Powered By Blogger

শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১২

ঈশ্বরের সন্ধানে!!!

আলম সাহেব। কাজী আলম তালুকার। একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তার দলের লোকদের কাছে তিনি জনপ্রিয়। তবে এলাকার লোকজনদের কাছে তিনি ‘ধনপ্রিয়’, মানে ধনসম্পদের দিকে তার প্রচুর আগ্রহ এবং এ কারণে তিনি এখন প্রাইভেট ব্যাংক, পত্রিকা, চ্যানেলের মালিক আর গার্মেন্ট ইত্যাদির তো কোনো হিসাব নেই। সবই ঠিক ছিল, কিন্তু হঠাত্ করে তিনি আবিষ্কার করলেন তার গলার কাছে সব সময় কেমন যেন আইঢাই করে! একদিন তিনি গেলেন এক নাক-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে। এই বিশেষজ্ঞের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে তিনদিন লাগে। তবে আলম সাহেবের ব্যাপার আলাদা। তিনি ঠিকই তার প্রভাব খাটিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট জোগাড় করলেন। গেলেন একদিন ডাক্তারের কাছে।
-কি সমস্যা? বুড়ো ডাক্তার ভ্রূ কুঁচকে তাকালেন তার দিকে
-সমস্যাটা গলায়।
-কি রকম সমস্যা?
-মানে গলার কাছে সবসময় কেমন আইঢাই করে।
-আইঢাই কি?
-মানে কিছু একটা আটকে আছে এমন একটা ভাব...
-হুম... বুড়ো বিশেষজ্ঞ নাক-কান-গলার ডাক্তার ছোট্ট একটা টর্চ দিয়ে গলার ভেতরটা দেখার চেষ্টা করলেন। গলা টিপে-টুপে দেখলেন। তার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কিছু প্রশ্ন করলেন, তারপর বললেন—
-আপনার রোগটা ধরতে পেরেছি।
-কি রোগ ডাক্তার সাহেব?
-এটাকে বলে খাই খাই রোগ।
-মানে? এবার আলম সাহেবের ভ্রূ জোড়া কুঁচকে যায়।
-বুঝলেন না? আপনি তো রাজনীতি করা লোক, তাই না? দেশের জনপ্রিয নেতা। অনেক খেয়েছেন... এতই বেশি খেযেছেন যে, গলার কাছে এখন সব আটকে গিয়ে আপনার ভাষায় গলা আইঢাই করছে।
-কি বলছেন এসব?
-ঠিকই বলছি... আপনার আসলে গলায় কোনো রোগ নেই... মানসিক রোগ... সারাজীবন খাই খাই রাজনীতি করেছেন, এখন তার ফল এই আইঢাই...
বাড়ি ফিরে এসে আলম সাহেবের মনে হলো গলার আইঢাই ভাবটা আরও বেড়েছে। এর মানে কি? তবে ডাক্তার ঠিকই বলেছেন। সে রাতে তিনি ভালো করে ঘুমুতে পারলেন না। এপাশ-ওপাশ করলেন শুধু। একপর্যায়ে স্ত্রী বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললেন, ‘কি হলো বিছানায় শুয়ে লাট্টু’র মতো ঘুরছো কেন?
-লাট্টুর মতো ঘুরছো মানে?
-তাই তো ঘুরছো... দেশের মানুষকেও ঘোরাও, ইদানীং দেখছি নিজেও ঘুরছো... আরও কি সব বলে গজগজ করতে করতে ঘুমিয়ে গেলেন স্ত্রী। তিনি জনগণকে লাট্টুর মতো ঘুরান? স্ত্রীর বাক্যটা যেন ঘৃতে অগ্নিসংযোগ ঘটাল, তার মাথার ভেতরটা গরম হয়ে গেল, তার ইচ্ছে হলো স্ত্রীকে কয়েকটা কড়া কথা বলবেন—তা না বলে তিনি উঠে বসলেন। বিছানা থেকে নেমে ড্রইংরুমে গিয়ে বসলেন। তারপর কি মনে করে দরজা খুলে নিঃশব্দে গেটের কাছে এসে দেখেন, কম বয়সী দারোয়ান ছেলেটা টুলে বসে আছে। তিনি আশা করেছিলেন, এসে দেখবেন দারোয়ান ছেলেটা ঘুমুচ্ছে এবং একটা ধমক দেবেন। স্ত্রীর ওপর রাগটা ওর ওপর ঝাড়বেন। কিন্তু ছেলে জেগে আছে। তাকে দেখে টুল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিল। রাত তখন আড়াইটা।
-তুমি রাতে ঘুমাও না?
-জি না স্যার।
-সত্যি ঘুমাও না?
-না স্যার। রাতে ঘুমালে ডিউটি হবে কেমনে?
আলম সাহেবের হঠাত্ মনে হলো এই বাচ্চা ছেলেটা যার বেতন মাত্র এক হাজার টাকা, সে তার বাড়ি পাহারা দেয় রাত জেগে আর তিনি ভেতরে এসির মধ্যে ঘুমান!
-যাও তুমি আজ ঘুমাতে যাও, আমি এখানে বসি।
-কি বলছেন স্যার? আপনি এই টুলে বসবেন?
-হ্যাঁ যাও... তুমি আজ ঘুমাও। আমার বাড়ি আজ আমিই পাহারা দেই। ছেলেটি অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, আর শক্ত টুলটায় তিনি সত্যি সত্যি বসেন।
-কি হলো, যাও বলছি।
দারোয়ান ছেলেটি কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর চলে গেল। টুলে বসে থাকলেন দেশের জনপ্রিয় নেতা কাজী আলম তালুকদার। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। আকাশে গোল একটা চাঁদ। গলার কাছটা আইঢাই করছে। তিনি কি সত্যিই বেশি খেয়ে ফেলেছেন?... আর তখনই তিনি একটা ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি যা খেয়েছেন, সব উগরে দিবেন। হ্যাঁ, কালই তিনি সব উগরে দিবেন। সত্যিই দিবেন।
সারা দেশে হইচই। দেশের জনপ্রিয় নেতা কাজী আলম তালুকদার তার সব সম্পদ রাষ্ট্রকে বুঝিয়ে দিয়ে দেশ ছেড়ে হিমালয়ের দিকে রওনা দিয়েছেন। খবর পেয়ে দেশের ঊনত্রিশটা চ্যানেল ছুটে এলো।
-স্যার, আপনি সত্যিই হিমালয়ের গুহায় চলে যাচ্ছেন সব ত্যাগ করে?
-হ্যাঁ, সত্যি।
-কিন্তু কেন স্যার?
-আমি হিমালয়ের গুহায় বসে ঈশ্বরের সন্ধান করব।
-এতদিন তাহলে কিসের সন্ধান করেছেন?
-এতদিন সম্পদের পেছনে ছুটেছি... জনগণকে ধোঁকা দিয়েছি, লাট্টুর মতো ওদের ঘুরিয়েছি... তাই হঠাত্ ঠিক করলাম...
-আপনার এই বোধোদয় হওয়ার কারণ?
-কোনো কারণ নেই, আমার গলার কাছটা আইঢাই করত... তারপর...
ঊনত্রিশ চ্যানেলকে বিদায় করে... বর্ডার ক্রস করে, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে তিনি উপস্থিত হলেন হিমালয়ের এক গুহায়। সেখানে আগে থেকেই এক সাধু বসে আছে। সাধুর সামনে একটা ল্যাপটপ!
-কি চাস এখানে? সাধু হুঙ্কার দিল।
-জি আমি ইশ্বরের সন্ধানে এসেছি।
-ওরে বোকা ঈশ্বরের সন্ধান পাওয়া এত সোজা? আমি কত বছর ধরে চেষ্টা করছি... এক্সেস ডিনাইড বলছে।
-কি বলেন? গুহায় বসে আপনি ল্যাপটপে ঈশ্বরকে খুঁজছেন?
-আরে ভাই টানা ১০ বছর ধ্যান করে দেখেছি লাভ হয়নি। তাই আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে চেষ্টা করছি... গড ডট কমে ঢুকে চেষ্টা করলাম অনেকক্ষণ, এক্সেস ডিনাইড বলছে। গুগলেও চেষ্টা করেছিলাম।
-জনাব আমার একটা প্রশ্ন ছিল।
-বলে ফেলুন।
-আপনি কেন গুহায় বসে ঈশ্বরের সন্ধান করছেন?
-আরে ভাই, আগে আমি ভালোই ছিলাম। বেশ ভালো ছিলাম... নিজের দেশে গাড়ি-বাড়ি, নারী, ফ্ল্যাট, গার্মেন্ট সবই ছিল... কিন্তু হঠাত্ আবিষ্কার করলাম গলার কাছটা কেমন আইঢাই করছে... তারপর...
-বুঝতে পেরেছি, আর বলতে হবে না।
কাজী আলম তালুকার ফিরে চলেছেন তার দেশে নিজ বাসভূমে। তিনি ঈশ্বরকে পেয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন ঈশ্বর আসলে মানুষের ভেতরেই বাস করেন। তাকে খুঁজে পেতে হিমালয়ের গুহা জরুরি নয়। তিনি তার মানুষের কাছে ফিরে চললেন... তিনি টের পেলেন তার গলার ভেতর সেই আইঢাই ভাবটা আর নেই...! হ
 
আ হ সা ন হা বী ব.
 
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/04/14/140894

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন