Powered By Blogger

সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১১

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রসঙ্গে


জুন ১৯৭৫ ও জুন ২০১১। প্রথমটিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান সংবিধান পরিবর্তন করে বাংলাদেশে একদলীয় বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) শাসনের সূচনা করেন। দ্বিতীয়টিতে শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা, দেশের দুইবারের এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এর মাধ্যমে ২০১৪ সালের প্রারম্ভে বর্তমান সংসদে মেয়াদ শেষ হলে অনুষ্ঠিতব্য ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে।



১৯৭২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এই সংশোধনী উপস্থিত করতে গিয়ে বাংলাদেশের অনির্বাচিত টেকনোক্র্যাট আইনমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করা, জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করার লক্ষ্যেই এ সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে!

বাংলাদেশে বিচিত্র ঘটনাবলীর অভাব নেই। কাজেই দেখা গেল যে, এই 'মহাগুরুত্বপূর্ণ' সংশোধনী বিল সংসদে উপস্থিত করলেও বেচারা আইনমন্ত্রী জনগণের কোন নির্বাচিত প্রতিনিধি না হওয়ার কারণে ভোটদানের সময় তার মতোই আর দুই মন্ত্রীর সঙ্গে সংসদের মেঝে দাঁড়িয়ে এক করুণ দৃশ্যের অবতারণা করলেন!!! বিলটি উপস্থিত করতে গিয়ে গণতন্ত্র বিষয়ে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলার পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হওয়ার কারণে নিজের উত্থাপিত বিলের পক্ষে নিজেই ভোট দিতে অক্ষম হয়ে এভাবে জাতীয় সংসদের মেঝে দাঁড়িয়ে থাকা আইনমন্ত্রীর জন্য করুণ ব্যাপার হলেও এটা প্রকৃতপক্ষে ছিল বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর বিশেষত আওয়ামী লীগ সরকারের গণতন্ত্র প্রেমের এক ব্যঙ্গচিত্র!!

পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্যে যেসব বিষয় ঢোকানো হয়েছে সেগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় Bull in a china shop এর কথা। চীনে মাটির জিনিসপত্রের দোকানে ঢুকে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য ষাঁড় সব কিছু ভেঙেচুরে তছনছ করার মতো ব্যাপারই এক্ষেত্রে ঘটেছে।

বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবস্থান ও মতামতের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তার ঘোর বিরোধী। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর সংবিধান আওয়ামী লীগের ইশতেহারে পরিণত হওয়ার যে কথা তিনি বলেছেন, তার সঙ্গে একমত হওয়ায় অসুবিধা নেই। আসলে সংবিধানে যেসব জিনিস ঢোকানো হয়েছে সেগুলো যে কোন সংবিধানে ঢোকানো যেতে পারে, এ চিন্তা অন্য কারও মাথায় কোনদিন এসেছে বলে মনে হয় না!! কারণ বিশ্বের কোন দেশের সংবিধানেই এরকম কোন জিনিসের অস্তিত্ব নেই।

এই সংশোধনী বিলের ষষ্ঠ তফসিলে ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে '১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা' অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

প্রথমত, এই ধরনের কোন ঘোষণা ইতিহাসের পাতায় থাকতে পারে, যদি তা সত্য ও গ্রাহ্য হয়। কিন্তু কোন সংবিধানের শরীরে একে ঢোকানোর কারণ সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের লোক ও তাদের সমর্থক বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী ছাড়া এই ঘোষণার সত্যতা দেশের অন্য কেউ স্বীকার করেন বলে জানা নেই। এই অবস্থায় এ ধরনের একটি বিতর্কিত বিষয়কে সংবিধানের শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া এক বিস্ময়কর ব্যাপার!

এর থেকেও বিস্ময়কর ব্যাপার এই, শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের 'গুরুত্ব অনুধাবন' করে সেটিকেও সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা অর্থাৎ শরীরে ঢোকানো হয়েছে!! এছাড়াও এই বিলের মাধ্যমে সংবিধানে ঢোকানো হয়েছে মুজিবনগর সরকারের ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।

অবস্থা দেখে মনে হয়, পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী সংযোজন করলে সেটা মানানসই হতো!!

অতি ক্ষুদ্র দলীয় চিন্তা থেকে ও দলীয় স্বার্থে একটি দেশের সংবিধানকে এনে দাঁড় করালে শাসকশ্রেণীর ব্যাপক অংশের পক্ষেও একে আর পবিত্র মনে করার কোন কারণ থাকে না। এর প্রতি আনুগত্যের কোন ভিত্তি থাকে না।

এ প্রসঙ্গে অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ করা অবশ্যই দরকার। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এতই বড় গণতন্ত্রের পূজারী যে, তারা এই পঞ্চদশ সংশোধনীতে অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করার এবং শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ দণ্ডের ব্যবস্থা রেখেছেন।

অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল সামরিক বাহিনীর পক্ষেই সম্ভব এবং তারাই এটা করে থাকে। বাংলাদেশেও এটা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরবর্তী পর্যায়ে কয়েকবার ঘটেছে। এটা সর্বশেষ ঘটেছে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি। এভাবে সামরিক বাহিনী ফখরুদ্দীন আহমদকে শিখণ্ডী হিসেবে সামনে রেখে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতায় আসার সময় বিজয় গর্বে উৎফুল্ল হয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিনের বেনামি সামরিক শাসনকে স্বাগত এবং অভিনন্দন জানিয়েছিলেন তাদের নিজেদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে!

আসলে সেটা ছিল নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করার ব্যাপার!! কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই দেখা গেল, আওয়ামী লীগ নিজের নাক কেটে শুধু বিএনপিরই যাত্রা ভঙ্গ করেনি, যাত্রা ভঙ্গ হয়েছিল তাদের নিজেদেরও!! তাদের আন্দোলনের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারেনি। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দু'জনকেই ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিন সরকার কয়েদ করে তাদের তথাকথিত মাইনাস টু লাইন কার্যকর করার উদ্দেশ্যে দুই দলের মধ্যেই ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছিল!!! শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্ব যে কত 'বিজ্ঞ' ও 'দূরদর্শী', এটা ঠিক তারই এক প্রামাণ্য দৃষ্টান্ত!!

যা হোক, এ প্রশ্নে আসল কথায় ফিরে গিয়ে বলা দরকার যে, কোন দেশে সামরিক বাহিনী যখন ক্ষমতা দখল করে তখন তারা কোন সময়েই সেটা সাংবিধানিক পন্থায় করতে পারে না। দেখা যায়, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কোন দেশে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করলে তারা সংবিধানকে উচ্ছেদ করেই ক্ষমতায় আসে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক ধরনের ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে একটি হল, সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করলেও তারা সংবিধান উচ্ছেদ না করে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করে আইনের একটা কাঠামো ঠিক রেখেছে। খোন্দকার মোশতাকের বেনামি সামরিক সরকার, জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার, এরশাদের সামরিক সরকার এবং ফখরুদ্দীনের বেনামি সামরিক সরকারের প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই এটা হয়েছে। অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতায় এলেও সংবিধানকে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে রক্ষা করেই তারা ক্ষমতায় এসেছে। ইচ্ছা করলে এই সামরিক সরকারগুলোর যে কোনটিই বিদ্যমান সংবিধান উচ্ছেদ করতে পারত, যেভাবে পাকিস্তান এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে এটা হতে দেখা গেছে। কিন্তু সেই বড় ঝামেলার মধ্যে না গিয়ে বাংলাদেশের সামরিক সরকারগুলো সংবিধান সংশোধন করেই কাজ চালিয়েছে।

এর শিক্ষা তারা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকেই পেয়েছিল!

১৯৭৫ সালে তিনি চতুর্থ সংশোধনীর মতো গণতন্ত্র বিনাশকারী একটি সংশোধনী জাতীয় সংসদে কোন আলোচনা হতে না দিয়েই যেভাবে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে পাস করিয়েছিলেন, সেটাই বাংলাদেশে সামরিক শাসনের পথ দেখিয়েছিল। তার থেকেই সামরিক বাহিনীর লোকরা শিখেছিল কিভাবে সংবিধান সরাসরি উচ্ছেদ না করে তাকে ছুরি মেরে পঙ্গু করে রেখে কাজ চালাতে হয়।

আসলে সামরিক বাহিনী যখনই স্বনামে বা বেনামে ক্ষমতায় আসে, তখন তারা সংবিধানের কোন পরোয়া করে না। কারণ কোন সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী তারা ক্ষমতায় আসে না এবং সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষার প্রয়োজনও তাদের হয় না। সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে যেভাবে সংবিধান রেখে ক্ষমতা পরিচালনা করে এসেছে, সেটা প্রকৃতপক্ষে ছিল একটা Legal courtesy বা আইনগত সৌজন্যের ব্যাপার।

এখন পঞ্চদশ সংশোধনীতে অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলে তার জন্য যেভাবে সর্বোচ্চ দণ্ডের ব্যবস্থা হয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে যদি সামরিক বাহিনী সরাসরি অথবা বেনামে ক্ষমতা দখল করে তাহলে সংবিধানের প্রতি এই সৌজন্য তারা প্রদর্শন না করতেও পারে। অর্থাৎ এবার সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে ক্ষমতা দখলের পর বিদ্যমান সংবিধান উচ্ছেদ হওয়ার শর্তও সংবিধানের নিজের শরীরেই তৈরি হয়েছে!!!

এরপর আসা দরকার সংশোধনীটির অন্য কয়েকটি বিষয়ে। এর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল নিয়েই সব থেকে বিরোধিতা ও চাঞ্চল্য শাসকশ্রেণীর নিজের বৃত্তের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। এই বিরোধিতা ও চাঞ্চল্য যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে তার থেকেই প্রমাণ হয় বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখনও কতখানি অপরিহার্য। কোন একটি ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে পারে না, তাদের অধীনে নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে নির্বাচনে নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে পারে না, এই ধারণা রাজনৈতিক মহলে থাকার কারণেই ১৯৯১ সালের নির্বাচন সংবিধানের কোন সংশোধনী ছাড়াই পরিস্থিতির তাগিদে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতে হয়েছিল। পরে ১৯৯৬ সালে সেই পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন না হওয়ায় ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় বিএনপি জোর করে নির্বাচন করায় আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচন বয়কট করে এবং তার ফলে শেষ পর্যন্ত জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক বিল পাস করে ১৯৯৬ সালেই আর একটি নির্বাচন করতে হয়। এ দিক দিয়ে আজও সেই পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন যে হয়নি, এটা ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াতসহ শাসকশ্রেণীর বিভিন্ন দলের প্রবল বিরোধিতা থেকেই দেখা যাচ্ছে।

এই বাস্তব পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রহিত করেছে! এর ফলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ সরকার যদি তার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে নির্বাচনের সুযোগ পায়, তাহলে সেই নির্বাচন অবশ্যম্ভাবীরূপে বিএনপি এবং অন্য অনেক দলের দ্বারাই বয়কট হবে এবং ১৯৯৬ সালের মতো আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল করে নতুন একটি নির্বাচন করতে হবে!!

সংবিধানে জিয়াউর রহমান বিসমিল্লাহ সংযোজন করায় তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অনেক 'ধর্মনিরপেক্ষ' কথা বলেছিল। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সত্ত্বেও পঞ্চদশ সংশোধনীতে 'জনগণের সেন্টিমেন্টের' কথা বলে এখন সেই বিসমিল্লাহ বহাল রাখা হয়েছে! এরশাদ অষ্টম সংশোধনী এনে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার সময়েও আওয়ামী লীগ তার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু এখন সেই একই কারণে তারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখেছে। অন্যদিকে তারা ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনরুদ্ধার করে সেখানে ফিরে যাওয়ার কথা বলে চার মূলনীতির অন্যতম হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাও বহাল রেখেছে!! অন্য সব ধর্মের লোকদের ধর্মপালনের অধিকার তারা এই সঙ্গে রক্ষা করবে বলে তাদের এই উল্টো কাজ জায়েজ করার চেষ্টাও তারা করেছে!! প্রতারণার চেষ্টা ছাড়া এটা আর কী? কিন্তু এর দ্বারা কি কেউ প্রতারিত হবে? সোনার পাথর বাটিতে কি কেউ বিশ্বাস করে?



জুন ১৯৭৫ ও জুন ২০১১। প্রথমটিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান সংবিধান পরিবর্তন করে বাংলাদেশে একদলীয় বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) শাসনের সূচনা করেন। দ্বিতীয়টিতে শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা, দেশের দুইবারের এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এর মাধ্যমে ২০১৪ সালের প্রারম্ভে বর্তমান সংসদে মেয়াদ শেষ হলে অনুষ্ঠিতব্য ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে।

এ দিক দিয়ে বামপন্থীদের অবস্থা আওয়ামী লীগের থেকেও করুণ! বেচারারা লোক দেখানোর জন্য সিপিবির নেতৃত্বে সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম রাখার বিরোধিতার জন্য জোট বেঁধে মিটিং মিছিল করেছে। কিন্তু আবার হালুয়া-রুটি রক্ষার জন্য জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে পঞ্চম সংশোধনীতে উভয়কেই বহাল রাখার জন্য ভোট দিয়েছে!!! তারা নাকি ভোট দেয়ার আগে এ বিষয়ে তাদের মতের পার্থক্য লিপিবদ্ধ করেছে!!!! এদের যে অংশ আওয়ামী লীগের জোটে আছে এবং যারা নেই তার মধ্যে পার্থক্য করতে যাওয়াও এক ভ্রান্ত ব্যাপার। এদেরও প্রতারণার চেষ্টা যে নিষ্ফল এতে আর সন্দেহ কী? জাতীয় সংসদে বামপন্থীরা পঞ্চদশ সংশোধনী বিলের পক্ষে ভোট দেয়ার পর অন্য বামপন্থীরা তাদের ধিক্কার দিয়ে যে কোন প্রতিবাদ বিবৃতি দেয়নি, এর থেকেই প্রমাণ হয় যে তাদের মধ্যে এসব ব্যাপারে কার্যত কোন পার্থক্য নেই। তারা সবাই একই গর্তের শিয়াল!!

পঞ্চদশ সংশোধনী বিষয়ে আলোচনার অনেক কিছুই আছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের উগ্র জাতীয়তাবাদ কিভাবে নতুন করে সংবিধানের শরীরে ঢোকানো হয়েছে সেই কথা বলে এই আলোচনা এখানে শেষ করা হবে। ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান মানবেন্দ্র লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধিদের বাঙালি হয়ে যাওয়ার হুকুম দিয়ে, তাদের জাতিসত্তাকে কোন ধরনের স্বীকৃতি না দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশের সব জনগণকে আগের মতো একইভাবে বাঙালি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্য জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের কোন স্বীকৃতিও এর মধ্যে নেই। শুধু বলা হয়েছে, তাদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা হবে। অর্থাৎ তাদের নিজেদের ঐতিহ্য অনুযায়ী নাচ-গান করার অধিকার তাদের থাকবে!! ভাষাগত সংখ্যালঘুদের অধিকারের ধারে-কাছেও এই সংশোধনী নেই।

এ পর্যন্ত এসে বলা যেতে পারে, আওয়ামী লীগ নিজের দলীয় স্বার্থে সংবিধানকে যে জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির সঙ্গে সংবিধানের অস্তিত্বও এখন ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়েছে। বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর জন্য এ এক অশনি সংকেত।


http://www.bangladeshfirst.com/newsdetails.php?cid=30&scid=43&nid=1641

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন