Powered By Blogger

রবিবার, ৮ মে, ২০১১

ড. ইউনূসের পক্ষে আন্দোলনের ডাক দেয়ার জের : গ্রামীণ ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণ করে মারধর, হত্যার হুমকি

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অপসারণের প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেয়ায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের ইউনিয়ন নেতা সগির রশিদ চৌধুরী। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাকে অপহরণ করে একটি মিনিবাসে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নিয়ে যায় এবং তাকে মারধর করে ও পিস্তল দিয়ে ভয় দেখায় বলে অভিযোগ করেছেন সগির রশিদ চৌধুরী। শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভের ডাক প্রত্যাহার করা না হলে সগির রশিদ চৌধুরীকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তিরা। লাঠি দিয়ে তাকে বেদম পেটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
ঢাকার সরকারি অর্থপেডিক হাসপাতালের নার্স গোলাম মোস্তফা স্বীকার করেছেন, সগির রশিদ চৌধুরীর দেহে মারধরের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া তার একটি আঙ্গুল ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন মোস্তফা।
স্টাফ রিপোর্টার জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও গ্রামীণ ব্যাংক কর্মচারী সমিতির উপদেষ্টা সগির রশিদ চৌধুরীকে অপহরণ করে বেদম প্রহার করার পর গুরুতর আহত অবস্থায় ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয়ার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে শুক্রবার মধ্যরাতে মিরপুর থানায় মামলা হয়েছে। আহত সগির নগরীর একটি ক্লিনিকে চিকিত্সা নিয়েছেন বলে পুলিশ জানায়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সগির রশিদ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের হয়ে রিকশায় কিডনি হাসপাতালের সামনে পৌঁছেন। এ সময় একটি সাদা মাইক্রোবাস তার রিকশার গতিরোধ করে। পাশাপাশি ৭/৮টি মোটর সাইকেলে আসা অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে ঘিরে ফেলে। পরে তাকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তোলা হয়। মাইক্রোবাসে তার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে অপহরণকারীরা। প্রায় একঘণ্টা পর তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে ১০/১২ জন তার কাছে জানতে চায়, ড. ইউনূসের কাছ থেকে সে কত টাকা নিয়েছে এবং কেন গ্রামীণ ব্যাংকের এবং ড. ইউনূসের পক্ষে আন্দোলন করছে। পরে তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কথা বলানোর চেষ্টা করে অপহরণকারীরা। এতে তিনি রাজি না হওয়ায় অপহরণকারীরা তাকে আন্দোলন করতে নিষেধ করে।
এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়, অপহরণকারীরা তার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে এবং তার সন্তানদের অপহরণের হুমকি দেয়। পরে অপহরণকারীরা সগিরকে কালেমা পড়তে বলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তারা এক পর্যায়ে ছগীরের মুখে টিস্যু পেপার ঢুকিয়ে দিয়ে পায়ে-হাতে বেদম পিটায়। অপহরণকারীরা তাদের দাবিকৃত টাকা চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে ফাঁকা জায়গায় মাটির নিচে পুতে রাখার জন্য বলে। সগির প্রাণের ভয়ে মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজি হন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
অপহরণকারীরা সগিরের চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় আবার মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাতস্থানে ফেলে রেখে যায়। চোখ খুলে তিনি দেখতে পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে তাকে রেখে গেছে অপহরণকারীরা। সেখান থেকে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে এসে সবার সঙ্গে কথা বলে থানায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। অপহরণকারীরা নিজেদেরকে পুলিশ পরিচয় দেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
সগির রশিদ সাংবাদিকদের জানান, অপহরণকারীদের আচরণ ও কথাবার্তায় মনে হয়েছে, তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। তাকে অপহরণের জন্য আড়াল থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে আনিস, মাসুম সরকার, শহীদুল ইসলাম নামের গ্রামীন ব্যাংকের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। অপহরণকারীরা তাকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার হুমকি দিয়েছে বলে তিনি জানান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার এসআই রফিকুল ইসলাম মিয়া সাংবাদিকদের জানান, সগির রশিদ বেশ আহত হয়েছেন। তাকে বেদম মারধর করা হয়েছে। পুরো ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
মিরপুর থানার ওসি ওয়াজেদ আলী জানান, মামলার তদন্ত চলছে। যারা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তাদের কাউকেই ছগীর রশিদ চেনেন না। অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে ওসি জানান। পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার গতকাল রাতে আমার দেশকে জানান, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।
এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘গরিবের ব্যাংকার’ হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত ড. ইউনূস সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্রোধের শিকার হয়েছেন। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনীতিতে নামার ঘোষণা দেয়ায় তিনি শেখ হাসিনার ক্রোধের শিকার হয়েছেন বলে অনেকেই মনে করেন।
গত ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অপসারণ করা হয়। অবশ্য সে আদেশ মানতে অস্বীকার করে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। তবে সুপ্রিমকোর্ট তার রায়ে গ্রামীণ ব্যাংককে বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে উল্লেখ না করে একে সরকারি সংস্থা বলে অভিহিত করেছে। ফলে ষাট বছরের পর বাধ্যতামূলক অবসর গ্রহণের নিয়ম বর্তায় বাধ্য হয়ে দাঁড়ায় ৭০ বছর বয়সী ড. ইউনূসের জন্য। এ রায়ের মধ্য দিয়ে ড. ইউনূসের জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের আর কোনো সুযোগ থাকল না।
এদিকে এএফপি আরও জানায়, গ্রামীণ ব্যাংকের অস্তিত্ব টিকে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এ ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ও শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. ইউনূসকে সরিয়ে দেয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ বহাল রেখে সুপ্রিমকোর্টের রায় দেয়ার দুদিন পর তিনি এ আশঙ্কা ব্যক্ত করলেন। তিনি বলেন, ব্যাংকের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এসব নারী কঠোর পরিশ্রম করছেন। রাজনৈতিক প্রভাবিত পরিবেশে ব্যাংকটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর আকস্মিক প্রস্তাবে রাজি হয়ে যদি আমি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিদায় নিতাম তাহলেও আমার গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যত্ পরিণতি একই হতো। বরং অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব না মেনে আদালতের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান চাওয়া সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন