অফিসার হত্যাকান্ড। সারাদিন হত্যাকান্ড চালানোর সুযোগ দিয়ে বিকালে শেখ হাসিনা হত্যাকারীদের সাথে বৈঠক করে তাদের সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করেন। কিন্তু তিনি একবারও জানতে চাননি, ডিজি শাকিল কোথায়? কি বিস্ময়!! জেনারেল জাহাঙ্গীরের তদন্ত কমিটি শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের সুপারিশ করেছিল, যার ফলে হাসিনা ক্ষেপে গিয়ে ঐ রিপোর্ট ধামাচাপা দেন।
৩. গোয়েন্দা সংস্থা: ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোর এক সাংবাদিক ঘটনার আগের দিন এটা জানার পর সে এনএসআইকে এই মর্মে অবহিত করে যে, পিলখানা য় বিদ্রোহের প্রস্তুতি চলছে যার সাথে বিডিআর ও আওয়ামীলীগের নেতারা জড়িত। এনএসআই থেকে উক্ত সাংবাদিককে বলা হয় বিষয়টা চেপে যেতে। ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর পিলখানায় যাওয়ার আগের দিন পিলখানা অস্ত্রাগার থেকে ৩টি এসএমজি খোয়া যায়। তখন সেনা অফিসারদের দায়িত্ব দেয়া হয় অস্ত্রাগার পাহারায়। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোয়েন্দাগিরি বহাল থাকে। নূন্যতম কোনো বিচ্যুতি ঘটলে প্রোগ্রাম বাতিল হয়। এত কিছু সত্তেও ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী সেখানে যান। মূলত: বিদ্রোহের আগাম বার্তা সেনাপ্রধান ম্ইন, ডিজিএফআই প্রধান মোল্লা ফজলে আকবর (ইনি হাসিনার এক সময়ের প্রেমিক ছিলেন), এনএসআই প্রধান মেজর জেনারেল মুনির, সিজিএস মেজর জেনারেল সিনা জামালী, বিডিআর কমিউনিকেশন ইনচার্জ লেঃ কর্নেল কামরুজ্জামান, ৪৪ রাইফেল’এর সিও শামস, মুকিম ও সালাম-এর জানা ছিল। কেননা ২৫ তারিখের আগেই দাবী দাওয়ার লিফলেটের কপি ডিজি শাকিল, এনএসআই ও সরকারের কাছে পৌছে। এমনকি মাঠ পর্যায়ের বহু সেক্টর কমান্ডাররা জানত, ২৫ তারিখে একটা ঘটনা ঘটবে। পরিকল্পনামত প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে ২৪ তারিখে জানিয়ে দেয়া হয়, প্রধানমন্ত্রী ২৬ তারিখের নৈশভোজে যাচ্ছেন না। এমন ঘটনা অতীত কখনও কখনো ঘটেনি!
৪. জেনারেল মইন উ আহমেদ: তৎকালীন সেনাপ্রধান ও ১/১১র প্রধান কুশীলব। ২০০৮ সালের গোড়ার দিকে ভারত সফর করে মইন চেয়েছিলেন পূর্ন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতীয় সমর্থন। ভারত রাজী হয়নি, বরং আ’লীগকে ক্ষমতায় আনার লক্ষে মইনকে কাজ করতে বলে, বিনিময়ে সেফ প্যাসেজ পাবে কুশীলবরা। উপায়ান্তর না দেখে মইন রাজী হয় এবং ২৯ ডিসেম্বর পূর্বপরিকল্পিত ফলাফলের নির্বাচনে ক্ষমতার পালবদল ঘটায়। মইনের বদলে আসেন হাসিনা! ওয়ান ইলেভেনের খলনায়করা যে সব রাজনীতিবিদদের অত্যাচার করেছে, তাদের বিচারের জন্য ফেব্রুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহে সংসদে প্রবল দাবী ওঠে। তখন সেনাবাহিনীর চাপের মুখে জেনারেল মইন নিজে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সাথে সংসদ অফিসে। এরপর শেখ হাসিনা ধমকে দেন মখা আলমগীর, আবদুল জলিলদের, যাতে করে সেনাবাহিনীর বিচারের দাবী আর না তুলে। হাসিনা এ সময় হুশিয়ার করেন, “কিভাবে ক্ষমতায় এসেছি, সেটা কেবল আমিই জানি।” অন্যদিকে ঐ সময়ই ভারত তার প্লানমত এগিয়ে যায় বিডিআর অপারেশনে। মইনকে বলা হয় প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিতে। মইন তার দু’বছরের অপকর্মের স্বাক্ষী আর্মি অফিসারদের আগে থেকেই পোষ্টিং দিয়ে জড়ো করে বিডিআরে। এদের নিধন করা হলে মইনের অপকর্মের সাক্ষী আর পাওয়া যাবে না। ফলে মইনের বিরাট প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল এই হত্যাযজ্ঞ। অন্যদিকে এত সেনা অফিসার নিহত হলে ১/১১ নিয়ে সেনাবাহিনী তথা মইনের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদরা আর মুখ খুলবে না। এতকাল আর্মির রদ্দিমালগুলো যেতো বিডিআরে। কিন্তু এবারে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র- পরিকল্পিতভাবে অনেক চৌকশ অফিসার একসাথে পাঠানো হয় বিডিআরে। পিলখানা হত্যাকান্ডের মাত্র ২ মাস আগে গুলজারকে ষ্টান্ড রিলিজ করে বিডিআরে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। রাইফেলস সপ্তাহের আগেই কানাঘুসা শুরু হয়- ২৫ তারিখে বিদ্রোহ হবে। তাই অনেক অফিসার নানা অযুহাত দিয়ে ছুটিতে চলে যায়। সেনাপ্রধান মইনের পিলখানা হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ছিল, যার প্রমান মেলে ঘটনার সাথে সাথেই আক্রান্ত ডিজি শাকিল ও অফিসাররা মইনকে ফোনে জানায়। মইন আশ্বাস দেন সেনা পঠাচ্ছি। অথচ তিনি কোনো ব্যবস্থা নেন নি, সময় ক্ষেপন করে হত্যার সুযোগ তৈরী করে দেয়। ম্ইন চলে যায় যমুনায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে। তেজগাওয়ে এয়ারফোর্স রেডি, আর্মি রেডি সেনিাবাসে। কিন্তু হুকুম আসে না। বিকালে কিছু সেনা ও যানবাহন ধানমন্ডি পর্যন্ত পৌছে গেলেও অপারেশনের অনুমতি দেয়নি হাসিনা ও ম্ইন। ঘটনার ৪ দিন পরে ১ মার্চে হাসিনা সেনাকুঞ্জে গেলে মইন সেনা অফিসারদের ব্যাপক অসন্তোষের মুখে পরেন। এমনকি নিহতদের জানাজার সময় মইনকে চেয়ার তুলে মারতে যায় কেউ কেউ। উল্টো, সেনাকুঞ্জে যে সব সেনা অফিসার বিচার চেয়ে জোর গলায় বক্তৃতা করেছিল, প্রতিবাদ করেছিল- ভিডিও দেখে দেখে এমন প্রায় দু’শ জনকে চাকরীচ্যুত করেছে মইন অনেক অফিসারকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মামলায় কারাদন্ডও দেয়া হয়েছে।
৫. সজীব ওয়াজেদ জয়: শেখ হাসিনার এই পুত্রটি আগে থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর ক্ষিপ্ত ছিলো। ২০০৮ সালের নির্বাচনের দেড় মাস আগে (১৯ নভেম্বর) হাসিনার উপদেষ্টা ও পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় তার Stemming the Rise of Islamic Extremism in Bangladesh শীর্ষক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, জোট সরকারের আমলে সেনাবাহিনীতে ৩০% মাদ্রাসার ছাত্ররা ঢুকানো হয়েছে। এদের নির্মুল করে সেনাবাহিনী পূনর্গঠন করতে হবে। পিলখানায় বিপুল সেনা অফিসার হত্যা করা হলে সেনাবাহিনীতে ব্যাপক সংস্কার করা সহজ হবে, এবং নতুন নিয়োগ করা যাবে- এমন বিবেচনায় জয় ভারতীয় প্রস্তাবটি গ্রহন করেন। পিলখানা হত্যার পরে জয় দুবাই যান এবং সেখানে ঢাকা থেকে আগত হত্যাকারীদের নগদ পুরস্কৃত করেন বলে খবর প্রকাশ।
৬. শেখ ফজলে নূর তাপস: হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে এই তাপস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘটনায় তার পিতা নিহত হয়। তাপস ঢাকা-১২র নির্বাচন করতে গিয়ে বিডিআর এলাকায় ৫ হাজার ভোট প্রাপ্তির লক্ষে ৪৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি তোরাব আলী’র মাধ্যমে বিডিআর নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে। তাপসকে নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে, বিডিআর সকল সদস্য নৌকায় ভোট দিবে। তার বদলে তাপস আশ্বাস দিয়েছিল বিডিআরের দাবী দাওয়া মেনে নেয়ার ব্যবস্থা করবে। তাপসের বাসায় (স্কাই ষ্টার) বিডিআরের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে একাধিক বৈঠক করে। এমনকি দাবীদাওয়া পুরন না হওয়ায় পিলখানা বিদ্রোহের আগের দিন তাপসকে সম্ভাব্য বিদ্রোহের কথা জানানো হয়। তাপস তাতে সম্মতি দেয় এবং তাদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেয়। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাপসও এই ষড়যন্ত্রকে কার্যকর হিসাবে মনে করে। ২৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ফজলে নুর তাপসের ধানমন্ডিস্থ বাসায় ২৪ জন বিডিআর হত্যাকারী চুড়ান্ত শপথ নেয়। তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটন পরিকল্পনাকারীদেরকে গোপন আস্তানা ও যাবতীয় সহায়তা প্রদান করে। বিডিআর বিদ্রোহের পরের দিন বিকালে শেখ তাপসের ঘোষনা প্রচার করা হয়, যাতে করে পিলখানার ৩ মাইল এলাকার অধিবাসীরা দূরে সরে যান। আসলে এর মাধ্যমে খুনীদের নিরাপদে পার করার জন্য সেফ প্যাসেজ তৈরী করা হয়েছিল। তাপসের এহেন কর্মকান্ডের বদলা নিতে তরুন সেনা অফিসাররা পরবর্তীতে তাপসের ওপর হামলা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। পরে ৫ চৌকস কমান্ডো অফিসার চাকরীচ্যুত হয়ে কারাভোগ করছে। বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে সেনা তদন্ত এড়াতে তাপস কিছুদিন গা ঢাকা দেয় বিদেশে।
৭. মীর্জা আজম: যুবলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এই হুইপটি পিলখানার ঘটনাকালে বিদ্রোহীদের সাথে সেল ফোনে কথা বলতে শুনা যাচ্ছিল। সে হত্যাকারীদের সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেয় কর্নেল গুলজারের চোখ তুলে ফেলতে এবং দেহ নষ্ট করে ফেলতে (এর অডিও রেকর্ড আছে), কেননা র‌্যাবের পরিচালক কর্নেল গুলজারের নেতৃত্বে জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানকে ধরা হয়েছিল ও পরে ফাঁসি দেয়া হয়। শায়খ রহমান ছিল মির্জা আজমের দুলাভাই। আজম এভাবেই দুলাভাই হত্যার বদলা নেয় গুলজারকে হত্যা করে, এমনকি তার লাশও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও ২০০৪ সালে নানক-আজমের ব্যবস্থাপনায় শেরাটন হোটেলের সামনে গানপাউডার দিয়ে দোতলা বাসে আগুন লাগিয়ে ১১ বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারার ঘটনা তদন্ত করে এই গুলজারই নানক-আজমকে সম্পৃক্ত করে। এর প্রতিশোধেই গুলজারে শরীর এমন ভাবে নষ্ট করা হয়, যেনো কেউ চিনতে না পারে। ১৫ দিন পরে ডিএনএ টেষ্ট করে চিহ্নিত করা হয় গুলজারের লাশ।
৮. জাহাঙ্গীর কবির নানক: এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী। উনি বিডিআরের ঘাতকদের নেতা ডিএডি তৌহিদের ক্লাশমেট। বিডিআর ট্রাজেডির আগে থেকেই তৌহিদ যোগাযোগ রাখত নানকের সঙ্গে। ঘটনার দিন ২০৪ মিনিট কথা বলে তৌহিদ-নানক। ২৫ তারিখ বিকালে পিলখানার বিদ্রোহীদের নিয়ে শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে মিটিং করিয়ে নিরাপদে ফেরত পাঠায় সে। ডিএডি তৌহিদকে বিডিআরের অস্থায়ী ডিজি ঘোষণা করে নানক। কর্নেল গুলজার হত্যায় মীর্জা আজমের সাথে নানক সরাসরি জড়িত। কেননা, র‌্যাবের পরিচালক গুলজারই তদন্ত করে উদঘাটন করে- শেরাটনের সামনে দোতলা বাস জ্বালিয়ে ১১ যাত্রী হত্যা করা হয় নানকের নির্দেশে। ২৫ তারিখে বেঁচে যাওয়া লে: কর্নেল মঞ্জুর এলাহী পালিয়ে ছিল ম্যানহোলে। তার স্বজনরা এসএমএস মারফত খবর পেয়ে নানকের সাহায্য চায়। উদ্ধার করার বদলে ঐ অফিসারটিকে খুঁজে বের করে হত্যা করায় নানক। এটা সেনানিবাসের সবাই জানে। সেনাবাহিনীর তদন্ত পর্ষদ এড়াতে তদন্তের সময় নানক হঠাৎ বুকের ব্যথার অযুহাতে চিকিৎসার কথা বলে অনেকদিন সরে থাকে সিঙ্গাপুরে। এ নিয়ে সেনা অফিসারদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ব্রিগেডিয়ার হাসান নাসিরকে চাকরীচ্যুত করে হাসিনা।
৯. সাহারা খাতুনঃ সুপরিকল্পিত বিডিআর ধংসযজ্ঞ সংগঠনের নিমিত্ত ভারতের পরামর্শে হাসিনার কেবিনেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিয়োগ করা হয় অথর্ব সাহার খাতুনকে। বিদ্রোহের দিন কোনো তৎপরতা ছিলো না সাহারার। বরং সেনা অভিযান ও পিলখানায় র‌্যাব ঢোকার অনুমতি চাইলে সাহারা খাতুন ‘না’ করে দেন। বিকালে বিদ্রোহীদের সাথে করে প্রেস ব্রিফিং করে এই মন্ত্রী। অথচ ডিজি শাকিলের কোনো খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেননি। কারন সে সব জানত। বিদ্রোহীদের সাথে সমঝোতার পরে রাতে তিনি পিলখানায় যেতে চাননি। বরং আইজি নূর মোহাম্মদ তার মেয়েকে পিলখানা থেকে উদ্ধারের জন্য একাই অভিযান চালাতে উদ্যত হলে ঠেলায় পরে সাহারা যান পিলখানায়, তাও প্রধানমন্ত্রীর বুলেটপ্রুফ গাড়িতে চড়ে। তিনি বিডিআর অফিসারদের পরিবার পরিজন উদ্ধার না করে কেবল আইজিপি নুর মোহাম্মদের কন্যাকে উদ্ধার করেন। অথচ বাকী পরিবার ঐ রাতের আঁধারে নির্যাতিত হয়। সাহারা খাতুনের সাথে প্রধানমন্ত্রীর মেডিকেল টীমের এম্বুলেন্স ও রেড ক্রিসেন্টের এম্বুলেন্স পিলখানায় ঢুকে। এরপরে পিলখানার বাতি নিভিয়ে ঘাতকদের ঐ এম্বুলেন্সে করে পিলখানার বাইরে নিরাপদ যায়গায় সরানো হয়। তখনও অনেক অফিসার আহত হয়ে পিলখানা নানাস্থানে লুকিয়ে ছিলো। কিন্তু সাহারা এদের উদ্ধার করেনি। কর্নেল এমদাদ, কর্নেল রেজা্, আফতাব ও কর্নেল এলাহীকে সাহারা পিলখানা ত্যাগ করার পরে হত্যা করা হয়।
১০. শেখ সেলিম: শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই। ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ ঘটনায় সে ধরা পরেও রহস্যজনকভাবে বেঁচে যায়, কিন্তু তার ভাই শেখ মনি নিহত হয়। সেনাবাহিনীর ওপরে তারও রাগ ছিলো প্রচন্ড। তা ছাড়া ১/১১র পরে সেনারা ধরে নিয়ে যায়ে এই সেলিমকে, এবং ডিজিএফআই সেলে ব্যাপক নির্যাতন করে শেখ হাসিনার অনেক গোপন কথা, চাঁদাবাজি, বাসে আগুণ দেয়া সংক্রান্ত জবানবন্দী আদায় করে। এতে করে সেনাবাহিনীর ঐ সেটআপের উপর তার রাগ ছিল। বিডিআরের ঘটনার আগে বিদ্রোহী দলটি কয়েকদফা মিটিং করে শেখ সেলিমের সাথে। ১৩ ফেব্রুয়ারীতে শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় এ ধরনের একটি মিটিং হয় বলে সেনা তদন্তে প্রমান পাওয়া গেছে।
১১. সোহেল তাজ: স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। শেখ সেলিমের বাসায় অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে সোহেল যোগ দেয়। বিদেশী হত্যাকারীদেরকে নিরাপদে মধ্যপ্রাচ্য, লন্ডন ও আমেরিকায় পৌছানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সোহেল তাজকে। জনগনকে ধোকা দেয়ার জন্য প্রচার করা ঘটনার সময় তাজ আমেরিকায় ছিল। এটি সম্পুর্ন মিথ্যা কথা। সে সময়ে তাজ ঢাকায়ই ছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারী সন্ধায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে কয়েকজন হত্যাকারীসহ তাকে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং সে রাতেই তাজ ওসমানী বিমানবন্দর থেকে হত্যাকারীদের সাথে নিয়ে বিদেশের পথে যাত্রা করে। সেই হেলিকপ্টারের একজন পাইলট ছিল লেঃ কর্নেল শহীদ। যাকে পরে হত্যা করা হয়, টাঙ্গাইলে রহস্যজনক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলামের সাথে। এছাড়া বিমানের বিজি ফ্লাইট ০৪৯ দু’ঘন্টা বিলম্ব করে চারজন খুনী বিডিআরকে দুবাইতে পার দেয়া হয়। এ খবরটি মানবজমিন ছাপে ৩ মার্চ ২০০৯.
১২. কর্নেল ফারুক খান: তিনি ছিলেন পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তের লক্ষে গঠিত ৩টি কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে। জনগণকে ধোকা দেয়ার জন্য প্রথমেই তিনি ঘোষণা করেন, পিলখানার ঘটনায় ইসলামী জঙ্গীরা জড়িত। এটা খাওয়ানোর জন্য সোবহান নামে এক লোককে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়। পরে কুলাতে না পেরে সেখান থেকে সরে আসেন। সেনাবাহিনীর তদন্তে অনেক সত্য কথা উঠে আসলেও তা আলোর মুখ দেখেনি এই ফারুক খানের জন্য। ধামাচাপা দেয়া হয় মূল রিপোর্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মূল রিপোর্ট বদল করে গোজামিলের রিপোর্ট তৈরী করান ফারুক খান।
১৩. হাজী সেলিম: লালবাগ এলাকার আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি। বিডিআর হত্যাকান্ডের সময় তিনি খুনীদের রাজনৈতিক সাপোর্ট দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে হাজী সেলিম বেশ কিছু গোলাবারুদ ক্রয় করে, যা ভারতীয় খুনীরা প্রথমে ব্যবহার করে। ঘটনার দিন দুপুরে হাজী সেলিমের লোকেরা বিডিআর ৪ নং গেটে বিদ্রোহীদের পক্ষে মিছিল করে। ২৫ তারিখ রাতের আঁধারে পিলখানার বাতি নিভিয়ে দেয়াল টপকে সাধারন পোষাক পরে বিদ্রোহীরা লালবাগ এলাকা দিয়ে পালিয়ে যায় হাজী সেলিমের সিমেন্ট ঘাটকে ব্যবহার করে। হাজী সেলিমের সন্ত্রাসীরা স্থানীয় জনগনকে সেখান থেকে সরিয়ে রাখে। একটি বেসকারী টিভি চ্যানেল ২৫ তারিখ রাত ১টার সংবাদে উক্ত ঘটনার খবর প্রচার করে। সেই রিপোর্টে ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য তুলে ধরে, যাতে বলা হয় যে, বেশ কিছু স্পীডবোর্টকে তারা আসা যাওয়া করতে দেখেছে; কিন্তু তারা কাছাকাছি যেতে পারেনি যেহেতু আওয়ামীলীগের কিছু কর্মীরা তাদেরকে সেদিকে যেতে বাধা দেয়।
১৪. তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটন: আওয়ামীলীগের ৪৮ নং ওয়ার্ডের সভাপতি। ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে এ্বই তোরাব আলী বিডিআর বিদ্রোহীদের পরিচয় করিয়ে দেয় এমপি তাপসের সাথে। মূল পরিকল্পনায় তোরাব আলীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় স্থানীয় লজিষ্টিক সম্বয় সাধনের জন্য। তার বাড়িতেও বিদ্রোহীদের মিটিং হয়েছে। সে মূলত অবৈধ অস্ত্রের ডিলার। তার ছেলে সন্ত্রাসী লেদার লিটনের মাধ্যমে বিদ্রোহী বিডিআরদের পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে। এ সংক্রান্ত খরচাদি আগেই তাকে দেয়া হয়। উক্ত লিটনকে ২ মাস আগে তাপস ও নানক জেল থেকে ছাড়িয়ে আনে। ২৫ ফেব্রুয়ারী রাত ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে স্পীড বোটযোগে হত্যাকারীদের বুড়িগঙ্গা নদী পার করিয়ে দেয় লেদার লিটন।
১৫. মহিউদ্দিন খান আলমগীর: পিলখানার ঘটনার সময় এই সাবেক আমলা ও জনতার মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা মখা মেতে উঠেন বিভৎস উল্লাসে। বার বার ফোন করে খোঁজ নেন বিদ্রোহীদের কাছে, এর অডিও রেকর্ড আছে। এমনকি নিহতদের লাশ গোপন করার জন্য এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার হুকুমদাতা ছিলেন তিনি। যার বদৌলতে তাকে পরে প্রমোশন দেয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীতে।
১৬. হাসানুল হক ইনু: বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার গলির নেতা। তিনি ১৯৭৫ সালে অনেক সেনা অফিসার হত্যা করেছেন কর্নেল তাহের বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড থেকে। ১৯৭৫ সাল থেকে অদ্যাবধি দেশে সংঘটিত সকল সামরিক অভ্যুত্থানে তার যোগসাজস রয়েছে। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের সময় তিনি তার ঘনিষ্ট বিডিআরদের ফোন করে হত্যায় উৎসাহ যুগিয়েছেন, এবং তাদের পরামর্শ দিয়েছেন কি করে লাশ গোপন করতে হবে।
পাঁচ বছর হয়ে গেছে ৫৭ সেনা অফিসার সহ ৭৭ মানুষ হত্যার। বিডিআর বাহিনী বিলুপ্ত করা হয়েছে। ভারতীয় সহায়তায় বিজিবি গঠন করা হয়েছে, যারা এখন বিএসএফের সাথে ভাগাভাগি করে ডি্উটি করে! কয়েক হাজার বিডিআর সদস্যকে কোমরে দড়ি লাগিয়ে বিচারের প্যারেড করানো হয়েছে। জেল হয়েছে সবার। অন্যদিকে রাঘব বোয়লদের বিরুদ্ধে সাক্ষী গায়েব করতে ৫৩ জন বিডিআরকে পিটিয়ে হত্ো করা হয়েছে। কিন্তু ৫৭ সেনা হত্যার বিচার এখনো বাকী। যেনো তেনো কোনো বিচার চায়না সেনাবাহিনী। তাই হত্যা মামলাও আগাচ্ছে না। যতদিন লাগে লাগুক, হয় কঠিন বিচার হবে, নয়ত বদলা হবে, এটাই তাদের চাওয়া।।

সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৩

হল-মার্কের অর্থ আত্মসাৎ----------------- সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ সদস্যরা অভিযুক্ত হননি

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হল-মার্কের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় অবশেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। টানা এক বছর তদন্ত শেষে এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এ জন্য ২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আজ সোমবার জমা দেওয়া ১১টি অভিযোগপত্রে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কারও বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনা হয়নি। পর্ষদের সদস্যরা ছিলেন বর্তমান সরকার কর্তৃক দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত।
অভিযোগপত্র প্রথমে রমনা থানায় জমা দেওয়া হয়। থানা থেকে পরে অভিযোগপত্রগুলো নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে। দুদকের উপপরিচালক ও তদন্ত কমিটির প্রধান মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের তদন্ত দল এসব অভিযোগপত্র থানায় নিয়ে যায়।
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে হোটেল রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন) শাখা থেকে হল-মার্ক গ্রুপ দুই হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে পরিশোধিত (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা। গত বছরের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় এই অভিযোগে পৃথক ১১টি মামলা করেছিল দুদক।
মীর জয়নুল আবেদীন অভিযোগপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা কোনো ঋণ নয়, ব্যাংক ডাকাতি করে অর্থ তুলে নিয়েছেন তাঁরা।’
‘ব্যাংক ডাকাতি’র জন্য অভিযুক্তরা হলেন: হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ, তাঁর স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম (জামিনে আছেন), ভায়রা ভাই ও মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদ, গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের জিয়াউর রহমান, আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের জাহাঙ্গীর আলম, অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের শহিদুল ইসলাম, স্টার স্পিনিং মিলসের জাহাঙ্গীর আলম, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক এবং সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন সরকার।
‘ডাকাতি’তে সহযোগিতার জন্য হল-মার্কের বাইরে অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবির, দুই ডিএমডি মাইনুল হক ও আতিকুর রহমান, দুই জিএম ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান (চারজনই ওএসডি), দুই ডিজিএম শেখ আলতাফ হোসেন (সাময়িক বরখাস্ত) ও মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ (সাময়িক বরখাস্ত), দুই এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান (সাময়িক বরখাস্ত) এবং এজাজ আহম্মেদ। এ ছাড়া রূপসী বাংলা শাখায় কাজ করতেন এমন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান, সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন ও জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা।
এই ২৫ জনের মধ্যে টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের তসলিম হাসান, প্যারাগনের সাইফুল ইসলাম, নকশী নিটের আবদুল মালেক, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন সরকার ও সোনালী ব্যাংকের এজাজ আহম্মেদের নাম মামলার এজাহারে ছিল না।
মীর জয়নুল আবেদীন অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানান, হল-মার্কের অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। এমন আত্মসাৎ এর আগে আর হয়নি। তদন্তে দেখা গেছে, ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর এক দিনে হল-মার্কের নামে রূপসী বাংলা শাখার অসাধু কর্মকর্তারা ৮০৪টি এলসি খুলেছিলেন। প্রতি মিনিটে ২ দশমিক ২৩টি করে এলসি খোলা হয়, যা অবিশ্বাস্য।
মীর জয়নুল আবেদীন আরও জানান, ১১টি মামলার প্রতিটি অভিযোগপত্রের জন্য ৭০ থেকে ৮০ জন করে সাক্ষী রয়েছে। ব্যাংকের পর্ষদকে অভিযোগপত্রে না আনার বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ঋণের ক্ষেত্রে পর্ষদের কাছে অনুমোদন নিতে হয়। আর হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে কোনোটাই সরাসরি বন্ধকি ঋণ নয়। এগুলো ছিল বিভিন্ন ধরনের বৈদেশিক লেনদেনের জন্য তৈরি করা বিল-ভাউচার। কিছু বিলের মাধ্যমে এরা সরাসরি ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিয়েছে। কিছু বিলের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের জামানতের দায়বদ্ধতায় অন্য ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে পর্ষদকে জড়িত করা যায়নি। তবে পর্ষদের মধ্যে সন্দেহভাজনদের বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধান চলছে বলে জানান তিনি।
অভিযোগপত্রে হল-মার্কের অর্থ আত্মসাতের মূল সহযোগী হিসেবে এ কে এম আজিজুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই আজিজুর রহমান শাখার বাইরে হোটেল সাকুরা এবং সাকুরা পেছনের ইউরেকা প্যালেসের একটি ফ্ল্যাটে ব্যাংকের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি নিয়ে যেতেন, যা ব্যবহার করে হল-মার্কের তানভীর ও তাঁর কর্মচারীরা বিভিন্ন ধরনের বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র তৈরি করতেন।
এসব বিষয়ে তদন্ত দলের প্রধান মীর জয়নুল আবেদীন বলেন, এ ছাড়া এলসি নিয়ে জালিয়াতির চক্রের মূল হোতা তানভীর মাহমুদ, তুষার আহমেদ, তসলিম হাসান, সাইফুল ইসলাম ও আবদুল মালেক। এই চক্রটিই পরে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এলসি জালিয়াতি করা শিখিয়ে দিয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ম্যাক্স স্পিনিং, আনোয়ারা স্পিনিং, সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল, অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজ ও স্টার স্পিনিং মিলসের মালিকেরা সবাই ভুয়া। আসলে এই কথিত মালিকেরা সবাই হল-মার্কের কর্মচারী। ম্যাক্স ও আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই।

বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত


বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত কোনটি? এ প্রশ্নের জবাবে আমাদের মনে ভেসে উঠতে পারে ফিলিস্তিনিদের গাজা ভূখণ্ডের সঙ্গে ইসরায়েলের সীমান্তের কথা। কেননা, বছরের পর বছর সেখানকার বহু ফিলিস্তিনির নিষ্ঠুর হত্যার খবর বিশ্বের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছে। এখন অবশ্য ২৫ মাইল সীমান্তজুড়ে তারা গড়ে তুলেছে নিরাপত্তাপ্রাচীর এবং পাঁচটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ। অবশ্য, গাজা এখন কার্যত বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত জেলখানা। অন্য আর যে সীমান্তে রক্ষীদের গুলিতে প্রাণহানির কথা শোনা যেত, সেটি হলো আমেরিকা মহাদেশে যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকোর সীমান্ত। কিন্তু গুগলে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে এই প্রশ্নের উত্তরটি হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। কেননা, সংখ্যার দিক থেকে সীমান্তে প্রাণহানিতে বিশ্ব রেকর্ডটি আমাদেরই। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে হতাহতের সবাই না হলেও অন্তত ৯৫ শতাংশই বাংলাদেশি।
কিছুদিন পর পর সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে খবর চোখে পড়লেও বিষয়টি যে একটা বিশ্ব রেকর্ডে দাঁড়িয়েছে, সেটা প্রথম গণমাধ্যমের নজরে আসে বছর চারেক আগে ব্রিটেনের চ্যানেল ফোর-এর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের এই আচরণ যে এতটা ভয়াবহ এবং গুরুতর রূপ নিয়েছে, সেটা বুঝতে না পারার কারণ প্রধানত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা। সামগ্রিকভাবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় সন্দেহভাজনদের হত্যার বিষয়টিকে যে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের প্রাতিষ্ঠানিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে, সেটা বুঝতে আমাদের সময় লেগেছে অনেক।
‘ইন্ডিয়া’স গ্রেট ওয়াল—দ্য ওয়ার্ল্ডস ডেডলিয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয় ২০০৯ সালের ২৩ জুলাই। চ্যানেল ফোরের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সংবাদদাতা জোনাথন রাগম্যানের প্রায় সাড়ে আট মিনিটের এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি ইন্টারনেটে এখনো পাওয়া যায়। তাঁর প্রতিবেদনে তিনি দেখিয়েছেন যে সীমান্তে হতাহত ব্যক্তিদের সবাই গরু পাচারকারী অথবা চোরাকারবারি নন। এসব অবৈধ কারবারে কেউ কেউ নিশ্চয়ই জড়িত, কিন্তু তার চেয়েও বেশি দুর্ভোগ এবং বিপদের শিকার হচ্ছেন সীমান্ত এলাকার সাধারণ কৃষক এবং তাঁদের পরিবারগুলো। চাষাবাদের কাজ করার সময় বিএসএফের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন অথবা গুলি খেয়ে বেঁচে গেছেন এ রকম বেশ কিছু গ্রামবাসীর সাক্ষাৎকার রয়েছে ওই প্রতিবেদনে। অভিন্ন নদীর প্রবাহে সীমান্ত বিভাজন হয়েছে এ রকম তিস্তার এক অংশে নৌকায় বাংলাদেশি নারীদের একটি দলকে পাচারের দৃশ্যও তাঁর প্রতিবেদনে রয়েছে। সীমান্তে যে প্রায় দুই হাজার মাইলজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি হচ্ছিল, তার পাশ ধরে লোকজনের চলাচল এবং সীমান্তরক্ষীদের সতর্ক নজরদারি ওসব জনপদের মানুষের জীবনযাত্রায় যে কী ধরনের ছন্দপতন ঘটিয়েছে, তার প্রতিফলন আছে জোনাথনের প্রতিবেদনে।
কিন্তু চ্যানেল ফোরের প্রতিবেদন ইংল্যান্ডের দর্শকদের আলোড়িত করলেও বাংলাদেশ বা ভারতে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। এই দুই দেশের কোনো টিভি চ্যানেল ফোরের ওই প্রতিবেদন পুনঃপ্রচার অথবা তারপর কী ঘটছে, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে নিজস্ব কোনো রিপোর্ট বা অনুষ্ঠান করেছে বলে শোনা যায়নি। অথচ, বিষয়টি নিয়ে দুই দেশেই জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক সূচনার মতো ‘ফলোআপ’ করার এক চমৎকার সুযোগ তখন তৈরি হয়েছিল। সুযোগ বলছি এ কারণে যে এ ধরনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য বিশেষভাবে বাংলাদেশে কোনো চ্যানেলই অর্থের সংস্থান করে না। সুতরাং বড় ধরনের অনুসন্ধানের কাজ ছাড়াই চ্যানেল ফোরের প্রতিবেদনকে তখন কাজে লাগানোর একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
চ্যানেল ফোরের রিপোর্টেরও দেড় বছর পর ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এ ধরনের নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ‘ট্রিগার হ্যাপি’ শিরোনামে বিশদ আকারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই শতকের প্রথম ১০ বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছেন এক হাজারের মতো বাংলাদেশি, যার অর্থ হচ্ছে গড়ে প্রতিবছর ১০০ জন অর্থাৎ প্রতি সাড়ে তিন দিনে একজন করে বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। কোনো ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ ছাড়া শান্তির সময়ে কোনো দেশ তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাগরিকদের এই হারে হত্যা করছে—এটা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নেতৃত্ব এবং নাগরিক সমাজ বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেবে তা কল্পনা করাও দুষ্কর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতেও যেমন বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে, তেমনি বাংলাদেশের রাজনীতিকেরা এর ভয়াবহতা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা ফেলানীর নিথর দেহের ছবি সাময়িকভাবে আমাদের কিছুটা বিচলিত করলেও সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। এই ব্যর্থতা শুধু ক্ষমতাসীনদের একার নয়, এর আগে যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন তাঁদেরও।
ফেলানী হত্যার বিচার বিএসএফের আদালতে না করে ফৌজদারি আদালতে অনুষ্ঠানের জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশ কোনো দাবি জানিয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। নাকি সরকার আশা করেছিল বিএসএফ তাদের নিজেদের বিচারে নিজেদের দোষী সাব্যস্ত করবে? ‘সীমান্তে সন্দেহভাজনদের গুলি করা বন্ধ হবে না’ মর্মে বিএসএফের সাবেক প্রধান ইউ কে বনশলের বহুল প্রচারিত বক্তব্য (ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১২ বিবিসি) বাংলাদেশের কর্তাব্যক্তিরা কি ভুলে গিয়েছিলেন? ফেলানীর হত্যাকারী তো তাঁর বাহিনীপ্রধানের নির্দেশনাই অনুসরণ করেছেন। তাহলে সেই বাহিনীর আদালত কেন তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করবেন?
২০১১ সালের ২৫ জুলাই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাছে চিঠি দিয়ে সীমান্তে নতুন করে হত্যা এবং নির্যাতনের যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর দ্রুত ও স্বচ্ছ ফৌজদারি তদন্ত এবং ন্যায়বিচার দাবি করেছিল। ওই চিঠিতে তারা বলেছিল, ‘শ্রীলঙ্কার সমুদ্রসীমায় প্রবেশের কারণে ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে কলম্বো কোনো পদক্ষেপ নিলে ভারত যখন প্রতিবাদ করে, তখন তাদেরই সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের এত দ্বিধা কেন?’ এ ধরনের যুক্তি বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কণ্ঠে শোনা যায় না। বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে এটুকু নৈতিক অবস্থান তুলে ধরতে না পারলে সেই সম্পর্কে বন্ধুত্বের আর কি অবশিষ্ট থাকে?
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের আরেকটি খবরের উল্লেখ এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঝুঁকি নির্ধারণের একটি গবেষণা চালায়। তাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কী ধরনের রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হতে পারে, তার সম্ভাব্য কয়েকটি কাল্পনিক অবস্থার বিশ্লেষণ করা হয়। এতে যেসব সম্ভাব্য চিত্র তাদের সামনে উত্থাপিত হয়, তার একটি ছিল বাংলাদেশের একটি বিশাল এলাকা সাগরে তলিয়ে যাওয়ার কারণে কোটি মানুষের বাস্তুহারা হওয়া। এসব বাস্তুহারা স্বভাবতই বাঁচার আশায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতমুখী হতে চাইবে এবং তখন যে রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে, সেটা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দিতে পারে।
একাত্তরে কোটি খানেক বাংলাদেশিকে আশ্রয় দেওয়ার অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি ভারতের পক্ষে কি মেনে নেওয়া সম্ভব? সুতরাং দুই হাজার মাইল কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ তো একটা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। বিএসএফের নিষ্ঠুরতার কারণে এই সীমান্তে বাংলাদেশিদের সন্ত্রস্ত রাখাটাই হয়তো তাদের কৌশলের অংশ। সীমান্ত এলাকায় চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) মোতায়েনের ঘোষণা (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩) এ ধারণাকেই সমর্থন করে। যদিও বিএসএফ-প্রধান বাংলাদেশ সীমান্তে এ ধরনের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছেন। অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকের মতে, ভারতে সন্ত্রাসীদের কথিত অনুপ্রবেশের সমস্যা পাকিস্তান সীমান্তে প্রকট হলেও ভারতের কাছে বাংলাদেশ সীমান্তের গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। এর উপসর্গ বা লক্ষণ হিসেবে তাই তারা বলে থাকে যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান, চীন কিংবা মাওবাদী সন্ত্রাসকবলিত নেপালের সীমান্তে প্রাণহানির ঘটনা বাংলাদেশ সীমান্তের মতো এতটা নয়।
সীমান্ত সম্মেলনের মতো বিচ্ছিন্ন আলোচনা বা উদ্যোগে ভারতের এই সীমান্ত রক্ষানীতিতে যে পরিবর্তন আসবে না, সেটা বোঝার জন্য ইতিমধ্যেই অনেক কালক্ষেপণ হয়েছে। প্রাণ গেছে অনেক বেশি নিরীহ বাংলাদেশির। অথচ এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা শুধু এখনো পর্যন্ত শুধু বক্তৃতা-বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ। সীমান্তে হত্যা বন্ধের জন্য ভারতের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির ন্যূনতম একটি পদক্ষেপ হতে পারে জাতীয় সংসদে সর্বদলীয় প্রস্তাব পাস, যাতে তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায় যে তাদের নাগরিকের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, ছোট প্রতিবেশীর অনুভূতি তার থেকে আলাদা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক বিরোধের বিষয়ে নিজেরা একে অপরকে রাজপথে মোকাবিলায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকলেও সীমান্তে মৃত্যুর মিছিল বন্ধে অন্তত একটা সমঝোতা হওয়া উচিত। তাহলে ওই প্রস্তাবে গণতান্ত্রিক ভারতের নেতাদের এ কথাটিও স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাবে যে ‘ট্রিগার হ্যাপি’ পরিচয়টি কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মর্যাদা বাড়ায় না। সামগ্রিক সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তন না ঘটিয়েও তা সম্ভব হতে পারে।
কামাল আহমেদ: প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি, লন্ডন।

শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৩

গোলাম আযমের বিচারপ্রক্রিয়া ‘ত্রুটিপূর্ণ’: এইচআরডব্লিউ

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গোলাম আযমকে দোষী সাব্যস্ত করার প্রক্রিয়া ভুল এবং বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়নি।

এইচআরডব্লিউর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, সংস্থাটির বিবৃতি ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘অযৌক্তিক’।

‘বাংলাদেশ: আযম কনভিকশন বেজড অন ফ্লড প্রসিডিংস’ শীর্ষক ওই বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ  বলেছে, ‘গোলাম আযমের রায় দেওয়ার আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) নিজ উদ্যোগে তদন্ত চালানোর যে কথা জানিয়েছেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল তা করতে পারেন না। ট্রাইব্যুনালের তদন্তের বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও অবগত ছিলেন না বলে বিচারকদের সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণের বিরুদ্ধে তাঁরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে বা কথা বলতে পারেননি। ফলে তা বেসামরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির ১৪ ধারাকে লঙ্ঘন করেছে। কারণ, বাংলাদেশও এই চুক্তিতে সই করেছে।’

স্কাইপসহ অন্যান্য মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও বাইরের পরামর্শকদের মধ্যে কথোপকথন-বিষয়ক ‘দি ইকোনমিস্ট’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে পক্ষপাতের যে অভিযোগ উঠেছে, ট্রাইব্যুনাল তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি। কয়েকটি কথোপকথনে গোলাম আযমের প্রসঙ্গ রয়েছে। একটি কথোপকথনে প্রসিকিউশনের জন্য বিচারকদের নীলনকশার প্রসঙ্গ রয়েছে, যাতে উল্লেখ রয়েছে, কীভাবে বিচারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে, কোন সাক্ষীকে আগে ডাকতে হবে, কীভাবে সাক্ষীকে জেরা করতে হবে। এসব কথোপকথনে পরিষ্কার হয়ে গেছে, গোলাম আযমের মামলা সাজানোর ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরা প্রসিকিউশনকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
গোলাম আযমের বিচারপ্রক্রিয়ায় পাঁচটি বিষয়কে ‘ত্রুটি’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে। এগুলো হলো, প্রসিকিউশনের পক্ষে ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের অযথার্থ তদন্ত পরিচালনা, প্রসিকিউটর ও বিচারকদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব, আসামিপক্ষের সাক্ষীদের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ নিতে সরকারের ব্যর্থতা, ট্রাইব্যুনালের বিচারক পরিবর্তন, সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণের ঘাটতি।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যে আইন ও প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে, তার ত্রুটির বিষয়ে আমরা নিজেদের উদ্বেগের কথা বাংলাদেশের সরকারকে জানিয়েছি। তবে তারা তা আমলে নেয়নি। যে রায় সরকার চেয়েছিল, তা তারা পেয়েছে। কিন্তু সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

আইনমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
এইচআরডব্লিউর বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পর বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে টেলিফোনে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ জানান, সংস্থাটির যে যুক্তির ওপরে বিবৃতি দিয়েছে, তা ভিত্তিহীন।
আইনমন্ত্রী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনেই একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হচ্ছে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ ও সময় দেওয়া হয়েছে। কাজেই ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত ইউএনবিকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায় সম্পর্কে মন্তব্য করার এইচআরডব্লিউ কে? রায় ভুল না সঠিক ছিল, তা সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত দেবেন। এইচআরডব্লিউ এর দায়িত্ব নিচ্ছে কেন?
রানা দাশগুপ্ত দাবি করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ করা লবিস্টদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে এইচআরডব্লিউ এ ধরনের বিবৃতি ছড়াচ্ছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি, দুষ্কর্মে সহযোগিতা, হত্যা, নির্যাতনের অভিযোগে ২০১০ সালের মার্চ মাসে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ আনা হয়। সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ১৫ জুলাই ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেন। ১২ আগস্ট প্রসিকিউশন অধিকতর শাস্তির দাবিতে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে।

সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০১৩

Bangladesh police arrest activist over 'fabricating information' on atrocities

Adilur Rahman Khan, secretary Odhikar. His arrest has been condemned by Human Rights Watch and other organisations. Photograph: Indrajit Ghosh/Demotix/Corbis
Authorities in Bangladesh have arrested a leading human rights activist on charges of "fabricating information" about atrocities committed by state security forces in a government crackdown this year.
Plainclothes police officers arrested Adilur Rahman Khan, secretary of Bangladeshi human rights organisation Odhikar, at his home  on Saturday night as he returned with his family.
Bangladesh has been hit by protests and demonstrations ahead of elections due later this year. Prime Minister Sheikh Hasina's government has come under fire from the opposition for, among other things, a controversial trial of war criminals and numerous cases of alleged corruption against its ministers. At least 150 protesters have reportedly been killed in clashes with police since February, according to Human Rights Watch.
Khan's organisation has been critical of human rights abuses allegedly committed by Bangladeshi security forces, including torture, extra judicial killings and enforced disappearances.
His organisation reported that between January and June 2013, 184 people were illegally killed by Bangladeshi law enforcement agencies. 
His lawyers applied for bail for the rights chief today but the petition was rejected.
"Adilur Rahman Khan is a lawyer of the supreme court of Bangladesh, he is a former deputy attorney general and he is a human rights defender. It is an insult and shame that a magistrate can actually pass an order of remand on a fellow officer of the court," said Saira Rahman Khan, the activist's wife and founding member of Odhikar. She continued,: "Neither Odhikar nor he works for any political party but for human rights and the people of Bangladesh."
Human Rights Watch condemned Khan's arrest. "Adil is one of the leading human rights activists in Bangladesh and someone we have worked with closely on sensitive issues such as extrajudicial killings, torture and labour rights," Brad Adams, the organisation's Asia directortold the Guardian.
Adams continued: "He has been a strong critic of each of the past governments and has been threatened and followed for a long time. We are concerned for his safety. It appears he is being persecuted for his criticism of the current government."
British high commissioner in Bangladesh Robert Gibson was "concerned at the arrest of Odhikar secretary Adilur Rahman", he said in a tweeter post on Sunday.
Several rights groups including HRW and the Asian Human Rights Commission (AHRC) have issued appeals to the Bangladeshi government to release Khan.reported the AHRC.
Khan and his colleagues have been previously intimidated and followed closely by security forces for publicly criticising police brutality. In 2007, Odhikar's director, ASM Nasiruddin Elan, was picked up by security forces in Bangladesh and taken to the country's navy intelligence headquarters.Odhikar stated (pdf) that "he was physically assaulted and threatened with death" before he was released.

বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৩

খালেদাকে নিয়ে বক্তব্যে বিরোধী দলের ‘ছিঃ ছিঃ’

‘খালেদা জিয়ার মা লক্ষ্মী রানী মারমা দার্জিলিংয়ের চা-বাগানের মালিক উইলসনের চাকরানি ছিলেন। চা বাগানের মালিকের ছিল মদ ও নারীর প্রতি আসক্তি। লক্ষ্মী রানী গর্ভবতী হলে উইলসনের দারোয়ান মুরালী মোহন মারমার সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। উইলসনের তত্ত্বাবধানে ১৯৪৫ সালের ১৩ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্ম হয়। খালেদা জিয়া ইহুদি ঔরসজাত। তাঁর গয়ের রং ও খাদ্যাভ্যাস তার প্রকৃত ইহুদি পিতার সঙ্গে মিল আছে। ১৯৬০ সালে জিয়াউর রহমান ফুর্তি করতে এসে ফেঁসে গিয়ে খালেদা জিয়াকে বিয়ে করেন। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা জানজুয়ার সঙ্গে পরকীয়ায় মত্ত ছিলেন। লোকে বলে জানজুয়ার অবিকল চেহারা পেয়েছে কোকো।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় সাংসদ অপু উকিল পাকিস্তানের সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিকের ‘ইন্দো-পাকিস্তান ওয়ার অব ১৯৬৫’ বই থেকে উদ্ধৃত করে বক্তব্য দেন। অপু উকিল বক্তব্য দেওয়ার সময় সিদ্দিক সালিকের লাল মলাটের বইটি উঁচিয়ে সংসদে প্রদর্শন করেন।
অপু উকিলের এই বক্তব্যের সময় বিএনপি ও জামায়াতের সাংসদরা তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং সমস্বরে ছিঃ ছিঃ ধ্বনি দেন। বিএনপির সাংসদেরা অপু উকিলের মাইক বন্ধ করে দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে দাবি জানান। অপু উকিল বক্তব্য অব্যাহত রাখলে রাত আটটা ৫৭ মিনিটে বিএনপি-জামায়াতের সাংসদেরা জমিরউদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে ওয়াকআউট করেন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন। অপু উকিলের বক্তব্যের সময় সরকারি দলের সাংসদরা টেবিল চাপড়ে উত্সাহ দেন। এ সময় সংসদ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না। 
এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হলে তা মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই চলে। কিন্তু রাত আটটার পর বিরোধীদলীয় সাংসদ নিলোফার চৌধুরী মনি ও সরকারদলীয় সাংসদ অপু উকিলের বক্তব্যে হঠাত্ করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদ।

সোমবার, ২০ মে, ২০১৩

ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ, ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’

বিরোধী দলকে আপাতত আর রাজপথে দাঁড়াতে দেবে না সরকার। আগামী এক মাস কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর গতকাল রোববার এ ঘোষণা দিলেও কার্যত ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির পর রাজধানীতে আর কোনো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করতে দেয়নি সরকার। এমনকি মানববন্ধনের মতো কর্মসূচির ওপরও অলিখিত নিষেধাজ্ঞা চলছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচি আর করতে দিচ্ছে না পুলিশ।
বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, সরকার দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ ও মিছিল করা সরকার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।
গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান বলেন, সরকার সংবিধানবিরোধী ও স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিরোধী দলকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। 
সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত জরুরি অবস্থার শামিল বলে মনে করেন প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘তবে আমি মনে করি, সরকার জরুরি অবস্থা জারি করার মতো কোনো বোকামি করবে না।’
সভা-সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়া প্রসঙ্গে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গতকালই দুই রকম ব্যাখ্যা এসেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সকালে বলেছেন, যেসব দল অনুমতি নিয়ে সমাবেশ দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দেয় এবং জনসাধারণের ওপর অন্যায়-অত্যাচার ও জ্বালাও-পোড়াও করে, তাদের আগামী এক মাস সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা শুধু রাজধানী ঢাকার জন্য এবং এটা সব দলের ওপর কার্যকর হবে।
আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে এক মাস সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 
তবে এ দুটি যুক্তিকেই খারিজ করে দিয়েছেন প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কেউ নাশকতা চালাচ্ছে বা কোথাও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো—এ অজুহাতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা উচিত হবে না। কেউ জ্বালাও-পোড়াও বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালালে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। আর অতীতে এর চেয়েও বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে। কখনো সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়নি।
সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘জনশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’
১৩ মে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট। ওই দিন অনুমতি না পেয়ে তা পিছিয়ে ১৫ মে করা হয়। পরিবর্তিত তারিখেও অনুমতি না পেয়ে ওই দিন সকালে সংবাদ সম্মেলন করে ১৯ মে দেশব্যাপী হরতাল ডাকে ১৮ দল। পরে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সে হরতাল প্রত্যাহার করে নেয়।
পুলিশ অনুমতি বাতিল করায় গত ১৭ মে মৎস্য ভবন চত্বরে তরিকত ফেডারেশনের মহাসমাবেশ কর্মসূচি কর্মসূচি স্থগিত করে। সর্বশেষ বামপন্থী চারটি দল—জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ ও জাতীয় গণফ্রন্টকে গত শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির কর্মসূচি বন্ধ করার কৌশল হিসেবে সরকার সব দলের সভা-সমাবেশের ওপর এক মাসের এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কারণ এক মাস পার হলে, এর কিছুদিন পর শুরু হবে রমজান মাস। অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষে মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। 
৯ আগস্ট ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ। আর ২৮ অক্টোবর থেকে আগামী ২২ জানুয়ারির মধ্যে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে বড় আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য মধ্য আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে। 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন
প্রথম আলোর মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর গতকাল মিরসরাই উপজেলার দ্বিতীয় থানা হিসেবে বারইয়ারহাটের জোরারগঞ্জ থানা উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে সভা-সমাবেশ করার অধিকার সবার আছে। বৃহত্তর রাজনৈতিক দল হিসেবে আরও বেশি আছে বিএনপির। কিন্তু তাদের সমাবেশ করতে দিচ্ছেন না। এমনকি তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনেও সমাবেশ করতে দিচ্ছেন না। এর কারণ কী?’ জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা সমাবেশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশকে দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দেন, জনসাধারণের ওপর অত্যাচার করেন, নির্যাতন করেন, গাড়ি পোড়ান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জিনিসপত্র নষ্ট করেন, দোকান লুট করেন, তাঁদের যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে আমরা সমাবেশ করার অধিকার স্বীকার করা সত্ত্বেও আগামী এক মাস পর্যন্ত কোনো সমাবেশ কোনো দলকেই করতে দেব না।’
মন্ত্রীর বক্তব্যের স্পষ্টীকরণ 
গতকাল রাত ১১টায় ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের স্পষ্টীকরণ’ শিরোনামে সরকারি তথ্য বিবরণী দিয়ে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ‘আজ মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানা উদ্বোধনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের স্পষ্টীকরণের লক্ষ্যে জানানো যাচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতিতে যদি কোনো রাজনৈতিক দল এমন কোনো কর্মসূচি দেয় যাতে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি, নিরাপত্তাহীনতা কিংবা নাশকতার আশঙ্কা থাকে বা সেরূপ লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার স্বার্থে সেসব দলের সভা-সমাবেশের কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেবে না সরকার।’ তথ্য বিবরণীতে আরও বলা হয়, ‘সাধারণ সমাবেশ করার ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই। এটা কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং জনগণের জানমাল রক্ষার্থে পূর্বসতর্কীকরণ ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।’ 
বিভিন্ন দলের নিন্দা
আগামী এক মাস সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে দলগুলো সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ‘অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী’ আচরণ বলে মন্তব্য করেছে।
গতকাল গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানায়। একই সঙ্গে মিছিল-সমাবেশ করার অধিকার নিশ্চিত করতে ২৮ মে সচিবালয় ঘেরাও ও ২৩ মে মিরপুরে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
গণসংহতি আন্দোলনের এক বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, সরকার তার অপশাসন-দুর্নীতি-লুটপাট ঢাকতে এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের আন্দোলন কর্মসূচি চাপা দিতে সভা-সমাবেশের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ ছাড়া সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ছাত্রশক্তি।


http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-05-20/news/353602

শনিবার, ১১ মে, ২০১৩

তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় ৯০% মানুষ !!!



আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সম্পন্ন করার ব্যাপারে দেশের মানুষ প্রায় একযোগে মত দিয়েছে।

প্রথম আলোর উদ্যোগে পেশাদার জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, আগের বছরগুলোর তুলনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে জনমত এখন আরও জোরালো। বেশির ভাগ মানুষ মনে করছেন, দেশের পরিস্থিতি হতাশাব্যঞ্জক। দেশের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে মানুষের মতামত যাচাইয়ের জন্য গত ৯ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
অধিকাংশ মানুষ এ কথা মনে করছেন যে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় রায় ঘোষণার পর পর উদ্ভূত পরিস্থিতি সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিপক্ষেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মত পাওয়া গেছে।
নির্বাচনকালীন সরকার, দেশের চলমান পরিস্থিতি ও এই প্রেক্ষাপটে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপের শঙ্কা এবং বিতর্কিত বিভিন্ন দলের সঙ্গে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর জোটবদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়ে এই জরিপে মানুষ তাদের মতামত জানিয়েছেন। এসব মতামতে দেশের এক সংশয়পূর্ণ ছবি ফুটে উঠেছে।
জরিপটি পরিচালিত হয় দেশের প্রতিটি প্রশাসনিক বিভাগের ৩০টি জেলা শহর ও গ্রামের তিন হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর। বাংলাদেশের জনবিন্যাস অনুযায়ী উত্তরদাতাদের অনুপাত প্রতিনিধিত্বশীল রাখা হয়।
বিশ্বের বহু প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম ও জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এ পদ্ধতিতে জনমত যাচাই করে থাকে। ইউরোপিয়ান সোসাইটি ফর অপিনিয়ন অ্যান্ড মার্কেট রিসার্চের (ইসোমার) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নৈতিক মানদণ্ড অক্ষুণ্ন রেখে জরিপটি করা হয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ নির্দলীয় অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন চায়। এই দাবির পক্ষে মানুষের সংখ্যা এখন ৯০ শতাংশ। ২০১১ ও ২০১২ সালের জনমত জরিপেও মানুষের এ আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আগের জরিপের প্রায় অর্ধবছরের ব্যবধানে এর পক্ষে যথেষ্ট হারে জনমত বেড়েছে।
বেশির ভাগ মানুষ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অর্ধেক মানুষ বলেছে, দেশ অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাকি অর্ধেকের মধ্যেও ৩৫ শতাংশ মানুষের ধারণা, দেশ খারাপ অবস্থা পার করছে। এতে করে দেখা যায়, মোট ৮৫ শতাংশ মানুষ দেশের অবস্থা খারাপ বলে মনে করছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যে সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি, এও তাদের হতাশার অন্যতম কারণ।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির সময় পরিচালিত জরিপে অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এই প্রত্যাশা ছিল যে, ভবিষ্যতে হরতাল, অবরোধ ও সহিংসতায় ভরা নৈরাজ্যকর অবস্থা আর ফিরে আসবে না। পরবর্তী বছরগুলোতে তাদের এ আশাবাদে ক্রমাগত ভাঙন ধরেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে কাদের মোল্লা ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর সারা দেশে যে তীব্র হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে, ৭৯ শতাংশ মানুষ মনে করে, সরকার তা সামলাতে পারেনি। খুব কমসংখ্যক মানুষই বলেছে যে সরকার সুষ্ঠুভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের জরিপে বিপুল সংখ্যায় মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি করে এবং মহাজোট সরকার এ বিচারের কাজ সম্পন্ন করতে পারবে বলে প্রত্যাশা জানায়।
এবারের জনমত জরিপে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে মত দিয়েছে।(64.8%)
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ উত্তরদাতা। পক্ষান্তরে এর বিপক্ষে মত দিয়েছে অর্ধেকের সামান্য কিছু বেশি মানুষ। জরিপে দেখা গেছে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রায় প্রতি পাঁচজনের একজন মানুষ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন সম্পর্কে জানে না।
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে তাদের আন্দোলন শুরু করে। পরে প্রধান বিরোধী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী তাদের নিয়ে সমালোচনামুখর হয়ে উঠলে এবং তাদের সম্পর্কে নানা অপপ্রচার চললে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়।
বেশির ভাগ মানুষ বিতর্কিত দলের সঙ্গে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্রব ও সম্পর্ক অপছন্দ করে। অর্ধেকেরও বেশি উত্তরদাতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির এবং বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর জোটবদ্ধ থাকার বিপক্ষে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে পক্ষে-বিপক্ষে মানুষের মতামত প্রায় কাছাকাছি। তবে এর মধ্যেও কিছু বেশি সংখ্যক মানুষ মনে করে তেমন কোন আশঙ্কা নেই। বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে—প্রায় প্রতি চারজনের একজন—বলেছে যে, এ ব্যাপারে তারা কিছু বলতে চায় না বা কিছু জানে না।

http://www.prothom-alo.com/imagefiles/Opinion_Poll_April_2013.pdf

শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

পদ্মায় মান ডুবলেও আশা ডোবেনি


বিশ্বব্যাংক সরকারকে যে ‘বাঁশ’ দিয়েছে, তা দিয়ে সেতু না হোক, সাঁকো নির্মাণের চেষ্টা করে দেখতে পারে সরকার। পরিহাস হলো, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামও সাকো ইন্টারন্যাশনাল। হিন্দু ঐতিহ্যে কেউ মারা গেলে তাঁর নামের ওপরে চন্দ্রবিন্দু যোগ করার একটা রীতি ছিল। সেই অর্থে সাকো ইন্টারন্যাশনালকে আমরা ‘সাঁকো ইন্টারন্যাশনালও’ ডাকতে পারি। সাকো নতুন করে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসেবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংকে ‘ইন্টারন্যাশনাল’ করেছে। এই কাণ্ডকারখানায় জিতল বিশ্বব্যাংক ও সাকো, হারল বাংলাদেশ। 
পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দেশীয় প্রতিপক্ষ কে? এক কথার উত্তর, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সাহেব স্বয়ং। তাঁর পেছনে কোন কোন ব্যক্তি আছেন, আমরা জানি না। তবে দেখা যাচ্ছে, আবুল হোসেন এবং গংয়ের গোলানো কালিমা সরকার নিজের গায়ে মেখে গর্ব করছে যে, আমরা বিশ্বব্যাংককে ‘না’ করে দিয়েছি! অপমানে যিনি হাসতে পারেন, তিনি মহান। কিন্তু আমাদের মনে পড়ছে এই কথাটা, সেই তো নথ খসালি, তবে কেন লোক হাসালি? 
হাসির প্রশ্নটা আসছে, কারণ বিশ্বব্যাংক প্রথমে চুক্তি বাতিল করেছে, তারপর দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে পাবলিক স্তরে প্রচার করেছে, নিজস্ব তদন্ত দল পাঠিয়ে হম্বিতম্বি করেছে। এর সবকিছুতেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে, দেশ হিসেবে হেয় হলেও সরকারের গর্বের কমতি হয়নি। বরং অর্থমন্ত্রীর অক্ষয় হাসিমুখ দেখে আমাদেরও হাসি পেয়েছে। 
সর্বশেষ আবুল হোসেনকে মামলার বাইরে রেখে বিশ্বব্যাংককে সরে দাঁড়ানোর বৈধতা জুগিয়েছে দুদক। যদি দুর্নীতি হয়েছে বলে স্বীকার করি, তাহলে গোড়াতেই ব্যবস্থা নিলে এত বিপর্যয় হতো না। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে তাজরীনের মালিক দেলওয়ার হোসেনের সাফাই গাইছেন, তখন সরকারের অনেক কর্তাব্যক্তি আবুল হোসেনের সাফাই গাইতে কসুর করেননি, বিব্রত বোধ করেননি। সচিব দুর্নীতি করেছেন অথচ মন্ত্রী জানেনই না, তা শিশুও বিশ্বাস করবে না। এতভাবে সেতু প্রকল্পকে অনিশ্চিত করার পর, নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার পর এখন বিশ্বব্যাংককে ‘না’ বলায় কিছু রক্ষা হয় না। বরং এই ‘না’ দুর্নীতির পরোক্ষ স্বীকারোক্তিই হয়ে দাঁড়াল। কারণ সরকার বলতে পারছে না, দুর্নীতি হয়নি। বলতে পারছে না, আবুল হোসেন নির্দোষ। বলতে পারছে না, বিশ্বব্যাংক এখতিয়ারের বাইরে ক্ষমতাচর্চা করেছে। পারছে না নিজের দোষে। এই দোষের দোষী বাংলাদেশের জনগণ হতে রাজি হবে না। সরকার এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখার বদলে ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর স্বার্থকেই বড় করে দেখেছে। এটা ঢাকতে গোপনে আপস করার চেষ্টা করেছে, আর জনসভায় করেছে বড়াই। কারণ যা-ই হোক, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত একজনকে বাঁচাতে সরকার এখানে দেশের ভাবমূর্তি জলাঞ্জলি দিল। অন্যদিকে, বিএনপি জোটের আচরণ ছিল পোড়া গুদামের আলুতে লবণ লাগিয়ে খাওয়ার মতো। সরকারের অপদস্থতায় তারা খুশি হয়েছে, দেশের ক্ষতির কথা চিন্তাই করেনি। 
এভাবে দুর্নীতির পাঁয়তারার অভিযোগে পুরো প্রকল্পই বাতিল করে দেওয়ার নজির বিশ্বে বিরল। ভারতে বিশ্বব্যাংকের ঋণে এইডস পরীক্ষার যন্ত্র কেনায় বিরাট দুর্নীতি হলেও প্রকল্প বাতিল হয়নি। প্রকল্পও চলছে, দুর্নীতির তদন্তও চলছে। বিশ্বব্যাংক এমন বৈরিতা চীন বা মালয়েশিয়ার সঙ্গে করার সাহস করত না। কারণ, সেসব দেশের সরকারের কোমরের জোর আর আত্মসম্মান অনেক বেশি। এ রকম আনাড়িপনা কোনো কাজেরই না। এমন না যে ভারত বা চীনে দুর্নীতি একেবারে কম। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক এমনটা করতে পেরেছে, সরকারের অদক্ষতা, বালখিল্য ও দুর্নীতিবাজদের ঢাল হওয়ার কারণে। যুক্তরাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যাংকের অন্য কোনো রাজনৈতিক অভিপ্রায়ও থাকা অসম্ভব নয়। ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকারের আচরণও এই বৈরিতায় ইন্ধন জুগিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু এসব কথা আজ কে শুনবে?
বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদদের তরফে যখন বারবার বলা হচ্ছিল, যমুনা সেতু বানাতে পারলে পদ্মা সেতুও নিজস্ব অর্থায়নে বানানো সম্ভব। পাঁচ বছরে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, বছরওয়ারি হিসেবে তা বহনের সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে। বৈদেশিক রিজার্ভ, রেমিট্যান্স-প্রবাহ ইত্যাদি সেই আশাবাদের ভিত্তি হতে পারত। প্রবাসীদের বিনিয়োগের সুযোগ করে দিলেও কাজ হতো। উপায়ের অভাব ছিল না, অভাব ছিল পরিকল্পনার আর ব্যবস্থাপনার সামর্থ্যের। অথচ কিনা সরকার দলীয়ভাবে চাঁদা সংগ্রহের ঘোষণা দিল। সেই চাঁদা আদায় নিয়ে রাজশাহীতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ মারামারিও বাধাল। এমন সব হাস্যকর কর্মকাণ্ড কেবল ছাত্রলীগই দেখায়নি, সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বও দিনের পর দিন দেখিয়ে গেছে। এসবের কোনো প্রয়োজন ছিল না। 
বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনেক পুরোনো। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসেফ স্টিগলিজসহ অন্যরা সেসব দুর্নীতির বিষয়ে বই ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশেও গত বিএনপি সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে হাটিকুমরুল সড়ক নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোয় বিশ্বব্যাংক বহু অপকর্ম করে থাকে। এসবের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশ বিশ্বব্যাংক থেকে বেরিয়ে যাওয়া শুরু করেছে। কিন্তু আমাদের বেলায় ঘটল উল্টোটা। বিশ্বব্যাংকেরই ঠেকা ছিল বাংলাদেশের মতো দেশকে ঋণ দেওয়ার। এটাই তাদের ব্যবসা। কিন্তু এখন আমরাই ঠেকে গেলাম।
দুর্নীতি সমস্যা। কিন্তু আরও বড় সমস্যা দুর্নীতিকে জায়েজ করানোর রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক আয়োজন। যে বাংলাদেশ ‘তলাহীন ঝুড়ি’ বদনাম ঘুচিয়ে প্রবৃদ্ধি সাতের ঘরে নেওয়ার মুখে। যে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সামাজিক সেবাসূচকে ভারতের থেকে এগিয়ে, সবচেয়ে উন্নয়নশীল ২০টি দেশের তালিকায় ওপরের দিকে, সেই বাংলাদেশ কেবল রাজনৈতিক সুবিধাবাদ ও অপরিণামদর্শিতার জন্য এ রকম হেনস্তা হতে পারে না। 
ওপরে বলা সাফল্যের শিরোপাগুলি কিন্তু বিশ্বব্যাংকেরই দেওয়া। তাহলে তারাই কেনবা আবার বাংলাদেশকে এমন ব্যর্থ করে দেওয়ায় ব্যতিব্যস্ত হলো? এই প্রশ্নের উত্তর জনগণকেই খুঁজতে হবে। 
বাংলাদেশের সমস্যা নিচে নয়, ওপর মহলে। যে-ই সরকারে বসুক, তাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের জনগণের বা বাংলাদেশের সার্বিক অর্জনের মানের চেয়ে নিচু। কোনো দেশের ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব যদি সে দেশের জনগণের শিক্ষক ও দিশারি না হয়ে তাদের থেকে নিম্নমানের হয়, তাহলে এমন ধারাই ঘটে। নেতারা আমাদের দায় নেবেন কী, তাঁরাই এখন আমাদের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন! পদ্মা-নাটকে এই সত্যই আবারও ভেসে উঠল। প্রয়াত চিন্তক আহমদ ছফার কথাই আবার ফলে গেল। বহু আগে তিনি বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন জেতে কেবল একাই জেতে। কিন্তু যখন হারে, সবাইকে নিয়ে হারে।’ বিশ্বব্যাংকের কাছে এই হার, কেবল দলীয় বা সরকারি হার নয়, এ আমাদের জাতীয় হার। 
কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। এখনো সুযোগ আছে। সরকার যদি বাদবাকি সময়ে দক্ষ, যোগ্য ও সত্ মানুষদের নিয়ে পরিকল্পনা করে প্রকল্প শুরু করতে পারে, যদি নিজেরাই টাকা ও বুদ্ধি জোগাতে পারে, তাহলে যা ছিল মন্দ, তাই হয়ে উঠবে শুভ। আমাদের কেবল একটা বড় দৃষ্টান্ত চাই। নিজেদের এই সুযোগটা সরকারের করে দেওয়া উচিত। অবকাঠামো নির্মাণ যেকোনো দেশের উন্নতির ভিত্তি। আমরা যদি আমাদের যোগাযোগ ও জ্বালানি খাতকে মোটামুটি দুর্নীতিমুক্ত করতে পারি, জাতীয় স্বার্থভিত্তিক নীতি গ্রহণ করতে পারি, তাহলে অন্য খাতের দুর্নীতি সত্ত্বেও দেশ এগিয়ে যাবেই। ভারত এভাবে করেছে। তার জন্য শাসক মহলকে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে, কম-বেশি টাকা বানানো বন্ধ করা না গেলেও অন্তত গ্যাস ও বিদ্যুত্ এবং পদ্মা সেতুকে দুর্নীতির আওতার বাইরে রাখব। এটা হবে আমাদের অবস্থান উজ্জ্বল করার পরীক্ষা ক্ষেত্র। এ ব্যাপারে যদি গোল্ডেন ফাইভ না পেয়েও কেবল জিপিএ-ফাইভ পাই, তাতেও চলবে। আমাদের নীতি হোক কম, কিন্তু ভালো করে। এটা একবার করতে পারলে, ঋণ দেওয়ার দেশের বা ব্যাংকের অভাব হবে না বিশ্বে। 
যমুনা সেতু এক সরকার শুরু করেছে, আরেক সরকার শেষ করেছে। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হতে পারে। যোগাযোগ খাত প্রধান সেই খাত, যেখানে গত ৩০ বছরে সরকার বদলালেও কর্মসূচির বাস্তবায়নে পরম্পরা বিরাজ করেছে। পদ্মা সেতুর বেলায়ও সেটাই হওয়া উচিত। বর্তমান সরকার শুরু করুক, পরে যে আসবে সে শেষ না করে পারবে না। শত হতাশার মধ্যেও এই একটা গাইডলাইন অনুসরণ যদি করতে না পারে, তাহলে সরকার ভোটও হারাবে, মানও হারাবে। মান গেলেও আজকাল অনেক কিছু থাকে, ভোট গেলে কী থাকে তার নজির বর্তমান বিরোধী দল। আপনারা কি সেটা চান? না চাইলে আজই শুরু করে দিন, জনগণ এই একটা ক্ষেত্রে আপনাদের পাশে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ শেষ পর্যন্ত ইতিবাচক। পরীক্ষা করেই দেখুন না প্রধানমন্ত্রী।


ফারুক ওয়াসিফ
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-02-01/news/325851