Powered By Blogger

রবিবার, ২৯ মে, ২০১১

শতাব্দীর সেরা বিচারক

আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও পত্রিকাটির প্রতিবেদক অলিউল্লাহ নোমানকে নজিবিহীনভাবে শাস্তি দিয়েছিল খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আদালত। মাহমুদুর রহমানকে আদালত অবমাননা মামলার শুনানি চলাকালে দৃষ্টিকটুভাবে আক্রমণ করেন স্বয়ং প্রধান বিচারপতি। তাকে ‘চান্স এডিটর’ বলে সম্বোধন করেন এজলাসে বসে। বিচারের পরিবর্তে আসামির বিপক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নেন খায়রুল হক। দেশের সংবাদমাধ্যম একচেটিয়া সরকারবান্ধব হওয়ায় তা ততটা হইচই না হলেও আন্তর্জাতিকভাবে তা ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় একজন সম্পাদক যখন নানানভাবে নিগৃহীত হচ্ছিলেন তখন স্বয়ং উচ্চ আদালত রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে কাজ করা সভ্য বিশ্বে নজিরবিহীন। এখন সুযোগ এসেছে মাহমুদুর রহমানের। এই প্রধান বিচারপতির নানা অনিয়ম তুলে ধরছেন ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে।

পাক-চীন সম্পর্ক ও এশিয়ায় নতুন সমীকরণ

ওসামা বিন লাদেন হত্যার নাটকীয় ঘোষণার পর পাক-মার্কিন সম্পর্কের টানাপড়েনকে কেন্দ্র করে এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ফাটলের সাথে এ অঞ্চলে চীনের দৃশ্যমান ভূমিকা ও মার্কিন প্রভাববলয় সঙ্কুচিত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। পাক-মার্কিন সম্পর্কে অবনতির দিকটি প্রথম প্রকাশ পায় জানুয়ারিতে সিআইর ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত রেমন্ড ডেভিস নামে এক মার্কিন গুপ্তচরকে আটকের পর। ডেভিসকে আটক করা হয়েছিল দুই পাকিস্তানিকে হত্যার অভিযোগে। তিন মাস কারাগারে আটক থাকার পর রক্তের মূল্য পরিশোধের বিনিময়ে তিনি মার্চে মুক্তি পান।


এরপর ধারণা করা হয়েছিল, পাকিস্তানের ওপর মার্কিন চাপ বাড়বে। ঠিক তা-ই হয়েছে। পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ভেতরে এক কমান্ডো অভিযানে বিন লাদেনকে হত্যার দাবি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই অভিযানকে পাকিস্তান দেশটির সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে দাবি করেছে; অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্খার বিরুদ্ধে লাদেনকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ আনে। যদিও এই অভিযানে প্রকৃত অর্থে লাদেনের মৃত্যু হয়েছে, না তিনি আগেই মারা গিয়েছিলেন কিংবা লাদেনের নামে অন্য কাউকে হত্যা করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। প্রকৃত বিন লাদেন মারা যাক বা না যাক এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান দীর্ঘ দিনের বন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। বিন লাদেন মারা যাওয়ার পনেরো দিনের মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি চীন সফর করেছেন। চীনা নেতারা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে এবং দেশটি সন্ত্রাসের শিকার। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর সম্মান দেখানো উচিত। পাকিস্তানের ওপর যে কোন আঘাতকে চীনের ওপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং পাকিস্তানের পাশে সব সময় চীন থাকবে। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রবল চাপের মধ্যে চীনের এই ঘোষণা শুধু পাকিস্তানের জন্য স্বস্তির বিষয় ছিল না, দেশটির বিপদে চীন যে সমর্থন জানাবে তারও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।


এই সফরে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাপকভিত্তিক কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর মধ্যে সামরিক সাহায্যের পাশাপাশি সমরপ্রযুক্তি হস্তান্তরের মতো বিষয় রয়েছে। একই সাথে দ্রুততম সময়ে ৫০টির বেশি জেএফ থান্ডার এয়ার ক্রাফট পাকিস্তানকে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে চীন। এ ছাড়া নৌবাহিনীর জন্য ফিন্সগেট ক্রয় ও সাবমেরিন চালানোর প্রশিক্ষণের বিষয় নিয়ে দুই দেশ একমত হয়। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ৭৫ শতাংশ অস্ত্র আসে চীন থেকে। খুব শিগগরই ২৬০ চীনা ফাইটার জেট পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ হবে। চীনের আগ্রহে আগামী বছরে পাকিস্তান সাংহাই কোঅপারেশনে অর্গানাইজেশনে পর্যবেক্ষক থেকে সদস্য হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে চীন-ভারত সম্পর্কে আরো নতুন মাত্রা পেতে পারে। কিন্তু গিলানীর এবারের সফরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সামরিক আলোচনা ছিল, চীনের সাহায্যে নির্মিত, পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরে একটি নৌঘাঁটি স্খাপনের প্রস্তাব।


ভারত মহাসাগরে চীন ও ভারতের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা বেশ পুরনো। তুলনামূলক ভারতের নৌবাহিনীও এখানে অনেক শক্তিশালী। বলা চলে, ভারত মহাসাগরে ভারতের একচ্ছত্র প্রভাব। এর সাথে যোগ হয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীর সাথে ভারতের নৌবাহিনীর নিরিড় সহযোগিতার সম্পর্ক। মধ্যপ্রাচ্য থেকে চীনের জ্বালানি সরবরাহ করতে হয় সঙ্কীর্ণ মালাক্কা প্রণালী দিয়ে ভারত আর মার্কিন নৌ-নজরদারির ভেতর দিয়ে। যেকোনো প্রতিকুল পরিস্খিতিতে চীনের এই জ্বালানি সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিতে পারে ভারত-মার্কিন নৌশক্তি। চীনের জ্বালানি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কৌশলের জন্য বিকল্প সমুদ্রপথ অনেক জরুরি। সেই সুযোগটি এবার পুরোপুরিভাবে পেতে যাচ্ছে চীন। গোয়াদরের এই বন্দরের সামরিক গুরুত্ব বহুমুখী। কার্যত এই বন্দর হবে এশিয়ার দক্ষিণ সমুদ্র উপকূলে চীনের প্রভাব বজায় রাখার মূল কেন্দ্রবিন্দু যেখান থেকে মার্কিন আর ভারতীয় নৌশক্তির ওপর নজরদারির কাজটিও চালাতে পারবে চীন।


ওমানের সমুদ্র উপকূলের কাছে গোয়াদর বন্দর। এখান থেকে পারস্য উপসাগরের দূরত্বও খুব বেশি নয়। ১৯৫৮ সালের আগ পর্যন্ত গোয়াদর ওমানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে তা পাকিস্তানের হাতে ছেড়ে দেয় ওমান। ১৯৭৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন পাকিস্তান সফরে এলে প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো গোয়াদরে একটি বন্দর নির্মাণের জন্য সাহায্য চান। প্রস্তাব করেন, মার্কিন সহযোগিতায় এই বন্দর তৈরী হলে এর সুবিধা মার্কিন নৌবাহিনী যাতে পায় তা নিশ্চিত করা হবে। জুলফিকার আলী ভুট্টোর এই প্রস্তাবে সাড়া দেননি নিক্সন। মার্কিন সাহায্য না পেলেও এখানে বন্দর নির্মাণের চিন্তা পরিত্যাগ করেনি পাকিস্তান। তারা পরে চীনের সাহায্য চায়। চীনের সহায়তায় ২০০২ সালে শুরু হয় এই বন্দর নির্মাণের কাজ। চীন এই বন্দর নির্মাণে বিনিয়োগ করে ২০০ মিলিয়ন ডলার। ২০০৬ সালে বন্দরের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়। বন্দর ব্যবস্খাপনার দায়িত্ব দেয়া হয় সিঙ্গাপুর পোর্ট ম্যানেজমেন্ট অথরিটিকে। এখন সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটির কাছ থেকে এই বন্দর ব্যবস্খাপনার দায়িত্ব দেয়া হবে চীনকে। শিগগিরই সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটির বন্দর ব্যবস্খাপনার বিষয়টি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।


এই বন্দরের সাথে চীনা ভূখণ্ডের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথও তৈরির কাজ শুরু করে, যাতে তেলের ট্যাংকারগুলো বন্দর থেকে চীনা ভূখণ্ডে নেয়া যায়। চীন কারাকোরাম হাইওয়ে পাকিস্তানের গিলগিট বাল্টিস্খান হয়ে জিনজিয়াং প্রদেশ পর্যন্ত রাস্তায় সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে। ২০০৬ সালে দু’দেশ কাশগড় থেকে পাকিস্তানে অ্যাবোটাবাদ পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কারাকোরাম হাইওয়ে বড় বড় কনটেইনার বা ট্যাংকার পরিবহনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে­ এই বিবেচনায় বিকল্প যোগাযোগের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়। ২০১০ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি চীন সফর করেন। চীনা প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের সাথে আলোচনায় কাশগড় থেকে গোয়াদর পর্যন্ত তিন হাজার কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।


নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, চীন এই বন্দর সামরিক ও বেসামরিক উভয় দিকে সমানভাবে ব্যবহার করবে। এখানে শুধু চীনের জাহাজ থাকবে না, সাবমেরিনগুলোর ঘাঁটিও হবে। নয়াদিল্লিভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বন্দর ভারতের জন্য সরাসরি হুমকি। গোয়াদর বন্দর হরমুজ প্রণালীর খুব কাছে। প্রতিকূল পরিস্খিতিতে পাকিস্তান এই জ্বালানি রুটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারবে। অপর দিকে বেইজিং এই বন্দর থেকে পারস্য উপসাগর ও আরব সাগরে ইন্দো-আমেরিকান নৌতৎপরতার ওপর পুরোপুরি নজরদারি করতে পারবে।


চীনের সাথে পাকিস্তানের এই কৌশলগত নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়ই উদ্বিগ্ন। অনেকে মনে করেন, সিআইএ ও আইএসআই’র মধ্যে বিরোধের মূলে রয়েছে চীনের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কের বিষয়টি।


পশ্চিমা দেশগুলোর অব্যাহত চাপের মধ্যে পাকিস্তান যখন চীনা কার্ডটি দক্ষতার সাথে খেলছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানের প্রতি তার সুর খানিকটা নরম করে ফেলছে বলে মনে হচ্ছে। হিলারি ক্লিনটন জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ অ্যাডমিরাল মাইক মুলেনকে সাথে নিয়ে আকস্মিক ইসলামাবাদ সফরে আসেন। পাকিস্তানের সাথে সহযোগিতা ও সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।


এত দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে পাকিস্তানি গোয়েন্দাসংস্খার আশ্রয়ে বিন লাদেন লুকিয়ে ছিলেন। এখন পাকিস্তান সফরে এসে হিলারি বলছেন তিনি বিশ্বাস করেন না, বিন লাদেনের লুকিয়ে থাকার বিষয়টি পাকিস্তানি শীর্ষ কর্মকর্তারা জানতেন।


পাকিস্তানকে দেয়া সাহায্য বন্ধ করা হবে না বলে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা আগেই ঘোষণা দিয়েছেন। পাকিস্তান পুরোপুরি চীনের প্রভাববলয়ে চলে যাচ্ছে­ এমন পরিস্খিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ফুটে উঠেছে। তালেবান জঙ্গিদের নির্মূলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা চালালেও তুরস্কের মধ্যস্খতায় তালেবানদের সাথে আলোচনাও চলছে। মধ্যমপর্যায়ের তালেবান নেতাদের সাথে ন্যাটো কর্মকর্তাদের বৈঠকও হয়েছে। তুরস্কের প্রভাবশালী সংবাদপত্র টুডেস জামানকে সম্প্রতি ন্যাটোর সাবেক কর্মকর্তা ও তুরস্কের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিকমত সেতিন জানিয়েছেন, শিগগিরই তুরস্কে তালেবানদের সাথে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, তালেবানদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ এখনো বহাল রয়েছে। অপর দিকে পাকিস্তানও তালেবানদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। করাচিতে পাকিস্তানের নৌঘাঁটিতে হামলা এবং অত্যাধুনিক দু’টি নৌনজরদারি বিমান ধ্বংস করে দেয়ার নেপথ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে পাকিস্তানের ভেতর থেকে এখন প্রশ্ন উথাপিত হয়েছে। এই হামলার মাধ্যমে বিশেষ কোনো বার্তা দেয়া হচ্ছে কি না। হামলার ধরন থেকে স্পষ্ট, পাকিস্তানের সামরিক শক্তিতে আঘাত হানা ছিল এই হামলার লক্ষ্য। পাকিস্তানের কোনো কোনো গণমাধ্যমে অভিযোগ করা হচ্ছে, পাকিস্তান তালেবানের নামে যারা এসব হামলা চালাচ্ছে তাদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্খার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।


অপর দিকে চীনের সাথে পাকিস্তানের সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারে ইতোমধ্যে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন বাহিনীর হত্যার দাবির পর নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে এমন আভাষ দেয়া হয়েছিল, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতও এ ধরনের অভিযান চালাতে পারে। ভারতের এই আকাঙ্ক্ষার যে প্রতিক্রিয়া পাকিস্তান দেখিয়েছে, তা ভারতের জন্য আরেক দফা উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান জানিয়ে দেয়, ভারত যদি এ ধরনের অভিযানের সাহস দেখায় তাহলে স্বল্পমাত্রার পারমাণবিক অস্ত্র বা ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার আর্মস ব্যবহার করবে। পাকিস্তানের কাছে যে এ ধরনের অত্যাধুনিক পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে তা এত দিন অজানা ছিল। একই সময়ে ভারত কূটনৈতিকভাবে আরেকটি বাজে পরিস্খিতির মধ্যে পড়ে যায়। দেশটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অবস্খানরত ৫০ জন সন্ত্রাসীর একটি তালিকা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। এদের বিচারের জন্য ভারতের কাছে হস্তান্তরের দাবি করে। এর এক দিন পর ভারতের সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়, এই তালিকার দু’জন ভারতের কারাগারে আটক রয়েছে। অর্থাৎ পাকিস্তানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতও চাপ প্রয়োগ করতে গিয়ে উল্টো ভারত চাপের মধ্যে পড়েছে এবং দেশটির ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে।


ওসামা বিন লাদেন হত্যার পর পাকিস্তানকে ঘিরে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের এই প্রতিযোগিতা এশিয়ায় পরাশক্তিগুলোর নতুন কৌশলগত সমীকরণের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর এতে ইরানও যোগ হয়েছে। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সংহতির প্রতি ইরান সমর্থন জানিয়েছে। ইরানের সাথেও পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তারা যোগাযোগ রাখছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাকিস্তান শুধু চীন নয়, রাশিয়ার সাথেও সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি রাশিয়া সফর করেছেন। তাকে রাশিয়ায় উষ্ণ সংর্বধনা দেয়া হয়। পাকিস্তান ও ইরানের সাথে চীন ও রাশিয়ার নতুন সম্পর্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভবিষ্যতে বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। এর ফলে শুধু আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর অবস্খান দুর্বল হবে না, মধ্য এশিয়ার জ্বালানি সম্পদের ওপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ আরোপের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা বড় ধরনের হোঁচট খাবে। কারণ ইতোমধ্যে রাশিয়ার পাশাপাশি চীনও মধ্য এশিয়ায় প্রভাব বাড়াচ্ছে। পাকিস্তান-চীন সহযোগিতার সম্পর্ক চীনকে এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেবে। মধ্য এশিয়ার সাথে সড়ক যোগাযোগ আর বন্দর সুবিধার কারণে পাকিস্তানের গুরুত্ব বেড়েছে। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানামুখী চাপ আর দেশের অভ্যন্তরে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা সত্ত্বেও ভূকৌশলগত অবস্খানের কারণে পাকিস্তান চীন ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের কার্ডগুলো খেলছে। আর এটাই পাকিস্তানের মূল অস্ত্র। এ কারণে পাকিস্তানকে নিয়ে সমালোচনা করা যতটা সহজ, উপেক্ষা করা ততটাই কঠিন।
[সূত্রঃ নয়া দিগন্ত, ২৯/০৫/১১]

আলফাজ আনাম

শনিবার, ২৮ মে, ২০১১

কম্পিউটারের গতি বাড়ান

— স্টার্ট মেনুর রানে গিয়ে tree লিখে এন্টার দিন।
স্টার্ট মেনুর রানে গিয়ে prefetch লিখে এন্টার দিন। একটি নতুন উইন্ডোতে যে ফাইলগুলো আসবে, তার সবক’টি ডিলিট করুন।
— স্টার্ট মেনুর রানে গিয়ে temp লিখে এন্টার দিন এবং টেম্পোরারি ফাইলগুলো ডিলিট করুন।
— স্টার্ট মেনুর রানে গিয়ে %temp% লিখে এন্টার দিন। যে টেম্পোরারি ফাইলগুলো আসবে, সেগুলো ডিলিট করুন। যে টেম্পোরারি ফাইলটি ডিলিট হচ্ছে না সেটি বাদ দিয়ে অন্যগুলো ডিলিট করুন।
— স্টার্ট মেনুর সার্চে গিয়ে .hak লিখে এন্টার দিন। এবার ব্যাকআপ ফাইলগুলো ডিলিট করুন।
— স্টার্ট মেনুর সার্চে গিয়ে .tmp লিখে এন্টার দিন এবং টেম্প ফাইলগুলো ডিলিট করুন।
— স্টার্ট মেনুর সার্চে গিয়ে recent লিখে এন্টার দিন। রিসেন্ট ফাইলগুলো ডিলিট করুন।
— হার্ডডিস্কের ওপর ডান মাউস ক্লিক করে প্রোপার্টিজে ক্লিক করুন এবং ‘ডিস্ক ক্লিনআপ’ অপশনটি ব্যবহার করুন। এভাবে প্রতিটি হার্ড ড্রাইভে তা করুন।
— মাই কম্পিউটার>টুল্স অপশন>ফোল্ডার অপশন>ভিউ
ট্যাব>শো হিডেন ফাইলস অ্যান্ড ফোল্ডার্স>সি ড্রাইভ>ডকুমেন্ট
অ্যান্ড সেটিংস>যে নামে কম্পিউটারটি আছে সেই ফোল্ডারের
লোকাল সেটিংস (অস্পস্টটি)” ‘টেম্প’ এবং ‘টেম্পোরারি ইন্টারনেট ফাইলস’ এবার এই দুটি ফোল্ডার থেকে ইন্টারনেটের টেম্প ফাইলগুলো
ডিলিট করুন।

সোমবার, ২৩ মে, ২০১১

কোন অধিকারবলে তিনি এসব কথা বলেন?

সন্তু লারমা যা বলে আসছেন, তা কি তিনি সত্য বলেছেন? কোন অধিকারবলে তিনি এসব কথা বলেন? তাকে এই অধিকার কে দিয়েছে? তিনি নির্বাচিত কোনো নেতা নন। পার্বত্য অঞ্চলের জনগণ তাকে ভোট দেয়নি। জনগণের ভোটে তিনি কখনো বিজয়ী হয়ে আসেননি। আজকে নির্বাচিত কোনো পাহাড়ি নেতা যদি এ সব কথা বলতেন তাহলে তার পেছনে যুক্তি ছিল। পাহাড়িদের পক্ষ থেকে কথা বলার অধিকার তাকে কেউ দেয়নি।

মমতার বিজয় আমাদের আশাবাদী করে না

ড. তারেক শামসুর রেহমান
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এখন মমতা ব্যানার্জি। দীর্ঘ বছর ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টকে পরাজিত করে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রীর আসনটি ‘দখল’ করতে সমর্থ হলেও এ থেকে আমাদের উত্ফুল্ল হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। কেননা মমতা কেন্দ্রের ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। এখন জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে আছেন। এক সময় বিজেপির সঙ্গেও ছিলেন। কেন্দ্রে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ’র (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স) মিত্র ছিলেন মমতা। অনেকদিন থেকেই ক্ষমতার আশপাশে আছেন। আমাদের নেতা-নেত্রীরা যখনই নয়াদিল্লি যান, তখন দু’ব্যক্তির সঙ্গে অবশ্যই তারা দেখা করেন। তাদের একজন প্রণব মুখার্জি, অপরজন মমতা ব্যানার্জি। আমাদের নেতা-নেত্রীদের ধারণা তাদের দু’জনের সঙ্গে দেখা করলে, পদ্মার ইলিশ, মিষ্টি আর সিরামিকের উপহার সামগ্রী নিয়ে গেলে তারা বাংলাদেশের সমস্যার ‘সমাধান’ করে দেবেন। অতীতে জ্যোতি বসু যত দিন জীবিত ছিলেন, তিনি ছিলেন আমাদের আরেকটা ‘ভরসার স্থান’। কিন্তু বিরাজমান সমস্যাগুলোর সমাধান কী হয়েছে, আমরা তা সবাই জানি—আমাদের সমস্যা এখানেই। যেখানে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদ অনুসরণ করে আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারছি না, সেখানে আমরা ভরসা করছি কখনও জ্যোতি বসুর ওপর, কখনও প্রণব, কখনও মমতার ওপর। কিন্তু আমরা ভুলে যাই তারা রাজনীতি করেন সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে। মমতা বা প্রণব বাবু বাংলায় কথা বললেও মূলত এরা ভারতীয়। ভারতের স্বার্থটা আগে। জ্যোতি বসু তো কমিউনিস্ট ছিলেন। আদি বাড়ি বাংলাদেশে। কমিউনিস্টরা সাধারণত নিপীড়িত ও শোষিত মানুষদের পাশে এসে দাঁড়ায় বলে বলা হয়। কেননা তত্ত্বগতভাবে তারা আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী। কিন্তু বাংলাদেশের কোন সমস্যাটা সমাধান করে দিয়েছেন জ্যোতি বসু? একটিও নয়। অথচ জ্যোতি বসুর নাম শুনলেই আমরা গদগদ হয়ে গেছি। কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ অমানবিকভাব তার লাশ ঝুলিয়ে রাখল কয়েক ঘণ্টা, সেদিন কি মমতা এর প্রতিবাদ করেছিলেন? তিনি তো তখন কেন্দ্রের মন্ত্রী, ইউপিএ জোটের শরিক। মমতা প্রতিবাদ করেননি। বাংলাদেশের মানুষদের মূল্যবোধের প্রতি সহমর্মিতাও দেখাননি। কারণ তিনি সর্বভারতীয় রাজনীতি করেন, যেখানে বাংলাদেশকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। বাংলাদেশের স্বার্থ তাই ভারতীয় নেতাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়নি। যশোরের মেয়ে মমতা। তার জন্ম যশোরে হয়নি বটে, কিন্তু বাবার বাড়ি ছিল যশোরে। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্তির সময় তার পূর্বপুরুষ চলে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। তিনি যে ধরনের নেত্রী, তাতে কেন্দ্র সরকার তার কথা শুনতে বাধ্য। কিন্তু বাংলাদেশ যে ধীরে ধীরে মরুময়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শুধু ভারতের পানি প্রত্যাহারের কারণে, মমতা কি এ ব্যাপারে কোনো দিন কোনো কথা বলেছেন? কেউ কি সে কথা বলে?
নির্বাচনে বিজয়ের পর আমাদের প্রধানমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ফোন করেছিলেন। এ কথাটা প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের কাছ থেকে আমরা শুনিনি। তিনি ব্রিফিংও করেননি। আমরা জানলাম মমতা ব্যানার্জির মুখ থেকে (‘বাংলাদেশ থেকে হাসিনাদির ফোন পেয়েছি’)। প্রধানমন্ত্রী কি এটা করতে পারেন! প্রটোকল কি তাকে অনুমতি দেয়? একটি স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী কী পারেন অন্য কোনো দেশের প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে? ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কি জার্মানির রাইনল্যান্ড ফালসের অতি সম্প্রতি নির্বাচনে বিজয়ী মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন? না, জানাননি। কেননা প্রটোকল অনুযায়ী তিনি তা পারেন না। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী তা করলেন। তারপর শুনুন মমতা কী বলেছেন। মমতার ভাষায় ‘মনে হচ্ছে যেন দুই বাংলা এক হয়ে গেল’ (কালের কন্ঠ, ১৪ মে, পৃ.-১০)। কী ভয়ঙ্কর কথা! ‘দুই বাংলা এক হয়ে গেল’! কী বোঝাতে চাচ্ছেন মমতা? আমাদের প্রধানমন্ত্রী ফোনে শুভেচ্ছা জানাবেন আর ভারতের নেতারা বলবেন ‘দুই বাংলা এক হয়ে গেল’—এটা তো আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি! আমরা তো এ জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম করিনি। এ জন্য তো লাখ লাখ লোক মারা যায়নি।
স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে আমরা পা দিয়েছি। এই চল্লিশ বছরে ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারতের সঙ্গে আমাদের যত সমস্যা বেড়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশের সঙ্গে আমাদের এ সমস্যা নেই। গত ১৬ মে ছিল ফারাক্কা দিবস। পানির ন্যায্য হিস্যা ও ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ফারাক্কা মিছিল করেছিলেন মওলানা ভাসানী। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসেই নয়াদিল্লি ছুটে গিয়ে একটি চুক্তি করেছিলেন (১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে)। কিন্তু যতটুকু পানি আমাদের পাওয়ার কথা সে পানি চুক্তি স্বাক্ষরের পর কোনো দিনই আমরা পাইনি। অথচ ওই চুক্তি নিয়ে কত ‘অর্জনের’ কথা বলা হয়। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়েও কোনো খবর নেই। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে যখন আমরা সোচ্চার, তখন আমাদের সংসদ সদস্যরা ‘প্রমোদ বিহারে’ গেলেন, হেলিকপ্টারে ঘুরলেন, জানালেন তারা কিছুই দেখতে পাননি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন ভারত এমন কিছু করবে না, যাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার কথা যখন পত্রিকাগুলো প্রকাশ করছে, তখন মিজোরামের মানুষ ওই বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করছে। ভারতীয় নেতারা আমাদের ‘ঘুম পাড়ানির গান শুনিয়ে’ আমাদের ঘুম পাড়িয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। আমরা ভারতকে ট্রানজিট দিলাম। কিন্তু আমরা, বা নেপাল ও ভুটান এখনও ট্রানজিট পায়নি। ভারত থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আমরা ভারতীয় হেভি ট্রাক চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করছি। ওই রাস্তা দিয়ে ভারতীয় হেভি ট্রাক যাবে কোনো ধরনের শুল্ক না দিয়েই। আর আমরা বছরের পর বছর গুনতে থাকব সুদ। বলা হয়েছিল বিদ্যুত্ আসবে ভারত থেকে। কৈ সেই বিদ্যুত্? ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কোনো উদ্যোগ নেই। বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা ভারতে থাকলেও তা নানা ট্যারিফ ও প্যারা-ট্যারিফের কারণে ভারতে প্রবেশ করতে পারছে না। জানা গেছে, আগামী ৩ বছরের জন্য ভারত শুল্কমুক্ত আরও ১০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ২২৪টি পণ্য বাংলাদেশে রফতানি করার অনুমতি চেয়েছে। অথচ ভারতে বাংলাদেশী ৬১টি পণ্য শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশের অনুমতির কথা রয়েছে, যা দীর্ঘসূত্রতার জন্য আটকে আছে। সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত সিমেন্টের ওপর অতিরিক্ত ১৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জানা গেছে, দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (সাফটা) এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বিধান অনুযায়ী ভারতে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নানা ধরনের সুবিধা পাওয়ার কথা (দিনকাল, ১৭ মে)। বাংলাদেশ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে স্বল্পোন্নত। এ জন্য বাংলাদেশের বিশেষ সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু ভারত সেই সুবিধা বাংলাদেশকে কখনই দেয়নি। এক্ষেত্রে মমতা বা প্রণব মুখার্জির মতো নেতারা কোনো দিন বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়াননি। কেননা তারা বাঙালি হয়েও স্বার্থ দেখেছে ভারতের। অথচ আমাদের নেতারা বারবার ভারতীয় ‘বাঙালি বাবুদের’ দিকে তাকিয়ে থেকেছেন। বলতে দ্বিধা নেই, শুধু ভারতের কারণেই সার্ক ঠিকমত বিকশিত হতে পারছে না। এর মূল কারণ, মূলত ভারতীয় আধিপত্যবাদী নীতি। নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রচন্দ প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছেন যে, তার অপসারণের পেছনে ভারতের হাত ছিল। যারা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা জানেন ভারত নেপালের রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব খাটায়। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা নেপালে অত্যন্ত সক্রিয়। শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের নেতা প্রভাকরণকে তারাই তৈরি করেছিল। আসলে ভারত তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই পার্শ্ববর্তী দেশগুলো তথা দক্ষিণ এশিয়াকে দেখতে চায়। অর্থনীতিতে অনেক বড় শক্তি ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্রতা দূরীকরণে তথা উন্নয়নে ভারত বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু এই আধিপত্যবাদী নীতির কারণেই ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় ‘বন্ধুশূন্য’ হতে যাচ্ছে। মমতা ব্যানার্জি, প্রণব মুখার্জি—এরা সবাই মূলত এই আধিপত্যবাদী নীতিরই সমর্থন করছেন। সুতরাং আমাদের প্রধানমন্ত্রী মমতাকে ফোন করে যত আঞ্চলিক সহযোগিতার কথা বলেন না কেন, এই আঞ্চলিক সহযোগিতা কোনো দিনই প্রতিষ্ঠিত হবে না—যতদিন না ভারত তার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সাহায্য করেছিল। কিন্তু সেই সাহায্য ও সহযোগিতা অর্থহীন হয়ে গেছে ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে। ফেলানী যেন এক টুকরা বাংলাদেশ। যখন লাশ হয়ে ঝুলে থাকে ফেলানীরা তখন ভারতের ‘বন্ধুত্ব’ কোথায় প্রশ্ন করার অধিকার রয়েছে এ দেশের জনগণের। বাংলাদেশকে তারা কীভাবে দেখে, ফেলানীর ঝুলে থাকা লাশ এর বড় প্রমাণ। তাই মমতা ব্যানার্জি যখন পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে বিজয়ী হন, তখন আমাদের উত্সাহিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। মানুষ সেখানে পরিবর্তন চেয়েছে। আর সেই পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে আদৌ কোনো উন্নতি পরিলক্ষিত হবে না। যারা সম্পর্ক উন্নত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তাদের শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন তত্কালীন ভারতীয় সরকারের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, তখন মমতা এর প্রচণ্ড বিরোধিতা করেছিলেন। মমতা হচ্ছেন ভারতীয় রানজীতিতে ‘মোস্ট আনপ্রেডেকটিবল পার্সন’, যার ওপর আস্থা রাখা যায় না। যে কোনো সময় তিনি ভোল পাল্টাতে পারেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে তার আঁতাত কতদিন স্থায়ী হয়, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন এখন। মমতা ব্যানার্জির কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা করার কিছু নেই।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

নাকে তেল দিলে আরামে ঘুম হয় কেন?


দুই ফোঁটা খাঁটি সরিষার তেল নাকে দিয়ে ঘুমালে যে বেশ আরাম হয়, তাতে সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে তো একটা সাড়া জাগানো টিভি বিজ্ঞাপনও রয়েছে। কিন্তু ঘুমের সঙ্গে তেলের সম্পর্ক কী? আসলে নাসারন্ধ্র বাধামুক্ত থাকলেই ভালো ঘুম হয়। এই কাজটা করে তেল। কীভাবে? সেটা আমরা সবাই জানি। সরিষার তেলে ঝাঁজ বেশি। তাতে কিছু কাজ হয়। আর তা ছাড়া তেল খুব পিচ্ছিল। এই পিচ্ছিল তরল নাসারন্ধ্রের সরু পথে অনায়াসে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করে। কিন্তু তেল পিচ্ছিল কেন? আসল প্রশ্ন সেটাই। যেকোনো তরলই কম-বেশি পিচ্ছিল; যেমন পানি। ঘরের মেঝেতে পানি জমে থাকলে পা পিছলে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাহলে নাকে তেলের বদলে পানি দিলেই তো চলত। তা হয় না, কারণ পানিতে কিছুটা খসখসে ভাবও থাকে। পানির অণুগুলোর মধ্যে একে অপরের সঙ্গে মিলে থাকার একটা প্রবণতা কাজ করে বলেই এ রকম হয়। কিন্তু তেলের অণুগুলো একে অপরের ওপর দিয়ে গড়িয়ে যেতে পারে। যেমন, মেঝেয় কিছু মার্বেল বিছিয়ে তার ওপর পা ফেললে সঙ্গে সঙ্গে পিছলে পড়ে যাই। তেলের অণুগুলোও ঠিক সেই রকম। পানির অণুতে থাকে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন। অক্সিজেন থাকার কারণে পানির অণুগুলো একে অপরকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু তেলের অণুতে রয়েছে হাইড্রোজেন ও কার্বন। এর অণুগুলো একে অপরের সঙ্গে লেগে থাকে না। সে জন্যই তেল পিচ্ছিল। মবিল তেল মেশিনের কল-কবজার ঘর্ষণজনিত বাধা হ্রাসে সাহায্য করে। এ জন্য মেশিনে তেল দেওয়া হয় (লুব্রিকেন্ট হিসেবে)। তেলের এই অসাধারণ গুণের কারণে বলা হয়, বড় কর্তাদের তেল দিলে পদোন্নতির পথ মসৃণ হয়!

মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০১১

ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস আজ : দীর্ঘ ৩৭ বছরেও পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি বাংলাদেশ

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ প্রাঙ্গণ। ঘুরতে এসেছেন বিভিন্ন বয়সের কিছু মানুষ। তাদের চোখে বিস্ময়ের শেষ নেই। তাদের প্রশ্ন—ব্রিটিশরা তো চৌকস জাতি, কিন্তু তারা কেন এই মরুভূমির ওপর ১৯১২ সালে সেতুটি তৈরি করেছিল? এই প্রশ্ন কাল্পনিক। কিন্তু বাস্তব হতে আর বেশি সময় বাকি নেই। সেতুটি তৈরি করা হয়েছিল প্রমত্তা পদ্মার ওপর। এখন সেতুটির নিচে মাইলের পর মাইল চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে ক্ষীণ পদ্মা। অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে এককালের প্রমত্তা এই নদী। পদ্মার এই অপমৃত্যুর জন্য দায়ী ফারাক্কা বাঁধ। শুধু পদ্মাই নয়, বাংলাদেশের অনেক নদী মরে যাচ্ছে ফারাক্কার প্রভাবে। বিষয়টি আজ থেকে ৩৫ বছর আগে আঁচ করতে পেরেছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
মরণফাঁদ ফারাক্কার অশুভ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি উপলব্ধি করে মওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৬ মে লংমার্চের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এটি এক সংগ্রামদৃপ্ত দিন। আজ ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস।
৩৫ বছরেও ভারতের সঙ্গে পানি সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। উল্টো অব্যাহত রয়েছে দেশটির পানি আগ্রাসন নীতি। বাংলাদেশকে পানিশূন্য এবং দেশের নদীগুলোকে মেরে ফেলার জন্য ভারত সুদূরপ্রসারী নানা তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ফারাক্কার প্রভাবে এরই মধ্যে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়, শুরু হয়েছে মরুকরণ। ফারাক্কার পাশাপাশি পানি আগ্রাসনের অংশ হিসেবে ভারত এরই মধ্যে বাংলাদেশের সিলেট জেলার উজানে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। এ বাঁধ চালু হলে বাংলাদেশের আরও এক-তৃতীয়াংশ এলাকা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এবং মরূকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আন্তর্জাতিক নদী আইন ও রীতিনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশটি এ কাজ করছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর পানি দরকার ১ হাজার ৩৪৬ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ৮০০ কিউবিক মিটার প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এর ফলে যে ৫০০ কিউবিক মিটার পানি আসছে, তাতে বাংলাদেশের নদীগুলোর তলাও পূর্ণ হয় না। উপরন্তু এ পানির সঙ্গে কৌশলে পর্যাপ্ত পলি বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে ভারত। ফলে নদীগুলো ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে টিপাইমুখ দিয়ে বর্তমানে প্রায় ২০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি আসছে। বাঁধ নির্মাণ করা হলে আসবে মাত্র ১০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। এক্ষেত্রেও পানির সঙ্গে ভারত কৌশলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পলি সরবরাহ করবে। ফলে এ নদীগুলোও দু-তিন বছরের মধ্যে ভরাট হয়ে যাবে। এদিকে হিমালয়ের পাদদেশে পানিপ্রবাহের মুখে আগে যে ৫০০টি বাঁধ নির্মাণ করা
হয়েছিল, এর ৩৫০টি তৈরি করেছে ভারত। উদ্দেশ্য হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাট ইত্যাদি মরু এলাকাকে শস্যভাণ্ডারে পরিণত করা। ভারতের এই পানি আগ্রাসন চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বড় একটি অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের নদীনালা, খালবিল শুকিয়ে গেছে, পরিবেশ ভারসাম্য হারিয়েছে, বিপন্ন হয়েছে জীববৈচিত্র্য। আর এসবকিছুর প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার। আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির মহাসচিব সৈয়দ টিপু সুলতান বলেন, দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় ভারতের পানি আগ্রাসন প্রতিহত করতে এবং এ ব্যাপারে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে বর্তমান সময়ে ফারাক্কা লংমার্চের তাত্পর্যে উদ্দীপ্ত হওয়াটা আমাদের জাতীয় জীবনে আরও জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, মওলানা ভাসানীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ২০০৫ সালে বিশাল লংমার্চের আয়োজন করেছিলাম। এখন আমরা নেপাল, ভুটানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের নদী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছি। দেশকে রক্ষা করতে হলে আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।
১৯৭৬ সালের এই দিনে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার ভারতীয় ষড়যন্ত্রে বিক্ষুব্ধ লাখো জনতার ঢল নেমেছিল রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে। এখান থেকে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে মানুষের মিছিলটি রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গিয়ে উপস্থিত হয়। কানসাট স্কুলমাঠে আয়োজিত জনসভায় মওলানা ভাসানী ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে ফেলার দাবি জানান এবং এই বাঁধের কারণে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের করুণ অবস্থা ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীকে সরেজমিন দেখে যাওয়ার আহ্বান জানান। সেদিন ‘ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ফারাক্কা লংমার্চ সফল কর’—জনতার এই গগনবিদারী স্লোগানে চারদিক মুখর হয়ে উঠেছিল। ১৬ মে সকাল ১০টায় মওলানা ভাসানী রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানের সভামঞ্চে উপস্থিত হওয়ার পর মশিউর রহমান যাদুমিয়া সভার প্রস্তাব পাঠ করেন। এরপর মওলানা ভাসানী বক্তৃতা দিতে ওঠেন এবং প্রথমে তিনি কয়েকটি স্লোগান উচ্চারণ করেন। বক্তৃতা শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় মিছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে রওনা হয়। প্রায় চার মাইল দীর্ঘ মিছিলটি রাজশাহী ত্যাগের পর শহর ফাঁকা হয়ে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাত যাপনের পর ১৭ মে কানসাটের উদ্দেশে মিছিলটি রওনা হয়। তখন মিছিলটি আরও প্রায় তিনগুণ বড় হয়ে যায়। প্রবল ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিলটি বিকাল ৪টায় কানসাটে গিয়ে পৌঁছায়।
লংমার্চের আগে ১৯৭৬ সালের ১৮ এপ্রিল মওলানা ভাসানী ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশের ওপর ফারাক্কার বিরূপ প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করে তার ফারাক্কা লংমার্চ কর্মসূচি জানিয়ে একটি চিঠি দেন। উত্তরে ইন্দিরা গান্ধী লেখেন, ‘এটি ভাবতে কষ্ট হচ্ছে যে, যিনি আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ ও বেদনাকে একইভাবে সহমর্মিতা দিয়ে দেখেছেন, তিনি বর্তমানে আমাদের এত বেশিভাবে ভুল বুঝছেন, এমনকি আমাদের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।’ উত্তরে মওলানা ভাসানী লিখেছিলেন, ‘আপনার ১৯৭৬ সালের ৪ মে’র পত্র ফারাক্কার ওপর সরকারি ভাষ্যেরই পুনরাবৃত্তি। সুবিখ্যাত পূর্বপুরুষ মতিলাল নেহেরুর দৌহিত্রী ও পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর মেয়ের কাছ থেকে আমার এই প্রত্যাশা ছিল না। আপনি সব সময়ই বঞ্চিত জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় করে সব ক্ষেত্রে সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। ফারাক্কা সম্পর্কে আমি আবারও আপনাকে অনুরোধ করছি, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো সফর করে আমাদের কৃষি ও শিল্প উত্পাদনে যে ক্ষতি হচ্ছে তা নিরূপণ করার জন্য। আমি আপনাকে আপনাদের সরকারি কর্মকর্তাদের রিপোর্টের ওপর সর্বতোভাবে আস্থা স্থাপন না করার জন্য আবারও বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি; কারণ এগুলো প্রায়ই বিদ্যমান অবস্থার প্রকৃত চিত্রের প্রতিফলন করে না।
পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে আপনার পথকে আমি প্রশংসা করি। তবে সমস্যার ব্যাপক ভিত্তিক স্থায়ী সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এটি শুধু শুষ্ক মৌসুমের দু’মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা বছরব্যাপী প্রবাহের যথাযথ বণ্টনভিত্তিক হওয়া উচিত।’
এই পত্রে মওলানা ভাসানী উল্লেখ করেন, যদি তার অনুরোধ গ্রহণ না করা হয় তবে তিনি নিপীড়িত জনগণের নেতা ইন্দিরা গান্ধীর পূর্বপুরুষ এবং মহাত্মা গান্ধীর প্রদর্শিত পথেই সংগ্রাম পরিচালনা করবেন।
মওলানা ভাসানী ফারাক্কা মার্চের প্রস্তুতির সময় বিশ্ব নেতাদের এ সম্পর্কে অবহিত করে বার্তা পাঠান। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব ড. কুর্ট ওয়াল্ডহেইম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড, চীনের নেতা মাও সে তুং, সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন আলেক্সি প্রমুখের কাছে তার বার্তা পাঠিয়ে ভারতের ওপর তাদের প্রভাব প্রয়োগ করে গঙ্গার পানি বণ্টনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন।
কানসাটে সফল লংমার্চের পর মহান আল্লাহতায়ালার শোকরিয়া আদায় করে জননেতা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ফারাক্কার ফলে বাংলাদেশে এরই মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তা সরেজমিনে দেখতে আসার আহ্বান জানান।
মওলানা ভাসানীর লংমার্চের ২৯ বছর পর আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি ২০০৫ সালের ৪ মার্চ এক বিশাল লংমার্চের আয়োজন করে। লংমার্চ শেষে কুড়িগ্রাম জেলার ঐতিহাসিক চিলমারীতে লাখো জনতার এক সমাবেশ হয়। ‘নদী বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে ব্রহ্মপুত্রের তীর। কিন্তু বাংলাদেশকে মরূকরণের হাত থেকে রক্ষায় ভারত আজও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সম্প্রতি পাকিস্তান, ভারত ও নেপাল থেকে পানি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সফরে আসেন। তারা পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট, জিকে প্রজেক্ট এলাকা এবং রাজশাহী পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। এই প্রতিবেদকও তাদের সঙ্গে ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা গভীর হতাশা ব্যক্ত করেন পদ্মার করুণ অবস্থা দেখে। তারা বলেন, গঙ্গা চুক্তি বাংলাদেশের জন্য ‘পেইন অন দ্য নেক (ঘাড়ের ওপর ব্যথা)’। তারা বলেন, ‘এ চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য জাতীয় ইস্যু। চুক্তি অনুযায়ী হিস্যা আদায়ে সরকার যদি আন্তরিক না হয়, তাহলে তো ভারত স্বভাবতই পানি দেবে না। কারণ তার নিজেরও পানির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’ এ দলে ছিলেন নেপালের পানি বিশেষজ্ঞ ও চায়না স্টাডি সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. উপেন্দ্র গৌতম, ভারতের পানি অধিকার কর্মী রামানন্দ ওয়াংখেরপ্পান, পাকিস্তানের পানিবিশেষজ্ঞ আরশাদ আব্বাসী, ড. শাহীন আক্তার, টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মনিরুল কাদের মির্জা প্রমুখ।

বুধবার, ১১ মে, ২০১১

ডা. ক্যাপ্টেন অব. মুজিবর রহমান ফকির স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী

কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার পদে আমরা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং সমমনাদেরকেই নিয়োগ দেবো। বিএনপি বা অন্যমতের কাউকে নিয়োগ দিলে ওই প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চরম বাধা দান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চরম বাধা দানকারীদের একজন ছিলেন। ঢাকাতে যাতে কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টা হতে না পারে সেজন্য তিনি আমরন অনশন ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন ভিসি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের প্রত্যক্ষ মদদে পশ্চিম বঙ্গের কোন হিন্দু শিক্ষিত নেতা বাকি ছিলেন না, যারা ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেননি। এই সমস্থ বুদ্ধিজীবি চিন্তাতেই সহ্য করতে পারতেন না, যে পূর্ব বঙ্গের মানুষ, যারা সংখ্যা গরিষ্টতায় মুসলিম তারাও শিক্ষিত হবে! পূর্ব বঙ্গের মুসলিম যাতে কোন ভাবেই শিক্ষিত হতে না পারে, তার যত উপায় অবলম্বন ছিল তার সবটাই তারা প্রয়োগ করেছিল। সেটা যত দৃষ্টিকটুই হোক, বাধা দিতে সামান্যতম কার্পন্য তারা করেনি। উদাহরন হিসেবে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯২৪ সালে পাটনা হাইকোর্টের কাছে হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন; কেননা তিনি ব্যারীষ্টার সাইয়্যেদ হাসান ইমাম নামের এক অচ্ছুত মুসলীমের কাছে কংগ্রেস পার্টি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন।

রবিবার, ৮ মে, ২০১১

ড. ইউনূসের পক্ষে আন্দোলনের ডাক দেয়ার জের : গ্রামীণ ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণ করে মারধর, হত্যার হুমকি

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অপসারণের প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেয়ায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের ইউনিয়ন নেতা সগির রশিদ চৌধুরী। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাকে অপহরণ করে একটি মিনিবাসে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নিয়ে যায় এবং তাকে মারধর করে ও পিস্তল দিয়ে ভয় দেখায় বলে অভিযোগ করেছেন সগির রশিদ চৌধুরী। শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভের ডাক প্রত্যাহার করা না হলে সগির রশিদ চৌধুরীকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তিরা। লাঠি দিয়ে তাকে বেদম পেটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
ঢাকার সরকারি অর্থপেডিক হাসপাতালের নার্স গোলাম মোস্তফা স্বীকার করেছেন, সগির রশিদ চৌধুরীর দেহে মারধরের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া তার একটি আঙ্গুল ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন মোস্তফা।
স্টাফ রিপোর্টার জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও গ্রামীণ ব্যাংক কর্মচারী সমিতির উপদেষ্টা সগির রশিদ চৌধুরীকে অপহরণ করে বেদম প্রহার করার পর গুরুতর আহত অবস্থায় ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয়ার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে শুক্রবার মধ্যরাতে মিরপুর থানায় মামলা হয়েছে। আহত সগির নগরীর একটি ক্লিনিকে চিকিত্সা নিয়েছেন বলে পুলিশ জানায়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সগির রশিদ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের হয়ে রিকশায় কিডনি হাসপাতালের সামনে পৌঁছেন। এ সময় একটি সাদা মাইক্রোবাস তার রিকশার গতিরোধ করে। পাশাপাশি ৭/৮টি মোটর সাইকেলে আসা অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে ঘিরে ফেলে। পরে তাকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তোলা হয়। মাইক্রোবাসে তার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে অপহরণকারীরা। প্রায় একঘণ্টা পর তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে ১০/১২ জন তার কাছে জানতে চায়, ড. ইউনূসের কাছ থেকে সে কত টাকা নিয়েছে এবং কেন গ্রামীণ ব্যাংকের এবং ড. ইউনূসের পক্ষে আন্দোলন করছে। পরে তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কথা বলানোর চেষ্টা করে অপহরণকারীরা। এতে তিনি রাজি না হওয়ায় অপহরণকারীরা তাকে আন্দোলন করতে নিষেধ করে।
এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়, অপহরণকারীরা তার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে এবং তার সন্তানদের অপহরণের হুমকি দেয়। পরে অপহরণকারীরা সগিরকে কালেমা পড়তে বলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তারা এক পর্যায়ে ছগীরের মুখে টিস্যু পেপার ঢুকিয়ে দিয়ে পায়ে-হাতে বেদম পিটায়। অপহরণকারীরা তাদের দাবিকৃত টাকা চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে ফাঁকা জায়গায় মাটির নিচে পুতে রাখার জন্য বলে। সগির প্রাণের ভয়ে মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজি হন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
অপহরণকারীরা সগিরের চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় আবার মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাতস্থানে ফেলে রেখে যায়। চোখ খুলে তিনি দেখতে পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে তাকে রেখে গেছে অপহরণকারীরা। সেখান থেকে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে এসে সবার সঙ্গে কথা বলে থানায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। অপহরণকারীরা নিজেদেরকে পুলিশ পরিচয় দেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
সগির রশিদ সাংবাদিকদের জানান, অপহরণকারীদের আচরণ ও কথাবার্তায় মনে হয়েছে, তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। তাকে অপহরণের জন্য আড়াল থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে আনিস, মাসুম সরকার, শহীদুল ইসলাম নামের গ্রামীন ব্যাংকের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। অপহরণকারীরা তাকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার হুমকি দিয়েছে বলে তিনি জানান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার এসআই রফিকুল ইসলাম মিয়া সাংবাদিকদের জানান, সগির রশিদ বেশ আহত হয়েছেন। তাকে বেদম মারধর করা হয়েছে। পুরো ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
মিরপুর থানার ওসি ওয়াজেদ আলী জানান, মামলার তদন্ত চলছে। যারা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তাদের কাউকেই ছগীর রশিদ চেনেন না। অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে ওসি জানান। পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার গতকাল রাতে আমার দেশকে জানান, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।
এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘গরিবের ব্যাংকার’ হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত ড. ইউনূস সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্রোধের শিকার হয়েছেন। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনীতিতে নামার ঘোষণা দেয়ায় তিনি শেখ হাসিনার ক্রোধের শিকার হয়েছেন বলে অনেকেই মনে করেন।
গত ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অপসারণ করা হয়। অবশ্য সে আদেশ মানতে অস্বীকার করে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। তবে সুপ্রিমকোর্ট তার রায়ে গ্রামীণ ব্যাংককে বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে উল্লেখ না করে একে সরকারি সংস্থা বলে অভিহিত করেছে। ফলে ষাট বছরের পর বাধ্যতামূলক অবসর গ্রহণের নিয়ম বর্তায় বাধ্য হয়ে দাঁড়ায় ৭০ বছর বয়সী ড. ইউনূসের জন্য। এ রায়ের মধ্য দিয়ে ড. ইউনূসের জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের আর কোনো সুযোগ থাকল না।
এদিকে এএফপি আরও জানায়, গ্রামীণ ব্যাংকের অস্তিত্ব টিকে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এ ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ও শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. ইউনূসকে সরিয়ে দেয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ বহাল রেখে সুপ্রিমকোর্টের রায় দেয়ার দুদিন পর তিনি এ আশঙ্কা ব্যক্ত করলেন। তিনি বলেন, ব্যাংকের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এসব নারী কঠোর পরিশ্রম করছেন। রাজনৈতিক প্রভাবিত পরিবেশে ব্যাংকটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর আকস্মিক প্রস্তাবে রাজি হয়ে যদি আমি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিদায় নিতাম তাহলেও আমার গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যত্ পরিণতি একই হতো। বরং অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব না মেনে আদালতের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান চাওয়া সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।

সোমবার, ২ মে, ২০১১

As human being, we can only do one thing. That is judging others, without knowing the reals situation.

বাংলাদেশের জ্বালানী সম্পদ নিয়ে সংসদীয় কমিটির অপতৎপরতা ও বড়পুকুরিয়া পরিস্থিতি

জার্মানীর উন্মক্ত খনি দেখিয়ে সংসদীয় কমিটি বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস বিভিন্ন বিদেশি সরকারি বেসরকারি কোম্পানির ইচ্ছাপূরণে কাজ করছেন। কিন্তু এই কী কী কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানী তুলনীয় নয় তা নিয়ে বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক, প্রকৌশলীসহ বিশেষজ্ঞরা অনেকবার ব্যাখ্যা করেছেন। এগুলো সংক্ষেপে নিম্নরূপঃ
()   বাংলাদেশের মাটির গঠন, পানির আপেক্ষিক অবস্থান গভীরতা, বৃষ্টি বন্যার ধরন সবকিছুই জার্মানী থেকে ভিন্ন এবং তা কোনভাবেই উন্মক্ত খনন পদ্ধতির উপযোগী নয়।
()  বাংলাদেশের জনবসতির ঘনত্ব জার্মানীর তুলনায় এতগুন বেশি যে তা কোনভাবেই তুলনীয় হতে পারে না। বাংলাদেশের গড় জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১০৭৯, জার্মানীর তুলনায় প্রায় গুণ বেশি। জার্মানীর হামবাক খনি এলাকার তুলনায় বড়পুকুরিয়া ফুলবাড়ী অঞ্চলে তা আরও অনেক বেশি।
() জার্মানীতে যেমন এক অঞ্চলের মানুষদের সরিয়ে অন্যত্র নতুন জনবসতি স্থাপন করা গেলেও বাংলাদেশে তা কোনভাবেই সম্ভব নয়। সারাদেশে জনঘনত্ব অনেকবেশি থাকবার ফলে এক অঞ্চল থেকে সরিয়ে বসতি এবং সমাজ জীবন প্রতিস্থাপন একেবারেই অসম্ভব
() বিষয়টা শুধু ফুলবাড়ী বা বড়পুকুরিয়া অঞ্চলের নয়সমগ্র উত্তরবঙ্গে যদি কৃষি আবাদ, পানি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয় তাহলে এই পুরো অঞ্চলই মানুষের বসবাস ও আবাদের অযোগ্য হয়ে যাবেতাদের সবার জন্যই ভিন্ন আবাস, কৃষি আবাদ আর সমাজজীবন প্রতিস্থাপন করতে হবেসেটা কোথায়? আর অবিরাম খাদ্য উপাদনের এলাকা ধ্বংস হয়ে খাদ্য উপাদনের যে ঘাটতি হবে তার সমাধান কী হবে
 ()  বাংলাদেশের নদনদী খালবিল জালের মতো ছড়ানো যা জার্মানীতে নয়। একজায়গায় দূষণ ঘটলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বন্যায় যার তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। উন্মক্ত খনন পদ্ধতিতে দূষণ তাই বাংলাদেশে যেভাবে ছড়াবে জার্মানীতে ততটা হয় না। ভূগর্ভস্থ পানি প্রত্যাহারের যে প্রয়োজন বাংলাদেশে আছে তাতে মরুকরণের যে বিস্তার ঘটবে জার্মানীতে তার মাত্রা কম। মাটির গঠনের কারণে বাংলাদেশে মাটির ধ্ব যেভাবে ঘটে, জার্মানীতে তার সম্ভাবনা কম।
()  জার্মানীর যেসব কোম্পানি এই পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করছে সেগুলো জার্মান কোম্পানি। তারপরও এখানে মালিকানা ঐসব কোম্পানির হাতে কেন্দ্রীভূত নয়। বাংলাদেশে সামান্য কিছু রয়ালটির বিনিময়ে পুরো খনি বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, এখনো হচ্ছে।
()  জার্মানীতে উন্মক্ত খনন পদ্ধতি ব্যবহার করে কয়লা উত্তোলন করা হয়েছিল অভ্যন্তরীণ বিপুল চাহিদা পূরণের তাগিদ থেকেই। কোম্পানির মুনাফার লক্ষ্যে বিদেশে রপ্তানীর জন্য নয় যেমনটি বাংলাদেশে প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লে­খ্য যে, জার্মানীর এই উন্মক্ত খনন পদ্ধতি তারপরও প্রশ্নের র্ধ্বে নয়। এর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা দীর্ঘ। জার্মানীতে এই খনির জন্য '২৪৪টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পানি চিরদিনের জন্য টলটলে দেখালেও বিষাক্ত।' জার্মান রাষ্ট্রের অনেক দক্ষ তত্ত্বাবধান পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যয়বহুল ব্যবস্থা গ্রহণের পরও বিষাক্ত পানি, চাষের অনুপযোগী মাটির তথ্য সর্বজনবিদিত। তাহলে বাংলাদেশের কী অবস্থা ঘটতে পারে?
পৃথিবীর যেসব দেশে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি প্রচলিত তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। সেখানকার কয়লা স্তরের গভীরতা খুবই কম। ভূগর্ভে সর্বোচ্চ ১২০ মি. পর্যন্ত বিবেচনা করা হয় উন্মুক্ত খনন পদ্ধতির জন্য। অস্ট্রেলিয়া অতিকম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও আবাদি জায়গায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনন করার বিরুদ্ধে সে দেশের মানুষ খুবই সোচ্চার। বিহার রাজ্য তথা সমগ্র ভারতের অন্যতম বৃহৎ কয়লাখনি হলো যারিয়া কয়লাখনি, যেখানে ৭০মি. পর্যন্ত উন্মুক্ত পদ্ধতিতে এবং এরপর থেকে নিচের দিকে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে খনন করা হয়েছে। জার্মানী, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, চীনসহ যেসব দেশে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে তার সবগুলোই পাহাড় বা মরুভূমিতে এবং দেশীয় সংস্থার মালিকানায়। তাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব বাংলাদেশের চাইতে অনেক কম। মাটির উপরের সম্পদ নষ্টের অনুপাত কম। রাষ্ট্রীয় আইন তদারকি তুলনামূলক অনেক বেশী। তারপরও এসব দেশে নতুন করে আর এই পদ্ধতি গ্রহণ করছে না।
আর্জেন্টিনা, পেরু, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর এমনকি যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েককবছরে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতির বিরুদ্ধে নানামাত্রার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, যুক্তরাজ্যের ওয়েলসসহ বিভিন্ন দেশে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি বাতিলের দাবীতে বিভিন্ন ধরণের আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। কয়েক বছর আগে মার্কিন সরকার মন্টানা সীমান্তের কাছে কানাডার একটি উন্মুক্ত খনির উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল। আপত্তির কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, মার্কিন সীমান্ত থেকে ২৫ মাইল উত্তরে পাহাড়ী অঞ্চলে এই উন্মুক্ত খনি করলে তাতে তাদের সীমানায় গ্লেসিয়ার ন্যাশনাল পার্ক, ঝর্না ও পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তম প্রাকৃতিক লেকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।