Powered By Blogger

বুধবার, ২৯ জুন, ২০১১

যুবলীগ নেতারা ঘুরছেন দেশে দেশে নোবেল পুরস্কারের জন্য শেখ হাসিনার পক্ষে আন্তর্জাতিক লবিং

নিউইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে সংবাদদাতাঃ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার মনোনয়ন তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য চলছে জোর আন্তর্জাতিক লবিং। বাংলাদেশ যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে এজন্য আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টির কাজ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন,
জাপান সহ বিভিন্ন দেশের নীতি নির্ধারক ও বুদ্ধিজীবি মহলে বাংলাদেশ সহ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনা কি ভূমিকা পালন করছেন ধরা হচ্ছে সে সবের বিবরণ।
অতি সমপ্রতি যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাধারণ সম্পাদক মীর্জা আজমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র সফর করে গেছেন।
এর আগে গত মার্চ মাসে একই উদ্দেশ্যে তারা বস্টন ও নিউইয়র্ক সফর করেন।
এই টীমে আরো রয়েছেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, অথনীতিবিদ আবুল বারাকাত ও সাংবাদিক বুরহান কবির। জনগনের ক্ষমতায়ন ও শেখ হাসিনার শান্তি দর্শন শিরোনামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন তা তুলে ধরা হচ্ছে বিশ্বের নীতি নির্ধারক ও আইন প্রনেতাদের কাছে।
গত ১৪ জুন যুবলীগ নেতৃবৃন্দ ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল হিলে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা সাবেক স্পীকার ও বর্তমানে কংগ্রেসে মাইনরিটি লীডার ন্যান্সি পেলোসীর সাথে সাক্ষাত করেন।
একই সময়ে তারা কংগ্রেস সদস্যা শিলা জ্যাকসন লী ও কংগ্রেসম্যান হেনসেন ক্লার্ক, ও ম্যরিল্যান্ড থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য ভ্যান হল্যানের সাথেও কথা বলেন।
সাক্ষাতকালে শেখ হাসিনার রাজনেতিক ইতিহাস ও শানি- প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়টি উপস'াপন করেন।
এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম শানি- চুক্তি, মৌলবাদ ও উগ্রবাদ বিরোধীতায় শেখ হাসিনার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উদাহরন হিসেবে তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে যুুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রন জানানোর অনুরোধ জানানো হলে ন্যান্সি পেলোসী বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন।
গত ১৫ জুন বুধবার এই প্রতিনিধি দল লন্ডনের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ত্যাগ করেছেন। লন্ডনের আইন প্রনেতা সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তারা বিশ্ব শানি- প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার দর্শনের বিষয়টি উপস'াপন করেছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে জাপান সফর করে সেখানেও একই বিষয় উপস'াপন করা হয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাবশালী অন্যান্য দেশেও শেখ হাসিনার শানি- দর্শনের বিষয়টি উপস'াপন করা হবে বলে জানা গেছে। এজন্য যুবলীগ নেতৃবৃন্দকে বিশেষ দেয়া হয়েছে বিশেষ মিশন।
যুবলীগ নেতৃবৃন্দ সাক্ষাত করেছেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের এমন একজন সদস্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, সুদুর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসে শেখ হাসিনার শানি- দর্শনকে তুলে ধরার কারণ নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। সঙ্গত কারণে আমি নিজেও কৌতুহলী ছিলাম এর বিষয়বস' নিয়ে। তবে সাক্ষাতের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে, নোবেল পুরস্কারে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করাই মুলত এই প্রয়াসের সার্বিক লক্ষ্য। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস সদস্যের যে কেউ প্রস-াব পাঠাতে পারেন।
নিউইয়র্কে বসবাসরত জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও নিউ নেশন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক ফাজলে রশীদ এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, শেখ হাসিনাকে কিভাবে নোবেল পুরস্কার পাওয়ানো যায় এটাই সবকিছুর মুল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের এটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম ইতোমধ্যেই বিষয়টি খোলাসা করে দিয়েছেন। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াতে প্রকাশ্যে তিনি বলেছেন, শানি-তে নোবেল দিলে সেটা শেখ হাসিনাকেই দেয়া উচিৎ ছিল। ড. ইউনুস ইস্যু নিয়ে কথা বলার সময় এটা বলেছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ সহ শানি-র পতাকাবাহী হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বে এক নতুন ইমেজ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছেন।
মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের আস-ানাকে ভেঙ্গে দিয়েছেন। এখন তাঁকে শানি-র দূত হিসেবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে সম্মান জানানো উচিৎ।
নোবেল কমিটি এই বিষয়টি বিবেচনা করবে আমি মনে করি। তিনি বলেন, যুবলীগ নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যেই নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে এর যথার্থতা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। এবিষয়ক কিছু বইপত্র তারা সবাইকে দিচ্ছেন। আমাকেও দেয়া হয়েছে। এব্যপারে আমাদের পক্ষ থেকে যেকোন উদ্যোগের প্রয়োজনন হলে তাতে কার্পন্য করা হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একটি সূত্রের মতে যাদের মাধ্যমে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা মোটেও যথার্থ হয়নি। সূত্রমতে, প্রকাশ্যে যুবলীগকে দিয়ে এই কাজ না করিয়ে এমন লোকদের নিয়োগ দেয়া উচিৎ ছিল যাদের গ্রহণযোগ্যতা ও ইমেজ ভীন্ন। কারণ একাজের জন্য দলীয় লোকের প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে অধ্যাপক গওহর রিজভী, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স'ায়ী প্রতিনিধি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারেন বলে তারা মন-ব্য করেন।
তাদের মতে, এধরনের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ড. নুরুন্নবী, ড. মোহসীন আলী, ড. সিদ্দিকুর রহমান ও অধাপক খালিদ হাসান কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারতেন।
তবে কূটনৈতিক সূত্র সব চাইতে বেশী কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে এক্ষেত্রে।
সূত্রমতে, ড. ইউনুস ইস্যুু নিয়ে সরকারের প্রকাশ্য অবস্থানের বিষয়টি যখন সবাই পর্যবেক্ষন করছে তখনই সরকার প্রধানের জন্য নোবেল পুরস্কারের লবিংয়ের বিষয়টি আন-র্জাতিক মহলে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
সূত্রমতে, একাজে জনমত গঠনের জন্য ৩টি বই বের করা হয়েছে। এর একটির ইংরেজী অত্যন্ত দুর্বল বলে মন্তাব্য করেন তারা।


http://www.amadersylhet.com/index.php?option=com_content&view=article&id=2318%3A2011-06-27-20-33-31&catid=68%3Abibid2news

রবিবার, ২৬ জুন, ২০১১

সোনিয়া, মনমোহন কী নিয়ে আসছেন বাংলাদেশের জন্য

বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতি কেমন চলছে­ এ প্রশ্নের জবাবে গত কিছু দিনের খবরের প্রতি লক্ষ করলে তা সহজেই বোঝা যাবে। গত ৬ জুন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব নিরুপমা রাও দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। ১৯ জুন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিজয় কুমার সিং বাংলাদেশ সফরে আসেন। তিনি চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি বিএমএ-তে পাসিং আউট প্যারেডে সালাম গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ভারতের ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী আগামী ২৫ জুলাই ঢাকায় আসবেন অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম এস কৃষ্ণ আসবেন তার আগে ৬ জুলাই। জুলাই মাসেই ঢাকা সফরে আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। যারা জুন মাসে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন এবং যারা জুলাই মাসে সফরে আসছেন, তারা সবাই ভারতের শীর্ষপর্যায়ের নীতিনির্ধারক ব্যক্তি। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে শেখ মুজিবের আমলে ইন্দিরা গান্ধীর সফরের পর এত ঘটা করে আর কখনো ভারতীয় নেতাদের বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের এই সফর রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর ও ভারতকে ট্রানজিট সুবিধাদি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দিল্লির শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা যে দিল্লি চুক্তি করে এসেছেন, এখন চলছে তার বাস্তবায়ন পালা এবং এই বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্যই এত সব আয়োজন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতেই দিল্লি চুক্তি যাতে সন্তোষজনকভাবে কার্যকর হয় সে প্রচেষ্টাই চলছে।

এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বের বৃহত্তর অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রবেশের জন্য যে পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছিলেন, তার মৃত্যুর পর জিয়াউর রহমানও বস্তুত একই পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে তার বিকাশ ঘটান। এরশাদও কম-বেশি সে পররাষ্ট্রনীতিই অনুসরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি ও স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এক ছিল না। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল মার্কিন-সোভিয়েত ঠাণ্ডালড়াইয়ের সময়, যে কারণে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন পেয়েছিল সুষ্ঠু সোভিয়েত ব্লকভুক্ত দেশগুলোর। অপর দিকে মার্কিন ব্লকভুক্ত দেশগুলো ও চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। প্রধানত মার্কিন ব্লকভুক্ত হওয়ায় মুসলিম আরব দেশগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি। শেখ মুজিব বাংলাদেশকে সোভিয়েত ব্লকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সেখান থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এ জন্য তিনি (মার্কিন) যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলোর স্বীকৃতির জন্য জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেও মুসলিম আরব দেশগুলো স্বীকৃতি দেয়া থেকে বিরত থাকে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ তখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলমান অধ্যুষিত দেশ। বাংলাদেশকেও ওআইসি সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং ওআইসির কয়েকজন নেতা ঢাকায় আসেন শেখ মুজিবকে ওই সম্মেলনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শেখ মুজিব এই সুযোগ গ্রহণ করে লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করেন।

এরপরই সৌদি আরব ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। স্বাভাবিক কারণেই ইন্দিরা গান্ধীর দিল্লি সরকার শেখ মুজিবের ওআইসি সম্মেলনে যোগদান সুনজরে দেখেনি। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে সন্দেহ ও তিক্ততার বীজ রোপিত হয় এ সময়ই। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের মনোভাব ও আচরণের কারণে শেখ মুজিবের আমলেই কিভাবে সম্পর্কের অবনতি ঘটে তার আরেকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের জন্য ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশের পার্লামেন্টে তা অনুমোদিত হয়। কিন্তু অনুমোদনের জন্য ভারত সরকার তা পার্লামেন্টে কোনো দিনই উথাপন করেনি। ৩৫ বছর পর আজো তা অননুমোদিত অবস্খায়ই রয়ে গেছে। ছিটমহলগুলোর ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে ১০ লাখ একর জমি আমাদের ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত হতো। এই বিরাট ভূখণ্ড হাতছাড়া হয়ে যাবে বলে দিল্লি চুক্তিটি পার্লামেন্টে অনুমোদন করায়নি। বেরুবাড়ি ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হলেও বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল যাতায়াতের জন্য তিন বিঘা করিডোর পায়নি। সমুদ্রসীমা চিহ্নিত করার উদ্যোগ শেখ মুজিবের আমলেই গ্রহণ করা হয়েছিল, কিন্তু ভারতের অপ্রতিবেশীসুলভ মনোভাবের কারণে সে উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায়।

এসব ঘটনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় কিভাবে স্বাধীনতার গোড়া থেকেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে আস্খার সঙ্কট সৃষ্টি হয়, যার জন্য ভারতের স্বার্থপর অনুদার নীতিই দায়ী। পরবর্তীকালে এই আস্খার সঙ্কট গভীর হয় অভিন্ন নদীগুলোর পানির হিস্যা ও সীমান্ত সংঘর্ষসহ বিভিন্ন ইস্যুতে। আস্খার সঙ্কট সৃষ্টির জন্য দায়ী এসব কারণের ফয়সালা ছাড়াই বর্তমান সরকার ভারতের সাথে শর্তহীনভাবে উষ্ণ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্খাপনের জন্য যে আপস করে তা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এই পররাষ্ট্রনীতির সূত্রপাত ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেছিলেন, তিনি ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এমন একপর্যায়ে নিয়ে যাবেন, যা আর পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। জেনারেল মইনের দিল্লি সফর সে পরিবর্তনের ভিত রচনায় সাহায্য করে। বর্তমান সরকারের ভাষায় বাংলাদেশ ট্রানজিটের দেশ, অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার জন্য। অন্য কথায়, বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের সাহায্য করার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল তাকে ভারতের করিডোর হিসেবে ব্যবহার করা। ভারতের অ্যাগ্রেসিভ ডিপ্লোম্যাসির কাছে আমাদের সরকারের আত্মসমর্পণের নীতি ভারতের সে উদ্দেশ্যকে পূরণ করেছে। এই পররাষ্ট্রনীতি চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছেও বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে।

ভারতীয় নেতা-নেত্রীদের সফরসূচি অনুসারে জুলাই মাসে ঢাকা কূটনৈতিক তৎপরতার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর জন্য উষ্ণ অভ্যর্থনার আয়োজন করা হবে, তবে তা কিভাবে করা হবে, এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। সোনিয়া গান্ধীর পরেই আসবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। শীর্ষপর্যায়ে আলোচনা হবে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। শেখ হাসিনা দিল্লি সফরের সময় যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে এসেছেন, বিশেষত ট্রানজিট সুবিধা বাস্তবায়নে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা পর্যালোচনাই হবে শীর্ষ বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয়। এ ছাড়া আলোচ্যসূচিতে ছিটমহল বিনিময়, সীমান্ত পরিস্খিতি, তিস্তা নদীর পানিবন্টন চুক্তিসহ আরো কিছু দ্বিপক্ষীয় বিষয় থাকবে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এখানে বিশেষভাবে যা লক্ষণীয় তা হচ্ছে, এসব দ্বিপক্ষীয় ইস্যুর সমাধান ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ন্যায্য প্রাপ্য, বাংলাদেশের কাছে ট্রানজিট বা করিডোর ভারতের প্রাপ্য নয়। হাসিনা-মনমোহন আলোচনার ফলে বাংলাদেশ যা-ই পাক না কেন, তা ট্রানজিটের বিনিময় হতে পারে না।

ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমণি চীন সফরে গেছেন। চীন সফরের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, কুনমিং-টেকনাফ সরাসরি সড়ক ও রেলযোগাযোগ স্খাপনে সহযোগিতা, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন প্রকল্প সহায়তা নিয়ে আলোচনা হবে। দীপুমণি চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট শি জিনজিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং জাইচি, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন। তার মূল উদ্দেশ্য হয়তো তা নয়। অতিমাত্রায় দিল্লিপ্রীতির ফলে পররাষ্ট্রনীতিতে যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে, কিছুটা সামাল দেয়ার জন্যই তিনি চীন সফরে গেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘটনায় এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার ও বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করায় সৌদি আরবের সাথে শীতল সম্পর্ক চলছে; অতিমাত্রায় ভারতপ্রীতির কারণে যদি চীন বন্ধুত্বের হাত সঙ্কুচিত করে, তাহলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ কি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে না? 

http://www.sonarbangladesh.com/articles/AmanullahKabir  

শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১১

বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর পরিকল্পিত লুন্ঠন !!!




ছবিঃ একই কামান দ্বিতীয় বারের মতো "উপহার" দিচ্ছে ভারতীয় বাহিনী

পাচ দিনের সফরে এসে গত কয়েকদিন ভারতীয় সেনাপ্রধান বাংলাদেশে চষে বেড়িয়েছেন। মিটিং করেছেন প্রধান মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে সব হাই প্রোফাইল নেতাদের সাথে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভারত-বান্ধব বাংলাদেশী মিডিয়া গুলোর ভাষায় জেনারেল ভিকেসিং (বিজয় কুমার সিংহ) ২৩ জুন বিকেলে ঢাকা ত্যাগের আগ পর্যন্ত ব্যস্ততম সময় কাটিয়েছেন।

যাই হোক, জেনারেল সিংহ তার বাংলাদেশ সফরে দুটি কাজ করেছেন।

একটি হচ্ছে, বাংলাদেশকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহত দুটি কামান উপহার/দান করে গেছে্ন। আর বাংলাদেশের এতো দিনের বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্কে ভাতৃত্বপুর্ণ পর্যায়ে উন্নিত করেছেন। তার এই "উপহার"






ছবিঃ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে কামান হস্তান্তর মহড়া

পত্রিকা পড়ে "হস্তান্তরিত" এই দুই কামানের ইতিহাস যা জানলাম, তা হলো...

দৈনিক আমাদের সময় লিখেছে,

উলেস্নখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে ১৯৭১ সালের ২২শে জুলাই ভারতের কোনাবনে গঠন করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম গোলন্দাজ ইউনিট ‘মুজিব ব্যাটারী’। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছয়টি ৩·৭ ইঞ্চি হাউইটজার নিয়ে গঠিত এই ইউনিটটি ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। জন্মের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই মুজিব ব্যাটারীর কামান গর্জে ওঠে এবং সাফল্যজনকভাবে রণাঙ্গনে শত্রুকে ধ্বংস করার কাজে নিয়োজিত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে এ ইউনিটটি কাইয়ুমপুর, কসবা, সালদানদী, আখাউড়া, নাজিরহাট ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে লক্ষ্যভেদী ফায়ারের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর বিজয়কে ত্বরান্বিত করে।
Click this link...

অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বিডিনিউজ২৪ ডট কম লিখেছে,

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে ১৯৭১ সালের ২২ জুলাই ভারতের কোনাবনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম গোলন্দাজ ইউনিট গঠন করা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যরে ৬টি কামান নিয়ে গঠিত এই ইউনিটটি ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

Click this link...

সোজা কথা, ভারত মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীকে এই দুটি কামান দান/উপহার দিয়েছিল। সো ফার সো গুড। এই দান বা উপহারের জন্য ভারত অবশ্যিই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯৭১ উপহার দেয়া, যা কিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম কামান, তা আবার ভারতীয় বাহিনীর হাতে গেল কি করে?

প্রশ্নটা করেছেন দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। একজন মেজর (অব) কামরুল হাসান ভুইয়া আরেকজন বংগবীর কাদের সিদ্দিকী।


ছবিঃ মেজর কামরুল হাসান ভুইয়া

দান করা কামান দুটি আবার কি করে ভারতের কাছে গেল, এপ্রসজ্ঞে মেজর কামরুল বলেন,

‘মুজিব ব্যাটারি’ নামে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত যে-দুটি কামান ভারত বাংলাদেশকে উপহার দিচ্ছে, সেই কামানগুলো ভারতের ৫৯ মাউন্টেন রেজিমেন্ট আর্টিলারির ছিল। ওই রেজিমেন্টের ৩ ব্যাটারির ১৮টি কামানের মধ্যে এক ব্যাটারির ৬টি কামান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সহায়তা হিসেবে দেয়। মাউন্টেন গান নামের এই কামানগুলো সহজে বহনযোগ্য এবং এগুলো দ্রুত খোলা ও জোড়া দেয়া যায়। পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধের জন্য এই কামান কার্যকর।

গতকাল আমাদের সময়কে এসব তথ্য জানান সেন্টার ফর বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ-এর চেয়ারম্যান ও প্রধান গবেষক মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া (অব·)। তিনি জানান, এই কামানই বাংলাদেশের প্রথম আর্টিলারি ইউনিট। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি এই কামান মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আসে। ৯ আগস্ট ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে এই কামান ব্যবহারের বিষয়ে চিঠি লেখেন।

মেজর কামরুল নিজেও ২ নম্বর সেক্টরের অধীন ৪র্থ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ওই সময় ৪র্থ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট কুমিলস্নার কাছাকাছি সালদা নদী এলাকায় প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিল। এই রেজিমেন্টের সদরদপ্তর ছিল ভারতীয় সীমান্তেôর ওপারে কোনাবনে। কামানগুলো পরে কোনাবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সালদা নদী এবং কসবা এলকায় এই কামান থেকে গোলাবর্ষণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করা হত। যে দুজন অফিসার এই কামান তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পান, তারা হলেন- ক্যাপ্টেন আব্দুল আজিজ পাশা ও সেকেন্ড লেফটেনেন্ট কাইয়ূম।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম এই কামান কীভাবে ভারতে গেল, সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। মেজর কামরুল এ প্রসঙ্গে বলেন, এটা মুজিব ব্যাটারির কামান হতে পারে, কিন্তু সেটা কীভাবে ভারতে গেল এটা বাংলাদেশ বা ভারত দুপক্ষের কেউ বলতে পারে না। যদি সত্যি-সত্যিই এটি মুজিব ব্যাটারির কামান হয়, তাহলে ভারতের বক্তব্য যৌক্তিকভাবে গ্রহণ করা যায়।

মুুজিব ব্যাটারির কামানগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না- এটা অস্বাভাবিক। সামরিক বাহিনীর কোনো অস্ত্র এভাবে হারিয়ে যেতে পারে না। বিশেষ করে কামানের মতো ভারি অস্ত্র। কিন্তু বাস্তôবতা হল, ৬টি কামানের একটি কামানও বাংলাদেশে নেই।

মেজর কামরুল আরো বলেন, যদি এই কামান ভারতে গিয়ে থাকে তাহলে কবে, কার নির্দেশে, কীভাবে গেল তার কোনো তথ্য বাংলাদেশ সরকার বা ভারত সরকারের কাছে নেই। ভারত দুটি কামান ফেরত দিলেও বাকি ৪টির খবর তারা জানেন না। ভারতীয় সেনাপ্রধান যে-দুটি কামান আজ (বৃহস্পতিবার) হস্তôান্তôর করবেন সেই কামান দুটি মুজিব ব্যাটারির হলে ভালো। যদি তা না হয়ে অনুরূপ দুটি কামান হয়, সেটাও আনন্দের; কেননা আমরা সেগুলো দেখিয়ে বলতে পারব, এইরকম কামানই মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। আর উপঢৌকন সবসময় আনন্দের।


বিস্তারিত এখানে, Click this link...

ধন্যবাদ মেজর কামরুলকে, আমাদের কিছু অজানা তথ্য জানানোর জন্য।

...বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম এই কামান কীভাবে ভারতে গেল, সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।........।মুুজিব ব্যাটারির কামানগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না- এটা অস্বাভাবিক। সামরিক বাহিনীর কোনো অস্ত্র এভাবে হারিয়ে যেতে পারে না। বিশেষ করে কামানের মতো ভারি অস্ত্র। কিন্তু বাস্তôবতা হল, ৬টি কামানের একটি কামানও বাংলাদেশে নেই।

কেউ জানেন না বলে মেজর কামরুল যেটা এড়িয়ে গেছেন সেটা জানার জন্য আমাদের অন্য দুই মুক্তিযুদ্ধার কাছে যেতে হবে। তাদের একজন কাদের সিদ্দিকী আরেকজন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মরহুম এম এ (মেজর) জলিল।




ভারতের উপহার দেয়া, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রথম কামান দুটি আবার ভারতে গেল কিভাবে?
এ প্রসজ্ঞে ২৩ জুন ২০১১ পলাশী ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় কাদের সিদ্দিকী বলেন,

ভারতীয় সেনাবাহনী ১৯৭১ সালে আমাদের সম্পদ লুট করেছে বলে যে অভিযোগ ছিল তা এত দিন বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু সেনাপ্রধানকে স্যালুট দেয়ার দিন থেকে এ অভিযোগ আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেছেন, মুজিব ব্যাটালিয়নের দু’টি কামান আমাদের ফেরত দেবেন। তার মানে আমাদের কামান তারা লুট করে নিয়েছিলেন। তা না হলে ফেরত দেবে কেন।

বিস্তারিত দেখুন এখানে, Click this link...




ভারতীয় বাহিনী সদ্যস্বাধীন হওয়া মুক্ত বাংলাদেশ থেকে কি পরিমান মালামাল, বিশেষ করে ক্যান্টমেন্টগুলো থেকে সামরিক মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে, তার সংক্ষিপ্ত বর্ননা পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা বইতে

বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর পরিকল্পিত লুন্ঠন শীর্ষক অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন,

যারা ১৬ই ডিসেম্বরকে বাঙালীর বিজয় দিবস এবং বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন সার্বভৌম বলে মনে করেন এবং এ কথাও বলেন যে, স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে ভারতীয় সেনাবাহিনী কোন সম্পদ লুটতরাজ করেনি, তারা যে বন্ধু ভারতের কোন দোষ ত্রুটিই অনুসন্ধান করতে রাজী নয় এ কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।

কিন্তু যারা দেশপ্রেম সমৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা, সত্যান্বেষী এবং মুক্তিপিপাসু তারা নিজেদের ভূখন্ডকে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই স্বাধীন করেছে বলে বিশ্বাস করে, তারা বাংলাদেশকে ভারতের বিজিত ভূখন্ড বলে কখনই মনে করে না। তারা মনে করে ভারতের সম্প্রসারণবাদী প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্বে সমগ্র মুক্তিযোদ্ধার ভয়ে ভীত হয়েই বাঙালীর স্বাধীনতা গৌরবকে জবর দখলের মধ্য দিয়ে নিজেদের হীন স্বার্থ উদ্ধার করেছে মাত্র। উপরিউক্ত দ্যান-ধারণায় পুষ্ট দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা ১৬ই ডিসেম্বরের পরে মিত্র বাহিনী হিসেবে পরিচিত ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্পদ, মালামাল লুন্ঠন করতে দেখেছে। সে লুন্ঠন ছিল পরিকল্পিত লুন্ঠন, সৈন্যদের স্বতঃস্ফূর্ত উল্লাসের বিহঃপ্রকাশ স্বরূপ নয়। সে লুন্ঠনের চেহারা ছিল বীভৎস বেপরোয়া। সে লুন্ঠন একটি সচেতন প্রতিক্রিয়ারই ধারাবাহিক কর্মতৎপরতা। মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের অধিপতি হিসেবে আমি সেই ‘মটিভেটেড’ লুন্ঠনের তীব্র বিরোধিতা করেছি- সক্রিয় প্রতিরোধও গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছি। লিখিতভাবেও এই লুন্ঠনের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন, কর্ণেল ওসমানী এবং ভারতীয় পূর্ব অঞ্চলের সর্বাধিনায়ক লেঃ জেনারেল অরোরার কাছে চিঠিও পাঠিয়েছি। তাজউদ্দীন সাহেবের পাবলিক রিলেশন অফিসার জনাব তারেকই আমার সেই চিঠি বহন করে কলকাতায় নিয়েছিলেন। ১৭ই ডিসেম্বর রাতেই সেই বিশেষ চিঠিখানা পাঠানো হয়েছিল। খুলনা শহরে লুটপাটের যে তান্ডব নৃত্য চলেছে তা তখন কে না দেখেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক সেই লুটপাটের খবর চারিদিক থেকে আসা শুরু করে। পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক পরিত্যাক্ত কয়েক হাজার সামরিক-বেসামরিক গাড়ী, অস্ত্র, গোলাবারুদসহ আরো অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ‘প্রাইভের কার’ পর্যন্ত রক্ষা পায়নি, তখনই কেবল আমি খুলনা শহরের প্রাইভেট গাড়িগুলো রিকুইজিশন করে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে হেফাযতে রাখার চেষ্টা করি। এর পূর্বে যেখানে যে গাড়ী পেয়েছে সেটাকেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে সীমান্তের ওপারে।

যশোর সেনানিবাসের প্রত্যেকটি অফিস এবং কোয়ার্টার তন্ন তন্ন করে লুট করেছে। বাথরুমের ‘মিরর’ এবং অন্যান্য ফিটিংসগুলো পর্যন্ত সেই লুটতরাজ থেকে রেহাই পায়নি। রেহাই পায়নি নিরীহ পথযাত্রীরা। কথিত মিত্র বাহিনীর এই ধরনের আচরণ জনগণকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল। বাংলাদেশের প্রবেশের সাথে সাথেই যাদের শ্রী এমন তারা যদি বাংলাদেশ ত্যাগ না করে বাংলাদেশের মাটিতেই অবস্থান করতে থাকে, তাহলে কি দশা হবে দেশ ও জাতির। একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ কোন ধরনের স্বাধীনতা অর্জন করলাম আমরা, এ ধরনের নানা প্রশ্ন দেখা দিল জনমনে। আমি জনগণ থেকে যেহেতু মোটেই বিচ্ছিন্ন ছিলাম না, সুতরাং ভারতীয় সেনাবাহিনীর আচরণে আমি বিক্ষুব্ধই হয়ে উঠিনি বরং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার পর্যায়ে চলে গেলাম। খুলনার নিউজপ্রিন্ট মিলের রেস্ট হাউজে অবস্থানরত আমার প্রতিপক্ষ ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধিনায়ক মেজর জেনারেল দানবীর সিংকে আমি সতর্ক করে দিয়ে বললাম, ‘দেখা মাত্র গুলির হুকুম দিয়েছি আমি। ভারতীয় সেনাবাহিনীকে লুটতরাজ করা হতে বিরত রাখুন।’

জেনারেল দানবীর আমার হুঁশিয়ারবাণী খুবই হালকাভাবে গ্রহণ করে এমন ভাবখানা দেখালেন যেন আমি তারই অধিনস্থ একজন প্রজামাত্র। তার পরের ইতিহাস খুব দ্রুত ঘটে গেছে। খুলনার বিভিন্ন যায়গায়, যশোর বর্ডারে, সাতক্ষীরা-ভোমরা বর্ডারে ভারতীয় লুটেরা বাহিনীর সঙ্গে বেশ কিছু বাদানুবাদ এবং সংঘর্ষও হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর এ ধরণের আচরণ সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়ার জন্য আমি ২১ (?) ডিসেম্বর তারিখ রাত্রে স্টীমার যোগে বরিশাল যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি।

খুলনা পরিত্যাগ করতে হলে নাকি ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডের হুকুম নিতে হবে-একথা শোনার পরে ভারতের আসল মতলবখানা আমার কাছে পরিস্কার হয়ে উঠল। আমি সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ভারতীয় নির্দেশ মেনে চলতে মোটেও বাধ্য ছিলনা না। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যুহ ভেঙ্গে দেশ মুক্ত করলাম ভারতীয় সেনাবাহিনীর নির্দেশ মেনে চলার জন্য নয়। একটি মুক্তিপিপাসু জাতির ভাবাবেগ অনুধাকন করতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কেবল চরমভাবেই ব্যর্থ হয়নি, বরং অনুধাবন করার সামান্যতম ধৈর্যও প্রদর্শন করেনি তারা। অন্য কথায় তারা কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেনি। সংগ্রামী বাংলাদেশ নয়, ভারত যেন একটা মগের মুল্লুক জয় করেছে বলে মনে হলো আমার কাছে। সে যাই হোক, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বাধা-নিষেধের উপেক্ষা করেই আমি দলবলসহ ‘ইনভেসটিগেশন’ জাহাজটিতে চড়ে ২০শে ডিসেম্বরেই বরিশাল অভিমুখে রওয়ানা হই। বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী ইত্যাদি জায়গাগুলোতে জনসভার আয়োজন করা হয় এবং জনগণকে ভারতীয় বাহিনীর আচরণ সম্পর্কে সচেতন করে দিই। আওয়ামী ছাত্রলীগের যৌথ আয়োজনেই সেই জনসভাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় সেনা বাহিনীর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধাদের নিরস্ত্র করবে এবং সকল অস্ত্র জমা করে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যাওয়া হবে। ভারতীয় বাহিনীর এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেও আমি জনসভাগুলোতে সোচ্চার হয়ে উঠলাম। আমার পরিস্কার নির্দেশ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দী স্বাধীন বাংলার স্থপতি জনগণের প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত না করা পর্যন্ত বাঙালী জনগণের মুক্তিযুদ্ধ চলতে থাকবে। শেখ মুজিবের হস্তেই কেবল মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে দেবে।

আমার এই মহান আহ্বান এবং নির্দেশ মুক্তিযোদ্ধা এবং জনগণের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনার জন্ম দেয়। বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় গোয়েন্দাবাহিনী এবং কট্টর ভারত সমর্থগোষ্ঠী আমার চেতনা এবং অনুভূতির তাৎপর্য সঠিকভাবে বুঝে উঠতে সক্ষম তো হয়নি বরং ভুল বুঝেছে। এখানে একটা বিষয় সকলেরই পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন এবং তা হচ্ছে স্বাধীনতার সেই উষালগ্নে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের সম্পদ রক্ষা করার যে আগ্রহ এবং বাসনা আমরা প্রদর্শন করেছি তা ছিল আমাদের জাতীয় সম্পদ রক্ষা করারই স্বার্থে কেবল, ভারত বিরোধী হয়ে উঠার জন্য নয়। জাতীয় সম্পদ রক্ষার চেষ্টা কেবল নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমেরই লক্ষ, কারো বিরুদ্ধে শত্রুতা সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র মোটেও নয়। বন্ধু ভারত এখানে হিসেবে ভুল করেছে আর তাই দেশপ্রেমের পুরস্কার হিসেবে আমাকে যশোর থেকে ‘এমবুশ’ করে অর্থাৎ গোপনে ওৎ পেতে থেকে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী সশস্ত্র উদ্যোগে গ্রেফতার করে।

আমারই সাধের স্বাধীন বাংলায় আমিই হলাম প্রথম রাজবন্দী। ২১শে ডিসেম্বর বেলা ১০টা সাড়ে দশটায় আক্রমণকারী বাহিনীর হাতে বন্দী হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আসল রূপের প্রথম দৃশ্য দেখলাম আমি। ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর মদদে বাংলাদেশ স্বাধীন করার অর্থ এবং তাৎপর্য বুঝে উঠতে আমার তখন আর এক মিনিটও বিলম্ব হয়নি।

১৯৭১ সনের সেই ৩১শে ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটের কথা আমি কোন দিনই ভুলতে পারব না। যশোর সেনা ছাউনির অফিসার কোয়ার্টারের একটি নির্জন বাড়ীতে আমাকে সকাল ১১টায় বন্দী করা হয়। বাড়ী না যেন হানাবাড়ী। ঘুটঘুটে অন্ধকার, আশে-পাশে বেশ কিছু নর-কংকাল পড়ে আছে। ঘরের ভিতর মানুষের রক্তের দাগ। কোন ধর্ষিতা বোনের এলোমেলো ছেঁড়া চুল। বাইরে কাক, শকুন, শেয়াল একযোগে ব্যস্ত। ভেতরে মশারা কামান দাগিয়ে আছে। বাথরুমে পানি নেই। ডিসেম্বরের ভিজে শীত। বাইরে সেন্ট্রির বুটের কটমট আওয়াজ। সারাদিন গেল কোন খাওয়া বা খাবার পানি পর্যন্ত এলো না। ৫ রুম বিশিষ্ট বাড়ীটির রুমে রুমে যেন কান্না আর হাহাকার। সন্ধ্যা হতেই প্যাটার গোঙ্গানি শুরু হয়। সহযোগী ভুতুকও পেছনে পড়ে নেই। বাড়ীটার একটা রুমেও লাইট নেই। একটা খাটের উপর একটা আধছেঁড়া কম্বল এবং তখন সেটাই আমার আপন একমাত্র আশ্রয়স্থল। কোনমতে কম্বলটা জড়িয়ে বসে আছি। রাত ১২টা ১ মিনিটে যশোর সেনাছাউনি নতুন বছরের উজ্জীবনী গীতিতে মুখর হয়ে উঠল। নারী-পুরুষের যৌথ কন্ঠের মন মাতানো সংগীত নাচ, হাত হালি, ঘুঙুরের ঝনঝনানি, উল্লাস, উন্মাদনা সবই ভেসে আসছিল কর্ণকুহরে। আমার মাটিতে প্রথম নববর্ষেই আমি অনুপস্থিত। এ কথা ভাবতেই আমি কানে আর কিছুই শুনতে পেলাম না। শুনলাম কেবল একটা ব্যাঙ্গাক্মক অট্টহাসি। -’রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতা আনলে তোমরা” যার অর্থ দাঁড়ায় কতকটা এরকম।

রাতের ঘুটঘুটে সেই অন্ধকারে আমি সেদিন কম্বল জড়িয়েও ঘেমে উঠেছিলাম, শিহরিয়ে উঠেছিলাম পুনঃ পুনঃ। স্বাধীনতার সতের বছর পরেও আমি নিশ্চিত হতে পারছি না। অন্ধকারে আজো আমি একইভাবে শিহরে উঠি আর যেন শুনতে পাই- “রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতা আনলে তোমরা।”


বিস্তারিত এখানে,
Click this link...

উপহার দেয়া, আবার সেই উপহার চুরি করে নিয়ে যাওয়া, আবার সেই লুন্ঠিত উপহার
ঢাকডোল পিটিয়ে ফেরত দেয়া কোন ধরনের মানসিকতা? আর তাতে কি বন্ধুত্ব বাড়ে?

মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১১

ফেসবুক অ্যাকাউন্টে হ্যাকিং হবে না



আপনার ফেসবুকের ই-মেইল ঠিকানা, পাসওয়ার্ড যদি সবাই জেনে যায়, তবু কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে না। এর জন্য প্রথমে সামাজিক যোগাযোগর ওয়েবসাইট ফেসবুকে ঢুকে (লগ-ইন) ডান পাশের Account থেকে Account Settings-এ যেতে হবে। এখন নিচে Account Security-এর ডান পাশের change-এ ক্লিক করুন। এখন Login Approvals-এর নিচে Require me to enter a security code sent to my phone বক্সে টিক চিহ্ন দিন। টিক চিহ্ন দেওয়ার সময় নতুন একটি বার্তা এলে Set Up Now-এ ক্লিক করুন। এখন Phone number: বক্সে আপনার মোবাইল নম্বর লিখে Continue-এ ক্লিক করুন। আপনার মোবাইল ফোনে একটি সাংকেতিক (কোড) নম্বর আসবে। নম্বরটি কোড বক্সে লিখে Submit Code বাটনে ক্লিক করে Close-এ ক্লিক করুন। (Login Notifications-এর নিচে Send me an email এবং Send me a text message বক্সেও টিক চিহ্ন দিয়ে রাখতে পারেন।) এখন Save-এ ক্লিক করে বেরিয়ে আসুন। এখন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বেরিয়ে (লগ-আউট) আবার ফেসবুকে লগ-ইন করুন। দেখবেন Name New Computer নামে একটি পেইজ এসেছে। সেখানে Computer name বক্সে কোনো নাম লিখে Add to your list of recognized devices বক্সে টিক চিহ্ন দিয়ে Continueতে ক্লিক করুন।

এখন থেকে প্রতিবার আপনার কম্পিউটার ছাড়া অন্য কারও কম্পিউটার থেকে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুকতে চাইলে আপনার মোবাইলে একটি কোড নম্বর আসবে এবং সেই কোড নম্বরটি কোড বক্সে লিখে Continue-এ ক্লিক করলেই আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা যাবে। কাজেই আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড সবাই জানলেও কেউ আপনার ফেসবুকে লগইন করতে পারবে না।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, মোবাইল নম্বর যদি হারিয়ে যায় বা ছিনতাই হয়ে যায়, তাহলে? সে ক্ষেত্রে আপনি অন্য কারও কম্পিউটার থেকে লগইন করতে পারবেন না। আপনার নিজের কম্পিউটার থেকে লগইন করতে পারবেন এবং সেটিংসে গিয়ে মোবাইল নম্বরও পরিবর্তন করতে পারবেন।


রবিবার, ১৯ জুন, ২০১১

কাকে খুশি করার জন্য তামাবিল স্থল বন্দরের ৩ একর ভূমি ভারতকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে ???

তকাল শনিবার সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার তামাবিল সীমান্তে কয়লা ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনগণের বিক্ষোভের মুখে আবারও স্থগিত হলো তামাবিল সীমান্তে জয়েন্ট বাউন্ডারী ওয়ার্কিং গ্রুপ-এর জরিপ কাজ। ৩ একর ভূমি ছেড়ে দেয়া বা পিলার প্রতিস্থাপনের কিছুই জানে না যেমন বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিপি, তেমনিভাবে সীমান্তবাসীও এর খবর জানে না। মুখ খুলতে চান না জরিপ অধিদফতরের কর্মকর্তারাও। এ নিয়ে তামাবিল কয়লা ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে গতকালের সীমান্ত জরিপ স্থগিত করতে বাধ্য হলেন কর্তৃপক্ষ। তবে যে কোন সময়ে শুরু হয়ে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ জরিপ কাজ চলবে বলে জানা যায়। গত ২ ও ৩ জুন সচিব ও হাইকমিশনার পর্যায়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত আজো জানেনি গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার জনগণ। গতকাল জরিপ কর্মকর্তাদের কাছে চির অবহেলিত, জৈন্তাপুর উপজেলার জনগণ জানতে চায়, কিসের বিনিময়ে, কাকে খুশি করার জন্য তামাবিল স্থল বন্দরের ৩ একর ভূমি ভারতকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। কোন সদুত্তোর না পেয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন জনগণ। তারা দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানান, প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও ১ ইঞ্চি জমিও ভারতের হাতে তুলে দেব না। বিক্ষোভকারীদের শান্ত্বনা দিতে ছুটে আসেন সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমদ চৌধুরীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে কয়লা ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান জানান, তামাবিল সীমান্তে কোন প্রকার অপদখলীয় ভূমি নাই। তবে কেন ভূমি ভারতকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বাংলাদেশ।
পাদুয়া সীমান্তে ১
৭০ থেকে ১২৭১-এর ৭এস নং পিলার পর্যন্ত তিনটি খুঁটি বসিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে বাংলাদেশের ভূ-খন্ড ভারতকে দেওয়ার পর আজ আবারও সিলেট'র বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্থল বন্দর তামাবিল সীমান্ত এলাকার ১২৭৫ নং পিলারের ১এস থেকে ৭এস পিলার পর্যন্ত অতি মূল্যবান বাংলাদেশের ৩ একর ভূমি ছেড়ে দিতে পারে বাংলাদেশী জরিপ টিম। এ নিয়ে জরিপ টিমের সাথে আলাপকালে তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে গতকাল সকাল ১০ টায় ৩ একর ভূমি ভারতকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করেন।
বিজিপি ৫ ব্যাটলিয়নের সিও লেঃ কর্ণেল মোঃ শফিউল আজম জানান, উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে উভয় দেশের জরিপ দল কাজ করছে। ভূমি ছেড়ে দেয়া বা পিলার স্থাপন বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। পাদুয়া সীমান্তে বাঁশের খুঁটি বসানোর ব্যাপারে তিনি জানান, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে। জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক ইকবাল হোসেন ফোনে জানান, সীমান্ত সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। বিষয়টি ঝুলন্ত না রেখে সকল মহলের গ্রহণযোগ্য সমাধান হউক এটা তিনি প্রত্যাশা করেন। তবে তিনি বলেন, উভয় দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যা সিদ্ধান্ত হবে তার বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকবে না। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে অদ্যাবধি সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় দু'টি জরিপ টিম দীর্ঘদিন থেকে কাজ করলেও এর কোন সুফল দেখতে পায়নি সীমান্তের জনগণ। জরিপ টিমের সহকারী পরিচালক দবির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান এব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবো না। ৪৪ বছর পর আবার কেন সিলেট সীমান্তে জরিপ কাজ করে পিলার স্থাপন করা হচ্ছে কার স্বার্থে যা জানতে চায় সীমান্তবর্তী এলাকার জনগণ।
গত ২০০২ সালে সীমান্তে উভয় দেশে মাঠ পর্যায়ে যে জরিপ কাজ হয়েছে ১০টি স্থানের জমিগুলি ও বিভিন্ন ব্যক্তি ও বাংলাদেশের সরকারের নামে রেকর্ড হয়। তখন ভারত কোন প্রতিবাদ করেনি। উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল তামাবিল সীমান্তে ১২৭৫ নং পিলার এর ১এস থেকে ৭এস নং পিলার পর্যন্ত প্রায় ৩ একর দেশের সর্ববৃহৎ দ্বিতীয় স্থলবন্দরের অতি মূল্যবান ভূমি ভারতকে ছেড়ে দিতে পারে বাংলাদেশ সরকার। আর ছেড়ে দিলেই গর্জে উঠবে সীমান্তবর্তী উপজেলা জনগণসহ সিলেটবাসী। আর এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিলেন গতকালের বিক্ষোভকারীরা।

@@@গণপ্রতিরোধে ভারতকে ভূমি ছাড় দেয়া স্থগিত@@@
মো. দেলোয়ার হোসেন জৈন্তাপুর (সিলেট)
গণপ্রতিরোধের মুখে সিলেটের তামাবিল সীমান্তে বাংলাদেশের জমি ভারতকে ছেড়ে দেয়ার উদ্যোগ স্থগিত করেছে সরকার। লোকদেখানো ভারত-বাংলাদেশ যৌথ জরিপের মাধ্যমে তামাবিল স্থলবন্দর সংলগ্ন তিন একর জমি ভারতের হাতে তুলে দেয়ার খবর পেয়ে স্থানীয় জনগণ, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়। স্থানীয় জনগণ, সীমান্তরক্ষী, এমনকি জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের মতামত উপেক্ষা করে উপরের নির্দেশে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের কিছু অংশ ভারতের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে—এ খবর শুনে গতকাল সকাল থেকেই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এক পর্যায়ে এই বিক্ষোভে এলাকার সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিমসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরাও শরিক হন। এলাকাবাসীর চাপের মুখে এক পর্যায়ে জরিপ কাজ স্থগিত করা হয়। এ নিয়ে সীমান্ত এলাকায় এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আগে জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর ও কেন্দ্রিবিলের প্রায় ৫৫ একর জমি ভারতের হাতে তুলে দেয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে প্রায় এক হাজার একর জমি যৌথ জরিপসহ নানা অজুহাতে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন থেকে ভারত চাপ দিয়ে আসছে। অতীতের সরকারগুলো কখনও এগুলো আমলে না নিলেও বর্তমান সরকারের আমলে ইতোমধ্যে জৈন্তাপুরের পদুয়ায় সাড়ে তিনশ’ একর জমি ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা সীমান্তে ম্যাপ পাল্টে প্রায় ৫০০ বিঘা জমি ভারত তার দখলে নিয়েছে বলে গত ডিসেম্বরে জাতীয় দৈনিকে খবর বেরিয়েছে। এর আগে গত অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১২টি এলাকায় জিরো পয়েন্টের ৫০ গজের মধ্যে ভারতকে কাঁটাতারের
বেড়া নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী জিরো পয়েন্টের দেড়শ’ গজের মধ্যে কোনো দেশেরই স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। এভাবে বর্তমান সরকারের আমলে নানা অজুহাতে বাংলাদেশের বহু ভূখণ্ড ভারতের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জকিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ভারত বাংলাদেশের নিজস্ব ভূখণ্ডেও স্থাপনায় বাধা দিচ্ছে।
সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় সীমান্ত এলাকা নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবত্ বিরোধ চলে আসছিল। সীমান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দিল্লি ও ঢাকায় এবং সিলেট ও ডাউকিতে একাধিকবার উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হয়। জরিপ টিম সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিলেট সীমান্তের অপদখলীয় ভূমি চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই আলোকে গত ডিসেম্বর থেকে সীমান্তে উভয় দেশের জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপ সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। ভারতের চাপের মুখে ও অবৈধ দাবির প্রেক্ষিতে বহুবার জরিপ কাজ স্থগিত হয়ে যায়। এ নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ উচ্চ পর্যায়ে একাধিকবার বৈঠক হলেও কোনো সফলতা আসেনি। গত ২ ও ৩ জুন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার সঞ্জয় ভাট্টাচার্য ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক) ড. কামালের নেতৃত্বে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে ডাউকি ও তামাবিলে একাধিক বৈঠকের পর সিলেটের সীমান্ত এলাকার ১০টি স্থান চিহ্নিত করা হয়। এ থেকে ৪টি স্থান পাদুয়া, সোনারহাটের লিংকহাট, তামাবিল, নলজুরী এলাকার কিছু স্থান ভারতকে ছেড়ে দেয়ার গোপন সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ ও ৫ জুন পাদুয়া সীমান্তের ১২৭০নং মেইন পিলার থেকে ১২৭১-এর ৭এস পিলার পর্যন্ত বিএসএফ পোস্ট থেকে ৫০ মিটার ভূমি ভারতকে ছেড়ে দেয়ার লক্ষ্যে ৩টি স্থানে প্রায় ৩৫০ একর ভূমি বাঁশের খুঁটি বসিয়ে ভারতকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। তাতে ভারতীয় বিএসএফ ও নাগরিকরা সন্তুষ্ট না হয়ে বাংলাদেশের পিয়াইন নদী পর্যন্ত প্রায় হাজার একর ভূমি দাবি করায় জরিপ কাজ স্থগিত হয়ে যায়।
উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে গতকাল সকাল ১১টায় তামাবিল জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন ১২৭৫নং পিলারের ১ এস থেকে ৭ এস পর্যন্ত প্রায় ৩ একর ভূমি ভারতকে বুঝিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে উভয় দেশের যৌথ সার্ভে দল সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সহকারী পরিচালক জরিপ মো. দবির উদ্দিন এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সহকারী পরিচালক জরিপ এসানপ্লাইসহ উভয় দেশের ১৫/২০ জন সদস্য।
উভয় দেশের প্রতিনিধিরা জরিপ কাজ শুরু করলে স্থানীয় সীমান্তবাসী, কয়লা ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের গণপ্রতিরোধের মুখে জরিপ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে ভারতকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করে। সংবাদ পেয়ে সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমদ চৌধুরী ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসময় সাবেক এমপি বলেন, দেশ বিভক্তির পর ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণ করা হয়, ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। ২০০২ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ জরিপ টিমের উদ্যোগে সীমান্ত জরিপ কাজ হয়। সীমান্তের ভূমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়। তখন ভারত কোনো প্রতিবাদ করেনি। দীর্ঘদিন পর ভারতীয় আগ্রাসী তত্পরতায় মনে হচ্ছে, এটা বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, গত বছর তামাবিল স্থলবন্দর থেকে সরকার ৫০ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার ৪২২ টাকা রাজস্ব আয় করে। এই স্থলবন্দরের ৩ একর ভূমি ভারতকে সরকার কিসের বিনিময়ে দিতে চায়? দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সীমান্তবাসীর সঙ্গে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও এই আগ্রাসী তত্পরতা প্রতিহত করব।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে, বর্তমানে সীমান্তবাসীর বাধারমুখে জরিপ কাজ স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জরিপ টিমের সহকারী পরিচালক দাবির উদ্দিন বলেন, উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সীমান্তের অপদখলীয় ভূমি ভারতকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের লক্ষ্যে আমরা জরিপ কাজ করছি। তামাবিল এলাকায় অপদখলীয় ভূমি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন প্রকার অপদখলীয় ভূমি নাই বলে এলাকাবাসীকে জানান।
কয়লা ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন, সারওয়ার হোসেন সেদু, মনিরুজ্জামান মিন্টু, কয়লা শ্রমিক সভাপতি বাচ্চু মিয়া, সেক্রেটারি লিটন মিয়াসহ সীমান্তবাসী প্রতিবাদ সভায় বলেন, সরকার এই স্থলবন্দর থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। বর্তমানে তামাবিল স্থলবন্দরে যে ভূমি রয়েছে তা ব্যবসায়ীদের সংকুলান হচ্ছে না। কিসের স্বার্থে গোপন চুক্তিতে সরকার ভারতকে তামাবিল স্থলবন্দরের ভূমি ছেড়ে দেয়ার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আমরা জীবন দিয়ে হলেও প্রতিহত করব।
এর আগে বিজিবি ৫ ব্যাটালিয়নের সিও লে. কর্নেল মো. শফিউল আলম জানান, উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে উভয় দেশের জরিপ দল কাজ করছে। জমি ছেড়ে দেয়া বা পিলার স্থাপনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। পাদুয়া সীমান্তে বাঁশের খুঁটি বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ প্রক্রিয়ায় কাজ করা হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে।
এ বিষয়ে জরিপ অধিদফতরের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সীমান্ত সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। বিষয়টি ঝুলন্ত না রেখে সব মহলের গ্রহণযোগ্য সমাধান হোক—এটিই প্রত্যাশা করি। যাতে উভয় রাষ্ট্রের সীমান্তবাসী শান্তিতে বসবাস করতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৬৭ সালে সীমান্ত নির্ধারণ করা হয়। এখন আর সীমান্ত নির্ধারণের প্রশ্নই ওঠে না। তবে উভয় দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত যা হবে, এ বিষয়ের ওপর আমার বলার কিছু নেই। দুটি রাষ্ট্রের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই বলা যাবে না।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় দুটি জরিপ টিমকে প্রায় সময় সীমান্তে জরিপ কাজ করতে দেখা যায়। তবে এতে কোনো সফলতা আসেনি। স্থানীয় জরিপ টিমের টিম লিডার সহকারী পরিচালক (জরিপ) মো. দবির উদ্দিন বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারব না। তবে যা করছি উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই করছি। আমাদের কাজকর্ম দেখে বুঝে নিন আমরা কী করছি।
১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ যৌথ জরিপের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়। ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্টে (এলবিএ) উল্লেখ আছে—চুক্তি স্বাক্ষরের ৬ মাসের মধ্যে অপদখলীয় ভূমি কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ ছাড়াই হস্তান্তর করতে হবে। বাংলাদেশ তা মানলেও ভারতীয়রা এখনও তা মানেনি। ফলে প্রতিনিয়ত সমস্যা লেগেই আছে।
২০০২ সালে সীমান্তে উভয় দেশের মাঠ পর্যায়ে যে জরিপ হয়েছে, তাতে ১০টি স্থানের জমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও বাংলাদেশ সরকারের নামে রেকর্ড হয়। তখন ভারত কোনো প্রতিবাদ করেনি।
জমি ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে সিলেট কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি এমদাদ হোসেন জানান, আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে আকুল আবেদন, কোনো অপশক্তি যেন আমাদের এক ইঞ্চি ভূমিও নিতে না পারে। তামাবিল স্থলবন্দর থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। এ স্থলবন্দরের কিছু জায়গা ভারতকে ছেড়ে দিলে সীমান্তের ব্যাপক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাবে, কয়লা ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবেন, হাজার হাজার পাথর, বালু ও কয়লা শ্রমিক বেকার হওয়াসহ সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা বর্তমানে শান্তিতে উভয় দেশ ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছি। হঠাত্ করে জমি দেয়ার সিদ্ধান্ত কোনো মহলই মেনে নিতে পারবে না। তামাবিল স্থলবন্দর রক্ষার্থে প্রয়োজনে সীমান্তবাসীকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
আগামী ২০ জুন গোয়াইনঘাট উপজেলার সোনার হাটের লিংকহাট সীমান্ত এলাকার বেশ কিছু ভূমি ভারতকে ছেড়ে দিতে পারে বাংলাদেশ। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ জরিপ কাজ চলবে বলে জানা যায়।
১২ পয়েন্টে বাংলাদেশের ভূখণ্ড দখলে নিয়ে বেড়া : এর আগে গত বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে সীমান্তের ৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অনুমতি বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নেয় ভারত। প্রথমে বিডিআর এ কাজে বাধা দিলেও উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে তারা কেবল সরেই আসেনি, মাপঝোক করে স্থাপনা তৈরির জন্য বিএসএফকে জায়গাও বুঝিয়ে দিয়ে এসেছে। সীমান্তের ৪৬ পয়েন্টে বাংলাদেশের ভূমিতে বেড়া নির্মাণের চেষ্টা দীর্ঘদিন থেকে ভারত করে আসছিল। কিন্তু সফল হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত বছর জানুয়ারিতে ভারত সফর ও ৫০ দফা সমঝোতা স্মারকের পরই সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে আবারও সক্রিয় হয় ভারত। এরই ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কিং টিম সরেজমিনে ভারতের দাবিকৃত জায়গাগুলো পরিদর্শন করে।। কিমিটি ৬টি শর্ত সাপেক্ষে সীমান্তের ১২২টি পয়েন্টে বাংলাদশের জমিতে বেড়া নির্মাণ করতে দেয়ার নীতিগম সিদ্ধান্ত দেয়। শর্তগুলোর মধ্যে ছিল তিনবিঘা করিডোর ইস্যু নিষ্পত্তি করা, ৩২টি ফেনসিডিল কারখানা সীমান্ত থেকে সরিয়ে নেয়া, ছিটমহল সমস্যার স্থায়ী সমাধান, পঞ্চগড় ও বাংলাবন্ধায় পর্যটন সুবিধা দেয়া এবং অপদখলীয় ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধান ইত্যাদি। কিন্তু এসব ইস্যুর সমাধান ছাড়াই গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে আখাউড়াসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ১২টি স্থানে সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে মাত্র ৫০ গজের মধ্যে ভারত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে। এতে করে এসব স্থানে কার্যত বাংলাদেশের একশ’ গজ ভূমির ওপর অধিকার নষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১১

সংবাদপত্রের কালো দিবস সেই ১৬ জুন আজ !!!

আজ ১৬ জুন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের সেই কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে তত্কালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাকশালের দর্শন অনুযায়ী অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দুটি মাত্র সংবাদপত্রের (দৈনিক বাংলা ও বাংলাদেশ অবজারভার) ডিক্লারেশন বহাল রেখে সব পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করেন। পরে ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ টাইমসকে নতুনভাবে ডিক্লারেশন দিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট চারটি পত্রিকার প্রকাশনা সাময়িকভাবে অব্যাহত রাখেন। এর আগে তিনি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল গঠন করেন এবং এ ব্যবস্থাকে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে উল্লেখ করেন। এই বিপ্লব সফল করতেই তিনি চারটি দৈনিক পত্রিকা রেখে সব দৈনিক পত্রিকা বন্ধ করে দেন। ফলে কয়েক হাজার সাংবাদিক ও সংবাদপত্রকর্মী বেকার হয়ে পড়েন।
অন্যদিকে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের এই বিপ্লবী হস্তক্ষেপে রুদ্ধ হয়ে যায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, গোষ্ঠীর স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা। তখন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরকারের এই নির্যাতনমূলক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করার সাহস কারও হয়নি। তবে পরের বছর থেকে সাংবাদিক সমাজ এই দিনটিকে সংবাদপত্রের কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
এদিকে কালের আবর্তে এবার এমন সময়ে দিনটি আমাদের মাঝে এসেছে যখন সেই আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতাসীন। বর্তমান অবস্থায় তারা সেই সময়কার একদলীয় বাকশালী নীতিমালা গ্রহণ না করলেও কার্যত দেশে নবরূপে বিরাজ করছে সেই বাকশালী ব্যবস্থা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নানা কৌশলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করছে এবং সাংবাদিকদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেসরকারি টিভি চ্যানেল ওয়ান এবং পরীক্ষামূলকভাবে সম্প্রচাররত যমুনা টিভি বন্ধ করে দিয়েছে। আর সত্য প্রকাশের অপরাধে গত বছরের ১ জুন এই সরকার বাকশালী কায়দায় দৈনিক আমার দেশ বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে বর্বরোচিত নির্যাতন চালায়। এই ঘটনা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর আইনি লড়াইয়ে বিজয়ী হয়ে দৈনিক আমার দেশ পুনঃপ্রকাশিত হয়। অন্যদিকে প্রায় ১০ মাস কারাভোগের পর মুক্ত হন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১১

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ৩০ লাখ থেকে সরে গেল সরকার

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা প্রসঙ্গে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন বলেছে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারি লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ‘লক্ষ লক্ষ’ (মিলিয়নস) উল্লেখ করেছিলেন। তিনি ত্রিশ লাখ বলেননি।’
লন্ডনের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান পত্রিকায় এবারে নতুন করে এ বিতর্কের সূত্রপাত করেন সাংবাদিক আয়ান জ্যাক। গার্ডিয়ান পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক আয়ান জ্যাক অক্সফোর্ড একাডেমিক শর্মিলা বোসের বই ‘ডেড রেকনিং: মেময়ার্স অব দ্য বাংলাদেশ ওয়ার’ সূত্রে উল্লেখ করেন যে, একাত্তরের যুদ্ধকালে সকল পক্ষে নিহতের সংখ্যা ৫০,০০০ থেকে ১ লাখের মধ্যে হবে। আয়ান বলেন, শর্মিলার বই অনেক প্রতিবেদনের সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে। যেমন একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আট হাজার হিন্দু হত্যার কথা বলা হলেও সেখানে সম্ভবত শুধুই ১৬ জনের মৃত্যু ঘটে। গত ২১শে মে গার্ডিয়ানে প্রকাশিত নিবন্ধের শুরুতেই আয়ান উল্লেখ করেন, ‘অজ্ঞতা এমন একটি বিষয় যার সঙ্গে সহজেই বসবাস করা সম্ভব। আর সম্ভবত সে কারণেই এটা একটা মামুলি ব্যাপার।’
৩০ বছরের বেশি সময়ের আগে আয়ান তার বাংলাদেশ সফরের স্মৃতিচারণ করেন। খুলনায় তিনি তার এক জন্মদিনে একটি চাইনিজ রেস্তরাঁয় খাওয়ার তথ্যও দেন। ‘আমার সঙ্গে একজন আলোকচিত্রী ছিলেন। সে সময় অনেকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। কিন্তু স্মরণ করতে পারি না যে, কেউ মাত্র আট বছর আগের গণহত্যা সম্পর্কে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছিল।’ এরপর আয়ান বলেন, ‘অন্য অনেক বাঙালির মতো শর্মিলাও কলকাতায় বেড়ে ওঠেন একথা শুনে যে, একাত্তরের যুদ্ধে বাংলাদেশে ত্রিশ লাখ লোক প্রাণ হারিয়েছিল।
আয়ান এরপর বলেন, একাত্তরের ১৮ই জুন লন্ডনের সানডে টাইমস পত্রিকায় অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাসের একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন ছাপা হয়। তাতে বিশ্ব পাকিস্তানি নৃশংসতার কথা জানতে পারে। ম্যাসকারেনহাসকে তার করাচির বাসা থেকে পাক আর্মি ঢাকায় নিয়ে যায় তাদের ভাল কাজের ওপর প্রতিবেদন লেখাতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি গণহত্যার বীভৎস রূপ প্রত্যক্ষ করেন। তিনি ঢাকা থেকে লন্ডনে এসে সানডে টাইমসের সম্পাদক হ্যারল্ড ইভান্সের সঙ্গে দেখা করেন। ইভান্সের অটোবায়োগ্রাফি অনুযায়ী ম্যাসকারেনহাস- আর্মি অফিসাররা তাকে বলেছিলেন যে, দরকার হলে দুই মিলিয়ন বা বিশ লাখ লোককে হত্যা করে হলেও তারা পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদ জনমের মতো স্তব্ধ করে দেবেন। তারপর তারা উপনিবেশ হিসেবে শাসন করবেন ত্রিশ বছর। আয়ান লিখেছেন, এই যে হুমকি সেটাই পরে ‘তিন মিলিয়নে’ উন্নীত হয়, যা আজও বাংলাদেশ ও ভারতে স্বীকৃত তথ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়ে চলেছে। আয়ান বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে এ পর্যন্ত অল্প কিছু ইতিহাসবিদ ও গবেষক সত্য ও সঠিক তথ্য দেখিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আয়ান জ্যাকের এই লেখা ছাপা হওয়ার পর গার্ডিয়ানে অন্তত দু’টি চিঠি ছাপা হয়। বিবিসি বাংলা সার্ভিসের সাবেক উপপ্রধান সিরাজুর রহমান গত ২৪শে মে লিখেছেন, পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ৮ই জানুয়ারি ১৯৭২ আমিই প্রথম বাংলাদেশী যিনি স্বাধীনতার নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। হিথরো থেকে তাকে ক্লারিজে নিয়ে এসেছিলেন ভারতের তৎকালীন হাইকমিশনার অপা ভাই পান্থ। আমি হিথরোতে তার পরপরই ছুটে যাই। মুজিবকে যখন মি. পান্থ ‘ইয়োর এক্সিলেন্সি’ বলেছিলেন তখন মুজিব খুবই অবাক হন। তিনি প্রায় শকড হন। তখন আমি তাকে বলি যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং আপনার অনুপস্থিতিতে আপনাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে তিনি যেন এ ধারণা পেয়ে এসেছিলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন মেনে নেয়া হয়েছে। ওইদিন আমি এবং অন্যরা তাকে পুরো ঘটনার বিবরণ দেই। আমি তাকে বলি যে, মোট কতজন নিহত হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা আমরা জানি না। তবে আমাদের অনুমান ‘তিন লাখ’ হতে পারে। পরে আমি মারাত্মক বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে পারি যে, তিনি ডেভিড ফ্রস্টকে ‘থ্রি মিলিয়নস অব মাই পিপল’ অর্থাৎ ত্রিশ লাখ লোক মারা গেছে মর্মে উল্লেখ করেন। তিনি ভুল অনুবাদ নাকি ভুল বুঝেছিলেন আমি জানি না। তবে অনেক বাংলাদেশী এখন বিশ্বাস করেন যে, ত্রিশ লাখ সংখ্যাটি অবাস্তব এবং অবিশ্বাসযোগ্য।
লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন গার্ডিয়ানের কাছে সিরাজুর রহমানের বক্তব্যের বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা প্রেরণ করেছে। এতে সিরাজুর রহমানের হিথরোতে উপস্থিতি এবং মুজিবের সঙ্গে তার কথোপকথনের বিষয়টি খণ্ডন করা হয়। ২রা জুন প্রকাশিত এই ব্যাখ্যায় বলা হয়, বঙ্গবন্ধু তখন ড. কামাল হোসেনের কাছ থেকেই ব্রিফড হয়েছিলেন। লন্ডনের ভারতীয় হাইকমিশনের রেকর্ডপত্র থেকে দেখা যায়, ওই সময়ে লন্ডনের ভারতীয় হাইকমিশনার পান্থ কিংবা তাদের কোন কর্মকর্তা তাকে অভ্যর্থনা জানাতে হিথরোতে যায়নি। বাংলাদেশী কূটনীতিকরা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
এখানে লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশ হাইকমিশনের এ ব্যাখ্যায় ‘ত্রিশ লাখ’ বিষয়ে শর্মিলা বোস ও আয়ান জ্যাকের মন্তব্যের বিষয়ে কোন মন্তব্য নেই। বরং তারা বলেছে, বঙ্গবন্ধুকে তখন বাংলাদেশের পক্ষে ব্রিফ করা হয় যে, যুদ্ধে ‘মিলিয়নস অব পিপল’ মারা গেছেন। আর ক্লারিজ হোটেলের সংবাদ সম্মেলনে মুজিব বলেন, ‘মিলিয়নস অব পিপল ডায়েড... থাউজেন্ডস অব ভিলেজেস হ্যাভ বিন বার্ন্ট।’ বঙ্গবন্ধু যে ‘ত্রিশ লাখ’ বলেননি তা প্রমাণ করতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এমনকি ওই সময়ের ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করে।
বাংলাদেশ হাইকমিশন কার্যত প্রমাণ করেছে যে, ত্রিশ লাখের সংখ্যাটি বঙ্গবন্ধু মুজিব বলেননি। হাইকমিশনের পক্ষে রাশেদ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে আসার আগেই তিনি অবহিত হন যে, একাত্তরের যুদ্ধে ‘মিলিয়নস’ মারা গেছেন। ভিডিও সেটাই প্রমাণ করে।’’ ডেভিড ফ্রস্টের সাক্ষাৎকার বিষয়ে হাইকমিশন অবশ্য কোন মন্তব্য করেনি।

বুধবার, ৮ জুন, ২০১১

 চট্টগ্রামে তৈরি হবে মিতসুবিশির গাড়ি


পাজেরোর স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল গাড়ি

জাপানের বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মিতসুবিশি বাংলাদেশে গাড়ি তৈরি করবে। চলতি বছরই চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রগতির প্ল্যান্টে এসইউভি গাড়ি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল) পাজেরোর স্পোর্টস মডেলের উত্পাদন শুরু হবে। গতকাল মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ ১৯৭০ সাল থেকেই মিতসুবিশির সঙ্গে কাজ করে আসছে। চট্টগ্রামে তাদের প্ল্যান্টে পাজেরো স্পোর্টসের উত্পাদনের লক্ষ্যে মিতসুবিশি থাইল্যান্ড থেকে এর যন্ত্রাংশ সরবরাহ করবে।
বাংলাদেশে মিতসুবিশির বিভিন্ন মডেলের গাড়ির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে মিতসুবিশির বিক্রি বেড়েছে পঞ্চান্ন শতাংশ। বাংলাদেশে গাড়ির বাজারের পরিসরও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।

বাঙালি নাকি বাংলাদেশি: কোন্‌টি আমাদের আত্মপরিচয়?

আমাদের আত্মপরিচয় খোঁজার আগে জাতিসত্তা, জাতীয়তা, জাতীয়তাবাদনাগরিকত্ব সম্পর্কে ধারণালাভ করা দরকার।

জাতিসত্তা (ethnicity) হচ্ছে জাতি বা গোষ্ঠীগত পরিচয়, জাতীয়তা নয়। এটি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের সীমানা দ্বারা সীমাবদ্ধও নয়। একাধিক জাতিসত্তার মানুষ যেমন একই রাষ্ট্রে বসবাস করে থাকে, একই জাতিসত্তার মানুষ তেমনি একাধিক রাষ্ট্রে ছড়িয়ে থাকতে পারে। ঢাকা, লন্ডন, নিউইয়র্ক কিংবা দুনিয়ার অন্য যে কোন স্থানে বসবাসকারী বাঙালিদের জাতিসত্তাগত পরিচয় তাই এক ও অভিন্ন। বিশ্বে কুর্দী কিংবা তামিলদের মত নিজস্ব জাতিরাষ্ট্রবিহীন অনেক জনগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা আছে, কিন্তু সার্বভৌম জাতীয়তা নেই।

জাতীয়তা (nationality) হচ্ছে জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় পরিচয়, জাতিসত্তা নয়। এটি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং বলা যায়, রাষ্ট্রই জাতীয়তা নির্ধারণ করে। সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিবাসীদের একক রাষ্ট্রীয় পরিচিতির ক্ষেত্রে তাই আন্তর্জাতিকভাবে পাসপোর্ট, ভিসা, জাতীয়তা-সনদ, পরিচয়পত্র, ইত্যদিতে ‘জাতীয়তা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয় এবং সেটি জাতিসত্তা নয়, বরং নাগরিকত্ব বোঝায়। ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলোর দৃষ্টান্ত এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। ভারতে বহু জাতিসত্তার মানুষের বসবাস হলেও তাদের সবার রাষ্ট্রীয় পরিচয় বা জাতীয়তা হচ্ছে ভারতীয়।

একইভাবে জাতিসত্তার দিক থেকে প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ জাতি বলে কিছু নেই, আছে ব্রিটিশ নাগরিক। কারণ যুক্তরাজ্য রাষ্ট্রটি ইংরেজ, স্কটিশ, ওয়েলশ ও আইরিশ জাতির আবাসস্থল। সম্মিলিত, একক রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের ক্ষেত্রে তাদের পৃথক জাতিসত্তার কোন প্রয়োগ নেই এবং তা বাস্তবসম্মতও নয়। তাই তাদের পাসপোর্টে জাতীয়তা হিসেবে লেখা থাকে ব্রিটিশ নাগরিক।

আর অভিবাসীদের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জাতিসত্তা ও বহুধা সংস্কৃতিতে বিভক্ত অধিবাসীদের যতই আমেরিকান জাতি বলা হোক না কেন, এটি মূলত তাদের রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় পরিচয় মাত্র। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে, দেশটির আদি বাসিন্দা রেড ইন্ডিয়ানদের ১৯২৪ সালের আগে নাগরিকত্বের অধিকারই ছিল না।

অন্যদিকে আরব দেশগুলোর অধিবাসীরা সবাই ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তার দিক থেকে আরব হলেও দেশভেদে তাদের সবার জাতীয়তা আলাদা। একই আরব জাতিসত্তার হওয়া সত্বেও একীভূত নিখিল আরব জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গত শতকে গামাল আবদেল নাসেরদের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তাই ২২টি আরব দেশের অধিবাসীদের জাতিসত্তা এক, কিন্তু জাতীয়তা ভিন্ন। তাদের কেউ মিশরীয়, কেউ কুয়েতী, আবার কেউ সিরীয়, ইত্যাদি।

তবে কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে জাতিসত্তা ও জাতীয়তা একই অর্থ বহন করে। বিশেষ করে, কোন কোন সার্বভৌম অস্তিত্বহীন জাতি (যেমন, স্পেনের অন্তর্ভুক্ত ক্যাটালোনীয়, আন্দালুসীয়, বাস্কসহ বিভিন্ন জাতি) কিংবা ফেডারেল রাষ্ট্রের (যেমন, রাশিয়ার) অন্তর্ভূক্ত ভিন্ন ভিন্ন জাতিসমূহের স্বতন্ত্র পরিচিতির ক্ষেত্রে জাতীয়তা ধারণাটির ব্যবহার হতে দেখা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে জাতীয়তা তাদের নামমাত্র রাজনৈতিক পরিচয়, সার্বভৌম রাষ্ট্রীয় পরিচয় নয়। তাদের সবার একক রাষ্ট্রীয় পরিচিতির জন্য তাই নাগরিকত্ব শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বা কাঠামো পরিবর্তনের সাথে সাথে এর অধিবাসীদের জাতীয়তা বা রাষ্ট্রীয় পরিচয় পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু তাদের জাতিসত্তা কখনও পরিবর্তিত হয় না। ব্রিটিশ কিংবা পাকিস্তান আমলে আমাদের জাতিসত্তা যেমন বাঙালি ছিল, তেমনি বাংলাদেশ আমলেও আমরা বাঙালিই আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। কিন্তু আমাদের জাতীয়তা বা রাষ্ট্রীয় পরিচয় পরিবর্তিত হয়েছে বার বার।

নাগরিকত্ব (citizenship) হচ্ছে আইনের ভিত্তিতে নির্ধারিত রাষ্ট্র ও ব্যক্তির পারস্পরিক রাজনৈতিক সম্পর্ক। নাগরিকত্বের মাধ্যমে একদিকে যেমন ব্যক্তি তার রাষ্ট্র থেকে নির্দিষ্ট কিছু অধিকার লাভ করে, অন্যদিকে তেমনি তার ওপর রাষ্ট্রের প্রতি নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব বর্তায়। নাগরিকত্বের সাথে জাতীয়তার মূল পার্থক্য হচ্ছে, জাতীয়তা থাকলেই বা রাষ্ট্রের সদস্য হলেই সব ক্ষেত্রে বিভিন্ন নাগরিক অধিকার, যেমন, ভোটাধিকার অর্জিত হয় না। তবে সাধারণভাবে জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব প্রায় একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।

জাতীয়তাবাদ (nationalism) হচ্ছে কোন জাতির জোরালো জাতীয়তাবোধ, যা তাদের স্বাধিকার বা স্বায়ত্বশাসন অর্জনে, এমনকি নিজেদের জন্য স্বাধীন, সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র গঠনে ঐক্যবদ্ধ করে। উনিশ ও বিশ শতকে বিভিন্ন জাতির মধ্যে জাতীয়তাবাদের উন্মেষের ফলে বড় বড় সাম্রাজ্য ও উপনিবেশ ভেংগে বহু জাতিরাষ্ট্রের জন্ম হয়। জাতীয়তাবাদ ধারণাটি একদিকে যেমন একটি জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র জাতিসত্তাবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে (জাতিসত্তাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ বা ethnic nationalism), অন্যদিকে তেমনি একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অধিবাসীদের রাষ্ট্রভিত্তিক সম্মিলিত মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে (উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদ বা liberal nationalism)। যে কোন ধরণের জাতীয়তাবাদই অন্য জাতি কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন জাতি কিংবা রাষ্ট্রের প্রাধান্য এবং এমনকি আগ্রাসন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করে থাকে।

এখন বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষিত এবং জাতীয় পরিচয় নির্ধারণে এদের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মূল ভিত্তি ও চেতনা ছিল জাতিসত্তাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠীটি নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্খা থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদের এ লড়াই শুরু হয়েছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের আগে অসহযোগ আন্দোলনের সময় পূর্ব বাংলা জুড়ে ধ্বনিত হয়েছিল, “বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।” বাংলাদেশি নামে কোন জাতি কিংবা জাতীয়তাবাদের কথা তখন শোনা যায়নি।

তবে স্বাধীনতার পর অন্তত দেশের নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় পরিচয় নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রয়োগে তদানীন্তন রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়নি। বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ঘোষিত হয়েছিল, “বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালী বলিয়া পরিচিত হইবেন”। এটি ছিল বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীর পৃথক অস্তিত্বকে অস্বীকার করার সমান। এমনকি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীসমূহের প্রতিনিধিত্বকারী সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লার্মা তদানীন্তন গণপরিষদে এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করলে বঙ্গবন্ধু তাদের বাঙালি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে কথিত আছে।

অথচ প্রথম থেকেই বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীর পৃথক অস্তিত্বকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল। তা হয়নি বলেই তারা পরবর্তীতে স্বাধিকারের দাবিতে সশস্ত্র ও সহিংস পন্থা বেছে নেয়। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সংগঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এসব ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী সামগ্রিকভাবে অংশগ্রহণ করেনি। তারা হয়ত ভেবেছিল, এ সংগ্রাম বাঙালির এবং এটি সফল হলে বাঙালিরা একটি স্বাধীন দেশ পাবে, কিন্তু তারা বাঙালিদের পরাধীনই থেকে যাবে। বাহাত্তরের সংবিধান কি সে সাক্ষ্যই দেয় না?

বাংলাদেশের সকল অধিবাসীর একক রাষ্ট্রীয় পরিচয় তথা বাঙালি নাগরিকত্ব নিয়ে তাই গোড়া থেকেই একটা সংশয় ছিল। এ ক্ষেত্রে মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাঙালি নাগরিকত্বের কথা বলা হলেও তখন বাংলাদেশি পাসপোর্টে জাতীয়তার স্থলে নাগরিকত্ব উল্লেখে বাঙালি লেখা থাকত না–বরং লেখা থাকত সিটিজেন অব বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের নাগরিক। তার মানে, সংবিধানে ঘোষিত হলেও বাঙালি নাগরিকত্ব বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়নি। তাছাড়া রাষ্ট্রের অধিবাসীরা জাতীয়তাবাদে বাঙালি হলে নাগরিকত্ব বা রাষ্ট্রীয় পরিচয়েও তাদের বাঙালিই হতে হবে–এমন কোন কথা আছে কি? তাছাড়া কোন বিদেশি ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জন করলে সংবিধান অনুসারে তিনি কীভাবে ‘বাঙালি’ নাগরিক হতেন?

জাতীয়তাবাদ যে কখনো কখনো সাম্প্রদায়িকতায়ও রূপ নিতে পারে, ব্রুট মেজরিটির জোরে ভিন্ন জাতিসত্তার সংখ্যালঘু পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের বাঙালি বানানোর প্রচেষ্টা সেটিই প্রমাণ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করা হলে তা যদি সাম্প্রদায়িকতা হয়, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা কিংবা জাতীয়তা সংখ্যালঘুর ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হলে তা কেন সাম্প্রদায়িকতা হবে না? যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের আগ্রাসন থেকে সংখ্যালঘুর সাংবিধানিক রক্ষাকবচ নিশ্চিত করা, সেখানে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠের জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি কি উল্টো রাষ্ট্র কর্তৃক সবলের পক্ষাবলম্বন নয়? সুতরাং জাতিসত্তাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে সেই রাষ্ট্রের সব জাতিগোষ্ঠীর সমবিকাশে তা ইতিবাচক না-ও হতে পারে। আধুনিক বিশ্বে কল্যাণকামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় তাই এ ধরণের অসার্বজনীন জাতীয়তাবাদের উপযোগিতা কমে আসছে।

এরপর ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানবলে বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয় ‘বাংলাদেশী’ নির্ধারণ করেন। একই সাথে তিনি সংবিধান থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ অপসারণ করেন এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে স্বপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। জেনারেল জিয়া বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হলেও একসময় তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদেই বিশ্বাস করতেন। ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’য় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তদানীন্তন উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম ‘একটি জাতির জন্ম’ নামে একটি নিবন্ধের শুরুতেই লিখেছিলেন, “পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই ঐতিহাসিক ঢাকা নগরীতে মিঃ জিন্নাহ যে দিন ঘোষণা করলেন, উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, আমার মতে ঠিক সেদিনই বাঙালী হৃদয়ে অংকুরিত হয়েছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদ। জন্ম হয়েছিল বাঙালী জাতির।”

তাত্ত্বিক দিক থেকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ভুল তত্ত্ব নয়। বরং এটি একটি রাষ্ট্রকেন্দ্রিক উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদ হতে পারত। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে ভাষা, সংস্কৃতি, জীবনাচরণ, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, মূল্যবোধ, জাতিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা, ইত্যাদি নানা বিষয়ে আজকের বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ডটির অধিবাসীরা একদিকে যেমন তাদের ভারতীয় বাঙালি ‘জাতভাই’দের থেকে স্বতন্ত্র, অন্যদিকে তেমনি তাদের আরবি-ফারসি-উর্দুভাষী ‘ধর্মভাই’দের থেকেও আলাদা। সুতরাং একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত সব অধিবাসীর সমবিকাশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ একটি কার্যকরী অনুঘটক হতে পারত। আধুনিক রাষ্ট্রে উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদই সব জাতিগোষ্ঠীর কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে। আর তাই বিশ্ব-ইতিহাসে একক জাতিসত্তাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ থেকে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদে উত্তরণের দৃষ্টান্তও কম নেই।

কিন্তু জেনারেল জিয়ার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নিঃসন্দেহে সংকীর্ন ও ত্রুটিযুক্ত। প্রথমত, দেশের সব নাগরিককে বাংলাদেশি আখ্যা দেওয়া হলেও এতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীসমূহের আলাদা সাংবিধানিক স্বীকৃতির কথা বলা হয়নি, বরং তাদের পৃথক জাতিসত্তা ও অস্তিত্বের বিষয়টি উপেক্ষিতই রয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদেও একটি সাম্প্রদায়িক উপাদান রয়েছে, সেটি হল ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োগ। তাই অনেকে বলেন, এর সাথে মিল রয়েছে ধর্মভিত্তিক দ্বি-জাতি তত্ত্বের, যা আমরা একাত্তরেই পরিত্যাগ করেছি। সুতরাং বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ উভয়ই ভিন্নভাবে সাম্প্রদায়িকতা-দোষে দুষ্ট। সবচেয়ে বড় কথা, বর্তমান বাংলাদেশে এ দুটো জাতীয়তাবাদই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত একদেশদর্শী তত্ত্ব বা ধারণা, যা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে বিভক্ত করে রেখেছে।

সম্প্রতি আপিল বিভাগ বাংলাদেশের নাগরিকদের ‘বাংলাদেশি’ জাতীয়তা বা রাষ্ট্রীয় পরিচয় সমুন্নত রেখে রায় দিয়েছে। উচ্চ আদালত বলেছে, বাঙালি হিসেবে পরিচিতির নির্দেশ দেওয়া হলে নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকরা দেশের বাইরে বিভিন্ন জটিলতা ও সমস্যায় পড়বে এবং বাংলাদেশি জাতীয়তা উল্লেখিত পাসপোর্টসহ এ সংক্রান্ত সব সরকারি কাগজপত্র পরিবর্তন করার জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে বিধায় জনস্বার্থে এ রায় দেওয়া হয়েছে। যে দেশে বিভিন্ন সরকারের আমলে নাম পরিবর্তনের অপরাজনীতি চর্চায় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা নস্যি, সে দেশে জাতীয়তা পরিবর্তনের মত একটি মৌলিক বিষয়ে অন্তত অর্থ ব্যয়ের যুক্তিটি ঠিক ধোপে টেকে না।

অন্যদিকে উচ্চ আদালতের উক্ত রায়ের ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদও বহাল হয়েছে। বলা যায়, এ রায় হল আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশি জাতীয়তা, এ দুয়ের মধ্যে এক ধরণের আইনি সমঝোতা। তবে উচ্চ আদালত বলেছে, জাতীয়তাবাদ বিষয়টি রাজনৈতিক বিধায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার জাতীয় সংসদের।

মোদ্দা কথা হচ্ছে, বাঙালি আমাদের জাতিসত্তাগত পরিচয় আর বাংলাদেশি আমাদের রাষ্ট্রীয় পরিচয়। দেশের বাইরে আমাদের বাংলাদেশি পরিচয় ব্যবহার করার পক্ষে জোরালো কিছু যুক্তিও রয়েছে। আগেই বলেছি, রাষ্ট্রের অধিবাসীদের পরিচিতির ক্ষেত্রে জাতিসত্তা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় পরিচয় বা জাতীয়তাই আগে আসে। এ ক্ষেত্রে আবারও অন্যান্য দেশের অধিবাসীদের উদাহরণ টানা যেতে পারে। একজন ভারতীয় বাঙালি দেশের বাইরে তার কোন্‌ পরিচয়টি আগে দেয়? নিশ্চয়ই ‘ভারতীয়’ পরিচয়, জাতিসত্তাগত ‘বাঙালি’ পরিচয় নয়। একইভাবে দেশের বাইরে একজন যুক্তরাজ্যবাসী ইংরেজের প্রথম পরিচয় হচ্ছে ‘ব্রিটিশ’ এবং একজন মিশরীয় আরবের প্রথম পরিচয় হচ্ছে ‘মিশরীয়’। সুতরাং বাংলাদেশের অধিবাসী একজন বাঙালি বা চাকমার প্রথম পরিচয় হওয়া উচিত ‘বাংলাদেশি’–বাঙালি বা চাকমা নয়।

তাছাড়া বাংলাদেশি পরিচয়ের মধ্যেই রক্ত দিয়ে কেনা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির নাম, প্রতিনিধিত্ব ও সার্বভৌমত্ব নিহিত রয়েছে। সারা দুনিয়ার কাছে ডঃ ইউনূস নোবেল বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি, কোনভাবেই প্রথম বাঙালি নন। এক্ষেত্রে তাঁর বাংলাদেশি পরিচয় একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং সেই রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীসহ সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। এসব কারণে আমাদের বাংলাদেশি পরিচয়টিই বেশি যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত।

উপসংহারে বলা যায়, আমরা একই সাথে বাঙালি ও বাংলাদেশি। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীসমূহ বাদে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী জাতিসত্তার দিক থেকে বাঙালি এবং এ পরিচয় অপরিবর্তনীয়। অন্যদিকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীসহ এদেশের সব অধিবাসীর রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় পরিচয় হচ্ছে বাংলাদেশি। দেশের বাসিন্দা সব বাঙালিই বাংলাদেশি, কিন্তু বাংলাদেশিরা সবাই বাঙালি নয়। আর বর্তমান রাষ্ট্রকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় সাধারণত রাষ্ট্রের পরিচয়েই অধিবাসীদের জাতীয়তার পরিচিতি। তাই বিশ্বসভায় আমাদের প্রথম ও প্রধান পরিচয় হওয়া উচিত, আমরা বাংলাদেশি।


http://amarlekha.blog.com/?p=152

দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলা অথবা একটি নজিরবিহীন আত্মঘাতের কাহিনী

সম্প্রতি দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলায় ১১ জনকে আসামী করে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করেছে সিআইডি (দৈনিক প্রথম আলো, ৩ জুন ২০১১)। ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল তারিখে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার (সিইউএফএল) জেটিতে এই অস্ত্র ও গোলাবারুদ আটক করা হয়েছিল। সিআইডি’র তদন্তে বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) জন্য চীন থেকে এসব সমরাস্ত্র আনা হয়েছিল। আর এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএআই ও ডিজিএফআই। সিআইডি’র অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ১১ আসামীর মধ্যে পাঁচজন হচ্ছেন এই দুই গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাব্যক্তি।
অন্যদেশের, বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করার জন্য সে দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী কিংবা সন্ত্রাসবাদীদের সহায়তা করা রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি প্রচলিত (কিন্তু অলিখিত) ডিফেন্সিভ স্ট্র্যাটেজি। আর এই স্ট্র্যাটেজির বাস্তবায়ন করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এর ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত রয়েছে। আমেরিকার সিআইএ করেছে কিউবা, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের বিরুদ্ধে; সোভিয়েত কেজিবি করেছে আমেরিকা ও তার মিত্রদেশগুলোর বিরুদ্ধে; ইজরায়েলি মোসাদ করেছে প্যালেস্টাইন ও অন্যান্য আরব দেশের বিরুদ্ধে; ভারতের ‘র’ করেছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও অন্যান্য প্রতিবেশি দেশের বিরুদ্ধে; এবং একইভাবে পাকিস্তানের আইএসআই করেছে ভারতের বিরুদ্ধে। জাতীয় নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দাবৃত্তির ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা।
ভারতের কথাই ধরা যাক। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনী সশস্ত্র, রক্তাক্ত গেরিলা যুদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের সংহতি ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী এই বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীকে আশ্রয়, প্রশ্রয়, প্রশিক্ষণ, রেশন, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-সহ অন্যান্য সরকারী সংস্থা (নিউইয়র্ক টাইম্‌স, ১১ জুন ১৯৮৯)। ‘র’-কর্তৃক শান্তিবাহিনীকে সক্রিয় সহায়তা প্রদানের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন ভারতীয় সাংবাদিক ও গবেষক সুবীর ভৌমিক তাঁর একটি গবেষণাগ্রন্থে (ট্রাবল্‌ড পেরিফেরিঃ ক্রাইসিস অব ইণ্ডিয়া’স নর্থওয়েস্ট, সুবীর ভৌমিক, সেইজ পাবলিকেশন্‌স, নতুন দিল্লী, ২০০৯, পৃষ্ঠা ১৬৫-১৬৯)।

ইন্দিরা গান্ধীর শাসনামলে ১৯৭৫ সাল থেকে ভারতের অভ্যন্তরে শান্তিবাহিনীর সংগঠন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৭ সালে ভারতের সাধারণ নির্বাচনে ইন্ধিরা গান্ধীর কংগ্রেস দল হেরে গেলে জনতা দল ক্ষমতায় আসে এবং মোরারজী দেশাই প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁর শাসনামলে শান্তিবাহিনীর প্রতি সহায়তা প্রদান বন্ধ করার জন্য ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হলেও গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ তা অব্যাহত রাখে। ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি সম্পাদনের আগ পর্যন্ত ‘র’-এর প্রত্যক্ষ সহায়তা ও প্ররোচনায় শান্তি বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র, রক্তাক্ত সংঘাত চালিয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক এবং বাংলাদেশের সাথে তাদের সম্পর্ক যতই সৌহার্দ্যপূর্ণ হোক, শান্তিবাহিনীকে সক্রিয় সহায়তা প্রদানকারী 'র'-এর সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কি তারা কোনদিন বিচারের মুখোমুখি করবে?
শুধু ভারত কেন, অন্য দেশের বিরুদ্ধে এসপিওনাজ-কাউন্টার এসপিওনাজ চালানোর জন্য নিজস্ব গোয়েন্দাদের ‘ঝুলিয়ে’ দেওয়ার নজির পৃথিবীর আর কোন দেশে আছে কি? কিউবার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা করার জন্য আমেরিকায় কোন সিআইএ এজেন্টের শাস্তি হওয়ার কথা কিংবা সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরে নাশকতা চালানোর জন্য ব্রিটেনের কোন এমআইসিক্স এজেন্টের নিজের দেশে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার কথা শুনেছেন কখনো? পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-ও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্রশস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরণের সক্রিয় সহায়তা দেয়। কিন্তু পাকিস্তানে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, দেশটি কি কখনো এই ‘অপরাধে’ তার নিজস্ব আইএসআই গোয়েন্দাদের শাস্তি দেবে? সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
আটককৃত দশ ট্রাক অস্ত্র যেহেতু চীন থেকে আনা হয়েছিল, ধারণা করা যায়, এই ঘটনার সাথে চীনের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বা অন্য কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানও জড়িত ছিল। কিন্তু এই ঘটনার জন্য চীন কি তার গোয়েন্দাদের আদৌ দোষী সাব্যস্ত করেছে বা করবে? নিতান্তই অবাস্তব সম্ভাবনা! অথচ একই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার ‘অপরাধে’ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআই-এর গোয়েন্দাদের এখন ‘ডলা’ দেওয়া হচ্ছে।
এটি শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব!

http://www.nagorikblog.com/node/5043

পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে

"যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আদালতের রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার কোনো সুযোগ নেই, সেখানে সরকার প্রধানই আলোচনার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।সরকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। সরকারকে আগে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।"

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বিএনপি

বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১১

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন

Emajuddin Ahmed
June 2, 2011, 4:54 pm
 
শেখ হাসিনার তখনকার উক্তি ছিল, বিএনপি সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। সত্য কথা বলতে গিয়ে ড. কামাল হোসেনকে এরপর গণতান্ত্রিক ফোরাম গঠন করতে হয়েছিল। সেই থেকে যার সূচনা, তারই ফল ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মাঝে রয়েছে অনেক কর্মকাণ্ড। এদেশের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি দুই দলের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কাজ কিছুই হয়নি। বিদেশী কূটনীতিক, বাংলাদেশের প্রভাবশালীদের অন্যূন ২১টি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ১০ মে কিছু পর্যবেক্ষণসহ অবৈধ ঘোষণা করেছেন। রায়ের কপি এখনও পাওয়া যায়নি। তবে জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি এও বলেছেন, রাষ্ট্রের স্বার্থে এবং জনকল্যাণের বিবেচনায় এ ব্যবস্থাকে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। দেশের রাজনীতিকরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এ সম্পর্কে আলোচনা-পর্যালোচনার ঝড় চলছে জোরেশোরে, সারাদেশে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এটিকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। কেউ কেউ সিদ্ধান্তকে স্ববিরোধীরূপে চিহ্নিত করেছেন। এমনকি এও জানা গেছে, আপিল বিভাগের সব বিচারপতি এ বিষয়ে একমত হতে পারেননি। সংখ্যাধিক্যের জোরে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। অনেকের আশংকা এ রায় বাংলাদেশে সৃষ্টি করবে এমন সমস্যা, যাতে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পর্যন্ত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কেউ কেউ আবার একে স্বাগত জানিয়েছেন।

যেসব রাষ্ট্রে নির্বাচিত সরকার বিদ্যমান, সেসব রাষ্ট্রে সরকার তার কার্যকাল শেষ করলে নতুন সরকার নির্বাচনের সময় সেই সাবেক সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক ধরনের সর্বজনীন ব্যবস্থা। বাংলাদেশে কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার হল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ ব্যবস্থায় নির্দলীয় মনোনীত দশজন উপদেষ্টা ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না এই অঙ্গীকারে রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণে থেকে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাদের কেউ শিক্ষক, কেউবা চিকিৎসক, কেউ সামরিক কর্মকর্তা, কেউবা অন্য পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তি। দুই ব্যবস্থার মিল ও অমিল দুই-ই রয়েছে। মিল হল- উভয় ক্ষেত্রে নির্বাচন তত্ত্বাবধায়করা অনির্বাচিত। অমিল হচ্ছে, বাংলাদেশের নির্বাচন তত্ত্বাবধায়করা কোন দলীয় ব্যক্তি নন এবং এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

বাংলাদেশের সংবিধানের [২ক পরিচ্ছেদ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার] শিরোনামে অনুচ্ছেদ ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ, ৫৮ঙ সমন্বয়ে সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইনটি গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালের ২৫-২৬ মার্চে, ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে। এই সংশোধনী আইন অনুযায়ী ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে সপ্তম, অষ্টম এবং নবম জাতীয় সংসদ সংগঠিত হয়েছে। এরই মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রায় সর্বমহলে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে। ১০ মে'র সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের এই রায় নতুনভাবে এ ব্যবস্থাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনে ছেড়েছে। সম্ভবত তাদের যুক্তি, অনির্বাচিত উপদেষ্টারা জাতীয় সংসদ সংগঠনের জন্য নির্বাচন পরিচালনা করবেন কেন? গণতান্ত্রিক সংবিধানের সঙ্গে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ভূমিকা কি সাযুজ্যপূর্ণ? তাই বাংলাদেশের সংবিধানে গণতন্ত্রের শাশ্বত রূপ প্রতিফলনের জন্য এত অতিউৎসাহী উদ্যোগ। বিচারপতিরা, বিশেষ করে দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সম্মানীয় বিচারপতিদের, বিশেষ করে এবিএম খায়রুল হকের গণতান্ত্রিক সংবিধানের প্রতি এমন শ্রদ্ধা এবং অনুরাগের প্রতি সম্মান জানিয়েও এ প্রসঙ্গে দু'চারটি কথা বলতে চাই।

এক. সংবিধান গণতান্ত্রিক হলেই কি যারা গণতন্ত্রকে কার্যকর করবেন তারা রাতারাতি গণতান্ত্রিক হয়ে যাবেন? বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কাঠামো তো তৈরি হয়ে গেছে বহু আগেই, কিন্তু সেই কাঠামো কি গণতন্ত্রের প্রাণরসে জারিত হয়েছে? আমাদের রাজনীতিকদের মন কি গণতন্ত্রের রসে সিক্ত হয়েছে? হয়নি। হয়নি যে তা বিচারপতিরাও জানেন। জেনেশুনে তাহলে জাতীয় জীবনে অনিশ্চয়তার ঘন অন্ধকার কেন নামিয়ে আনতে চান? দুই. কোন সমাজের আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ রাষ্ট্র বিনির্মাণ করে, রাষ্ট্রের প্রকৃতি নির্ধারণ করে। সংবিধান কিন্তু রাষ্ট্র তৈরি করে না। রাষ্ট্রের প্রকৃতিও নির্ধারণ করে না। সংবিধান তৈরি করে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের গতি-প্রকৃতি, এমনকি রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন তার নির্ধারিত হয় আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। এসব ক্ষেত্রে সংবিধানের ভূমিকা গৌণ। তিন. ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার আগে ত্রয়োদশ সংশোধনী কেন, কিভাবে, কোন পরিস্থিতিতে রচিত হয়েছিল তার তো বিচারপতিদের জানার কথা। এজন্য কতজন প্রাণ দিয়েছেন, কতজন আহত হয়েছেন, দেশের কত সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে সে খবরও তাদের জানার কথা। ত্রয়োদশ সংশোধনী গৃহীত হয় এমন একটা সময় যখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব পর্যন্ত বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। দেশে একটা No government situation তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বিষ বিষাক্ত। তবুও কোন কোন রোগের উপশম ঘটায় বিষ।

সেই প্রেক্ষাপটটা আবারও স্মরণ করুন তো! আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলের নেতা। যখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উত্থাপিত হয়, তখন তার ডানপাশে ছিলেন নিজামী সাহেব আর বাঁ পাশে ছিলেন জেনারেল এরশাদ। শেখ হাসিনা ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, বিএনপি খুব জোর ১০টা আসন পাবে। বিএনপি কিন্তু পেয়েছিল ১৪০টি আসন এবং সরকারও গঠন করে। শেখ হাসিনার তখনকার উক্তি ছিল, বিএনপি সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। সত্য কথা বলতে গিয়ে ড. কামাল হোসেনকে এরপর গণতান্ত্রিক ফোরাম গঠন করতে হয়েছিল। সেই থেকে যার সূচনা, তারই ফল ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মাঝে রয়েছে অনেক কর্মকাণ্ড। এদেশের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি দুই দলের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কাজ কিছুই হয়নি। বিদেশী কূটনীতিক, বাংলাদেশের প্রভাবশালীদের অন্যূন ২১টি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।

উদ্যোগ গ্রহণ করেন কমনওয়েলথ মহাসচিবও। কোন কাজ হয়নি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই-ই চাই। তিনি ফিরে গিয়ে তার প্রতিনিধি স্যার নিনিয়ানকে পাঠান একটা সমঝোতার জন্য। ৪২ দিন ঢাকায় অবস্থান করেও তিনি কিছু করতে ব্যর্থ হন। যুক্তরাষ্ট্রের রবিন র&zwnj্যাফেল ব্যর্থ হলেন। শুধু ঢাকা নয়, দেশময় শুরু হয় হরতালের মহড়া। ৬ ঘণ্টা থেকে শুরু করে ১০৬ ঘণ্টা পর্যন্ত হরতাল হয়। বন্দরগুলো অবরোধ করা হল। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হল। শিল্প-কলকারখানার চাকা স্তব্ধ হল। শেষ পর্যায়ে ১৯৯৪ সালের ২৮ ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির ১৪৭ জন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলেন। ১৪৭ জন সদস্যকে বাদ দিয়ে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন সম্ভব নয়। তাই ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যতই অসম্পূর্ণ হোক, যতই দুর্নীতিপরায়ণ হোক না কেন, ষষ্ঠ সংসদে গৃহীত হয় ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন। সমগ্র প্রক্রিয়ায় প্রাণ হারান শতাধিক ব্যক্তি। আহত হয়ে পঙ্গু হন প্রায় হাজারখানেক মানুষ। তাদের রক্তে জন্মলাভ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের একাংশের ভোটে বিশেষ করে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের কলমের এক খোঁচায় একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা ভেস্তে গেল। নতুন কিছু সৃষ্টি হলে জাতি আনন্দিত হতো। শুধু ভেঙে ফেলার উদ্যোগে কেউ কেউ হয়তো খুশি হয়েছেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা বড় বেশি নয়। তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বাতিল করে রাজনীতির ক্ষেত্রে যে সংঘাতময় অবস্থার সৃষ্টি করা হল তার দায়ভার কে নেবে?

প্রকৃত প্রস্তাবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হল গণতন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ। এজন্য প্রয়োজন হয় অত্যন্ত শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন, নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা, স্বাভাবিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি, কালো টাকা এবং পেশিশক্তির নিয়ন্ত্রণ। আগামীতে নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় সুপ্রিমকোর্ট কি Suo Moto নির্দেশ দিতে পারেন যে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক বডিগুলোতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দানের সময়, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিযুক্ত হোন, শুধু ক্ষমতাসীনদের অনুগত ও অনুগ্রহভাজনরা নয়। তেমনটি না হলে বিরোধী দলগুলো মানবে কেন? বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কি তা থেকে ভিন্ন কিছু? এবিএম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি থাকাকালীনই একবার বলেছিলেন, 'হাত-পা বেঁধে সাঁতার দেয়া সম্ভব নয়'। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান 'হাত-পা বাঁধা' অবস্থার কথা বলেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বহুদিন আগেই বলেছিলেন, এ কমিশন দন্ত-নখরহীন ব্যাঘ্রের মতো।

এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হবে কিভাবে? আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক কি? কালো টাকার আমদানি বন্ধ হবে কিভাবে? পেশিশক্তি ব্যবহারকারী 'বাজিকরদের' কথা এককালের প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মুখেই উচ্চারিত হয়েছে। উচ্চ এবং মধ্যম পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশন কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে?

ক্ষমতাসীনদের আর এক উচ্চারণ আর এক ধরনের অশনি সঙ্কেত। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে আগের সরকারই তা সম্পন্ন করবে। আগের সরকার অর্থাৎ ক্ষমতাসীনরা যদি তা চায় তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে নির্বাচন অনুষ্ঠান কিছুতেই সম্ভব হবে না এবং যা হওয়ার তাই হবে। দলীয় চণ্ডতার চরম প্রকাশ ঘটবে। পঁচাত্তরের বাকশালের দিকে দেশ ধাবিত হতে থাকবে। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ কি তাই চেয়েছেন? এমনি প্রশ্ন কোন কোন মহলে উত্থাপিত হচ্ছে। দেশটা এমনিতেই বিভক্ত। এই বিভক্তি আরও বৃদ্ধি পেলে দেশটার অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছবে? লগি-বৈঠার প্রাবল্যে দেশটা কি গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হবে না?