Powered By Blogger

রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

রেশমী রুমাল আন্দোলনঃ আযাদী আন্দোলনের অমর গাঁথা

বিংশ শতাব্দীর শুরুর কথা। সময়টা ছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি। ১৯১৪ থেকে ১৯১৯ সাল নাগাদ বিশ্বযুদ্ধ চলছিলো। একদিকে ইংরেজদের ক্ষমতার দাপট, অন্যদিকে মুসলমানদের ভাগ্য বিপর্যয়। ইংরেজ অগ্রাসনের মুখে রাজনৈতিক অগ্রাসন ছিলো সাধারণ বিষয়।অর্থনৈতিক শোষণের মাত্রা ছিল আরো প্রকট। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অগ্রাসন ও নিপীড়ন ছিলো আরো বেশি। ইংরেজরা মুসলমানদেরকেই একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতো। শত্রু মনে করতো আলেম-উলামাকে। এর কারণ ছিলো, যখন অথর্ব মুসলমান শাসকরা প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিলো, সেই প্রেক্ষিতে আলেম সমাজ শুধু প্রতিবাদী হলো না, প্রতিরোধও গড়ে তুললো।


বালাকোটের যুদ্ধ থেকে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ পর্যন্ত আন্দোলনগুলো ব্যর্থ হওয়ার পর আলেম সমাজ চাপে পড়েন। কারণ ইংরেজ সরকার বিদ্রোহ ও গণঅভ্যুত্থানের জন্য প্রধানত আলেম সমাজকে দায়ী করে। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের নেতৃত্বের জন্য আলেম সমাজকে দায়ী করে রিপোর্ট প্রদান করেন উইলিয়াম লিওর।



এরপর শুরু হয় ওলামা নির্যাতনের নির্মম ও দুর্বিষহ অধ্যায়। অর্ধ লক্ষাধিক আলেম-ওলামাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। কালাপানি,সাইপ্রাস, আন্দামান ও মাল্টায় দ্বীপান্তরে সাজা পায় হাজার হাজার আলেম। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত,ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া ছিলো একেবারে সাধারণ ঘটনা। প্রায় সবকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই সময়ে শুধু দিল্লীর আনাচে কানাচেই চার সহস্রাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চালু ছিল।


General view of Delhi in 1857

ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে স্বাধীনতাকামী আলেম সমাজ আবার সংঘবদ্ধ হবার চেষ্টা করলেন।সে সময় বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থার আত্মপ্রকাশ ঘটলও। কেউ কেউ আপোষকামী ধারায় গিয়ে ইংরেজের কাছে দণ্ডমণ্ডু শপে দিলো। কিন্তু আলেম সমাজ ও মুসলমানেরা স্বাধীনতার ব্যাপারে কোন ছাড় দিতে চাইলো না। বরং নির্যাতন ক্রমান্বয়ে ব্রিটিশ বিরোধী চাপা ক্ষোভকে আরো বাড়িয়ে দিলো।

ইতিমধ্যে ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল শুরু হয়ে যায়। ব্রিটিশ সৈন্যরা অন্যায়ভাবে দুটি তুর্কী জাহাজ আটক করে বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষিত রচনা করতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করলো। এর প্রতিক্রিয়া হলো দুনিয়া জুড়ে। বিশ্ব বিভক্ত হয়ে পড়লো দুটি শিবিরে। ভারত শাসক ব্রিটিশ আর তাদের মিত্র পক্ষ, আর প্রতিপক্ষে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী, তুরস্ক।

জার্মানিতে অধ্যয়নরত কিছু ভারতীয় ছাত্র এবং স্বাধীনতাপ্রিয় কিছু বুদ্ধিজীবী এই সুযোগে মিত্র পক্ষের প্রতি পক্ষে ব্রিটিশ বিরোধী ভূমিকা পালন করতে সুযোগ খুঁজলো। কিছু ভারতীয় ও তুর্কী জার্মানি মিলে ভারতের ব্রিটিশ শক্তিকে আঘাত হানার পরিকল্পনা গ্রহণ করলো। এ পরিকল্পনা সফল করার জন্য আফগানিস্তানের সহায়তা জরুরী ছিল। অপর দিকে আফগান তথা কাবুলে বৃটিশপন্থী দুর্বল সরকার প্রতিষ্ঠা ছিলো। তুরস্ক থেকে সৈন্যবাহী জাহাজ ভারতে এসে ব্রিটিশ আক্রমণের জন্য আফগানের করিডোর ব্যাবহার করার কোন বিকল্প ছিল না।
তাই ক'জন স্বাধীনতাকামী ভারতীয়,তুর্কী ও জার্মান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কাবুল সফর করে তুর্কী বাহিনীর আক্রমণ ও বৃটিশ বিরোধী ভূমিকায় কাবুল সরকারকে উদ্বুদ্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন।

এই সময় শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান(রহ) এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবী কমিটির একটি বৈঠকে পূর্ব নির্ধারিত দিনে একটি অভ্যুত্থান ঘটানো,তুর্কী ও আফগান সরকারের সাথে প্রত্যক্ষ আলাপ-আলোচনার জন্য শায়খুল হিন্দের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
প্রবাসে তখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। ব্রিটিশ সরকারও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নেতৃবৃন্দের উপর নজরদারী বাড়িয়ে দেয়। মাওলানা জওহর, আজাদ ও শওকত আলী প্রমুখ ততদিনে গ্রেফতার হয়ে যান। গ্রেফতারের তালিকায় ছিলেন শায়খুল হিন্দ ও উবায়দুল্লাহ সিন্ধি(রহ) প্রমুখ। শায়খুল হিন্দ হযরত সিন্ধিকে কাবুলের পথে পাঠালেন। নিজে গ্রেফতার এড়িয়ে হিজাজের পথে রওয়ানা হবার সিদ্ধান্ত নিলেন।



Maulana Ubaidullah Sindhi (10 March 1872 -
22 August 1944)
হযরত উবাইদুল্লাহ সিন্ধীকে কাবুল পাঠানোর কারণ ছিলো অনেকগুলো । এর ভিতর প্রধান কারণ ছিল তিনিটি। প্রথমতঃ গ্রেফতারী এড়ানো, দ্বিতীয়তঃ কাবুল সরকারের সহযোগিতা নিশ্চিত করা , তৃতীয়তঃ আফগান সীমান্ত জুড়ে দুর্ধর্ষ স্বাধীনতা মুক্তিপ্রিয় জাতিগুলোকে সংগঠিত করে ভারতের আযাদীর সংগ্রামে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা। শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান(রহ) হিজাজের পথে তুরস্ক পৌঁছা জরুরী ভাবলেন দু'টো কারণে, তুরস্ক কর্তৃক ভারত অভিযানের চুক্তি চূড়ান্ত করা এবং পুরো পরিকল্পনাটি সমন্বয় করে ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ভারতে ইংরেজ বিরোধী স্বাধীনতা উদ্ধারের অভ্যুত্থান সফল করা।

১৯১৫ সালের ১৫ আগস্ট সিন্ধী সাথীদের নিয়ে কাবুলে পৌঁছেন এবং বাদশার সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই সব সফরের খবর সংশ্লিষ্টরা ছাড়া অন্যরা কেউ জানতো না। বাদশা সিন্ধীর কথায় সন্তুষ্ট হন এবং কাবুলে ভারতের স্বাধীনতার স্বপক্ষে কাজ করার অনুমতি দেন। তুর্কি-জার্মান মিশনের সাথেও পরিচয় করিয়ে দিয়ে সমন্বিত কাজ করার পরামর্শ দেন।

Mahendra Pratap, centre, with (right to left) Maulavi Barkatullah, Werner Otto von Hentig, Kazim Bey, Walter Röhr. Kabu,1916.l

হযরত সিন্ধী কাবুল পৌঁছে অসংখ্য স্বাধীনতাকামী ভারতীয়কে দেখতে পান। তিনি একটি 'অস্থায়ী ভারত সরকার' প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা খুঁজে পান। তুর্কি-জার্মান মিশনের সমন্বয়কারী প্রতিনিধি রাজা মহেন্দ্র প্রতাপকে এই সরকারের প্রেসিডেন্ট, বরকতুল্লাহকে প্রধানমন্ত্রী, হযরত সিন্ধী প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন। এই সরকারে তুর্কী-জার্মানও ছিলো। ভারতীয়দের প্রাধান্য, হিন্দু প্রাধান্য, জার্মান পরিকল্পনা প্রভৃতি নানা বিষয়ে অস্থায়ী সরকারের ভেতর জটিলতা সৃষ্টি হতো। অসাধারণ যোগ্যতা বলে হযরত সিন্ধী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এই সব জটিলতা দূর করতে সক্ষম হন। কার্যত, এক সময় মাওলানা সিন্ধীই হয়ে ওঠেন অস্থায়ী সরকারের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা।


A map by Reginald Dyer illustrating the Sistan
border with Afghanistan.Dyer led the Sistan force
hunting for infiltrating German agents through much
of 1916

১৮ সেপ্টেম্বর নাগাদ শাইখুল হিন্দ বোম্বাই -জিদ্দা হয়ে অক্টোবরে মক্কা পৌঁছান। হিজাজ তথা মক্কা-মদিনা ছিলো তুর্কি খিলাফতের অংশ। মক্কায় শায়খুল হিন্দ হিজাজের গভর্নরের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি যুদ্ধমন্ত্রী আনোয়ার পাশার সাথে সাক্ষাৎ এর প্রয়োজন অনুভব করেন। হিজাজের গভর্নর গালিব পাশা মদিনার গভর্নর বসরী পাশার নামে একটি চিঠি লিখে শায়খুল হিন্দকে আনোয়ার পাশার সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান।
এই সময় হিজাজের গভর্নর গালিব পাশার প্রচুর ধর্মীয় প্রভাব ছিলো। গালিব পাশা শাইখুল হিন্দের মহৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত হয়ে আরো দুটি চিঠি লেখেন। একটি ছিলো ভারতবর্ষ ও তার অঞ্চল ঘেঁষে আফগান গোত্রপতি মুসলমানদের প্রতি। এতে সমাজবাদী ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের আহ্বান ছিলো। ইতিহাসে এই চিঠিকে 'গালিব নামা' নামে আখ্যায়িত করা হয়। অপর চিঠির বিষয় ছিলো আফগান সরকারের প্রতি শায়খুল হিন্দের প্রস্তাব ও পরিকল্পনা মত আফগান ভূখণ্ড দিয়ে তুর্কী সৈন্য চলাচলের অনুরোধ অস্থায়ী ভারত সরকারের প্রতি। তুর্কী সরকারের স্বীকৃতি ও অনুমোদনের কথা চিঠিতে এই নিশ্চয়তাও ছিলো যে, তুর্কী বাহিনী কোনভাবেই আফগানিস্তানের কোন অংশে হস্তক্ষেপ করবে না। এটাকে ইতিহাসে 'গালিব চুক্তিনামা' হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
শায়খুল হিন্দ মদিনায় পৌঁছে জানতে পারেন যে, আনোয়ার পাশা রওজা মোবারক জিয়ারতে আসছেন, তাই তাকে তুরস্কে যেতে হবে না। মদিনায় বসেই সাক্ষাৎ করা সম্ভব হবে। কার্যত হলোও তাই। আনোয়ার পাশার পক্ষ থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার সহায়তার আশ্বাস দিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।


A column of troops of the Sistan force at Gusht in
July 1916. The Force was then commanded by
Reginald Dyer, later notorious for having ordered
the Amritsar massacre.

আনোয়ার পাশা শাইখুল হিন্দকে তিনিটি চিঠি লিখে দিলেন। এর একটি অস্থায়ী ভারত সরকার ও তুর্কী সরকারের মধ্যকার চুক্তিনামা। দ্বিতীয়টি মুসলিম নেতৃবৃন্দের কাছে শায়খুল হিন্দকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান । তৃতীয় পত্রটি ছিলো আফগান সরকারে প্রতি। এ বিষয়বস্তু ছিলো আফগান সরকারের সম্মতিতে তুর্কী বাহিনীর ভারত অভিযানের কথা।
সিদ্ধান্ত ছিলো আফগান সরকার সম্মত থাকলে তুর্কী বাহিনী আফগান সীমান্তে অবস্থান নেবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ সালে তারা ভারত প্রবেশ করবে এবং ভারতের ভেতর গণঅভ্যুত্থান ঘটাবে।



The Kaiser's invitation to Mahedra Pratap,April 1915.
The letter was delivered by Virendranath
Chattopadhyaya in Geneva.

আফগান সরকার কর্তৃক অনুমোদিত চিঠিটি ভা অনুমোদন পত্রটি মদিনায় অবস্থানরত শায়খুল হিন্দ এর মাধ্যমে তুর্কি সরকারের হাতে পৌছবে। সেই মোতাবেক তুর্কি সরকার কর্তৃক প্রদত্ত যুদ্ধের নির্দেশনামাটি ১৯১৭ সালের ১লা জানুয়ারির মধ্যে কাবুল সদর দপ্তরে পৌঁছানো হবে। সবকিছু ঠিকঠাক হলে তুর্কি বাহিনী আফগানিস্তান হয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ সালে ভারতে অভিযান শুরু করবে। এই সময়টিতে শায়খুল হিন্দ আফগানিস্তানে অবস্থান করে সামগ্রিক নির্দেশনা দেবেন। যথারীতি সিদ্ধান্ত মোতাবেক হিজাজ থেকে প্রদত্ত পত্রটি কাবুলে অবস্থিত অস্থায়ী ভারত সরকারকে পৌঁছানো হলো। উবায়দুল্লাহ সিন্ধির নেতৃত্বে এই চিঠি নিয়ে আফগান বাদশাহ হাবিবুল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ে চাপের কথা তুলে সম্মতি দানে দ্বিধাগ্রস্ত রইলেন। অবশ্য বাদশাহর অন্যান্য মিত্ররা এবং জনগণ ভারতের অস্থায়ী সরকারের প্রতি আন্তরিক ছিলেন। শেষ নাগাদ একটি চুক্তি হলো, আফগান সরকার নিরেপক্ষ থাকবে। তবে তুর্কী বাহিনী আফগান সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করবে। আফগান সরকার কোন আফগানী ব্যক্তিগতভাবে যুদ্ধ যেতে চাইলে আপত্তি তুলবে না। তবে ইংরেজদের কৈফিয়ত দেবে এই বলে যে, সীমান্তে উপজাতিদের বিদ্রোহে বেসামাল হয়ে তারা তুর্কী বাহিনী ঠেকাতে পারেনি ।পরিস্থিতি আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলো।



Another map by Reginald Dyer. Birjand is in the
periphery of the Lut Desert, in Persia near Afghanistan

ইংরেজ গোয়েন্দা ও শত্রু বাহিনীর কড়া পাহারায়ও তথ্য ফাঁস হবার ভীতি থেকে মাওলানা সিন্ধি ও আমির নসরুল্লাহ খান চুক্তির বিষয় ও তারিখ দক্ষ কারিগর দিয়ে একটি রেশমি রুমালে সুতার সাহায্যে আরবী ভাষায় লিখে নিলেন। শত্রুর চোখ ও তল্লাশি নির্বিঘ্ন করার জন্য এই অভিনব ব্যবস্থা গ্রহণ করে একজন নিষ্ঠাবান ভক্তকে দিয়ে মক্কায় শায়খুল হিন্দ বরাবর পাঠাবার ব্যবস্থা করা হলো। অনেকগুলো হাত বদল হয়ে রুমালটি শেখ আব্দুর রহিম এর হাতে পৌঁছে। তিনি হজ্জে গিয়ে রুমালটি শায়খুল হিন্দের হাতে দেয়ার কথা।


Nasrullah Khan, then Prime Minister of Afghanistan.
Nasrullah closely supported the Expedition.


Habibullah Khan, Emir of Afghanistan during World
War I. Habibullah was closely allied to British India.

এদিকে আমীর হাবিবুল্লাহ খান বিরাট আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে তথ্যটি ইংরেজ সরকারের কাছে ফাঁস করে দেয়। ব্রিটিশ গোয়েন্দা পুলিশ আব্দুর রহিমের বাড়ী তল্লাশি করে রুমালটি উদ্ধার করে ফেলে। আব্দুর রহিম আত্মগোপন করে পালিয়ে যান। কথিত আছে, এই আত্মগোপন থেকে আমৃত্যু তিনি কখনো লোক সমাজে ফিরে আসেননি।

এমনিতেই ইংরেজ সরকার ও গোয়েন্দারা বেখবর ছিলোনা। তার উপর আলেম-উলামাসহ মুসলিম নেতারা ছিলেন সন্দেহের তালিকার শীর্ষে। রেশমী রুমাল ইংরেজ সরকারের হাতে পড়ার পর নির্যাতন-গ্রেফতারী পরোয়ানার মাত্রা হাজার গুণ বেড়ে যায়। আন্দোলনের প্রধান নেতা শাইখুল হিন্দ তার প্রিয় ছাত্র হোসাইন আহমদ মাদানী সহ হেজাজে গ্রেফতার হন এবং তাদেরকে মাল্টায় নির্বাসন দেওয়া হয়। আর উবাইদুল্লাহ সিন্ধীকে অনেকগুলো বছর নানা দেশে দেশে ঘুরে বেরাতে হয় মুসাফিরের মত।আরেকটি বিশ্বাসঘাতকতার ফলে স্বাধীনতার পথটি আরো পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। আরো তিনটি দশক নির্যাতন-নিপীড়নের খুনরাঙ্গা পথ পাড়ি দিয়ে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে।
নতুন প্রজন্ম হয়তো জানেই না ব্রিটিশ মুক্তির আজাদি কত সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল । অজানার বিরাট শূন্যতার ভেতর রেশমী রুমাল আন্দোলন ও রুটিতে চিঠি লিখে সংবাদ সরবরাহ করে বিপ্লবের প্রেক্ষিত রচনার মত বিষয়গুলো কাহিনীই মনে হবে।

তথ্যসূত্রঃ
১)উপমহাদেশের আলেম সমাজের বিপ্লবী ঐতিহ্য( উলামায়ে হিন্দ কা শানদার মাজি এর বাংলা অনুবাদ)
২)চেপে রাখা ইতিহাস
৩)তারিখে দেওবন্দ
৪)Ansari, K.H. (1986), Pan-Islam and the Making of the Early Indian Muslim Socialist. Modern Asian Studies,
৫) উইকিপিডিয়া
৬) উবাইদুল্লাহ সিন্ধীর ডাইরি
৭)Sarkar, Sumit , Modern India
৭)Lovett, Sir Verney , A History of the Indian Nationalist Movement,

http://www.somewhereinblog.net/blog/ogropothik/29523236

সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সীমান্তে হত্যা বন্ধের দাবি, বাংলাদেশ-ভারত সাইবার-যুদ্ধ!

বাংলাদেশ ও ভারতের কম্পিউটার হ্যাকাররা সাইবার-জগতে ওয়েবসাইট বেদখল ও অকার্যকর করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। বিষয়টিকে এখন বলা হচ্ছে সাইবার-যুদ্ধ।
হ্যাকারদের ফেসবুক গ্রুপ, বিভিন্ন বাংলা ব্লগসাইটের একাধিক ব্লগে বাংলাদেশি হ্যাকারদের আক্রমণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। বাংলাদেশি হ্যাকার পরিচয় দানকারীরা বলছেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সীমান্তে হত্যকাণ্ড ও অত্যাচার বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশি হ্যাকাররা এই সাইবার-যুদ্ধ শুরু করেছেন। টিপাইমুখ বাঁধসহ অন্যান্য বিষয়ের কথাও তাঁরা বলছেন।
৯ ফেব্রুয়ারি ভিডিও আদান-প্রদানের ওয়েবসাইট ইউটিউবে ভারত সরকারের প্রতি একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে ‘বিডি ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস’। ভিডিওতে মুখোশ পরা একজন হ্যাকারকে যান্ত্রিক (রোবটিক) গলায় কথা বলতে দেখা যায়। তাঁর বক্তব্য হলো, ‘হ্যালো বাংলাদেশের নাগরিকরা, আমরা বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস। এখন সময় আমাদের চোখ খুলবার। বিএসএফ এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে, তাদের গুলিতে আহত হয়েছে আরও ৯৮৭ বাংলাদেশি। অপহূত হয়েছে হাজারো মানুষ। এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। তারা অবিচার করছে। সংকটময় এ মুহূর্তে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু দায়িত্ববোধ রয়েছে, আমরা চাই ভারত সরকার নিরপরাধ বাংলাদেশিদের হত্যা করা বন্ধ করুক। নতুবা আমরা ভারতীয়দের বিরুদ্ধে সাইবার-যুদ্ধ শুরু করব। এটি চলতেই থাকবে।’
তথ্যমতে, গত ১৫ দিনে ভারতের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বাংলাদেশি হ্যাকাররা টুকটাক আক্রমণ চালালেও শুক্রবার রাত থেকে ব্যাপকভাবে আক্রমণ চলে ভারতীয় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। পাল্টা আক্রমণ হিসেবে ভারতীয় হ্যাকাররাও বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু সাইট অচল করে দেন। তবে গতকাল রোববার দেখা যায় বাংলাদেশের বেশির ভাগ আক্রান্ত সাইট ঠিকঠাক করা হয়েছে।
অনলাইনের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাত পর্যন্ত ভারতীয় প্রায় ১০ হাজার ওয়েবসাইটে হামলা চালানো হয়েছে বলে হ্যাকাররা দাবি করেছেন। এ ছাড়া হ্যাকাররা গতকাল বিএসএফের বিকল্প ওয়েবসাইট (bsf.nic.in) দখল করে সেটির প্রোগ্রামিং সংকেত (সোর্সকোড) উন্মুক্ত করে দেন। অপরদিকে ভারতীয় হ্যাকারদের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশের ৩০০ সাইটে আক্রমণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ‘বাংলাদেশ সাইবার আর্মি’, ‘বিডি ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস’, ‘এক্সপায়ার সাইবার আর্মি’—এই তিনটি হ্যাকার দল এই সাইবার-যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কয়েকজন হ্যাকার এই প্রতিবেদককে জানান, ‘বাংলাদেশি হ্যাকারদের সমর্থন দিয়েছে আন্তর্জাতিক হ্যাকার দল ‘অ্যানোনিমাস’। এ ছাড়া পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরবের শক্তিশালী হ্যাকাররা বাংলাদেশি হ্যাকারদের সমর্থন দিয়ে গতকাল থেকে ভারতীয় সাইটে আক্রমণ করছেন।
অপরদিকে ভারতের ‘ইন্ডিশেল’ হ্যাকার দল বাংলাদেশি সাইটগুলোতে আক্রমণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইন্ডিশেল অনেকগুলো ভারতীয় ওয়েবসাইট থেকে বাংলাদেশি হ্যাকারদের হটিয়ে দিয়ে রোববার রাত পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ভারতের সাইটগুলোতে আক্রমণ বন্ধ না করলে বাংলাদেশের ওয়েবসাইটগুলো আক্ষরিক অর্থেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে বলে ইন্ডিশেল হুমকি দিয়েছে।
প্রথম আলোয় পাঠানো ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস দলের একটি ই-মেইলে বলা হয়েছে, এই আক্রমণ চলতেই থাকবে। ওই ই-মেইলে বাংলাদেশের কোনো সাইট আক্রান্ত হলে বা আক্রমণ ঠেকাতে ওয়েবমাস্টারদের কী করতে হবে, তার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসচিব রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইবার-যুদ্ধের মতো কোনো ঘটনার কথা আমাদের জানা নেই। আমাদের সরকারি পাঁচটি সাইট গত শনিবার ঘণ্টা দেড়েকের জন্য বন্ধ ছিল, তবে তা হ্যাকিং কি না, নিশ্চিত নই।’ সচিব আরও বলেন, ‘সরকারি ওয়েবসাইটগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় রক্ষণাবেক্ষণ করে। আমরা আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে অনেক সময় বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়ে থাকি।’
তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা বিডি সার্টের (কম্পিউটার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম) চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব হ্যাকিংয়ের ঘটনা মূলত তরুণ প্রজন্মের প্রোগ্রামাররা ঘটিয়ে থাকেন। তবে যেহেতু পাল্টাপাল্টি আক্রমণ হচ্ছে, তাই আমাদের দিক থেকে সতর্ক থাকতে হবে। আর এই হ্যাকিংকে রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো ঠিক হবে না। হ্যাকারদের অন্য কোনো উপায়ে দমন না করে সচেতন করতে হবে। তাঁদের বোঝাতে হবে, এসব করে কোনো ইতিবাচক ফল আসে না।’
ছদ্মনামধারী বাংলাদেশি কয়েকজন হ্যাকার প্রথম আলোকে জানান, এখন বিচ্ছিন্নভাবে ভারতীয় ওয়েবসাইটে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। সারা বিশ্বে এখন প্রায় এক হাজার হ্যাকার এতে সক্রিয় আছেন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘১০ হাজার ওয়েবসাইটে আক্রমণ কিছুই না। আমাদের আসল আক্রমণ শুরুই হয়নি।’
আরও কয়েকজন হ্যাকার জানিয়েছেন, বিএসএফ সীমান্তে হত্যা বন্ধ করছে না। বারবার বলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই এই আক্রমণ। ভারতের সাইট হ্যাক করলে দুনিয়াজুড়ে বাংলাদেশের দাবিদাওয়া ছড়িয়ে যাবে। তাই আক্রমণ চলছে। ভারত সরকার দাবি মেনে নিলে আক্রমণ বন্ধ হবে।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-02-13/news/224348