Powered By Blogger

বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১২

চীনা সেনার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে?

পিপলস লিবারেশন আর্মির কয়েকজন সদস্য পিপলস লিবারেশন আর্মির কয়েকজন সদস্য
ছবি: রয়টার্স
চীনের বিপুল অস্ত্র ও বিশাল সেনাবাহিনী আসলে কার নিয়ন্ত্রণে? আন্তর্জাতিক মহলে এ আগ্রহ অনেকের। কে বা কারা চীনের বন্দুক ও যুদ্ধজাহাজ নিয়ন্ত্রণ করছে, সেটা পরিষ্কার করলে ক্রমবর্ধমান এই সেনাবাহিনী নিয়ে বাইরের মানুষের ভয় থাকত না। পরাশক্তিগুলোর মধ্যে একমাত্র চীনেই পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) নামে একটা সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে, যেটা আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রের কোনো অংশের মধ্যে পড়ে না। এটা কেবল সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাছে দায়ী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নয়, বরং পার্টির কেন্দ্রীয় সেনা কমিশন নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনীকে। যদিও চীনে কাজে-কর্মে ক্ষমতাসীন পার্টি ও সরকার প্রায় কাছাকাছি, তার পরও পার্টির কাজকর্ম বেশ দুর্বোধ্য। এই পার্টিই পিএলএর বিষয়টি ঘোলাটে করে রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যকার সুসম্পর্ক এই দুর্বোধ্যতা দূরীকরণে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু তাইওয়ানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা বিরাজ করলে পিএলএ শাস্তিস্বরূপ দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া দুই দেশের সেনাদের সম্পর্ক গভীর হলে মার্কিনিরা আবার লাভবান হয় কি না, সে বিষয়েও পিএলএ উদ্বিগ্ন থাকে। তাই এসব নানা অনিশ্চিত সম্ভাবনা মাথায় নিয়ে কেউ মনে করতে পারেন, চীনের অবস্থান শান্তির পক্ষে। আবার কেউ কেউ এর উল্টোও ভাবতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী থিংক-ট্যাংক, দ্য সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড বাজেটারি অ্যাসেসমেন্টস (সিএসবিএ) বলছে, চীনের মতো একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার মুহূর্তেই মত পাল্টাতে পারে।
অনেক দিন আগে থেকেই চীন তার সামরিক শক্তি বাড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৫০-এর দশকে দেশটি প্রথম এ কাজে হাত লাগায়। সে সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল তার অন্যতম প্রধান মিত্র ও অস্ত্র সরবরাহকারী। কিন্তু ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে মাও সেতুংয়ের দশকব্যাপী সাংস্কৃতিক অভ্যুত্থানের সময় সামরিক শক্তি বাড়ানোর কাজটি অপ্রত্যাশিতভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিতর্কিত সীমানা নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে প্রায় যুদ্ধ বেধে যাচ্ছিল এবং ঠিক তখনই চীন প্রথম সফলভাবে তার পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। আশির দশকে দেং শিয়াও পেংয়ের নেতৃত্বে সামরিক শক্তি আধুনিকায়নের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়। দেং চেয়েছিলেন পুরো দেশকেই ঢেলে সাজাতে। সেখানে বাদ যায়নি সেনাবাহিনীও। কিন্তু তিনি পিএলএকে বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতিই তাঁর সরকারের প্রথম পছন্দ এবং জেনারেলদের অবশ্যই জিডিপির ১.৫ শতাংশ বাজেট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে আধুনিকায়নের তৃতীয় পর্যায় শুরু হয়। ১৯৯১ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাকের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের উচ্চপ্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক মারণাস্ত্রের মারাত্মক প্রভাব দেখে চীন উপলব্ধি করে, সম্মুখযুদ্ধ তথা স্থলযুদ্ধের দিন শেষ।
পিএলএর বিশেষজ্ঞরা বেইজিংয়ের অ্যাকাডেমি অব মিলিটারি সায়েন্সে বসে মার্কিন থিংক-ট্যাংকদের প্রবর্তিত তথাকথিত ‘রেভল্যুশন ইন মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স’ (আরএমএ) বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করতে থাকেন। আরএমএ হলো কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত কৌশল এবং অস্ত্রশস্ত্রের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন। বেইজিংয়ের ওই অ্যাকাডেমিতে অতি সম্প্রতি প্রতিরক্ষা-বিষয়ক প্রধান চারটি শ্বেতপত্রের প্রণেতা জেনারেল চেন ঝোউ লন্ডনের দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকাকে বলেছেন, ‘আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আরএমএ পড়েছি। আমাদের কাছে মহানায়ক হলেন অ্যান্ডি মার্শাল, যিনি পেন্টাগনের প্রধান ভবিষ্যবাদী হিসেবে পরিচিত। আমরা তাঁর লেখা প্রতিটি শব্দ অনুবাদ করে পড়েছি।’
১৯৯৩ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক জিয়াং জেমিন আরএমএকে দেশটির সামরিক কৌশলের কেন্দ্রে স্থাপন করেন। যার ফলে এখন পিএলএ অনুভব করছে, উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আঞ্চলিক যেকোনো যুদ্ধে সফল হতে পারে। দেশটির ব্যয়বহুল সামরিক খাতের বাজেটের বেশির ভাগ গেছে এখন পর্যন্ত বিমান, নৌ ও গোলন্দাজ বাহিনীর পেছনে, যারা কিনা চীনের পারমাণবিক ও প্রথাগত ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালনা করে।
২০০২ ও ২০০৪ সালের দিকে আরও উন্নয়ন ঘটে সামরিক শক্তির আধুনিকায়নে। জেনারেল চেন বলেন, ২০১০ সাল পর্যন্ত আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর ভিত গঠন করা হয়েছে। পরবর্তী দশকে তাদের সমন্বিত কার্যকলাপ দেখা যাবে। যেখানে থাকবে কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশনস ও কম্পিউটারের সমন্বয়ে সম্মিলিত নেটওয়ার্ক। ২০২০ সালের মধ্যেই চীনের সেনাবাহিনী এ লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে। তবে চেন স্বীকার করেন, পশ্চিমাদের মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ শক্তি অর্জন করতে তাদের আরও কিছু সময় লাগতে পারে। তার পরও ২০১০ সালে সিএসবিএ জানায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যেই চীন প্রয়োজনীয় বেশকিছু সামরিক সরঞ্জামের অধিকারী হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, শত্রুপক্ষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য স্যাটেলাইট ও গোপন প্রযুক্তি, ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ও জাহাজবিধ্বংসী হাজারো ক্ষেপণাস্ত্র, ৬০টিরও বেশি গোপন ডুবোজাহাজ, কমপক্ষে ছয়টি পারমাণবিক শক্তিসমৃদ্ধ ডুবোজাহাজ, চালকসহ ও চালকবিহীন গোপন যুদ্ধবিমান। এ ছাড়া আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আকারে ছোট হলেও বিমানবাহী কয়েকটি রণতরীও সমুদ্রে ভাসাতে যাচ্ছে। যদিও সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য দেশটিকে আরও বেশ কয়েক বছর চেষ্টা করতে হবে।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-04-24/news/252707

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন