Powered By Blogger

শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১১

আমি বেঁচে থাকতে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক বানাতে দেব না ॥ কাদের সিদ্দিকী

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষক নন, ঘোষক হতে পারেন না। বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক বানালে তাকে বিতর্কিত করা হবে, দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগের মধ্যে যাদের বুদ্ধি নেই তারা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক বানাতে চান। সোমবার নিজ দলের বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বলেন, আগামী নির্বাচনে বৈতরণী পার হতে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল ও কমিশন গঠন করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরকারের আন্তরিকতা আছে বলে আমার মনে হয় না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা থাকবেন, আমি বেঁচে থাকতে তাকে স্বাধীনতার ঘোষক বানাতে দেব না। বঙ্গবন্ধু যে স্কুলের শিৰক সেই স্কুলের দফতরি জিয়া এ বিষয়টি সকলের বুঝতে হবে। বঙ্গবন্ধু ১৬ কোটি মানুষের জাতির পিতা। তিনি আওয়ামী লীগের একা নন। আমি বঙ্গবন্ধুকে জনক থেকে ঘোষক বানাতে দিতে পারি না। বঙ্গবন্ধুকে ষড়যন্ত্র করে ছোট করা ঠিক হবে না বলেও মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ঘোষক থেকে পিতার সম্মান অনেক বেশি। এ বিষয়টি আওয়ামী লীগ নেতাদের বুঝতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করে মেজর জিয়াউর রহমান যে জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছিলেন তা অস্বীকার করা যাবে না এমন মন্তব্য করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলায় আওয়ামী লীগের লোকজন আমার বাসায় হামলা করে। তিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, তাঁরা আমার প্রতি কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীকে লেলিয়ে দিয়েছেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমে আমার সমালোচনা করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি তিনি বলেন, বেকুবের মতো আমাকে গালাগালি করবেন না।
সরকার জনপ্রিয় হতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে হাত দিয়েছে এমন মন্তব্য করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরম্নদ্ধে আমার আজীবন সংগ্রাম চলবে। দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার অঙ্গীকার করেন তিনি। বলেন, রাজনীতির ব্যর্থ নেতৃত্বের কারণে মানুষ এখন ভাল-মন্দ ভুলে গেছে। দেশের অবস্থা ভাল নয়। বিদু্যত, পানি, গ্যাস, যানজটসহ নাগরিক সঙ্কট চরমে উঠেছে। তা মোকাবেলায় সরকারের কোন পরিকল্পনা নেই। ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা বলে আওয়ামী লীগ ৰমতায় এসে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। রাজনৈতিক নেতারা জাতিকে প্রতারকের জাতিতে পরিণত করেছে বলেও মনত্মব্য করেন তিনি।
তিনি সরকারের নানা বিষয়ে সমালোচনা করে বলেন, ‘৭১ সালে মা-বোনদের ইজ্জত রৰায় বিভিন্ন স্থানে ছুটে গেলেও এখন প্রতিদিন তারা ইজ্জত হারালেও আমাদের কিছুই করার নেই। জাতি আজ কষ্টে জ্বলে পুড়ে মরছে। আজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মান নেই। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে কেউ সম্মান দিয়ে কথা বলে না। তিনি বলেন, লুটে খাওয়ার জন্য দল করিনি। লোভ থাকলে গুলশান মতিঝিলে জমি দখলসহ অনেক কিছুই করতে পারতাম। কেউ বাধা দেয়ার ছিল না। মন্ত্রিপরিষদে নারীরা প্রভাবশালী। প্রধান দু’দলের নেত্রী নারী তবুও নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনী হারলেও তাদের বুদ্ধিজীবী ও দোসররা ঘাপটি মেরে আছে। আমাদের নিজেদের কারণে আগামী ৫০ বছর পর ‘পাকবাহিনী’ ভুল এই শব্দটি হবে পবিত্র আর মুক্তিযুদ্ধ হবে অপবিত্র। কারণ আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরম্ন করে বুদ্ধিজীবীসহ গণমাধ্যমে পাকিসত্মানী হানাদার বাহিনীকে পাকবাহিনী বলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি অপবিত্র বিষয়কে পবিত্র করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে মনত্মব্য করেন তিনি।
মহাজোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহাজোটে এরশাদকে যেদিন নেয়া হয়েছে সেদিন থেকে আওয়ামী লীগের সম্মান চলে গেছে। যিনি ডা. মিলন ও নূর হোসেন হত্যাকারী হিসেবে পরিচিত। মহাজোট এখন মহাজট বলেও মনত্মব্য করেন তিনি।
সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্যে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, দেশ এখন বিপজ্জনক ক্রানত্মিকাল অতিক্রম করছে। গ্যাস, পানি, বিদু্যতসহ নানা সঙ্কটে আগামী দেড় বছর পর বিৰুব্ধ মানুষ রাসত্মায় নেমে আসবে। কিন্তু সমাধানে সরকারের কোন প্রস্তুতি নেই। আলেম ওলামাদের সহযোগিতা ছাড়া নারীনীতি বাসত্মবায়ন সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তিনি। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বাদ দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখেন নাসরিন কাদের সিদ্দিকী, মনমোহন দেবনাথ, আবু বক্কর সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন